আমি অত্যন্ত আশাবাদী – এ জাতি সত্য গ্রহণ করবে : এমাম, হেযবুত তওহীদ
স্টাফ রিপোর্টার :
পবিত্র রমজান শেষে হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম হেযবুত তওহীদের সদস্য এবং দেশব্যাপী হেযবুত তওহীদের সত্য প্রচারে যারা সহযোগিতা করছেন তাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে সকলের উদ্দেশে বক্তব্য দেন। বক্তব্যটি নিম্নে তুলে ধরা হলো :
হেযবুত তওহীদের প্রিয় ভাই ও বোনেরা, সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতাল্লাহ। আল্লাহর কাছে দোয়া করি আপনারা ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আপনারা যেভাবে এই পর্বত সমান অসত্যের বিরুদ্ধে আল্লাহর রাস্তায়, মানবতার কল্যাণে নিজেদের জীবন এবং অর্জিত সম্পদ কোরবানি করে সংগ্রাম করে যাচ্ছেন, দোয়া করি আল্লাহ আপনাদের এই সংগ্রামকে সহজ করে দিন। ইসলামের বিধান মোতাবেক রমাদানের একমাস সিয়াম সাধনার পর আজ মুসলিমদের ঈদ-আনন্দের দিন। সেই হিসাবে সমগ্র মুসলিম বিশ্বে মহা সমারোহে ঈদুল ফেতর পালিত হচ্ছে। কিন্তু সমগ্র মানবজাতি বর্তমানে যে নিদারুণ অন্যায়-অশান্তির মধ্যে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে, বিশেষ করে মুসলিম নামক জাতির যে অবর্ণনীয় দুর্দশা, এই পরিস্থিতিতে জাতির জন্য প্রকৃত আনন্দ হয় না। যেদিন সমগ্র পৃথিবীতে নিপীড়িত মানুষের মুখে হাসি ফুটবে তখনই ঈদ অর্থবহ হবে। সেই দিন আনার জন্যই আমরা সংগ্রাম করে যাচ্ছি।
আমাদেরকে অনুধাবন করতে হবে, এই দেশের জন্য, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির জন্য আমাদের করণীয় কী। আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন যে পরিকল্পিতভাবে মুসলিম নামক এই জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দেবার জন্য দুনিয়াব্যাপী জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটানো হয়েছে। পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীরা প্রথমে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটায় আফগানিস্তানে এবং পরবর্তীতে তা পরিকল্পিতভাবে দুনিয়াব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়া হয়। দুর্ভাগ্যজনকভাবে মুসলিম জাতির আলেমরা আল্লাহর লা’নতের ফলে সাধারণ বুদ্ধির বিলোপ ঘটার কারণে পশ্চিমাদের এই কূটকৌশল বুঝতে সক্ষম হন নি। ফলে মুসলিম জাতির লক্ষ লক্ষ মানুষ পশ্চিমাদের ফাঁদে পড়ে জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। এটা তাদের দুর্ভাগ্য কারণ তারা আসলে আল্লাহ ও তাঁর রসুলকে যথার্থ ভালোবাসলেও, ইসলামের জন্য জীবন-সম্পদ উজাড় করে দিলেও তারা প্রকৃতপক্ষে পথভ্রষ্ট যার প্রমাণ আমরা দিয়েছি। তারা শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করে জান্নাতের শ্রেষ্ঠতম স্থানে