বিশেষ নিবন্ধ
১৫ আগস্ট উপলক্ষে বিশেষ নিবন্ধ; বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও বর্তমানের রাজনীতি- রাকিব আল হাসান
আজ ১৫ আগস্ট, বাঙালি জাতির জন্য গভীর শোকের দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে ইতিহাসের নৃশংসতম হত্যাকাণ্ডে সপরিবারে প্রাণ হারান বাঙালি-জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। গভীর শোক ও শ্রদ্ধার সঙ্গে আমরা আজ তাদের স্মরণ করি, সমগ্র বাঙালি জাতি আজ তাদের স্মরণ করে। কিন্তু কিছু দিবসে তাকে স্মরণ আর তার স্মৃতিতে অশ্র“ নিবেদনই যথেষ্ট? আমরা তার জীবন থেকে, তার অমর বাণী থেকে কতটুকু শিক্ষা গ্রহণ করতে পেরেছি তাই বিবেচনার বিষয়। আজ তার স্মরণে ৭ই মার্চের ভাষণের কিছু শিক্ষামূলক অংশ নিয়ে আলোচনা করব।
“ভায়েরা আমার, আজ দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি। আপনারা সবই জানেন এবং বোঝেন। আমরা আমাদের জীবন দিয়ে চেষ্টা করেছি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, আজ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, রাজশাহী, রংপুরে আমার ভাইয়ের রক্তে রাজপথ রঞ্জিত হয়েছে। আজ বাংলার মানুষ মুক্তি চায়, বাংলার মানুষ বাঁচতে চায়, বাংলার মানুষ তার অধিকার চায়। কী অন্যায় করেছিলাম? নির্বাচনের পরে বাংলাদেশের মানুষ স¤পূর্ণভাবে আমাকে, আওয়ামী লীগকে ভোট দেন। আমাদের ন্যাশনাল এসেম্বলি বসবে, আমরা সেখানে শাসনতন্ত্র তৈরি করবো এবং এদেশকে আমরা গড়ে তুলবো। এদেশের মানুষ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে।”
৭ই মার্চের ভাষণে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির কথা বলেছেন, সাধরণ মানুষের দুঃখ-কষ্টের কথা বলেছেন। ব্যক্তিস্বার্থ, দলীয় স্বার্থ বা নির্দিষ্ট কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ তার বক্তব্যে প্রাধান্য পায়নি, প্রাধান্য পেয়েছে আপমর জনগণের স্বার্থ। কিন্তু আজ সাধারণ মানুষের স্বার্থ ভূলুণ্ঠিত। বর্তমানের রাজনীতিকরা বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শ বাদ দিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ আর দলীয় স্বার্থে রাজনীতি করে, সাধারণ মানুষের কথা তারা ভুলেই যান। বঙ্গবন্ধু তার বক্তব্যে আরও বলেন-
“আমি, শুধু বাংলা নয়, পাকিস্তানের মেজরিটি পার্টির নেতা হিসাবে তাকে অনুরোধ করলাম, ১৫ই ফেব্র“য়ারি তারিখে আপনি জাতীয় পরিষদের অধিবেশন দেন। তিনি আমার কথা রাখলেন না, তিনি রাখলেন ভুট্টো সাহেবের কথা। তিনি বললেন, প্রথম সপ্তাহে মার্চ মাসে হবে। আমরা বললাম, ঠিক আছে, আমরা এসেম্বলিতে বসবো। আমি বললাম, এসেম্বলির মধ্যে আলোচনা করবো- এমনকি আমি এ পর্যন্তও বললাম, যদি কেউ ন্যায্য কথা বলে, আমরা সংখ্যায় বেশি হলেও একজনও যদি সে হয় তার ন্যায্য কথা আমরা মেনে নেব।”
এখানে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় ফুটে উঠেছে। তিনি বলেছেন ন্যায়ের কথা। একজন ব্যক্তিও যদি ন্যায্য কথা বলে তবে তা মেনে নিতে হবে। কিন্তু এই ন্যায়, আদর্শকি আজ আমাদের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত আছে। ন্যায্য কথার কোনো মূল্যই আজ দেওয়া হয় না। বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়, তার জন্য অশ্র“ বিসর্জন দেওয়া হয় ঠিকই কিন্তু তার আদর্শকে বাস্তবায়ন করা হয় না। তিনি বলেন-
