ঝিনাইদহে স্বামীকে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে গণধর্ষণ, আটক ২
মনিরুজ্জামান সুমন, ঝিনাইদহ: ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে স্বামীকে বেঁধে রেখে তরুনী স্ত্রীকে গণধর্ষণ করার অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর সোমবার ভোরে স্বামী পরিচয়দানকারী জনৈক রাজন আলী থানায় অভিযোগ দিলেও পুলিশ বিষয়টি আমলে নেয়নি। পরে স্থানীয় এমপি বিষয়টি থানা পুলিশকে জানালে তোড়জোড় শুরু হয়। এরপর পুলিশ অভিযান চালিয়ে পায়েল (৪০) ও জহুরুল (৪২) নামের দুই ধর্ষণকারীকে আটক করে। রোববার দিবাগত রাতে কালীগঞ্জের ফয়লা গোরস্থান এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। এরপর থেকে এখনো ওই গৃহবধু নিখোঁজ রয়েছে।
ধর্ষিত গৃহবধুর স্বামী পরিচয়দানকারী রাজন আলী জানান, তার স্ত্রীর সৎ মায়ের সাথে রোববার সন্ধ্যায় গোলযোগ বাধে। এ সময় তারা ঝিনাইদহের ঘোড়াপাড়া গ্রাম থেকে রাগ করে নিজ বাড়ী জীবননগর উপজেলার আন্দুলবাড়ীয়া গ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। পথিমধ্যে কালীগঞ্জে আসার পর রাত হয়ে যাওয়ায় গাড়ি পাচ্ছিল না তারা। এ সময় রাজন তার এক পরিচিত বন্ধু কালীগঞ্জের গোরস্থান পাড়ার মৃত বরকত হোসেনের ছেলে পায়েলের কাছে ফোন করে। এ সময় ওই বন্ধু স্ত্রীসহ তাকে বাড়ীতে থাকার ব্যবস্থা করে দেবার কথা বলে সেখানে আসতে বলে। পরে তাদের একই এলাকার আবুল কাশেমের ছেলে শিপলুর বাড়ীতে থাকার ব্যবস্থা করে দেয়। গভীর রাতে বন্ধু পায়েলের ইন্দোনে ৫/৬ জন যুবক ওই বাড়িতে এসে দরজা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করে। এ সময় তারা তাদের বিভিন্ন প্রকার ভয়ভীতি দেখায় এবং দু’জনের কাছে থাকা নগদ তিন হাজার টাকা, গলায় ও হাতে থাকা সোনার চেইন এবং রিং খুলে নেয়। পরে তাদের বাসে তুলে দেবার কথা বলে বাড়ী থেকে বের করে পার্শবর্তী একটি বাগানে নিয়ে যায়। সেখানে স্বামী রাজনকে গাছের সাথে বেঁধে রেখে স্ত্রীকে ৫/৬ জন যুবক গণ ধর্ষণ করে। ভোরের দিকে ধর্ষণকারীরা পালিয়ে যায়। এরপর থেকে ধর্ষিত ওই গৃহবধুর আর কোন খোঁজ মিলছে না।
রাজন আরো জানায়, ‘সংঘবদ্ধ ধর্ষণ শেষে ওই ছয় যুবক সটকে পড়ে। ভোর সাড়ে চারটার দিকে আমি হাতের বাঁধন খুলতে সক্ষম হই। পরে স্থানীয় মসজিদে এসে নামাজ পড়তে আসা মুসলিদের ঘটনাটি খুলে বলি। এসময় তারা আমাকে থানায় যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে আমার স্ত্রীকে উদ্ধারের জন্য খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। কিন্তু স্ত্রীকে কোথাও পাওয়া যায়নি।’ রাজন অভিযোগ করে বলেন, ‘‘মুসল্লিদের পরামর্শ মতো কালীগঞ্জ থানায় এসে ঘটনাটি পুলিশকে জানায়। কিন্তু পুলিশ সদস্যরা আমাকে থানা থেকে বের করে দিয়ে বলেন, ‘সবাই এখন ঘুমাচ্ছে, পরে আসেন। ’’
পরে রাজন গোরস্থানপাড়া মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মন্টুর সহযোগিতায় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনারের কাছে এসে ঘটনা জানান। তিনি পুলিশকে খবর দেন এবং দ্রত উদ্ধার তৎপরতা শুরু করতে বলেন।
কালীগঞ্জ থানার এসআই ইমরান আলম জানান, এক যুবক ভোরে এসে তার স্ত্রীকে ধর্ষণের কথা বলেছিলেন। কিন্তু অপেক্ষা করার কথা বলতেই নাকি সে দৌড়ে পালিয়ে যায়। যার কারনে সেন্ট্রিতে থাকা কনস্টেবল কাউকে কিছু জানায়নি।
ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার জানান, ‘সকালে আমি ঘটনা জানার সাথে সাথে থানা পুলিশকে যতদ্রুত সম্ভব আসামি আটক ও ধর্ষিতাকে উদ্ধারের নির্দেশ দিয়েছি’।
কালীগঞ্জ থানার ওসি আমিনুল ইসলাম জানান, তিনি ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে ধর্ষিতা গৃহবধূকে উদ্ধার ও ধর্ষণকারীদের আটকের জন্য অভিযান শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে ফয়লা গোরস্থান পাড়ার মৃত বরকত হোসেনের ছেলে পায়েল (৪০) ও পাইকপাড়া গ্রামের মসলেম উদ্দীনের ছেরে জহুরুল (৪২) নামের দুই ব্যক্তিকে পুলিশ আটক করেছেন।