ইন্টারনেট ব্যবহারে নিরাপত্তা আইন করবে সরকার : প্রধানমন্ত্রী
সরকার দেশে ইন্টারনেট ও তথ্য প্রযুক্তির নিরাপদ ও সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে ‘ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন’ প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শনিবার সরকারী গণভবন থেকে বাংলাদেশ ইন্টারনেট সপ্তাহ-২০১৫ উদ্বোধনকালে এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ডিজিটাল প্রযুক্তি বিশেষ করে শিশুদের জন্য নিরাপদ রাখতে হবে এবং এটিকে সন্ত্রাসী ও জঙ্গি কর্মকাণ্ডে ও জনগণের ধর্মীয় অবনুভূতিতে আঘাত দেয়ার কাজে ব্যবহার করতে দেয়া যাবেনা।
তিনি বলেন, তথ্য প্রযুক্তির সম্প্রসারণের পাশাপাশি এটির নিরাপদ ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরো বলেন, সমাজে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির যে কোন অশুভ মনোভাব নিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকার বিষয়ে জনগণের মধ্যে আমাদেরকে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার ব্যান্ডউইথ মূল্য আটবার কমিয়ে এনেছে এবং বর্তমান মূল্য ৬২৫ টাকায় নেমে এসেছে যা ২০০৮ সালে ছিল ৭৮ হাজার টাকা। তিনি সরকারের উদ্যোগ অনুসরণ করে কল রেট কমিয়ে আনার জন্য টেলিফোন অপারেটরদের প্রতি অনুরোধ জানান। আইসিটি ডিভিশন, বেসিস এবং গ্রামীন ফোনের যৌথ উদ্যোগে ঢাকা, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগ এবং সারা দেশের ৪৮৭ টি উপজেলায় সপ্তাহ পালনের এ কর্মসূচি নেয়া হয়েছে।
আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, বেসিস সভাপতি শামীম আহসান এবং গ্রামীন ফোনের সিইও রাজিব শেঠি অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন।
সপ্তাহ উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী নগরীর বনানী সোসাইটি গ্রাউন্ডে এ উপলক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত ও আইসিটি সচিব শ্যামসুন্দর শিকদারের সঙ্গে কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাগভনেট এবং ইনফোসরকার-২ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া, রংপুরের পীরগঞ্জ, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, নাটোরের সিংড়া এবং বরিশাল সদর উপজেলার স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন।
‘উন্নয়নের পাসওয়ার্ড আপনার হাতে’-এই শ্লোগান নিয়ে সারা দেশে ইন্টারনেট সপ্তাহ-২০১৫ পালন করা হচ্ছে। এই সপ্তাহ পালনের প্রাথমিক লক্ষ্য হচ্ছে ইন্টারনেট মেলার মাধ্যমে এক কোটি মানুষের কাছে ইন্টারনেট পৌঁছে দেয়া এবং আগামী এক বছরের মধ্যে ১ কোটি ৫০ লাখ নতুন ইউজার সৃষ্টি করার জন্য ইন্টারনেট সম্পর্কে জনগণকে সার্বিক ধারণা দেয়া।
এ সপ্তাহ পালনের অন্যতম লক্ষ্য হচ্ছে প্রত্যেককে ইন্টারনেট ব্যবহারের আওতায় নিয়ে আসা এবং তাদের অর্ধেককে ব্রডব্যান্ড সংযোগ দেয়া যাতে আইসিটি খাত থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে এক বিলিয়ন ডলার, ২০২১ সালের মধ্যে ৫ বিলিয়ন ডলার ও ২০৪১ সালের মধ্যে ৫০ বিলিয়ন ডলার আয় করা যায়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রযুক্তি জনজীবন সহজ করছে। তবে, বিশেষ করে শিশুদের জন্য এর কিছু প্রতিকুল প্রভাবও রয়েছে। তাই, এ ব্যাপারে আমাদেরকে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি বলেন, সরকার বিষয়টি মোকাবেলা করতে আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, সারা বিশ্বে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ একটি অভিন্ন বিষয় হিসেবে উদ্ভুত হয়েছে এবং তারা তথ্য প্রযুক্তিকে সবচেয়ে বড় সুবিধা হিসেবে নিচ্ছে। ইন্টারনেট সামাজিক যোগাযোগ নেটওয়ার্ক হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে যা কিছু কিছু ক্ষেত্রে সামাজিক অসুবিধাও সৃষ্টি করছে।
তিনি বলেন, কেউ আমার ধর্মের বিরুদ্ধে বললে আমি অবশ্যই ব্যথিত হই এবং তা প্রত্যেক ধর্মের জন্যই প্রযোজ্য। তিনি আরো বলেন, এই ভুল চর্চা নিয়ন্ত্রণ করতে আমাদেরকে পদক্ষেপ নিতে হবে। অন্যথায়, তা সামাজিক মূল্যবোধ ক্ষুন্ন করার কারণ হতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল টেকনোলজি কর্মসংস্থান, দ্রুততার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য, বহির্বিশ্বের সঙ্গে সম্প্রসারিত যোগাযোগ এবং জনজীবন আরো সহজ ও আরামদায়ক করার দ্বার উন্মুক্ত করেছে। পাশাপাশি, আমাদেরকে প্রযুক্তির নিরাপদ ব্যবহারের বিষয়টিও বিবেচনায় রাখতে হবে। তিনি আরো বলেন, আমরা চাই যে, আমাদের সমাজে আইসিটির কোন অপব্যবহার হবে না।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার দেশের প্রতিটি নাগরিককে ইন্টারনেট কভারেজের আওতায় নিয়ে আসার জন্য নিরলস প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ২০১৭ সালের মধ্যে দেশের সকল ইউনিয়ন হাই-স্পীড ইন্টারনেটে সংযুক্ত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাগভনেট এবং ইনফোসরকার-৩ প্রকল্পের অধীনে ফাইবার অপটিক ক্যাবলের মাধ্যমে সকল জেলা এবং প্রায় সব উপজেলা সংযুক্ত হয়েছে। ইনফোসরকার-৩ প্রকল্পের অধীনে প্রায় ১ হাজার ২শ’ ইউনিয়নকে ফাইবার অপটিক ক্যাবলের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। এছাড়া, ‘ডিজিটাল কানেক্টিটিভিটি’ প্রকল্পের অধীনে আরো ২ হাজার ৫শ’ ইউনিয়নকে ফাইবার অপটিক ক্যাবলের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। বিনামূল্যে আন্তর্জাতিক সাবমেরিন ক্যাবল নেটওয়ার্কের সঙ্গে বাংলাদেশকে যুক্ত করার প্রস্তাব বিএনপি-জামায়াত সরকারের প্রত্যাখানের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা জাতীয় গোপনীয়তা রক্ষার অজুহাতে প্রস্তাবটি গ্রহন করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল।
তিনি বলেন, প্রকৃতপক্ষে, তারা প্রস্তাবটি গ্রহন করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল এ কারণে যে, তারা দেশে তথ্য প্রযুক্তির বিকাশ ঘটাতে চায়নি। তারা দেশে মোবাইল ফোন ব্যবসায় একচেটিয়া ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেছিল। আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর সে অবস্থার অবসান ঘটিয়েছি।
বাংলাদেশেরপত্র/এডি/আর