“টেলিফোনে আমার সঙ্গে তার কথা হয়। তাকে আমি বলেছিলাম, জেনারেল ইয়াহিয়া খান সাহেব, আপনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট, দেখে যান কিভাবে আমার গরীবের ওপরে, আমার বাংলার মানুষের বুকের ওপর গুলি করা হয়েছে। কী করে আমার মায়ের কোল খালি করা হয়েছে, কী করে মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, আপনি আসুন, দেখুন, বিচার করুন।
ভায়েরা আমার, ২৫ তারিখে এসেম্বলি কল করেছে। রক্তের দাগ শুকায় নাই। আমি ১০ তারিখে বলে দিয়েছি, ওই শহীদের রক্তের ওপর পাড়া দিয়ে আরটিসিতে মুজিবুর রহমান যোগদান করতে পারে না। এসেম্বলি কল করেছেন, আমার দাবী মানতে হবে। প্রথম, সামরিক আইন- মার্শাল ল’ উইথড্র করতে হবে। সমস্ত সামরিক বাহিনীর লোকদের ব্যারাকে ফেরত নিতে হবে। যেভাবে হত্যা করা হয়েছে তার তদন্ত করতে হবে। আর জনগণের প্রতিনিধির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। তারপর বিবেচনা করে দেখবো, আমরা এসেম্বলিতে বসতে পারবো কি পারবো না। এর পূর্বে এসেম্বলিতে বসতে আমরা পারি না। আমি, আমি প্রধানমন্ত্রীত্ব চাই না। আমরা এদেশের মানুষের অধিকার চাই। আমি পরিষ্কার অক্ষরে বলে দেবার চাই, আজ থেকে এই বাংলাদেশে কোর্ট-কাচারী, আদালত-ফৌজদারী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে। গরীবের যাতে কষ্ট না হয়, যাতে আমার মানুষ কষ্ট না করে সেইজন্য যে সমস্ত অন্যান্য জিনিসগুলো আছে সেগুলোর হরতাল কাল থেকে চলবে না। রিকশা, ঘোড়ারগাড়ি, রেল চলবে, লঞ্চ চলবে- শুধু… সেক্রেটারিয়েট, সুপ্রিম কোর্ট, হাইকোর্ট, জজকোর্ট, সেমি গভর্নমেন্ট দপ্তরগুলো, ওয়াপদা কোন কিছু চলবে না। ২৮ তারিখে কর্মচারীরা যেয়ে বেতন নিয়ে আসবেন। এরপরে যদি বেতন দেওয়া না হয়, আর যদি একটা গুলি চলে, আর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয় – তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্র“র মোকাবেলা করতে হবে এবং জীবনের তরে রাস্তাঘাট যা যা আছে সবকিছু – আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে। আমরা ভাতে মারবো, আমরা পানিতে মারবো। তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব্যারাকে থাকো, কেউ তোমাদের কিছু বলবে না। কিন্তু আর আমার বুকের ওপর গুলি চালাবার চেষ্টা করো না। সাত কোটি মানুষকে দাবায়া রাখতে পারবা না।”
সমস্ত ভাষণ জুড়ে শুধু জনগণের কথা, সাধারণ মানুষের অধিকারের কথা। তিনি হরতালের জন্য এমন নীতি ঠিক করে দিলেন যেন সাধারণ মানুষের কোনো ক্ষতি না হয়। সাধারণ মানুষের ক্ষতি না করেও ক্ষমতাসীনদের ভীত কাঁপিয়ে দেওয়া যায় তা তিনি দেখিয়ে দিলেন। কিন্তু আজ হরতাল ডাকা হয়, সাধারণ মানুষকেই পুড়িয়ে মারা হয়। সাধারণ মানুষকে নিয়ে রাজনীতি করা হয় না, সাধারণ মানুষকে শুধু রাজনীতিতে ব্যবহার করা হয়। যারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গর্ব করেন তারাও বঙ্গবন্ধুর নীতি-আদর্শ থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছেন। বঙ্গবন্ধু তার ভাষণে আরও বলেন-
“আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দাবাতে পারবে না। আর যে সমস্ত লোক শহীদ হয়েছে, আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে, আমরা আওয়ামী লীগের থেকে যদ্দুর পারি তাদের সাহায্য করতে চেষ্টা করবো। যারা পারেন আমাদের রিলিফ কমিটিতে সামান্য টাকা-পয়সা পৌঁছে দেবেন। আর এই সাত দিন হরতালে যে সমস্ত শ্রমিক ভাইয়েরা যোগদান করেছে, প্রত্যেকটা শিল্পের মালিক তাদের বেতন পৌঁছে দেবেন। সরকারি কর্মচারীদের বলি, আমি যা বলি তা মানতে হবে। যে পর্যন্ত আমার এই দেশের মুক্তি না হবে, খাজনা ট্যাক্স বন্ধ করে দেওয়া হলো- কেউ দেবে না। মনে রাখবেন, শত্র“বাহিনী ঢুকেছে, নিজেদের মধ্যে আÍকলহ সৃষ্টি করবে, লুটতরাজ করবে। এই বাংলায় হিন্দুমুসলমান, বাঙালী-ননবাঙালী যারা আছে তারা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষা করার দায়িত্ব আপনাদের ওপর, আমাদের যেন বদনাম না হয়। মনে রাখবেন, রেডিও-টেলিভিশনের কর্মচারীরা, যদি রেডিওতে আমাদের কথা না শোনে তাহলে কোন বাঙালী রেডিও স্টেশনে যাবে না। যদি টেলিভিশন আমাদের নিউজ না দেয়, কোন বাঙালি টেলিভিশনে যাবেন না। ২ ঘণ্টা ব্যাংক খোলা থাকবে, যাতে মানুষ তাদের মায়না-পত্র নেবার পারে। পূর্ব বাংলা থেকে পশ্চিম পাকিস্তানে এক পয়সাও চালান হতে পারবে না। টেলিফোন, টেলিগ্রাম আমাদের এই পূর্ব বাংলায় চলবে এবং বিদেশের সঙ্গে নিউজ পাঠাতে হলে আপনারা চালাবেন। কিন্তু যদি এ দেশের মানুষকে খতম করার চেষ্টা করা হয়, বাঙালীরা বুঝেসুঝে কাজ করবেন। প্রত্যেক গ্রামে, প্রত্যেক মহল্লায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোল। এবং তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে প্রস্তুত থাকো। রক্ত যখন দিয়েছি, আরো রক্ত দেবো। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল্লাহ। এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম জয় বাংলা।”
কী গভীর আবেগ! সাধারণ মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা, ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকলের প্রতি অকৃত্রিম দায়িত্ববোধ, শত্র“দের ব্যাপারে চরম সজাগ ও সচেতনতা সব মিলিয়ে অন্যতম নেতৃত্বের গুণাবলী সম্পন্ন একজন মানুষ ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু তার সেই নীতি-আদর্শ আজ আমরা ভুলে গেছি। তার ভাষণের মধ্যে ন্যূনতম অশ্লীল বাক্যের প্রয়োগ নেই, কারো বিরুদ্ধে উসকানি নেই, যারা বাংলার মানুষের উপর অন্যায়ভাবে গুলি চালিয়েছে তাদের উপর পর্যন্ত উত্তপ্ত জনতাকে উন্মত্ব রোষাণলে ঝাঁপিয়ে পড়ার বিন্দুমাত্র ইঙ্গিত নেই, বরং তাদের প্রতি তিনি বললেন, তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব্যারাকে থাকবা, তোমাদের কেউ কিছু বলবে না। সরকারি সম্পত্তির উপর হামলা, ভাঙচুর ইত্যাদি ধ্বংসাত্মক কোনো কার্য করবার কোনো ইঙ্গিত নেই।
বঙ্গবন্ধুর ভাষণে যা পাই তা হলো- রাজনীতির উদ্দেশ্য সাধারণ কল্যাণ, সামাজিক শুভবোধ ও নৈতিক পূর্ণতা সাধন তাই যারা রাজনীতি করবে তাদের একমাত্র লক্ষ্য হবে মানুষের কল্যাণ, সমাজে ন্যায়, সুবিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠা, দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নয়ন সাধন করা। এ কাজের জন্য রাজনীতিকদের অবশ্যই নিঃস্বার্থ হতে হবে, তাদেরকে অবশ্যই ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে হবে, সর্বতোভাবে জনগণের কথা ভাবতে হবে।
