Connecting You with the Truth

চট্টগ্রামে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসী কনফারেন্সে পুরাতন মামলাগুলো নিষ্পত্তির তাগিদ

DSC_7320
চট্টগ্রাম আদালত ভবনে পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসী কনফারেন্সে বক্তব্য রাখছেন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান। 

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নতুন আদালত ভবনের ৪র্থ তলায় জেলা ও দায়রা জজের সম্মেলন কক্ষে বৃহস্পতিবার বিকেল ৩টায় পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসী কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুন্সী মো. মশিয়ার রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কনফারেন্সে মামলারুজু ও মামলা নিষ্পত্তি বিষয়ে গুরুত্বারোপ করে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আ স ম শহীদুল­াহ কায়সার, সিভিল সার্জন ডা. মো. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) মো. হাবিবুর রহমান, সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কুদরত-এ-ইলাহী, মো. শহীদুল ইসলাম, মাহমুদুল হাসান, মোসাদ্দেক মিনহাজ, বেলাল উদ্দিন, ফারহানা ইয়াসমিন, মো. মহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসি কনফারেন্সে চট্টগ্রাম চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুন্সি মো. মশিয়ার রহমান আদালতে বিচারাধীন পুরাতন মামলা সমূহের দ্রুত নিষ্পত্তিসহ আইন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্তকার্য সম্পন্নকরণ, প্রতিবেদন দাখিল, যথাসময়ে মামলার সাক্ষী উপস্থাপন নিশ্চিতকরণ এবং গ্রেফতারের পর অভিযুক্ত ব্যক্তিকে আইন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আদালতে উপস্থাপন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট সকলকে তাগিদ প্রদান করেন। একই সাথে বিদ্যমান সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সমাধান সম্পর্কে আলোকপাত করে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচারাধীন মামলায় সাক্ষীদের প্রতি ইস্যুকৃত প্রসেস সমূহ সিআর.আর.ও-এর রুল ৬৪-৬৯ এর বিধানের প্রতি লক্ষ্য রেখে জারিপূর্বক আদালতে প্রেরণের বিষয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশ প্রদান করেন এবং সাক্ষীদের প্রতি উক্ত প্রসেস সমূহ প্রাপ্তির পর সিআর.আর.ও-এর রুল ৬৪ এর বিধানমতে নির্ধারিত রেজিস্টারে তা লিপিবদ্ধের বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন তিনি। সিআর.পি.সি- এর ১৭৩(১)(বি) ধারার ও পিআরবি-এর ২৭২ ও ২৭৮ প্রবিধানের বিধান মোতাবেক তদন্ত শেষে নির্ধারিত ফরমে সংবাদদাতাকে তদন্তের ফলাফল সম্পর্কে অবহিত করে তা পুলিশ রিপোর্টের সাথে আদালতে দাখিলের জন্য উপস্থিত পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশ প্রদান করেন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
তিনি আরো বলেন, শিশু আইন ২০১৩ অনুযায়ী আইনের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়া শিশু বা আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুকে ম্যাজিস্ট্রেট এর নিকট উপস্থিত না করে পুলিশ কর্তৃক সংশ্লিষ্ট শিশু আদালতে উপস্থাপন করতে হবে। তাছাড়া আইনের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়া শিশুদেরকে কোনভাবেই জেল হাজতে প্রেরণ না করে শিশু আইন অনুযায়ী নিরাপদ স্থান যথা শিশু উন্নয়ন কেন্দ্র বা কিশোর সংশোধানাগারে প্রেরণ করতে হবে। শিশুকে প্রাপ্ত বয়স্ক দেখিয়ে থানায় মামলা রুজু করার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে মর্মে উলে­খ করে শিশু আইনের ৪৪ ধারার বিধান মোতাবেক শিশুর বয়স প্রাথমিকভাবে নির্ধারণ করে যতদূর সম্ভব মামলায় তার সঠিক বয়স উলে­খ করার জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশ প্রদান করেন। শিশু আইনের ৪৮ ধারার বিধান মোতাবেক আইনের সাথে সংঘাতে জড়িয়ে পড়া শিশুর ক্ষেত্রে বিকল্প পন্থা ব্যবহারের প্রতি পুলিশদেরকে উৎসাহিত করেন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
