সন্তান কেন হচ্ছে না, জানতে চান?
স্পোর্টস ডেস্ক:
পৃথিবীজুড়ে লাখ লাখ মানুষ প্রতি বছর প্রজনন সমস্যা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেন। প্রজনন অক্ষমতা বিশ্বজুড়ে একটি চ্যালেঞ্জ। তবে এর মোকাবেলা করতে হবে ধীরস্থির মনোভাব নিয়ে। আপনাকে হতে হবে ধৈর্য্যশীল, হতে হবে সহযোগী মনোভাবাপন্ন এবং সর্বোপরি প্রজনন অক্ষমতা বিষয়ক জ্ঞান বৃদ্ধি আপনার সমস্যা সমাধানে ভূমিকার রাখতে পারে। এমনকি প্রজনন সমস্যার ব্যাপারে আপনি হতোদ্যম ও বিভ্রান্তকর অবস্থার মুখোমুখি হলেও আপনাকে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এগুতে হবে। অনেক ক্ষত্রেই চিকিৎসক সমস্যার মূল খুঁজে সম্ভাব্য সব কৌশল প্রয়োগ করে আপনার সমস্যার সমাধান করে দিতে পারেন। সাধারণ পদক্ষেপ থেকে শুরু করে চিকিৎসা বিজ্ঞানের অনেক আধুনিক পদ্ধতির মাধ্যমে বর্তমানে সন্তান না হওয়া সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। সন্তান ধারণে অথবা জন্মদানে অক্ষমতাকে বন্ধ্যাত্ব বলে। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে এক বছর কোনো জন্মবিরতিকরণ পদ্ধতি ছাড়া নিয়মিত যৌনমিলনের পরেও সন্তান ধারণে ব্যর্থতাকে বন্ধ্যাত্ব বলে। বন্ধ্যাত্ব দুই ধরনের- প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি।
বন্ধাত্বের কারণ:
অনেক কারণেই বন্ধ্যাত্ব হতে পারে। বর্তমানে সমীক্ষায় দেখা যায় যে অর্ধেকেরও বেশি বন্ধ্যাত্ব ঘটে নারীদের বিভিন্ন জটিলতার কারণে। এরপর রয়েছে পুরুষের শুক্রের সমস্যা এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে অজানা কারণেও বন্ধ্যাত্ব হয়ে থাকে। বর্তমানে বিভিন্ন দেশে বন্ধ্যাত্বের হার বেড়ে গেছে। প্রথম সন্তান ৩০ বছরের বেশি বয়সে হওয়ার কারণে বর্তমানে বন্ধ্যাত্বের সংখ্যা ৩ থেকে ৫ শতাংশ। কনডম এবং জরায়ুর ভেতরে ব্যবহৃত বিভিন্ন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে যৌনবাহিত রোগের ঝুঁকি বেশি থাকায় সন্তান ধারণে অক্ষমতা বা বন্ধ্যাত্ব হয়ে থাকে।
গর্ভধারণে প্রতিবন্ধকতা:
গর্ভসঞ্চার বা গর্ভধারণের যে পদ্ধতি তা আপাতদৃষ্টিতে সরল মনে হলেও তা যে সবসময় ওই সরল পথে চলবে তা নয়। ব্যক্তির বয়স, জীবনযাত্রার ধরন শারীরিক সমস্যা ইত্যাদি প্রজনন অক্ষমতার কারণ হতে পারে। অরক্ষিত যৌনসঙ্গমে কেউ এক বছরের মধ্যেও গর্ভবতী হতে না পারলে তাকে প্রজনন অক্ষমতা বলে বিবেচনা করা যেতে পারে। প্রজনন অক্ষমতার জন্য স্বামী বা স্ত্রীর যে কোনো একজন অথবা উভয়েই দায়ী হতে পারেন। আবার কখনো কখনো কোনো কারণ নাও পাওয়া যেতে পারে। আপনি সন্তান উৎপাদনে সক্ষম কি