কিন্তু বর্তমানে রাজনীতি সর্বাধিক লাভজনক পেশা হিসাবে স্বীকৃত হয়ে গেছে। ভোটের সময় আসলেই রাজনীতিকগণ দেশপ্রেম, দেশ ও জনগণের সেবা, দেশের উন্নয়ন ইত্যাদি আপ্তবাক্যে মাইক্রোফোন সিক্ত করেন কিন্তু নির্বাচন পরবর্তী সময়ে তাদের অধিকাংশের ব্যস্ত সময় কাটে নিজের পকেট ভারী করতে, নিজের নানামুখী স্বার্থ ও নিজ দলের স্বার্থ উদ্ধার করতে। আবার পাঁচ বছর পর নতুন প্রলোভন নিয়ে জনগণের সামনে ভোটভিক্ষা করতে উপস্থিত হয় তারা। প্রচলিত সিস্টেমে যেহেতু নির্বাচনের সময় ব্যালটে সিল প্রদানের দ্বারা প্রতিবাদের মাধ্যমে অন্য কোনো স্বার্থবাজ লোককে নির্বাচিত করা ছাড়া সাধারণ মানুষের আর কোনো উপায় থাকে না তাই নতুন কোনো স্বার্থবাজ নেতা পায় জনগণের সমর্থন আর নতুন উদ্যমে চলতে থাকে নবনির্বাচিত প্রতিনিধির স্বার্থ উদ্ধারের পালা। জনগণের রক্তঝরানো টাকা নেতা-নেত্রীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমতে থাকে নানা প্রক্রিয়ায়। সেই অর্থের ন্যূনতম লভ্যাংশও যেন জনগণের ভাগ্যে না জোটে সে জন্য সেই অর্থ আবার বিদেশি ব্যাংকে পাচার হয়ে যায়। দেশ ও জাতি সঙ্কটে পড়লে জনগণকে ছেড়ে তারা যেন উড়াল দিয়ে প্রভুদের দেশে বসবাস করতে পারে সে ব্যবস্থাও পাকাপোক্ত করা থাকে। দেশের মানুষ বন্যায় ডুবে মরে আর তারা সাহায্যের অজুহাতে ত্রাণ তহবিল থেকে অর্থলুট করে। এভাবে প্রতিটা ক্ষেত্রে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা চলে, এদিকে দেশ ও জনগণের স্বার্থ উপেক্ষিতই থেকে যায়। আমরা প্রতিদিন চোখের সামনে দুর্নীতির খবর দেখি, দেখি রাজনীতিকদের দেশ বিক্রির প্রতিযোগিতা তবুও আমরা নিশ্চুপ, নিশ্চল দর্শক হয়েই বসে থাকি। এটাকেই আমরা ভাগ্য বলে মেনে নিয়েছি।
এই রাজনীতি মূলত অপরাজনীতি যা দেশের স্বার্থে এই মুহূর্তে বন্ধ হওয়া উচিত। রাজনীতি মানেই মিথ্যা, রাজনীতিক কর্মসূচি মানেই সংঘাত, সংঘর্ষ, জ্বালাও-পোড়াও, ভাংচুর ইত্যাদি যা কেবল ধ্বংসই ডেকে আনে। আত্মপ্রচার ও কুৎসা রটনা করা, বিরোধী দলে থাকলে সরকারের সব কাজের বিরোধিতা করা আর সরকারি দলে থাকলে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদেরকে হামলা-মামলা দিয়ে হয়রানি করাই এখন রাজনীতি। এই রীতিগুলোকে রাজনীতি থেকে বিদায় জানাতে হবে। স্বার্থচিন্তা বাদ দিয়ে দেশ ও জনগণের জন্য চিন্তা করতে হবে। রাজনীতিকরা কেবল সেই কাজই করবেন যা জনগণের জন্য কল্যাণকর হয়। রাজনীতি কোনো পেশা নয়, এটি জনসেবা। যারা রাজনীতি করবে তারা জনসেবার মানসিকতা নিয়েই করবে, ঠিক যে কথা তারা পোস্টারে লিখে থাকেন যে “জনসেবার সুযোগ চাই”। তারা নিজের বাড়িতে থাকবেন, নিজের উপার্জিত টাকায় সংসার চালাবেন, নিজের গাড়ি থাকলে নিজের টাকায় তেল কিনবেন, গাড়ি না থাকলে পাবলিক বাহনে চলবেন, নিজের ফোনবিল নিজে দিবেন। একটি টাকাও জাতির কাছ থেকে তথা সরকারের কাছ থেকে নেবেন না। যারা রাজনীতি করেন এটুকু সামর্থ্য তাদের প্রত্যেকেরই আছে। এই রাজনীতি মানুষকে শান্তি দেবে, এই রাজনীতি যারা করবেন তারা পরকালেও আল্লাহর কাছ থেকে উত্তম প্রতিদান পাবেন। রাজনীতির দ্বারা অর্থাগমের কোনো সুযোগ থাকলে তা পুনরায় কালক্রমে বর্তমানের ন্যায় অপরাজনীতির জন্ম দেবে। ব্যবসায়ীরা যদি সৎভাবে ব্যবসা করেন ইসলামের দৃষ্টিতে সেটা এবাদত, একইভাবে রাজনীতিও সৎভাবে করা হলে এবাদতে পর্যবসিত হবে। তারা মানুষের সেবা করার মধ্যেই জীবনের স্বার্থকতা খুঁজে পাবেন, ভোগের পরিবর্তে তারা ত্যাগেই পরিতৃপ্ত হবেন। তাদের কাছে অর্থ-সম্পত্তির চেয়ে মানুষের ভালোবাসা, দোয়া অধিক কাম্য হবে।