এসব সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, ভারত সরকার আন্তর্জাতিক আইন ও রীতিনীতি লংঘন করে বাংলাদেশের প্রায় সব কয়টি নদীর উজানে একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করছে। ফলে সেচ মওসুমে তীব্র পানি সংকট, আবার বর্ষা মওসুমে ভয়াবহ বন্যা বাংলাদেশের জন্য প্রতি বছরের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের চতুর্থ বৃহত্তম নদী তিস্তার উজানে গজলডোবায় বাঁধ দিয়ে শুকনো মওসুমে ভারত কর্তৃক একতরফা পানি প্রত্যাহারের ফলে আমাদের দেশের নীলফামারী, রংপুর, দিনাজপুর, লালমনিরহাট সহ গোটা উত্তরাঞ্চল আজ মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখোমুখি, মরুকরণের ঝুঁকিতে সমগ্র অঞ্চল। ভূ-পৃষ্ঠের পানি সংকটে ভূ-নিম্নস্থ পানির উপর নির্ভরশীল হচ্ছে খাবার, গোসল, সেচ প্রভূতি কাজ। ফলে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় আর্সেনিক সমস্যা, নদীর নাব্যতা, মৎস্যজীবীদের সংকট, জলবায়ু, জীব বৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির মুখে তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতাধীন ১ লক্ষ ১১ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমির বেশীর ভাগই গত বছর সেচ সুবিধা পায়নি। গত বছর যতটুকু পেয়েছিল এবছর তাও নেই। বর্তমানে তিস্তা সেচ প্রকল্পের অধীনে কোন জমিতে সেচ সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে না। বিকল্প আয়োজন যারা করছে, তাদের বিঘা প্রতি বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে প্রায় ২৫০০(দুই হাজার পাঁচশত) টাকা। যাদের বিকল্প আয়োজনের সামর্থ্য নেই তারা পড়ছে বিপাকে।
অন্যদিকে বর্ষা মওসুমে ভারত বাঁধের সবগুলো গেট খুলে দেয়, যার ফলে বিপুল পানির ¯্রােতে ঘর-বাড়ী, ফসলের ক্ষেত ডুবে যায়। নদীর ভাঙ্গনে চাষের জমি, বসতবাড়ী, হাট-বাজার, স্কুল নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। ফলে তিস্তা আজ আমাদের আশির্বাদ না হয়ে হয়েছে অভিশাপ।
এ অবস্থা থেকে বাঁচার একমাত্র পথ তিস্তাসহ অভিন্ন সকল নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়। কিন্তু আমাদের নতজানু শাসক শ্রেণীর প্রতিনিধিত্বকারী রাজনৈতিক দলগুলোর জোট এবং মহাজোট কেউই পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করতে পারেনি। ক্ষমতায় টিকে থাকার প্রয়োজনে সরকার পক্ষ জনগণের সকল মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করছে। অপর দিকে বিরোধী পক্ষ যে কোন মূল্যে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য সহিংসতা, গুপ্ত হামলা, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদির মাধ্যমে জনজীবন বিপর্যস্ত করে তুলছে। প্রতিদিন মানুষ মরছে, হয় ক্রসফায়ারে না হয় আগুনে পুড়ে। এ অবস্থার সুযোগ নিয়ে গোটা দেশে অপরাধমূলক কর্মকান্ড বৃদ্ধি পাচ্ছে। জোট-মহাজোটের উপর নির্ভর করে জনজীবনের কোন সংকট যেমন সমাধান সম্ভব নয়, তেমনি পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করাও সম্ভব নয়। গণ আন্দোলনের পথে জনগণের ঐক্যবদ্ধ লড়াই-সংগ্রামই পারে শাসক গোষ্ঠিকে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায়ে বাধ্য করতে।
নেতৃবৃন্দ আরো বলেন, বর্তমান সংঘাতপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এ ধরণের কর্মসূচি পালন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তারপরও উত্তরাঞ্চলের মরুকরণ রোধ ও কৃষি-কৃষক, প্রাণ-প্রকৃতিকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষার প্রয়োজনে আমরা রোডমার্চ কর্মসূচি পালন করছি। এই কর্মসূচিতে পথে পথে সমাজের সর্বস্তরের মানুষের সমর্থন, সক্রিয় অংশগ্রহন ও সহযোগিতা আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে।
নেতৃবৃন্দ, তিস্তাসহ সকল অভিন্ন নদীর পানির ন্যায্য হিস্যা, তিস্তা সেচ প্রকল্পের আওতাধীন সকল চাষের জমিতে প্রয়োজনীয় পানি, গত বছর পানি না পাওয়ায় ক্ষতিগস্ত চাষীদের প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরণ, পানি না থাকায় তিস্তা পাড়ের বেকার মৎস্যজীবীদের কাজ ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে সর্বস্তরের জনগণের প্রতি ঐক্যবদ্ধ গণআন্দোলন গড়ে তোলার উদাত্ত্ব আহবান জানান।
রোডমার্চ থেকে আগামী মার্চের তৃতীয় সপ্তাহের শেষে রংপুর বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ও প্রধানমন্ত্রী বরাবর তিস্তা চুক্তি সংক্রান্ত স্মারকলিপি পেশ করা হবে।