যাওয়ার প্রত্যাশা রাখেন, কিন্তু দুর্ভাগ্য, আল্লাহর জন্য উৎসর্গীকৃত প্রাণগুলো ইসলাম বা মানবতার কল্যাণে কাজে লাগার পরিবর্তে কেবলই পশ্চিমাদের স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে। জঙ্গিবাদ নামক একটা ফ্রাঙ্কেনস্টাইন সৃষ্টি করেছে পশ্চিমা পরাশক্তিগুলো আর আরব ধনকুবের ধর্মব্যসায়ীদের মাধ্যমে এই তরুণদেরকে তাদের নিয়োগকৃত আলেম-ওয়াজকারীরা ইসলামের দলিল ও ইতিহাসের অপব্যাখ্যা করে জঙ্গি হতে প্রলুব্ধ করেছে। অথচ এই পথে গিয়ে তারা দুনিয়াও হারাচ্ছে আখেরাতও হারাচ্ছে। অতীতে ধর্মের নামে যারা রাজনীতি করে তারা শুধুমাত্র তাদের ব্যক্তি ও গোষ্ঠী-স্বার্থ উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন ইস্যু সৃষ্টি করে আমাদের এই দেশের মধ্যে বারবার নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। তাদের পুঁজি মানুষের সরল ধর্মপ্রাণতা যাকে তারা নিজেদের কুক্ষিগত করে তথা হাইজ্যাক করে বারবার ভুল খাতে প্রবাহিত করেছে।
আর যারা পশ্চিমা প্রভুদের আদর্শিক উত্তরাধিকার সেজে, তাদের পুঙ্খানুপুঙ্খ নকল করে পাশ্চাত্য বস্তুবাদী, স্রষ্টাহীন, ধর্মহীন ‘সভ্যতা’ তথা দাজ্জালের কাছ থেকে স্বার্থবাদী, ধ্বংসাত্মক, অনৈক্য সৃষ্টিকারী রাজনীতির চর্চা করে যাচ্ছে। সে রাজনীতিতে না আছে কোনো পরকালমুখিতা, না আছে স্রষ্টার কাছে কোনো জবাবদিহিতার চিন্তা, না আছে কোনো দেশপ্রেম। এখানে স্বার্থসিদ্ধিই একমাত্র চেতনা। এখানে স্বার্থহাসিলের লক্ষ্যে চলে অবিশ্রাম হানাহানি, ক্ষমতা দখলের জন্য বা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য জাতির সম্পদ ধ্বংস করে চলে নানা অশুভ চক্রান্ত এবং পেশিশক্তির প্রতিযোগিতা। এই হানাহানিতে এই জাতিটি থেকে অভ্যন্তরীণভাবে সামাজিক বন্ধন, রাষ্ট্রীয় আনুগত্য, শৃঙ্খলা, ঐক্য, জাত্যবোধ, ভ্রাতৃত্ববোধ, দেশপ্রেম সব বিলীন হয়ে গেছে। আর ধর্মকে ব্যবহার করে যারা স্বার্থ উদ্ধারের রাজনীতি করে, তারা এই অনৈক্যের সুযোগটি কাজে লাগাবার চেষ্টা করছে। জনগণের মূল্য তাদের কাছে একটি ভোটের চেয়ে এক পয়সাও বেশি নয়। স্বার্থসিদ্ধির জন্য এই জনগণকে পুড়িয়ে মারতে এরা এক মুহূর্ত চিন্তা করে না। ওদিকে সাম্রাজ্যবাদীরা তো বসেই আছে শকুনের মতো জাতির পতাকা খামচে ধরার জন্য।
অর্থাৎ একদিকে সাম্রাজ্যবাদীদের ষড়যন্ত্র আরেকদিকে ধর্মব্যবসায়ীদের ধর্মবিশ্বাসকে ভুল খাতে প্রবাহিত করার অভ্যাস, আরেকদিকে চলছে রাজনীতির নামে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড। এসবের পরিণামে আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি যদি ইরাক, সিরিয়া ইত্যাদি দেশের মতো ধ্বংস হয়ে যায় তাহলে হেযবুত তওহীদ নামক এই ছোট আন্দোলনও তার ২০ বছরের সকল অর্জন হারিয়ে ফেলবে। তাই প্রিয় জন্মভূমির প্রতি, জনসাধারণের প্রতি, তাদের জীবনকে সুরক্ষিত ও নিরাপদ করার জন্য আমাদের করণীয় আছে। কারণ এ জাতিকে রক্ষা করার উপাদান আল্লাহ কেবলমাত্র আমাদেরকে দান করেছেন। