Connecting You with the Truth

উজিরপুরে ভুয়া কাজির তান্ডব

বরিশাল অফিস:আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল intenational
বরিশাল জেলার উজিরপুর উপজেলার ৫নং শোলক ইউনিয়নে ভুয়া কাজীর প্রতারনার ফাঁদে পড়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে হাজার হাজার তরুন-তরুনীর ভবিষ্যৎ। এতে বিপাকে পড়েছেন অভিভাবকরা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২৭/০৫/২০১৫ ইং তারিখের স্মারক নং ১৩৩৬(৬) মূলে ৫নং শোলক ইউনিয়নের সরকারী দায়িত্বপ্রাপ্ত নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার মাও: মো: ইউনুছ মোল্লা ৬৭ বৎসর বয়স পূর্তীতে নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার পদ হতে অব্যহতি গ্রহন করায় একই উপজেলার ৬নং বড়াকোঠা ইউনিয়নের নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার মাও: আবদুর রহিমকে উক্ত ৫নং শোলক ইউনিয়নে নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার এর দায়িত্ব পালন করার জন্য জেলা রেজিষ্ট্রার আদেশ প্রদান করেন। উপরোক্ত নং স্মারকে ৬নং কলামে উল্লেখ আছে যে, মাও: মো: ইউনুছ মোল্লা, অবসর প্রাপ্ত নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার, ৫নং শোলক ইউনিয়ন। তাকে তার হেফাজতে থাকা নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্র তালিকা মূলে জেলা রেজিষ্ট্রারের কার্যালয়ে জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়। অনুসন্ধানে জানা গেছে, অবসরপ্রাপ্ত নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার তার হেফাজতে থাকা নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্র জমা দেননি এবং ৩০/০৬/২০১৫ ইং তারিখে মৃত্যুবরন করেন। পরবর্তিতে অবসরপ্রাপ্ত নিকাহ্ রেজিষ্ট্রারের অফিস পরিচালক তার দ্বিতীয় পুত্র মো: নুরুল আমিন সোহেল মোল্লা তার পিতার নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্র নিজ জিম্মায় রেখে বিভিন্ন রকমের আইন বিরোধী কার্যক্রম চালিয়ে যায়। ৫নং শোলক ইউনিয়নের অতিরিক্ত নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার মাও: আবদুর রহিম এর নিকট গেলে তিনি জানান যে, অবসরপ্রাপ্ত নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার ২৭/০৫/২০১৫ইং তারিখে অবসর যাওয়ার পরে কর্তৃপক্ষ যাবতীয় রেকর্ডপত্র জমা দেয়ার জন্য স্মারকলিপি প্রদান করেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় অবসরপ্রাপ্ত নিকাহ্ রেজিষ্ট্রারের নিকট থাকা যাবতীয় রেকর্ডপত্র জমা দেননি এবং মৃত্যুবরন করেন। অফিস পরিচালক তার দ্বিতীয় পুত্র মো: নুরুল আমিন সোহেল মোল্লা সরকারের যাবতীয় নিকাহ্ রেজিষ্ট্রীর রেকর্ডপত্র নিজ জিম্মায় রেখে বহু ছেলে-মেয়েদের নিকাহ্ রেজিষ্ট্রি করায়, তালাক করায়। এমনকি তালাক করার নাম করিয়ে এক মেয়েকে নিয়ে অবৈধভাবে চলাফেরা করে। তার পিতার স্বাক্ষর জাল করে তার বাবার মেয়াদকালীন তারিক বসিয়ে বহু লোকের বিবাহ রেজিষ্ট্রেশনের অনুলিপি প্রদান করেন। এর বিনিময়ে ফন্দি করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়। ইহাতে তার নিকাহ্ রেজিষ্ট্রেশনের কার্যক্রম ব্যহত হচ্ছে। এই অবৈধ কার্যক্রমের নিষেধ করলে তাকে ও তার পরিবারকে সোহেল মোল্লা হত্যার হুমকি দেয়। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে তার দাবি, অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ হোক এবং ৫নং শোলক ইউনিয়নবাসী তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পাক। ৫নং শোলক ইউনিয়নের সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো: নজরুল ইসলাম বাবু জানান, সোহেল মোল্লার বাবার নিয়োগ ভুয়া ছিল, তার জন্ম তারিখ ৩টা, তার অবসরের পরে নুরুল আমিন সোহেল মোল্লা তার বাবার কার্যক্রম অকপটে চালিয়ে যায়। অবসরপ্রাপ্ত বাবার সাইনবোর্ড ব্যবহার করে আইন বিরোধী কার্যক্রম চালানোয় উজিরপুর থানার এস.