না তা কয়েকটি প্রশ্নমালার উত্তর থেকে জানা যেতে পারে। চিকিৎসকের সহায়তার পাশাপাশি আপনি বা আপনার স্ত্রীর সন্তান না হওয়ার সম্ভাব্য কারণ বা সম্ভাব্য চিকিৎসা কৌশল নিয়ে ভাবতে পারেন। সন্তান না হওয়ার জন্য নিজেকে অপরাধী ভাববেন না বা একে অপরকে দোষারোপ করবেন না। এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে একে অপরের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিন।
প্রশ্নগুলো হলো- যথেষ্ট সু¯’ শুক্র (ঝঢ়বৎস) আছে কি? নারীর ডিম্বকে নিষিক্ত করার জন্য একজন পুরুষকে অবশ্যই যথেষ্ট সক্রিয় এবং পরিণত শুক্র উৎপাদনে সক্ষম হতে হবে। ডিম্ব নিঃসৃত হয়েছে কি? ডিম্ব ও শুক্রের মিলনের জন্য ডিম্বাশয় থেকে একজন নারীর ডিম্ব নিয়মিত নিঃসৃত হওয়া আবশ্যক। শুক্র ও ডিম্ব মিলিত হতে পারছে কি? শুক্র ও ডিম্বের মিলনের জন্য উভয়কেই পুরুষ বা নারীর প্রজননতন্ত্রে বাধাহীনভাবে চলাফেরার সুযোগ থাকতে হবে। এদের চলার পথে যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকে। ভ্রুণ কি প্রতিস্থাপিত হতে পারে? একটি ভ্রুণকে (ঊসনৎুড়) অবশ্যই জরায়ুতে প্রতিস্থাপিত হতে সক্ষম হতে হবে। বয়স কি প্রজননকে ব্যাহত করছে? ৩৫ বছর বয়সে নারীদের ডিম্বের সংখ্যা ও মান যথেষ্ট কমে যায়। ৪০ বছর বয়সে এই সমস্যা আরো বেড়ে যায়। এ কারণে একজন নারীর বয়স যদি ৩৫ বছরের বেশি হয় তাহলে তার কেন সন্তান হচ্ছে না তা মূল্যায়নে কখনো বিলম্বিত করা উচিৎ নয়। একজন পুরুষ সারা জীবন শুক্র উৎপাদন করতে পারে। সুতারং প্রজনন সমস্যায় পুরুষের বয়স কোনো বিষয় নয়। একটি শিশু ধারণের জন্য একজন নারীর ওভারি থেকে অবশ্যই একটি পরিপক্ক ডিম্বক নিঃসৃত হতে হবে। এই ডিম্বক তার ফেলোপিয়াল নালীতে সু¯’ শুক্রাণুর জন্য অপেক্ষা করে যৌনমিলনের সময় পুরুষ প্রায় ১০ মিলিয়ন পরিণত এবং স্বাভাবিকভাবে নগনক্ষম শুক্রাণু নিঃসৃত করে। এদের মধ্যে একটি শুক্রাণু ডিম্বানুকে নিষিক্ত করতে পারে। নিষিক্তকরনের পর ডিম্বানু গর্ভাশয়ে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। এই সময়ে গর্ভফুলের মাধ্যমে মায়ের শরীর থেকে পুষ্টি উপাদান সংগ্রহ করে এবং অন্যান্য জৈবিক ক্রিয়া সম্পাদন করে। কিন্তু পেলভিক সংক্রামণের কারণে ফেলোপিয়ান টিউব ক্ষতিগ্রস্ত হলে ডিম্বক নিষিক্তকরণ বা প্রতিস্থাপন সম্ভব নয়।
গর্ভসঞ্চারের সম্ভবনা বৃদ্ধির জন্য প্রাথমিক পদক্ষেপ:
