চট্রগ্রাম
চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ লাইন্সে মতবিনিময় সভা

চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ লাইনে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে করণীয় শীর্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পুলিশ মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখছেন সিটি মেয়র আ.জ.ম নাছির উদ্দিন।
চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহরস্থ জেলা পুলিশ লাইন্সে ‘সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে করণীয়’ শীর্ষক বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পুলিশ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। জেলা পুলিশ সুপার এ কে এম হাফিজ আক্তার বিপিএম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন। মুখ্য আলোচক ছিলেন পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহা. শফিকুল ইসলাম বিপিএম। বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম আরআরএফ কমান্ড্যান্ট (এসপি) মাসুদ করিম, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. সাহাব উদ্দিন ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মোজাফফর আহমদ।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মো. মোস্তাফিজুর রহমানের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) মো. শহিদুলাহ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) মুহাম্মদ আব্দুল আউয়াল ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার কবির আহমদ। সভায় জেলা পুলিশের বিভিন্নস্তরের পদস্থ কর্মকর্তা, ৫ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ও চসিক কাউন্সিলরগণ উপস্থিত ছিলেন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধাদেরকে রাষ্ট্রীয় সম্মানে ভূষিতকরণ, মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বৃদ্ধি করে ৮ হাজার টাকায় উন্নীতকরণ, অসহায় ও পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন, মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সন্তান ও নাতি-পতিদের স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ, এবং সরকারের বিভিন্নস্তরে মুক্তিযোদ্ধা পোষ্য কোটায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি অগ্রাধিকার দিয়ে যাচ্ছে। একই সাথে সরকারের যে কোন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে। সরকারের এ ধারা অব্যাহত রাখতে হলে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হতে হবে।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। ১৯৭১ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা তাঁদের জীবনবাজী রেখে যুদ্ধে অংশ নিয়ে পাকিস্তানি রাজাকার-আলবদর বাহিনীকে পরাজিত করে এদেশ স্বাধীন করেছে। মুক্তিযোদ্ধা চলাকালীন সময় যারা আমাদের স্বাধীনতার বিরোধী করেছিলেন, এদেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ঘর থেকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্বিচারে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিলেন, ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জ্বত লুণ্ঠন করেছে তারা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্বপরিবারে হত্যা করে এর প্রতিশোধ নিয়েছিল। পাকিস্তানি বর্বর হানাদার বাহিনী চেয়েছিল এদেশ নামে মাত্র বাংলাদেশ থাকবে কিন্তু কার্যক্রম পরিচালিত হবে পাকিস্তানের অধীনে। এটা তারা বাস্তবায়ন করার জন্য অপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার দীর্ঘ ২১ বছর পর তারা এদেশকে পরিচালনা করেছিলেন পাকিস্তানি ভাবধারায়। তারা মুক্তিযোদ্ধার চেতনায় বিশ্বাসী না হয়ে মানুষের মাঝে পরিবর্তনের কোন প্রদক্ষেপ নেন নি। তারা শুধু নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করেছে। এসব রাজাকার আল-বদর বাহিনীর কমান্ডারেরা তাদের গাড়িতে তাদের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে বাঙালি জাতিকে কলঙ্কিত করেছে। নষ্ট করেছে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান। তারা চেয়েছিল এদেশে জঙ্গীবাদ কায়েম করতে। এদেশে যাতে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদের কখনও উত্থান না হয় তা যেকোন মূল্যে প্রতিহত করা হবে।
