ওজন সীমার অতিরিক্ত পন্যবাহী ট্রাক চলাচল; অকালেই নষ্ট হচ্ছে মহাসড়ক

আসাদুজ্জামান আপেল, পঞ্চগড়:


পঞ্চগড়ে জাতীয় ও আঞ্চলিক বিভিন্ন সড়কে অনুমোদিত ওজন সীমার অতিরিক্ত ওজনের পন্যবাহী ট্রাক চলাচলের ফলে সময়ের আগেই ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে জাতীয় মহাসড়কসহ আন্তজেলার বিভিন্ন সড়ক। ওজন নিয়ন্ত্রণে সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়ের মাননীয় মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পঞ্চগড়-বাংলাবান্ধা জাতীয় মহাসড়কের শিংপাড়া এলাকায় এক্সেললোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের উদ্বোধন করেন। কিন্তু অতিরিক্ত ওজনের পন্য পরিবহনের ফলে তিন মাসের মাথায় এক্সেললোড নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রের যন্ত্রাংশ বিকল হয়ে যায়। বর্তমানে এই সড়ক দিয়ে ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত ওজনের পন্যবাহী পরিবহন অবাধে চলাচল করছে। এছাড়া বিভিন্ন জেলা সড়কেও ওজন সীমার অতিরিক্ত ওজনের ট্রাক চলাচলের ফলে মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে বিভিন্ন সড়ক। একই কারণে উদ্বোধনের কয়েক দিনের মাথায় পঞ্চগড়-বেংহারি-মাড়েয়া-দেবীগঞ্জ জেলা সড়কটি মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সড়ক ও জনপদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জেলার জাতীয় ও বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়কে ছয় চাকার ট্রাকের পন্য পরিবহনের সর্বোচ্চ ওজন সীমা ১৫ টন। কিন্তু এসব ট্রাকে ৩০ থেকে ৩৫ টন পাথরবালি অবাধে পরিবহন করা হচ্ছে। এছাড়া ১০ চাকার ২২ টন ওজন সীমার ট্রাকে ৫০ থেকে ৫৫ টন পর্যন্ত পাথরবালি পরিবহন করা হচ্ছে। অনুমোদিত ওজন সীমার অতিরিক্ত ওজনের পন্যবাহী ট্রাক অনিয়ন্ত্রিত চলাচলে জেলার গুরুত্বপুর্ন জাতীয় মহাসড়কসহ জেলা সড়কগুলো অকালেই নষ্ট হচ্ছে। এসব সড়ক দিয়ে বিভিন্ন আকারের ট্রাকে ঝুকিপুর্ন উচু করে বৈদ্যুতিক খুটি, রেল ¯িøপার, পাথর ও বালি পরিবহন করা হয়। এতে বিভিন্ন এলাকায় জেলা সড়ক নির্মাণের কয়েক দিনের মধ্যে ইট বিটুমিন উঠে নষ্ট হয়ে যায়। অল্প দিনেই ফাটল ধরে দীর্ঘস্থায়ী টেকশই হয়না সড়কগুলো। পাশাপাশি অন্যান্য যানবাহন চলাচলসহ সাধারণ পথচারীদের দূর্ভোগ পোহাতে হয়। এতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের গোচ্ছা যাচ্ছে কোটি কোটি। এই অপকর্মে সংশ্লিষ্ট বালু মহালের ইজারাদারসহ স্থানীয় বালি ব্যবসায়ী সুরুজ্জামান, হানি, মো. তফাজ্জল, ঝুটি পাগলাসহ বেশ কয়েকজন জড়িত বলে জানা গেছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে পঞ্চগড়-দেবীগঞ্জ জেলা সড়কের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানা গেছে, প্রায় আট কোটি টাকা ব্যায়ে ৩১ কিমি জেলা সড়কটি সংস্কারের পর চালু করে সড়ক বিভাগ। পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না থাকায় সংস্কারের সময় সড়কটিতে কার্পেটিং এর পুর্বে দুই ইঞ্চি মোটা পাথরের স্তর (বাইন্ডার কোর্স) দেওয়া হয়নি। বিধি অনুযায়ী এই সড়কের ধারনক্ষমতা ১০ চাকার ট্রাকে পন্যসহ সর্বোচ্চ ২২ মে. টন। কিন্তু সড়কটি চালুর পর থেকেই ১০ চাকার ট্রাকে ৪০ থেকে ৪৫ মে. টন পর্যন্ত ভেজা বালি এবং পাথর পরিবহন শুরু হয়। ১০ চাকার প্রতিটি ট্রাকের ওজন প্রায় ১০ মে. টন এবং পন্যসহ ওজন প্রায় ৫০ থেকে ৫৫ মে. টন। বালি এবং পাথরভর্তি এসব ট্রাক অবাধে চলাচলে সড়কটির ধুলাঝাড়ি থেকে পাক্রীতলা পর্যন্ত প্রায় ৭ কিমি এলাকা মারাত্বকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। বিভিন্ন স্থানে ফাটলসহ সংস্কারের কার্পেটিং উঠে গেছে। সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং রক্ষনাবেক্ষন অধিশাখা কর্তৃক ওজন সীমার অতিরিক্ত ওজনের পন্যবাহী ট্রাক চলাচল নিয়ন্ত্রনে নির্দেশনা রয়েছে। অজ্ঞাত কারণে সড়ক রক্ষার্থে কোন নির্দেশনা বাস্তবায়ন করা হয়নি। তবে ধুলাঝাড়ি থেকে পাক্রীতলা এলাকায় ওয়াই জংশন পয়েন্ট স্থাপনসহ জরুরী পদক্ষেপ গ্রহন করেছে দাবি স্থানীয় সড়ক বিভাগের।
এদিকে স্থানীয় একজন প্রভাবশালী নেতা দলীয় প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘদিন থেকে অবৈধভাবে ওই সড়কের উপরে ১০ চাকার ট্রাকে বালি তোলে বিভিন্ন এলাকায় পরিবহন করছেন। সড়কের উপর বালির বড় বড় স্তুপ এবং সেথান থেকে বালি ট্রাকে তোলার (লোড) ফলে অন্যান্য পরিবহন চলাচলসহ স্থানীয় পথচারীদের চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। তবে বালি ব্যবসায়ী ওই চক্রটি প্রভাবশালী হওয়ায় স্থানীয় কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পায় না। অন্যদিকে সড়ক বিভাগের পক্ষ থেকেও অজ্ঞাত কারণে অতিরিক্ত ওজনের পরিবহন নিয়ন্ত্রনে শক্ত কোন পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
বোদা উপজেলার বেংহারি ইউনিয়নের তেপুকুরিয়া এলাকার আব্দুল হামিদ বলেন, আমাদের এই ছোট রাস্তার উপরে প্রতিদিন বড় বড় ট্রাকে বালি লোড করা হয়। এজন্য আমাদের যাতায়াতে চরম অসুবিধা হয়। আমরা কাউকে কিছু বলতেও পারি না।
করতোয়া নদীর সংশ্লিষ্ট বালু মহালের ইজারাদার আব্দুর রহমান বলেন, আমি বালু মহালটি কয়েক জনের কাছে দিয়েছি। তারা বালু উত্তোলন করেন। কিন্তু কোথায় মজুদ করেন এবং কিভাবে কোথায় পরিবহন করেন তা জানি না।
পঞ্চগড় সড়ক বিভাগের উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. নুরুল আলম বলেন, বাংলাবান্ধা-পঞ্চগড় জাতীয় মহাসড়কে ৫০ থেকে ৫৫ মে. টন পর্যন্ত পন্যবাহী ট্রাক চলাচল করছে। যা নির্ধারিত ওজন সীমার চেয়ে অনেক বেশি। এজন্য অনেক সড়ক সময়ের আগেই নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ না থাকায় পঞ্চগড়-দেবীগঞ্জ জেলা সড়কটিতে কার্পেটিং এর পুর্বে দুই ইঞ্চি পুরু পাথরের একটি স্তর (বাইন্ডার কোর্স) দেওয়া হয়নি। এই সড়কের ধারন ক্ষমতা ১০ চাকার ট্রাকে সর্বোচ্চ ২২ মে. টন। কিন্তু সড়কটি দিয়ে ৫০ থেকে ৫৫ মে. টন পর্যন্ত বালি ও পাথরভর্তি ট্রাক অবাধে চলাচল করছে। এজন্য সড়কটি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। আমরা ধুলাঝাড়ি থেকে পাক্রীতলা এলাকায় ওয়াই জংশন পয়েন্ট স্থাপনসহ জরুরী পদক্ষেপ গ্রহনের চেষ্টা করছি।

Comments (0)
Add Comment