আই. কামাল পাশা এসে সাইনবোর্ড উচ্ছেদ করে। এছাড়াও বিদেশে লোক পাঠানোর নাম করে উত্তর ধামুরার রফিকুলসহ বিভিন্ন লোকের থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। ধামুরা বাসস্ট্যান্ড এর কাছে আজিজ আকনের মেয়ের সাথে অবৈধ মেলামেশা করে গর্ভবতী বানায়। পরবর্তিতে এবোশন করে বাচ্চা নষ্ট করে। মেয়ের পক্ষ থেকে কোর্টে মামলা করে। মামলা কিভাবে নিষ্পত্তি হয় জানিনা। স্থানীয় লোকজন এহেন ভুয়া কাজীর বিচার চায়। নজরুল ইসলাম বাবুর বক্তব্য অনুযায়ী উত্তর ধামুরার রফিকুল ইসলামের সাথে সাক্ষাৎ করলে, সোহেল মোল্লা বিদেশে কাজ পাইয়ে দেয়ার নাম করে রফিকুল ইসলাম সহ মুলাদীর আসাদ ও ফরিদপুরের মো: আবুল বাশার নামের আরও দুই ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথা এ প্রতিবেদককে জানান এবং রফিকুল ইসলাম আরও জানান, সে তার টাকা ফেরত চাইলে তাকে হত্যার হুমকি দেয়। ফলে সে একপ্রকার অসহায় জীবন-যাপন করছে। ধামুরা বন্দরের মোবাইল ব্যবসায়ী মো: ফাইজুল ইসলাম জানান, মো: নুরুল আমিন সোহেল মোল্লার চরিত্র ভাল না। কিছুদিন পূর্বে উজিরপুর থানার বামরাইল ইউনিয়নের জাকারিয়া মেম্বার সোহেল মোল্লাকে এক মেয়ের সাথে আপত্তিকর অবস্থায় আটক করে। সেখান থেকে ফাইজুল ইসলাম মুক্ত করে আনেন। মো: নুরুল আমিন সোহেল মোল্লার সাথে সাক্ষাৎ করতে চেয়ে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে প্রাথমিক পর্যায় সে সাক্ষাৎকার দিতে অস¦ীকৃতি জানান এবং বলে সে এখন পার্শ্ববর্তী বানারীপাড়া উপজেলায় খুব ব্যস্ত আছে। তাকে সাক্ষাৎকার দেয়ার জন্য জানালে প্রতিবেদককে বিভিন্ন হুমকি-ধমকি প্রদান করে। একপর্যায়ে সে মোবাইল ফোনে বলেন আপনারা স্থানিয় ৫নং শোলক ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের সভাপতি ডা: আ: হালিম ও স্থানিয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের নিকট আমার সম্বন্ধে জেনে নিন। অথচ মোবাইল ফোনে কথার বলার কয়েক মিনিটের মাথায় ধামুরা বাজারেই সোহেল মোল্লাকে পাওয়া যায় এবং সাক্ষাতের এক পর্যায়ে সে স্বীকার করেন, সে তার বাবার অফিস পরিচালক ছিলেন এবং তার বাবার কাজের সহযোগিতা করতেন। পরবর্তিতে ডা: আ: হালিম এর সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি জানান, লোকমুখে শুনেছি সোহেল কাজী (সোহেল মোল্লা) তার বাবার অবসর নেয়ার পরেও বিবাহ পড়ায়। এছাড়াও তার চরিত্র ভাল না, সে দুটি বিবাহ করেছে, মেয়েলি সমস্যাও আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ৫নং শোলক ইউনিয়নের একজন ইউ.পি. সদস্য জানান, সোহেল মোল্লা তার বাবার কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সে বিদেশে পাঠানোর নাম করে লোকজনের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করে। এছাড়া তার নারী কেলেংকারি আছে। ৫নং শোলক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ কাজী হুমায়ুন কবির জানান, আমি সদ্য নির্বাচিত চেয়ারম্যান। আমি চাই যেটা সত্য সেটা প্রকাশ হোক। প্রকৃত অন্যায়কারীর বিচার হোক। উজিরপুর উপজেলার সাব-রেজিষ্ট্রার মো: হাফিজুর রহমানের সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি জানান, অবসরপ্রাপ্ত নিকাহ্ রেজিষ্ট্রারের হেফাজতে থাকা নিকাহ্ রেজিষ্ট্রার সংক্রান্ত যাবতীয় রেকর্ডপত্র, বালাম জেলা রেজিষ্ট্রারের নিকট থেকে নিয়ে আসেন এবং সেখানে জমা দেন। এ ব্যাপারে উপজেলা সাব-রেজিষ্ট্রারের কোন দায়িত্ব নেই। কোন অবৈধ কার্যক্রম হয়ে থাকলে সে ব্যাপারে জেলা রেজিষ্ট্রারার মহোদয় ব্যবস্থা নিবেন। আমি এ ব্যাপারে অবগত হলাম এবং জেলা রেজিষ্ট্রারার মহোদয়কে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অবগত করব। সাব-রেজিষ্ট্রার আরও জানান, অবশ্যই অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বরিশাল জেলা রেজিষ্ট্রারার নৃপেন্দ্র-নাথ সিকদার এর নিকট গেলে তার অফিস সহকারী জানান, তিনি ছুটিতে আছেন। ২০ জুলাই অফিসে আসবেন। অনুসন্ধানকালে এলাকাবাসী জানান, নুরুল আমিন সোহেল মোল্লা ধূর্ত প্রকৃতির লোক। তার স্বভাব, চরিত্র ভাল না। তার পিতার জীবিত অবস্থায়ই সে বিবাহ রেজিষ্ট্রি সংক্রান্ত বিভিন্ন আইন বিরোধী কাজ করত। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট অনুরোধ জানাই, তদন্ত পূর্বক মো: নুরুল আমিন সোহেল মোল্লার আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হোক।

Comments
Loading...