ইতিপূর্বে চার্জশিটে অভিযুক্ত আসামিদের নামের পাশে আনীত অভিযোগ অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট আইনের সুনির্দিষ্ট ধারা পৃথক পৃথক ভাবে উলে­খের কথা বলা হলেও তা এখনও পরিপূর্ণরুপে পালিত হচ্ছেনা। এখনও পুলিশ রিপোর্টের সাথে দাখিলী জিজ্ঞাসিত ব্যক্তিদের জবানবন্দি তদন্তকারী কর্মকর্তা নিজ হাতে লিপিবদ্ধ না করে অন্য লেখক দিয়ে লেখেন মর্মে উলে­খ করে তা পরিহারেরর জন্য সংশ্লিষ্টদেরকে কড়া নির্দেশ প্রদান করেন তিনি। চার্জশিট প্রদানকালে পলাতক আসামির বিরুদ্ধে ক্রোকি পরোয়ানা ইস্যুর নিমিত্ত পিআরবি-এর ২৭২ প্রবিধানের বিধান মোতাবেক পলাতক তার স¤পত্তির তালিকা অভিযোগপত্রে সংযুক্ত করতে হবে। সিআর.পি.সি-এর ২০২ ধারার বিধান মোতাবেক আদালত কর্তৃক তদন্তের জন্য আদিষ্ট হওয়ার দীর্ঘদিন পরও সংশ্লিষ্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাগণ প্রতিবেদন দাখিল না করার বিষয়টি উলে­খ করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের অথবা ক্ষেত্র বিশেষে তদন্তের সময় বর্ধিত করণের প্রার্থনা আদালতে দাখিল করতে হবে। পুলিশ সাক্ষীদের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট পুলিশদেরকে মামলার কেইস ডায়েরী (সি.ডি) পাঠ করে আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য পরামর্শ প্রদান করেন। কিছু কিছু মামলায় আসামি ঘটনার পূর্ব হতে জেল খানায় থাকাবস্থায় তাকে উক্ত মামলা সমূহে অভিযুক্ত করে তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতে সোপর্দ করেন। আসামি জেল খানায় থাকাবস্থায় ঘটনা সংঘটিত হলে তিনি নিশ্চয়ই ঐ মামলার ঘটনার সাথে জড়িত থাকবেন না। এরূপ ক্ষেত্রে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে আসামি গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অধিকতর দায়িত্বশীল ও যতœবান হওয়ার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
তিনি বলেন, কিছু কিছু মামলায় রিমান্ড শুনানির সময় কেইস ডায়েরী (সি.ডি) পাওয়া যায়না এবং বারবার তাগিদ দেওয়া সত্তে¡ও আদালত সি.ডি উপস্থাপিত হচ্ছে না। অথচ রিমান্ড শুনানির সময় সি.ডি উপস্থাপনের আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এ বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তাদেরকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। ইদানিং কিছু কিছু মামলায় দেখা যাচ্ছে যে, চার্জশিটে উলে­খিত আসামির নাম-ঠিকানা প্রসেস তামিলকালে সঠিক পাওয়া যাচ্ছেনা। তদন্তকারী কর্মকর্তা অভিযুক্ত ব্যক্তির পিতার নামসহ ঠিকানা পরিবর্তন করার দরখাস্ত দাখিল করতে দেখা যাচ্ছে। এটা মোটেও কাম্য নয় উলে­খে তদন্তকালীন সময়ে আসামির সঠিক নাম ঠিকানা যাচাই-বাছাই করার জন্য তিনি সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা দেন।
উলে­খ্য যে, বর্তমান চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মুন্সী মো. মশিয়ার রহমান চট্টগ্রামে যোগদানের পর থেকে দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি, আইনের শাসন বাস্তবায়ন, মানবাধিকার সংরক্ষণের জন্য নিরলস চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তিনি ২০১৬ সালের ২৭শে জানুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন থানায় পুলিশ ফাইলের গ্রেফতারি পরোয়ানা ৮৬১৬ টি, ক্রোকি পরোয়ানা ৪১৬ টি এবং বিভিন্ন আদালতে গ্রেফতারি পরোয়ানা ৮১৮৯ ও ক্রোকি পরোয়ানা ৮০১ টি ও সাজা পরোয়ানা ১৬৫ টি বিনাজারি অবস্থায় রয়েছে। এছাড়া অত্র ম্যাজিস্ট্রেসিতে দ্রুত সমনজারির ব্যবস্থা, নকল খানায় তিন দিনের মধ্যে নকল সরবরাহের ব্যবস্থা, নতুন রেকর্ডরুম স্থাপনসহ রেকর্ড রুমে লোকেশন ম্যাপ সংযোজন, নিষ্পত্তিকৃত নথি রেকর্ড রুমে প্রেরণ এবং রেকর্ড রুমের বিনষ্টকৃত নথি ধ্বংস করা হয়। সর্বশেষ পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেসী কনফারেন্সে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

Comments
Loading...