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ জাতিকে রক্ষা করাই আমাদের জীবনের একমাত্র ব্রত হওয়া উচিত, সেটা নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থে, আল্লাহর সত্যদীনের স্বার্থে, হেযবুত তওহীদের অস্তিত্বের স্বার্থে। আমার এ কথার গুরুত্ব আপনারা যদি অনুধাবন করতে সক্ষম হন তবে অবশ্যই আপনাদের জীবনকে, আপনাদের অর্জিত সম্পদকে মানবতার কল্যাণে কোরবানি করুন। আপনারা সকল মানুষের সামনে, দেশের পরিচালকবৃন্দ, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, সাংবাদিক, শিক্ষক, ছাত্র, ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী, কৃষক, শ্রমিক, দীনমজুরসহ সকল স্তরের মানুষের সামনে তুলে ধরুন যে, এখনই যদি আমরা নিজেদের জাতীয় সংকট সম্পর্কে সচেতন না হই, অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হই তবে আমাদেরও অনিবার্য গন্তব্য ধ্বংস। যারা ধর্মের নামে মসজিদ-মাদ্রাসা আর খানকার চার দেয়ালের মধ্যে মাথাগুঁজে বসে আছেন আর ধর্মবিক্রি করে খাচ্ছেন তাদেরকেও বোঝান, তারা যেন বেরিয়ে আসেন এবং নিঃস্বার্থভাবে সমাজের জন্য কিছু করার চেষ্টা করেন। সকলকে বলুন যে, আসুন জাতিটাকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করি, অন্যায়ের বিরুদ্ধে জাতিটাকে ঐক্যবদ্ধ করি। জাতি ঠিক থাকলে, দেশ ঠিক থাকলে আপনাদের পরিচয় থাকবে, মসজিদ থাকবে, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা থাকবে, মন্দির থাকবে আর যদি জাতি ধ্বংস হয়ে যায় কিছুই থাকবে না। অতীতে এভাবেই অনেক জাতি নিজেরা নিজেরা হানাহানি করতে করতে ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করা ছাড়া রক্ষা করার উপায় নেই, আর ঐক্যবদ্ধ করার উপাদান হেযবুত তওহীদের কাছেই আছে। তাই এ লক্ষ্যে সর্বাত্মক প্রয়াস চালানো হেযবুত তওহীদের উপর আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত মহান দায়িত্ব। আপনারা দেশের আপামর জনগণকে সাধ্যমতো বোঝান। তারা যত গালি দিক, অপমান-অপদস্থ করুক কিছু গায়ে মাখবেন না। মনে রাখবেন হুজুর পাক (সা.) কেও সত্য প্রচারে এরকম প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছিল। কিন্তু হুজুর পাক (সা.) কোনো কিছুর দিকে ভ্রুক্ষেপ না করে তার কাজ তিনি চালিয়ে গেছেন। যার ফলে একটা সময় পরে আইয়্যামে জাহেলিয়াতের আরবরাও সত্য বুঝেছিল।
ইনশাল্লাহ আমি আশাবাদী যে, আমার প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের মানুষ একদিন সত্য বুঝবে। এ জাতিই একদিন সমস্ত দুনিয়াকে সত্য দিয়ে নেতৃত্ব দেবে ইনশা’ল্লাহ। এ আশা আমি রাখি কারণ আল্লাহর পক্ষ থেকে সেই রকম আভাস ও নিশ্চয়তা ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে। আপনারা হতাশ হবেন না, নিরাশ হবেন না। হেযবুত তওহীদের ভাই-বোনদেরকে আমি বলতে চাই, আপনারা কোনো অপপ্রচারকারীর অপপ্রচারে কান দিবেন না, মিথ্যাচারীর মিথ্যাচারে প্রভাবিত হবেন না। আপনারা পূর্ণোদ্দমে নিরলসভাবে কাজ করে যান। এ জাতিকে আমরা ইস্পাত-কঠিন ঐক্যবদ্ধ জাতি হিসাবে গড়ে তুলবই ইনশা’আল্লাহ।
এক বিভীষিকাময় পরিবেশ বর্তমানে বিরাজ করছে; মানুষ নামের পশুরা অবুঝ শিশুকে নির্মমভাবে পিটিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করছে, পিতা-মাতা সন্তানকে, সন্তান পিতা মাতাকে, স্বামী-স্ত্রী পরস্পরকে গলা কেটে, বিষ খাইয়ে, আগুনে পুড়িয়ে, গুলি করে, শ্বাসরোধ করে, কুপিয়ে হত্যা করছে। হত্যার পর টুকরো টুকরো করে বস্তায় ভরে লাশ গুম করছে, পেট কেটে ভেতরে ইট ভরে নদীতে ফেলে দিচ্ছে। দিন দিন এই নির্মমতা বেড়েই চলেছে, কেউ থামাতে পারছে না। প্রকাশে শত শত লোকের সামনে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে, কেউ থামাতে পারছে না। অনেকে এই নিষ্ঠুরতার মধ্যে বিনোদনের উপাদান খুঁজে পাচ্ছেন, ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছেন। মনুষ্যত্বের এই অধঃপতন দেখে বিবেকসম্পন্ন মানুষ শিউরে উঠছেন। তাদের মনে একটাই প্রশ্ন, মানুষ আর কত নিচে নামবে? কবে সে আবার দু পেয়ে জানোয়ার থেকে মানুষে রূপান্তরিত হবে। যারা সমাজের দায়িত্বপূর্ণ পদগুলো দখল করে আছেন তাদের প্রবৃত্তি হচ্ছে নিজের কাঁধ থেকে কীভাবে দোষটা অন্যের কাঁধে চাপিয়ে দেওয়া যায় সর্বদা সে উপায় তালাশ করা। তারা বছরের পর বছর একে অপরের উপর দোষারোপ করেই জীবন পার করে দিচ্ছেন। বাক্যবাগীশ বুদ্ধিজীবীরা টাকার বিনিময়ে টকশোতে জ্ঞানের খৈ ফোটাচ্ছেন। কিন্তু আসলে সমাধান কারো কাছে নেই। সমগ্র মানবজাতির সামনে সগৌরবে এই চ্যালেঞ্জ বা নিশ্চয়তার ঘোষণা আমরা দিতে পারি যে এই উদ্ভূত সংকটের সমাধান আল্লাহর রহমে আছে একমাত্র হেযবুত তওহীদের কাছে। এই সমাধান যারা গ্রহণ করবে তারা বাঁচবে, যারা অবজ্ঞা, অজ্ঞানতা বা অহঙ্কারবশত প্রত্যাখ্যান করবে তারা ধ্বংস হবেই হবে। একে নিয়তি বা পরিণতি যা-ই বলা হোক, এর ব্যত্যয় হবে না।
এখানে একটি আশার কথা হচ্ছে, আরবের তৎকালীন আইয়্যামে জাহেলিয়াতের মানুষগুলোর নিষ্ঠুরতা নির্মমতার কথা ইতিহাসে জেনেছেন। সেই মানুষগুলোও একদিন সোনার মানুষের পরিণত হয়েছিল। তাদের এই পরিবর্তন হয়েছিল রসুলাল্লাহর আনীত সত্যের প্রভাবে। এ সমাজের মানুষগুলোও বস্তুবাদী, মিথ্যাভিত্তিক, আত্মাহীন জীবনব্যবস্থার প্রভাবে বহু পাশবিক কর্মকাণ্ড করলেও আমি আশাবাদী যে, তারাও সোনার মানুষে পরিণত হবেন। কারণ এই জাতির মধ্যেই সত্যের আবির্ভাব হয়েছে এবং এ পবিত্র ভূমি থেকেই সত্য সমগ্র বিশ্বকে আলোকিত করবে ইনশাল্লাহ।