Connecting You with the Truth

‘রহস্যজনক’ তেল ভাণ্ডার বানাচ্ছে চিন, চিন্তায় গোটা বিশ্ব

Chinআন্তর্জাতিক ডেস্ক: রহস্যজনক ভাবে বিপুল পরিমাণে খনিজ তেল মজুত রয়েছে। আন্তর্জাতিক রীতিনীতি মেনে আগে জানানো হত, কী পরিমাণে খনিজ তেল মজুত করা হচ্ছে। কিন্তু, এখন সে তথ্যও ঠিক মতো প্রকাশ করা হচ্ছে না। পীত সাগরের উপকূল বরাবর এবং ইয়াংসি নদীর ব-দ্বীপে একের পর এক দৈত্যাকার ট্যাঙ্কে রোজ বাড়ছে খনিজ তেলের মজুত। এত খনিজ তেল মজুত করার পিছনে চিনের পরিকল্পনা ঠিক কী? ধন্দে গোটা বিশ্ব।
আপৎকালীন পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে খনিজ তেল মজুত করে রাখার ব্যবস্থা নতুন কিছু নয়। একে স্ট্র্যাটেজিক পেট্রোলিয়াম রিজার্ভ (এসপিআর) বা কৌশলগত খনিজ তেল ভাণ্ডার বলা হয়। ২০০৯ সালে চিন জানিয়েছিল, তারা নিজেদের ওই আপৎকালীন ভাণ্ডারে ১০০ দিনের মতো খনিজ তেল জমিয়ে রাখতে চায়। তার পর থেকেই খনিজ তেল আমদানি বিপুল পরিমাণে বাড়িয়েছে চিন। ২০১৬ সালে রেকর্ড পরিমাণ খনিজ তেল আমদানি করেছে বেজিং, যার ফলে তেলের আন্তর্জাতিক বাজার আবার কিছুটা চাঙ্গা হয়েছে। কিন্তু কতটা খনিজ তেল মজুত করা হল, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়েছে, নাকি এখনও বাকি আছে, তা নিয়ে আর কোনও তথ্য চিন প্রকাশ করছে না। এসপিআর-এর বিষয়ে বিচ্ছিন্ন ভাবে যে সব তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে, তাতে আন্তর্জাতিক মহলের সংশয় আরও বাড়ছে।china oil
২০১৫-র ডিসেম্বরে চিন নিজেদের আপৎকালীন খনিজ তেল ভাণ্ডার সম্পর্কে একটি তথ্য প্রকাশ করেছিল। তাতে জানানো হয়, সে বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত আপৎকালীন ভাণ্ডারে মজুত থাকা মোট অশোধিত তেলের পরিমাণ ১৯ কোটি ১০ লক্ষ ব্যারেল। কিন্তু একই সঙ্গে জানানো হয়েছিল, এসপিআর-এর জন্য নির্মিত মোট আটটি তেল মজুতক্ষেত্রে ১৮ কোটি ব্যারেল অশোধিত তেল রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। বাকি ১ কোটি ১০ লক্ষ ব্যারেল তেল তা হলে কোথায় রাখা হয়েছে? সে উত্তর মেলেনি।
আমেরিকার ক্ষেত্রে পরিস্থিতিটা কিন্তু ঠিক উল্টো। নিজেদের আপৎকালীন বা কৌশলগত ভাণ্ডারে আমেরিকা কতটা খনিজ তেল মজুত রেখেছে এবং তা দিয়ে কত দিন কাজ চালানো সম্ভব, সংশ্লিষ্ট মার্কিন ওয়েবসাইটে তার পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য রয়েছে। তা থেকে জানা যাচ্ছে, ২০১৬-র ২৬ অগস্ট পর্যন্ত আমেরিকার আপৎকালীন ভাণ্ডারে মজুত খনিজ তেলের পরিমাণ প্রায় ৭০ কোটি ব্যারেল। ওই ভাণ্ডার গোটা আমেরিকার ১৪৯ দিনের প্রয়োজন মেটাতে সক্ষম।
চিনের ক্ষেত্রে অশোধিত তেল ভাণ্ডারের চেহারাটা ঠিক কেমন, তা কিন্তু মোটেই এত স্পষ্ট করে বোঝা যাচ্ছে না। তাই বিশেষজ্ঞরা অন্য রকম ভাবে চিনের আপৎকালীন ভাণ্ডারের আঁচ পাওয়ার চেষ্টা করছেন। চিনের দৈনন্দিন প্রয়োজন মেটানোর জন্য যে পরিমাণ খনিজ তেল দরকার হয়, তার চেয়ে আমদানি এবং তেল উত্তোলনের মোট পরিমাণ কতটা বেশি, তা জানলেই বোঝা যাবে, রোজ কী পরিমাণ অশোধিত তেল আপৎকালীন ভাণ্ডারে চিন পাঠাচ্ছে। দেখা গিয়েছে, চিনের খনিজ তেল আমদানি ও উত্তোলনের মোট পরিমাণ দৈনিক প্রয়োজনীয়তার চেয়ে ১২ লক্ষ ব্যারেল অতিরিক্ত। অর্থাৎ আপৎকালীন ভাণ্ডারে রোজ ১২ লক্ষ ব্যারেল অশোধিত তেল তারা জমিয়ে ফেলে। এই হিসেব অনুযায়ী ২০১৬-র অগস্টের মধ্যেই চিনের ভাণ্ডারে ৫১ কোটি ১০ লক্ষ ব্যারেল অশোধিত তেল জমে গিয়েছে। ১০০ দিনের প্রয়োজনীয়তা মেটানোর মতো ভাণ্ডার তৈরি করা হবে বলে যে ঘোষণা ২০০৯ সালে চিন করেছিল, তার জন্য ৫১ কোটি ১০ লক্ষ ব্যারেল অশোধিত তেল জমানোই কিন্তু যথেষ্ঠ।
প্রশ্ন উঠেছে এখানেই। ১০০ দিনের ভাণ্ডার বানানোর যে পরিকল্পনা চিন করেছিল, তা যদি বাস্তবায়িত হয়ে গিয়ে থাকে, তা হলে চিনের খনিজ তেল আমদানি এ বার কমে যাওয়া উচিত। কিন্তু, আমদানি মোটেও কমেনি। সেপ্টেম্বরের শুরুতেও অতিরিক্ত খনিজ তেল আমদানি চলছে বলে সূত্রের খবর। তা হলে এই অতিরিক্ত তেল যাচ্ছে কোথায়? চিন কি আপৎকালীন ভাণ্ডারের আকার আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে? যদি করে থাকে, তা হলে আন্তর্জাতিক পরম্পরা অনুযায়ী তা ঘোষণা করা হচ্ছে না কেন? এই অতিরিক্ত অশোধিত তেল মজুতই বা করা হচ্ছে কোথায়? তা হলে কি গোপনে আরও অনেক ট্যাঙ্ক বানিয়ে ফেলেছে বেজিং? সে রকম হয়ে থাকলে, তেল ভাণ্ডারের বহর ঠিক কতটা বড় হতে চলেছে? উত্তর নেই কোনও প্রশ্নেরই। বেইজিং-এর এই রহস্যজনক আচরণ চিন্তায় রাখছে গোটা বিশ্বকেই। আনন্দবাজার পত্রিকা।

Comments
Loading...