নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে আলোচনা সভা
আমাদের দেশের শতকরা ৯০ জন মানুষ মুসলমান। তারা আল্লাহ, আল্লাহর রসুল ও ধর্মগ্রন্থকে প্রাণের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। কাজেই এই ধর্মপ্রাণ মানুষগুলোর ধর্মবিশ্বাস অবজ্ঞা করার, খাটো করে দেখার বা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। যাদেরকে ইসলামের নাম করে ধ্বংসাত্মক কাজে লিপ্ত করা হচ্ছে তারা মনে করছে ওই কাজ করলে তারা জান্নাতে যেতে পারবে, আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জিত হবে। এই মানুষগুলোকে ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা ব্যবহৃত হওয়া থেকে ফেরাতে চাইলে তাদের ঈমানকে ভুল পথ থেকে সরিয়ে এনে সঠিক পথে পরিচালিত করতে হবে। সকলকে বুঝতে হবে- যে ঈমান দুনিয়াতে মানুষের কল্যাণে কাজে আসে না, সেই ঈমান পরকালেও কোনো কাজে আসবে না। বুধবার নোয়াখালীর কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ধর্মবিশ্বাস: এক বৃহৎ সমস্যার সহজ সমাধান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় অনুষ্ঠানের মুখ্য আলোচক দৈনিক বজ্রশক্তির উপদেষ্টা রুফায়দাহ পন্নী এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন- সহিংসতা বা সন্ত্রাস করা জেহাদ হতে পারে না, বরং জেহাদ হলো সহিংসতা-সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করা অর্থাৎ সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো। সমাজের ধর্মপ্রাণ মানুষগুলো যদি ধর্মের প্রকৃত শিক্ষাটি পায় তাহলে স্বার্থবাদীরা তাদেরকে আর ভুল পথে নিতে পারবে না। ফলে মানুষের ঈমান সমাজের জন্য আশীর্বাদ হিসেবে আবির্ভূত হবে।
ধর্মব্যবসায়ীদের হাত থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষের ঈমানকে রক্ষা করার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, স্রষ্টা পৃথিবীতে ধর্ম পাঠিয়েছেন মানবজাতিকে ঐক্য, ভ্রাতৃত্ব, শৃঙ্খলা, মানবতা, সাম্য, সৌহার্দ্য, এক কথায় শান্তিময় সমাজ উপহার দেওয়ার জন্য। কিন্তু বর্তমানে ধর্মের দোহাই দিয়ে অহরহ অকল্যাণকর কার্য সম্পাদিত হচ্ছে। মানুষের ধর্মবিশ্বাস ভ্রান্ত পথে প্রবাহিত করে একটি স্বার্থান্বেষী শ্রেণি দেশ ও জাতিকে ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখে দাঁড় করাচ্ছে। বারবার মানুষের ঈমানকে হাইজ্যাক করা হচ্ছে, ফলে মানুষ এদের কথা বিশ্বাস করে ইহকাল-পরকাল উভয়ই হারাচ্ছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এই স্বার্থান্বেষী মানুষের কবল থেকে ধর্মপ্রাণ মানুষকে রক্ষা করে ধর্মকে মানবতার কল্যাণে কাজে লাগানো প্রয়োজন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব মিজানুর রহমান বাদল। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, আজকে হেযবুত তওহীদ যে কর্মসূচি নিয়ে নেমেছে তাকে স্বাগতম জানাই। এই কাজটি আমাদেরই করা উচিত ছিল, এটা আমাদের ঈমানী দায়িত্ব। আইএস তালেবান নামে যে জঙ্গি সৃষ্টি হচ্ছে তার সবই হচ্ছে মানুষের ঈমানকে ভুল পথে পরিচালিত করার কারণে। একজন মুসলমান গাছের সাথে বেঁধে অপর মুসলমানকে চাকু দিয়ে জবাই করছে। এরা কেমন মুসলমান? আমাদের দেশে আমরা দেখি ইসলামের নাম করে ইট দিয়ে পুলিশের মাথা থেঁতলে দেয়া হচ্ছে, কচি কচি শিশুকে জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে, মিছিল নিয়ে এসে সরকারি অফিস জ্বালিয়ে দিচ্ছে, সন্ত্রাস করছে, একদিকে নারীদেরকে পর্দার দোহাই দিয়ে ঘরের মধ্যে আটকে রাখছে, অন্যদিকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাদেরকে পক্ষে ভোট দেওয়ার জন্য প্রভাবিত করছে। এসব কি ইসলামের শিক্ষা? তিনি আরও বলেন, হেযবুত তওহীদের স্লোগান হলো- সকল ধর্মের মর্মকথা, সবার ঊর্ধ্বে মানবতা। মানবতার কল্যাণই হলো মানুষের প্রকৃত এবাদত। আমি আমার অবস্থান থেকে হেযবুত তওহীদকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দিচ্ছি। মানবতাবাদী যুক্তিশীল প্রকৃত মু’মিনের, দেশপ্রেমিক জনতার ঐক্যবদ্ধ হবার সময় এসেছে। সময় এসেছে স্বাধীনতাকে অর্থবহ করার।
এছাড়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিশেষ অতিথি রংমালা দারুল সুন্নাহ মডেল আলিম মাদরাসার অধ্যক্ষ জনাব মাওলানা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, একপেশে বক্তব্য দিয়ে ইসলাম হয় না। মানবতার কল্যাণে কথা না বলে, কাজ না করে শুধু নামাজ-রোজার কথা বললে সেটা ইসলাম হবে না। আবার নামাজ রোজা বাদ দিয়ে শুধু মানবতার কল্যাণে কথা বললে সেটা হবে আংশিক।
একটি কথিত ইসলামী রাজনৈতিক দলের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি আরও বলেন, এরা ইসলামের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে ইসলামপ্রিয় জনতাকে বিভ্রান্ত করেছে। মানুষকে ভুল পথে পরিচালিত করছে। হেযবুত তওহীদ আজ যে উদ্যোগ গ্রহণ করেছে সেটা অত্যন্ত সময়পোযোগী এবং দরকারি। নামাজ রোজা যেমন ফরজ তেমনি মানবতার কল্যাণে কাজ করাও ফরজ। এখানে ডকুমেন্টারিতে যেটা দেখানো হয়েছে তার সাথে আমি সহমত পোষণ করি। মসজিদ-মাদ্রাসায় দান করা যেমন সওয়াবের কাজ, তেমনি রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট ইত্যাদি নির্মাণের জন্য দান করাও এবাদত- এটাই ইসলামের শিক্ষা। এছাড়া ইসলামে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই উল্লেখ করে তিনি সকল প্রকার সহিংসতা, অন্যায়, অবিচার ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা জনাব খিজির হায়াত খাঁন, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান আরজুমান পারভিন ও জনাব আজম পাশা চৌধুরী (রুমেল) এবং উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার জনাব আজিজুল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হেযবুত তওহীদের নোয়াখালী জেলা আমির মো: নিজামউদ্দিন।