Connect with us

Highlights

করোনাকাল শেষে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে প্রস্তুত সরকার

Published

on

সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের পরই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার মালয়েশিয়া। প্রায় দুই বছর ধরে এই বাজারটি বন্ধ রয়েছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে মালয়েশিয়ার কর্মী নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের চাহিদা ও নীতি নির্ধারনের ওপর নির্ভর করছে শ্রমবাজার উন্মুক্ত হওয়ার বিষয়। 

এদিকে করোনা পরবর্তী সময়ে মালয়েশিয়ার সঙ্গে সমঝতা স্মারক স্বাক্ষরসহ দেশটির চাহিদা অনুযায়ী কর্মী পাঠাতে প্রস্তুত আছে বাংলাদেশ সরকার। জুলাইয়ের শেষে মালয়েশিয়ার লকডাউন উঠে যাওয়ার পরে দেশটি সব ধরনের কাজ শুরু করলে বাংলাদেশ কর্মী পাঠাতে পারবে। ফলে জুলাইয়ের পর মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার উন্মুক্ত হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ঠরা। 

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, শ্রমবাজার খোলার ব্যাপারে মালয়েশিয়া বেশ কয়েকবার প্রতিশ্রুতি দিলেও তার বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে গত দুই বছর তা বন্ধ আছে। তবে করোনা পরবর্তী কর্মী নিয়োগকারী দেশগুলোর চাহিদা মোতাবেক শ্রমবাজার খোলার সম্ভাবনা রয়েছে। জুলাই মাসে লকডাউন খুলে গেলে প্রটোকল বা সমঝতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। আর মালয়েশিয়া সরকারের ডাটাবেইজ থেকে শুরু করে যেসকল রিকোয়ারমেন্ট আছে তা সম্পন্ন করা হচ্ছে। এটা হয়ে গেলে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে আর কোনো বাধা থাকবে না। 

এ বিষয়ে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সচিব আহমেদ মুনিরুছ সালেহীন বলেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর কর্মী নিয়োগকারী দেশগুলো যদি তাদের নীতিতে পরিবর্তন এনে আমাদের কাছে চাহিদাপত্র পাঠায়, তাহলে আমরা সবদিক থেকে প্রস্তুত আছি। আমরা কর্মীদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছি। একই সঙ্গে আমাদের সব ধরনের সিস্টেমের উন্নয়ন করা হয়েছে। জুলাই মাসে মালয়েশিয়ার লকডাউন খুলে যেতে পারে। আশা করছি তখন সেখানকার শ্রমবাজারে বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য উন্মুক্ত হবে।

তিনি বলেন, কর্মী পাঠানো নিয়ে মালয়েশিয়ায়  মানবসম্পদ মন্ত্রীর সঙ্গে আমাদের প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রীর আলোচনা হয়েছে। সেখানে লকডাউন উঠে গেলে সমঝতা স্বারক স্বাক্ষর হবে। তখন আমরা ডাটাবেজ থেকে কর্মী পাঠাতে পারবো। আশা করছি শিগগিরই এমওইউ স্বাক্ষর হবে। আমরা সবদিক থেকে প্রস্তুত আছি। 

প্রবাসীকল্যাণ সচিব বলেন, আগামীতে সব কর্মী একটি ডাটাবেজ থেকে পাঠানো হবে। সেই ডাটাবেজের কাজ সম্পন্ন হয়ে গেছে। বর্তমানে এটি ঢাকা জেলার মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে। চলতি জুনের মধ্যে সারা দেশে এটা চালু করতে পারবো। ২০১৩ সালের কর্মী প্রেরণ আইনে বলা হয়েছে, বিদেশে কর্মী পাঠাতে হবে একটি ডাটাবেজ থেকে। 

বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি উন্নতির পর মালয়েশিয়ার নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নীতি নির্ধারণের ওপর নির্ভর করবে শ্রমবাজার কবে খুলবে এবং কবে আমরা কর্মী পাঠাতে পারবো। বর্তমানে করোনার কারণে প্রতিটি দেশ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। এই অবস্থার মধ্যে প্রতিটা দেশ তারা ভেবে চিন্তে নতুন করে পরিকল্পনা করবে। সেখানে তাদের অর্থনীতির ওপর নির্ভর করবে কি পরিমান লোক প্রয়োজন। সেটার ওপর নির্ভর করে তারা চাহিদাপত্র দেবে। তবে আমার মতে আগামীতে কর্মী নিয়োগকারী দেশগুলোর কর্মী নেওয়া কমে যাবে। 

তিনি বলেন, এবার মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়া একটু আলাদা হবে। মালয়েশিয়ার জন্য ডাটাবেজ সিস্টেম উন্নত করা হয়েছে। সেখানে যতো কর্মী পাঠানো হবে তা ডাটাবেইজ থেকে যাবে। এক্ষেত্রে সব রিক্রুটিং এজেন্সি ব্যবসা প্রকিউর করবে। কিন্তু কর্মী সিলেকশন হতে হবে সরকারের ডাটাবেজ থেকে। সেখানে সরকারি ব্যাংকের মাধ্যমে নির্ধারিত ১ লাখ ৬০ হাজার টাকা অভিবাসন ব্যয় মেটাতে হবে। সরকার এ ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে, যাতে অভিবাসন ব্যয় না বাড়ে ও কর্মীরা প্রতারিত না হয়।  

বায়রা মহাসচিব বলেন, বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কারণে মালয়েশিয়া লকডাউনে আছে। আগামী জুলাইয়ের আগে সে দেশে লকডাউন খুলছে না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে আর কোনো বাধা থাকবে না। 

এ সময় অভিবাসী হতে ইচ্ছুক কর্মী ও রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর উদেশ্যে শামীম আহমেদ বলেন, যতোখন পর্যন্ত দুই দেশের মধ্যে প্রটোকল স্বাক্ষর না হয় ও সরকারের পক্ষ থেকে যতোখন পর্যন্ত ঘোষণা না দেওয়া হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত যেন কোনো রিক্রুটিং এজেন্সি মালয়েশিয়ার বাজারে গিয়ে যেন ঝামেলা না করে। কর্মীরাও যেন কোনো দালালের হাতে টাকা পয়সা না দেয়। তাদের জেনে রাখতে হবে, ডাটাবেজে তালিকাভূক্ত হওয়া ছাড়া মালয়েশিয়ায় যাওয়া যাবে না। 

এদিকে গত ৩১ মে রোববার প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, লকডাউন শেষে আগামী জুলাই থেকেই মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলে দিতে পারে সে দেশের সরকার। সেক্ষেত্রে বাংলাদেশের কর্মী পাঠাতে সরকার পুরো প্রস্তুত রয়েছে এবং সেদেশের সরকারের সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হবে।

২০১৮ সালের জুলাই মাসে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খুলবে বলে গুঞ্জন শুরু হয়। পরে সেটি না হওয়ায় ওই বছরের ৩ থেকে ৬ নভেম্বর মালয়েশিয়ায় দুই দেশের মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয়। সেখানে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে ন্যূনতম অভিবাসন ব্যয় নিশ্চিত করা, কর্মী পাঠানোর প্রক্রিয়ায় দুই দেশের বেশিসংখ্যক রিক্রুটিং এজেন্সিকে যুক্ত করা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা, কর্মীর সামাজিক ও আর্থিক সুরক্ষা এবং তথ্যভাণ্ডারের পরিসংখ্যান বিনিময়ের বিষয়ে আলোচনা হয়। কিন্তু শেষ সময়ে নিজেদের অভ্যন্তরীণ সমস্যা দেখিয়ে বৈঠক স্থগিত করে মালয়েশিয়া।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *