‘স্টোন’ হইতে সাবধান

রকমারি ডেস্ক:
গলস্টোন:
বমনেচ্ছা জাগে, বমি হয় এবং পাঁজরের ঠিক নিচে পাকস্থলীর ওপর দিকটার ডান ধার দিয়ে তীব্র ব্যথা। এই ব্যথা ডান কাঁধেও ছড়ায়, ছড়াতে পারে। থাকে কয়েক মিনিট। কারও কারও ক্ষেত্রে প্রায় তিন ঘণ্টা ধরে টানা চলে ব্যথা। এরকম উপসর্গ মানে পিত্তাশয়ে বা পিত্তবহনি নালিতে পাথর জমেছে। যাকে এক কথায় বলে পিত্তপাথুরি। ছোট ছোট পাথর হতে পারে, বড়ও হতে পারে। কোলেস্টেরল বা ক্যালসিয়াম জমে এই পাথর হয়। যেকোনো বয়সেই এই ধরনের পাথর হতে পারে। তবে বয়সকালেই বেশি হয়, আর তা হয় কোলেস্টেরল আধিক্যেই। জানাচ্ছেন লন্ডনের ইউনিভার্সিটি কলেজ হসপিটালের অন্ত্রবিদ ডাঃ অ্যান্টন ইমানুয়েল। তার কথায়, যে মহিলাদের শরীরে ইস্ট্রোজেন হরমোনের আধিক্য ঘটে, তাদের গলব্লাডারে এ ধরনের পাথর হওয়ার আশঙ্কা বেশি। যারা অতি-ওজনি এবং ফ্যাটযুক্ত খাবার-দাবার বেশি খান, তাদের এই পাথর হয় কোলেস্টেরল আধিক্যে। কম ফ্যাট আছে এমন খাবার-দাবার খেতে হবে, জল এবং রসালো ফল বেশি খেতে হবে। সঙ্গে পেইনকিলার অর্থাৎ ব্যথাহরণি ওষুধও। পাথর গলিয়ে দেওয়ার ওষুধ আছে। গলানো না গেলে অস্ত্রোপচার করতে হবে। না হলে হজমতন্ত্র অবরুদ্ধ হয়ে পড়তে পারে, সেখানে সংক্রমণ ঘটাতে পারে। ব্যথা, বমি পিত্তপাথুরির জন্যই হচ্ছে কিনা তা শনাক্ত করা এবং চিকিৎসা করার ভার চিকিৎসকের ওপরই ছেড়ে দিন।
টনসিল স্টোন:
খুদে খুদে ছিট দাগ হয় টনসিলে। খেতে। গিলতে কষ্ট হয়, ব্যথা হয় গলাধঃকরণের সময়। মুখে ধাতব স্বাদ, নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ হয়। উল্লেখ্য, টনসিলে ছিট দাগ সব সময় দৃশ্যমান হয় না। অন্য দিকে টনসিল স্টোনকে অনেক সময় গলায় সংক্রমণ হয়েছে ধরে নিয়ে থ্রোট ইনফেকশনের চিকিৎসা করা হয়। টনসিল স্টোন হয় টনসিলের খাদে শ্লেষ্মা, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবারের অংশ, ব্যাকটিরিয়া জমে। জানাচ্ছেন দক্ষিণ লন্ডনের ইউনিভার্সিটি হসপিটাল লিউইসহ্যামের ইএনটি সার্জেন ডা.অ্যানাসটাসিয়া রচমানিডু। তার বক্তব্য, প্রাপ্তবয়স্করাই বেশি আক্রা¤— হন। কারণ, প্রাপ্তবয়স্কদের টনসিল বড় হয়। সেখানে বেশি করে জমতে পারে পাথর তৈরির উপাদান। হাই ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখার কিছু কিছু ওষুধ, কিছু কিছু ব্যথাহরণি ট্যাবলেট, কিছু কিছু অবসাদরোধী ট্যাবলেট বেশি খেলেও টনসিল স্টোন হয়। এরকম হওয়ার কারণ, ওই সব ওষুধের প্রভাবে মুখের ভেতরটা শুকিয়ে থাকে, পর্যাপ্ত লালা তৈরি না হওয়ায় ভুক্তাবশেষের একটা অংশ টনসিলের পর আর নামতে পারে না। তবে টনসিলে হোয়াইট প্যাচ বা ছিট দাগ হলেই যে তা টনসিল স্টোন, সব ক্ষেত্রে তেমন নাও হতে পারে, ক্যান্সারের কারণেও ওই রকম ছিট দাগ হতে পারে টনসিলে। টনসিল স্টোনের ভোগান্তি দূর করতে প্রতিদিন সকালে একটা করে শুকনো শক্ত বিস্কুট (ড্রাই ক্র্যাকার) খান চিবিয়ে। হালকা গরম জলে গার্গল করুন। নাকে ¯েপ্র করার বোতলের মতো একটা বোতল নিয়ে তাতে হালকা গরম জল, আধ চা-চামচ নুন মিশিয়ে টনসিলে ¯েপ্র করুন। সেরকম অবস্থায় ডাক্তার লেজার ট্রিটমেন্টের পরামর্শ দেবেন। খুব কঠিন অবস্থা হলে টনসিল কেটে বাদ দিতে হবে। তবে টনসিল কেটে বাদ না দেওয়াই ভাল। কারণ ব্যাকটিরিয়াদের ফাঁদে ফেলে আটকে দেয় টনসিল, ফলে ঊধর্ব শ্বাসনালিতে সংক্রমণ ঘটাতে পারে না। টনসিল স্টোন হওয়া আটকাতে যে ব্যাপারগুলি নিয়ম মেনে করা উচিত, সেগুলি: দু’বেলা দাঁত মাজা। অ্যালকোহল নেই এমন মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করা। ফ্লস করা অর্থাৎ খসখসে রেশমের সুতো পাশাপাশি দুই দাঁতের মাঝখানে ঢুকিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা।
কিডনি স্টোন:
কোনো পূর্বাভাস ছাড়াই কুঁচকি তথা কটিসন্ধি জুড়ে ছড়িয়ে পড়া তীব্র যন্ত্রণা। শুশ্রƒষা না করা হলে এই যন্ত্রণা ৩ ঘণ্টাও স্থায়ী হতে পারে। মূত্রের সঙ্গে রক্ত মিশে বেরতে পারে। ঘোলাটে প্রস্রাব হবে। দুর্বল বোধ হবে। বমি পেতে পারে। বমি হয়েও যেতে পারে। ঘন ঘন মূত্রবেগ হবে। প্রস্রাব করার সময় জ্বালা বোধ হয়। নানা রঙের হতে পারে কিডনি স্টোন। বালুকণা থেকে গলফ বল, নানা আকৃতির হতে পারে কিডনি স্টোন। কারও কিডনিতে এই স্টোন হয় ক্যালসিয়াম আর ফসফেট মিলে। কারও এই স্টোন হয় ক্যালসিয়াম এবং অক্সালেট মিলে। কারও হয় ম্যাগনেসিয়াম এবং অ্যামোনিয়া মিলে। কারও হয় ইউরিক অ্যাসিডের স্টোন। কোষ্ঠ সাফ করার জোলাপ।বড়ি।রেচক খেতে অভ্যস্ত যারা এবং সঙ্গে উচ্চ মাত্রার প্রোটিন যুক্ত খাবার খেয়ে থাকেন, পর্যাপ্ত জল পান করেন না, তাদের ক্ষেত্রে মূত্রনালিতে সংক্রমণ ঘটতে থাকে মাঝে মধ্যেই, তার পরই কিডনি স্টোনের ভোগা¤ি— ধরা পড়ে। আগে যদি কারও কিডনি স্টোন ধরা পড়ে থাকে, তা হলে পাঁচ বছরের মধ্যে কিডনি স্টোন হওয়ার আশঙ্কা থাকে ৫০ শতাংশ। কিডনি স্টোন তৈরি হয়ে গেলে, সেই পাথর সাধারণত কিডনির ভেতরে অথবা কাছাকাছি এলাকায় থাকে অথবা মূত্রনালির ভেতর দিয়ে ঘোরাঘুরি করে, মূত্রপথে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। সহ্য করার মতো ব্যথা হলে বুঝতে হবে সেটি বড় পাথর হয়নি। গাই’স হসপিটাল, লন্ডনের মূত্রতন্ত্রবিদ ডাঃ জোনাথন গ্লাসের বক্তব্য, মূত্রপথ দিয়ে যদি স্টোন বেরিয়ে গেল ভাল কথা, কিন্তু যে পাথর বেরতে পারবে না, সেটিকে এ’ট্রাকোরপোরিয়াল শক ওয়েভ লিথোট্রিপসি এক্স-রের মাধ্যমে শক ওয়েভ দিয়ে টুকরো টুকরো করে ভাঙতে হবে। ভাঙার আগে আলট্রাসাউন্ডে শনাক্ত করতে হবে অবস্থান। সংশ্লিষ্ট এলাকা সাময়িক অচেতন করে নিয়ে এই শক ওয়েভ দিতে হয়। বড় আকৃতির পাথর হলে লিথোট্রিপসির মাধ্যমে লেজার দিয়ে ভাঙতে হয়। এ ছাড়া অস্ত্রোপচার করে বের করে আনার প্রক্রিয়া তো আছেই। ডাঃ গ্লাসের পরামর্শ, কিডনিতে স্টোন হওয়া আটকাতে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ২-৪ লিটার পানি-সহ নানা তরল খান। প্রস্রাবকে হলুদাভ হতে দেবেনই না। সব ধরনের মাংস খাওয়াই কমিয়ে দিন। তা হলে প্রস্রাবে অ্যাসিডিটি কমবে। পাথর হওয়ার আশঙ্কাও থাকবে না।

Comments (0)
Add Comment