আপনার বয়স, স্বাস্থ্য এবং কতদিন ধরে গর্ভসঞ্চারের চেষ্টা করছেন তার ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসক আপনাদের গর্ভসঞ্চারের সম্ভাবনা বৃদ্ধির জন্য প্রথমে কিছু সাধারণ পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেবেন, যা ফলপ্রসূ হতে পারে। একজন নারীর উর্বর সময় (ঋবৎঃরষব ঃরসব) শনাক্তকরণের বহুবিধ পদ্ধতি রয়েছে। এ বিষয়ে আমরা এখন আলোচনা করছি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জীবনযাত্রার ধরণ পরিবর্তন অথবা স্বাস্থ্য বিষয়ক অভ্যাস বদলালে প্রজনন সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায়।
নির্ধারিত সময় হতে পারে মূল চাবিকাঠি:
ডিম্বক্ষরণ (ঙাঁষধঃরড়হ) হচ্ছে এ রকম কোনো নারীর দ্বারাই কেবল গর্ভধারণ করা সম্ভব, ডিম্বক্ষরণের ঠিক আগে বা ক্ষরণকালীন যৌনসঙ্গম গর্ভসঞ্চারের সর্বোত্তম সুযোগ সৃষ্টি করে। কিছু আলামত দেখে ডিম্বকরণের সময় চিহ্নিত করা যায়। এসব আলামতের মধ্যে আছে দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি, গ্রীবাদেশীয় শ্লেষ্মার (ঈবৎারপধষ সঁপড়ঁং) পরিবর্তন এবং খঁঃবরহুরহম যড়ৎসড়হব বা খঐ-এর আকষ্মিক বৃদ্ধি।
১। দেহের তাপমাত্রা বৃদ্ধি:
হরমোনের মাত্রা বাড়ার কারণে দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা (ইধংধষ নড়ফু ঃবসঢ়বৎধঃঁৎব) ডিম্বকরণের ঠিক আগে নেমে যায়। এই তাপমাত্রা আবার বেড়ে যায় ডিম্বকরণের ঠিক পরে। প্রজেস্টেরন (চৎড়মবংঃবৎড়হব) হরমোনের মাত্রা বেড়ে গেলে তাপমাত্রা নেমে যাওয়ার দিনটিতে অথবা তাপমাত্রা বৃদ্ধির পূর্বে স্ত্রীর সঙ্গে সঙ্গমের চেষ্টা করুন।
২। জরায়ুগ্রীবার শ্লেষ্মা পরিবর্তন:
জরায়ু গ্রীবার শ্লেষ্মা সাধারণভাবে ঘন ও ঘোলাটে থাকে। ডিম্বক্ষরণের পূর্বে অথবা ঋতুচক্রের নবম অথবা দশম দিনে এই শ্লেষ্মা পরিষ্কার এবং প্রসারণক্ষম হয়ে ওঠে যেন শুক্র ফেলোপিয়ান টিউবের পথে যাত্রা করতে পারে। শ্লেষ্মার এই পরিবর্তন আপনার চোখে ধরা পড়ার এক অথবা দু’দিনের মধ্যে যৌনমিলনের চেষ্টা করুন। অথবা শ্লেষ্মা পুনরায় ঘন না হওয়া পর্যন্ত একদিন অন্তর যৌনমিলন করুন।
সঠিক সময় সম্পর্কে কিছু পরামর্শ:
তাপমাত্রা সম্পর্কে সবচাইতে সঠিক তথ্য পাওয়ার জন্য বিদেশে মার্কারি থার্মোমিটার (এতে একশটি চার্টও থাকে) অথবা ডিজিটাল থার্মোমিটার ব্যবহার করা হয়। এছাড়া ডিম্বকরণ সম্পর্কে পূর্বাভাস প্রদানকারী যন্ত্রাদিও কিনতে পাওয়া যায়। আপনি যদি দেহের তাপমাত্রা দেখতে চান তাহলে সবসময় সকালে ঘুম থেকে ওঠে কোনো কাজ শুরু করার আগেই তাপমাত্রা নেবেন। আপনি যদি অসু¯’ থাকেন এবং রাতে অস্থির সময় কাটিয়ে থাকেন তবে তাপমাত্রার হেরফের হতে পারে। বিষয়টি চার্টে লিপিবদ্ধ করতে ভুলবেন না। যদি যৌনি থেকে বিন্দুপাতন (ঝঢ়ড়ঃঃরহম) অথবা অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ হয় সেটাও লিপিবদ্ধ করুন এবং চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন। ডিম্বক্ষরণের সম্ভাব্য সময়কালে প্রতি একদিন অন্তর যৌনমিলনে সচেতন হোন।
