সারাদেশে ভারী বর্ষণে বন্যা-ভূমিধস, নিহত ১০
স্টাফ রিপোর্টার : মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে টানা বর্ষণে সৃষ্ট বন্যা আর ভূমিধসে সারাদেশে অন্তত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিখোঁজ রয়েছে অন্তত দুজন। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে শুক্রবার বন্যা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ও পাহাড় ধসে এ হতাহতের ঘটনা ঘটে।
কক্সবাজার
পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যার আর পাহাড় ধসে কক্সবাজারের বিভিন্ন স্থানে আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত অন্তত আট জনের প্রাণহানি ঘটেছে। নিখোঁজ রয়েছে দুজন। বিভিন্ন স্থানে বেঁড়িবাধ ও কাঁচা ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। টানা এক সপ্তাহ ধরে ভারী বর্ষণ এবং পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজার জেলার দুই শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে ১০ লক্ষাধিক মানুষ। উপজেলার জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের মিতার ছড়া এলাকায় পাহাড় ধসে মারা গেছে মো. শফির ছেলে মো. রিদুয়ান (১০)।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে রামু উপজেলার ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের আমতলিয়া পাড়া গ্রামে পানিতে ডুবে প্রাণ হারান মোস্তাক আহমদের স্ত্রী হালিমা বেগম (৩০)।
শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টায় রামুর কাউয়ারখোপ ইউনিয়নের লট উখিয়ারঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসে চাপা পড়া আমির হোসেন এর মৃতদেহ উদ্ধার করা করা হয়। চার সন্তানের জনক আমির হোসেন স্থানীয় ছমি উল্লাহর ছেলে। বৃহস্পতিবার রাতে পানি চলাচলের নালা কেটে দেয়ার সময় তার ওপর পাহাড় ধসে পড়ে।
শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে রামুর কচ্ছপিয়া ইউনিয়নের তিতারপাড়া এলাকায় পানিতে ডুবে প্রাণ হারান খতিজা বেগম (৩৮)। শুক্রবার সকালে পানিতে ডুবে প্রাণ হারান রামু ফতেখাঁরকুল ইউনিয়নের দক্ষণ দ্বীপ ফতেখাঁরকুল এলাকার জুনু মিয়া (৬০)।
বৃহস্পতিবার সকালে রামু উপজেলার গর্জনিয়া ইউনিয়নের ক্যাজল বিল এলাকায় বন্যা কবলিতদের নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়ার সময় নৌকা ডুবিতে দুইজন নিখোঁজ হয়েছেন। এরা হলেন- বশির আহমদের মেয়ে কামরুনাহার (২২) ও এরশাদ উল্লাহর মেয়ে তরিকা হাসনাত (৪)।
উপজেলার বিভিন্নস্থানে কাঁচাঘর বিধ্বস্ত, পাহাড়ধস, গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার ফলে রামু-মরিচ্যা আরাকান সড়ক, রামু-নাইক্ষ্যংছড়ি সড়ক, কক্সবাজার-টেকনাফ সড়কে তিন দিন যানবাহন চলাচল বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
ঢলের পানিতে ভেসে গিয়ে চকরিয়া উপজেলার কাকারা এলাকায় কাওছার রহিম (১৩) নামে এক শিশু মারা গেছে। সে ওই এলাকার ফরহাদ রেজার ছেলে।
শুক্রবার সকালে সের্ন্টমাটিন দ্বীপে প্রবল বর্ষণসহ বয়ে যায় ঝড়ো হাওয়া। এতে গাছ চাপা পড়ে মারা যায় কোনারপাড়া নুর মোহাম্মদের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম (২৫) ও শিশু পুত্র মো জিশান (৪)। আহত হয়েছে আরো ১০ জন।
বান্দরবান
বান্দরবান সদর উপজেলার বনরুপাড়ায় পাহাড় ধসে দুই শিশু ভাই-বোনের মৃত্যু হয়েছে। এ সময় শিশুদের বাবা-মাসহ আরো তিনজন আহত হয়েছেন। শুক্রবার ভোররাতে পাহাড় ধসের এ ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলো- মোহাম্মদ আলীফ (১২) ও মিম সুলতানা (৮)। এ ঘটনায় তাদের বাবা আবদুর রাজ্জাক, মা আয়েশা বেগম ও প্রতিবেশী শাহ আলম আহত হন।
মৌসুমি বায়ু প্রবাহের কারণে গত কয়েকদিন ধরে বান্দরবানে অবিরাম বৃষ্টি হচ্ছে। এতে পাহাড়ি ঢলে জেলার অধিকাংশ জনপদ প্লাবিত হয়েছে। জেলার সঙ্গে চট্টগ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। বিপর্যস্ত রয়েছে স্থানীয় যোগাযোগ ব্যবস্থাও।
চট্টগ্রাম
এদিকে টানা বর্ষণে চট্টগ্রামের ১১টি উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। পানিতে তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি, সড়ক, ফসলি জমি। বানের পানিতে ভেসে গেছে গৃহপালিত পশুসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র।
এসব এলাকার অনেক লোকজন রান্না করতে না পারায় সেহেরি না খেয়ে রোজা রেখেছে। বানের পানিতে ঘর ডুবে যাওয়ায় অনেক মানুষ সাইক্লোন শেল্টারে আশ্রয় নিয়েছে।
পানিতে তলিয়ে গেছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা। এতে নগরীতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। এছাড়া বন্দরের বহিঃনোঙরে পণ্য খালাসও বন্ধ রয়েছে।
রাজশাহী
রাজশাহী নগরীতে ভারী বৃষ্টিপাত হলে গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এতে নগরবাসীর চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া বর্ষা মৌসুমে রাস্তা খোঁড়ার কারণে কোনো কোনো এলাকায় দুর্ভোগের মাত্রা আরো বেড়েছে।
বরিশাল
টানা ভারী বর্ষণে বরিশাল মহানগরের নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। শুক্রবার বন্ধের দিন হওয়ায় কর্মব্যস্ত নগরবাসী বৃষ্টির কারণে প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হননি। কিছু দোকানপাট খুললেও ক্রেতাদের উপস্থিতি কম।
মহানগরে সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্টের পাইপ বসানোর কাজ চলছে। প্রবল বর্ষণের আর জলাবদ্ধতার সঙ্গে এ কাজ নগরের সদর রোড, বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর সড়ক ও নাজিরেরপুল এলাকায় দুর্ভোগের মাত্রা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
রাজধানী ঢাকা
এদিকে টানা বৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকার বিভিন্ন স্থানে পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে জলজট ও যানজট। কখনো ভারী আবার কখনো হালকা, বৃষ্টি হচ্ছে বিরামহীন। শুক্রবার রাতে বৃষ্টিপাতে পরিমাণ আরো বেড়ে যায়।
শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় রাজধানীর রাস্তায় মানুষের চাপ ছিল কম। তবে নিতান্ত কাজে যারা বের হয়েছেন, তাদের নাকাল হতে হয়েছে বৃষ্টিতে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ শুক্রবার দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশি হচ্ছে। উপকূল থেকে দূরবর্তী স্থানে ক্রমান্বয়ে বৃষ্টির পরিমাণ কম। শনিবার বিকেল নাগাদ নিম্নচাপের প্রভাব কমতে পারে। আর সেই সঙ্গে কমে যাবে বৃষ্টিপাতও।