শরিফুল ইসলাম প্রিন্স, জলঢাকা: ঠাস ঠাস বন্দুকের গুলির শব্দ এক গুলিতে দেহটি ১০ হাত উপরে পড়ার মত ঘটনা। গাও মোর শিউরে উঠে, কলিজা ছিরি যায়, সেই মোর স্বামীক রাজাকার গুলা চাউল দিবার কথা কয়া বাড়ী থেকে ডাকি আনে। তারপর তুলে দেয় খাঁন সেনার হাতোত। আজকে যেটে জলঢাকা হাই স্কুল সেটে কোনা একটা তেতুল গাছ আছে। সেই গাছোত মাথা নিজ পাকে করি পাওত রশি লাগে ৩ দিন ঝুলি থুইয়া বন্দুকের ব্যানোট দিয়া ঘুতি ঘুতি জীবন্ত অবস্থায় খাল খুড়ি পুতে থুইছে। সেইল্লা রাজাকার এখনো বাচি আছে, তার বিচার কাহো নেয় না। আবেগ প্লুত হয়ে কান্না জরিত কন্ঠে মিডিয়া কর্মীদের এসব কথাই বললেন, নীলফামারীর জলঢাকার সর্ব প্রথম শহীদ মতিয়ার রহমান (মতি মাষ্টারের) সহ ধর্মীনি হাসিনা বেওয়া (৭০)। গত কাল বৃহস্পতিবার কাজির হাট পান্থা পাড়ায় তার সঙ্গে কথা হলে, লোহমর্ষক বর্ণনা গুলো করে হাউ মাউ করে কেঁদে ফেলেন। মতিয়ার রহমান ডাক নাম ছিল মতি মাষ্টার। জলঢাকা কালিগঞ্জ বধ্যভূমি যেখানে ঘুমিয়ে আছেন ৩ শত শহীদ। ঠিক তাদের মতই পাকসেনা কর্তৃক প্রাণ দিতে হয়েছিল পোষ্ট মাষ্টার মতিকে। ছোট্ট একটি গ্রাম কাজির হাট পান্থা পাড়া সেখানেই থাকতেন তিনি। যুদ্ধকালীন সময়ে তিনি জলঢাকার পোষ্ট মাষ্টারের দায়িত্বে ছিলেন। একাত্তরের দিন গুলিতে তিনি ছিলেন, স্বাধীনতা কামী, মুক্তিযুদ্ধের স্বাধীনতা কামী, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে গোপনে সংবাদ আদান প্রদান করতেন ও প্রকাশ্যে তিনি স্বাধীনতার কথা যত্র-তত্র বলে বেড়াতেন এবং ৬ নং সেক্টরের সকল মুক্তিযোদ্ধাদের গোপন বার্তা পৌছে দিতেন। দিনের বেলায় তিনি চাকুরী করতেন এবং রাতের বেলায় স্বাধীনতার পক্ষের যুব শক্তিকে সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধে যাওয়ার অনুপ্রেরণা যোগাতেন। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষন মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করে তাকে। ২৫ মার্চ রাতে স্বাাধীনতা ঘোষণা দেওয়ার সাথে সাথে তিনি সে সব খবর মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে পৌছে দিতেন, এটাই ছিল তার বড় অপরাধ। ফলশ্রæতিতে মতি মাষ্টরকে স্থানীয় আল বদর রাজাকাররা মুক্তিযোদ্ধাদের চাউল দেওয়ার কথা বলে বাড়ী থেকে ডেকে নিয়ে গিয়ে তুলে দেয় খান সেনাদের হাতে, নির্মম, অমানবিক, লোমহর্ষক অত্যাচার চালায়। তার আকুতি ও আর্তচিৎকারে সেখানকার বাতাস ভারী হয়ে গিয়েছিল। কেননা, তেতুল গাছের ডালে পায়ে রশি বেধে ঝুলিয়ে রাখে টানা ৩ দিন। এরপর শরীরের রক্ত রস নেমেছিল তার মাথায়। ৩ দিন পর ৭ জুন জীবন্ত অবস্থায় গর্তে ফেলে গুলি করে হত্যা করে নরপিষাচ পাক সেনারা। মতি মাষ্টারের সেদিন ৩ মাসের অন্তসত্তা স্ত্রী আড়াই বছরের মেয়ে বিলকিছকে রেখে গিয়েছিলেন। সেদিন তিনি জানতেন না এ যাওয়াই তার শেষ যাওয়া। সেদিনের গর্ভে ধারনরত সন্তানটি আজ অনেক বড় হয়েছে, নাম রেখেছে মুক্তা। পিতাকে জন্মের পর দেখতে না পারলেও পিতৃ হত্যার দাবী সরকারের নীতি নির্ধারকদের কাছে। শহীদ এ মুক্তিযোদ্ধা সংগঠকের স্মৃতি সংরক্ষনে এখন পর্যন্ত কেহই খোজ নেয়নি। আবর্জনায় বিস্তৃত, পরিত্যক্ত পঁচা জলে ডুবে আছে তার কবর। স্বাধীনতার ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলেও রাষ্ট্রের নিয়ম নীতিতেও এ মুক্তিযোদ্ধার সংগঠকের