যেসব ধরণ গর্ভধারনের প্রতিবন্ধকতা হতে পারে:
ধূমপানের কারণে নারীদের ইস্ট্রোজেনের মাত্রার পরিবর্তন এবং ডিম্বের উৎপাদন হ্রাস পেতে পারে। জরায়ু গ্রীবার শ্লেষ্মার নিকোটিনের উপস্থিতি শুক্রের জন্য বিষাক্ত হতে পারে। অন্যদিকে ধূমপানের কারণে পুরুষদের শুক্রের সংখ্যা কমে যায়, শুক্রের চলাচল ব্যাহত হয় এবং অস্বাভাবিক আকৃতির শুক্র তৈরি হয়।
মদ ও মাদক:
অতিরিক্ত মদ্যপানের ফলে শুক্রের সংখ্যা কমে যায় এবং অস্বাভাবিক শুক্র উৎপাদিত হয়। মাদক- যেমন মারিজুয়ানা এবং কোকেনের ব্যবহারে নারীদের হরমোন উৎপাদনে বিঘœ ঘটে এবং পুরুষের শুক্র উৎপাদন হ্রাস পায়।
অণ্ডকোষের তাপ:
পুরুষের অণ্ডকোষ সারাদেহের তাপমাত্রার তুলনায় কয়েক ডিগ্রি শীতল। অণ্ডকোষ যখন খুব বেশি গরম থাকে শুক্রের উৎপাদন হ্রাস পায়। বেশি তাপমাত্রা, প্যান্টি পরিধান ইত্যাদি অণ্ডকোষের তাপ বৃদ্ধি করতে এবং প্রজনন ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।
ওজনের সমস্যা:
যেসব নারী বেশি স্থুলকায় (ঙাবৎবিরমযঃ) অথবা কম ওজনের, তারা প্রায়ই গর্ভধারণে সমস্যায় পড়েন। খুব বেশি অথবা খুব কম চর্বি হরমোন মাত্রাকে প্রভাবিত করে এবং ডিম্বক্ষরণে সমস্যা সৃষ্টি করে।
কঠোর ব্যায়াম:
ঘন ঘন কঠোর ব্যায়াম (যেমন প্রতিদিন লম্বা পথে দৌঁড়ানো) নারীদের হরমোন উৎপাদন কমিয়ে দিতে পারে। পুরুষদের ক্ষেত্রেও একই সমস্যা হতে পরে, নারীদের ক্ষেত্রে এ ধরনের কঠোর ব্যায়াম অনিয়মিত মাসিক অথবাড রজঃবদ্ধতার কারণ হতে পারে। এর ফলেও প্রজনন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অন্যান্য কারণ:
সন্তানধারণে সমস্যা সৃাষ্টি করছে এমন আরো কিছু কারণ নিয়ে চিকিৎসক আপনার সঙ্গে আলোচনা করতে পারেন। কিছু তৈলাক্ত পদার্থ শুক্রাণু জখম বা ধ্বংস করে ফেলতে পারে। কিছু ওষুধ সেবনের ফলে হ্রাস পেতে পারে শুক্রাণুর সংখ্যা। অনেক নারীর ক্ষেত্রে, উদ্বেগ ও অবসাদজনিত কারণে ডিম্বক্ষরণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শ:
মনে রাখবেন আপনারা এককভাবেই কেবল এই সমস্যার শিকার নন। পৃথিবীতে আরো অসংখ্য দম্পতি আছে যারা স্বাভাবিকভাবে সন্তানের মাতৃত্ব বা পিতৃত্ব অর্জন করতে পারেননি। সুতারং চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে অন্যকোনো পদ্ধতিতে সন্তানের মা হতে চেষ্টা করুন। স্বামী-স্ত্রী উভয়ে মিলে যে সিদ্ধান্তই নিন না কেন তা আপনাদের পারিবারিক জীবনকে আনন্দময় করে তুলবে।