সিটি মেয়র আরো বলেন, বর্তমান দেশ পরিচালনা করছে বঙ্গবন্ধু তনয়া দেশরতœ শেখ হাসিনা। আজকে যে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এটা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। ২০০৮ সালের আগে পার্শ্ববর্তী দেশগুলো এ দেশকে একটি অকার্যকর দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করতে দ্বিধাবোধ করেননি। যারা বাঙালি জাতিকে অবহেলা ও অবজ্ঞা করতেন তারাও কিন্তু এখন স্বীকার করছে যে, বাংলাদেশ খুব দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে। দেশের যোগ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফল নেতৃত্বে দেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এ ধারা অব্যাহত রাখতে হলে মুক্তিযোদ্ধাসহ দেশের সর্বস্তরের নাগরিকদের এগিয়ে আসতে হবে।
আ.জ.ম নাছির উদ্দিন বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ কখনোই জঙ্গিবাদের হীন ষড়যন্ত্রকে এ দেশের মাটিতে কার্যকর হতে দিতে পারে না। তিনি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাগণের গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালনের সুযোগ রয়েছে মর্মে জানিয়ে চট্টগ্রাম হতে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে সকল প্রকার সহযোগীতার আশ্বাস দেন। মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাতবরণকারী চট্টগ্রামের তৎকালীন পুলিশ সুপার শহীদ এসপি এম শামসুল হকের অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তার স্মৃতি রক্ষার্থে মহানগরের একটি সড়কের নামকরণ করা হর্বে মর্মে জানান এবং চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ লাইন্সের জলাবদ্ধতা নিরসনে দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আশ্বাস প্রদান করেন।
মূখ্য আলোচক চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি মোহাঃ শফিকুল ইসলাম বিপিএম বলেন, সভ্যতার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সবচেয়ে বড় দুই চ্যালেঞ্জ হচ্ছে সন্ত্রাস ও সহিংস জঙ্গিবাদ। সন্ত্রাস ও সহিংস জঙ্গিবাদ শান্তি ও উন্নয়নের পথে প্রধান অন্তরায়। সন্ত্রাসীদের কোন ধর্ম নেই। ধর্মের প্রকৃত বার্তা মানুষের কাছে তুলে ধরে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার জন্য বীরমুক্তিযোদ্ধাগণকে সম্মলিতভাবে এগিয়ে আসার আহবান জানান। বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ মসজিদে, পাড়া-মহলায় জঙ্গিবাদের কুফল সম্পর্কে প্রচারণা চালাতে পারে। ধর্মের শান্তির বাণী তুলে ধরে বিপদগামী তরুণদের মূল ধারায় ফিরিয়ে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বোমা মারা, গুলি করা, মানুষ হত্যা করা, ধর্মের মূল চেতনা পরিপন্থী। সকল ধর্মে এগুলো জঘন্য অপরাধ হিসেবে স্বীকৃত। মূলত দেশ থেকে জঙ্গিবাদ নির্মূলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টায় জঙ্গিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ও সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে।
তিনি বলেন, ভাড়াটিয়ার তথ্য-পরিচিতি সংরক্ষণ এবং কার্যক্রম সন্দেহজনক মনে হলে তাৎক্ষনিক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে আইএস আছে, জঙ্গী আছে, এটা স্বীকার করে নেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। এ কথাটির মর্ম যদি বুঝতে না পারি তাহলে আমরা চরম ঝুঁকিতে থাকবো। আমাদের দেশে আইএস বা জঙ্গি আছে এটার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে। এদেশে যদি আইএস বা জঙ্গি আছে এমন প্রমাণ করা যায় তাহলে বাংলাদেশকে আফগানিস্তান-পাকিস্তান ও সিরিয়া বানানো যাবে। তাই এদেশে জঙ্গিরা যাতে মাথা চড়া দিয়ে উঠতে না পারে সেদিকে সকলকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার এ কে এম হাফিজ আক্তার বিপিএম জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অবদানের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং নিজেদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি জঙ্গিবাদ নির্মূলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিকল্প নেই। দেশের মাটিতে কোন সন্ত্রাসী বা সহিংস জঙ্গিবাদী গোষ্ঠীর স্থান না দিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বদ্ধপরিকর। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আগের চেয়ে আরো সতর্ক এবং গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি করা হয়েছে। কিন্তু কেবল আইন কিংবা শক্তি প্রয়োগ নয়, গণসচেতনতা তৈরির মাধ্যমে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি হয়ে পড়েছে।
চট্টগ্রাম আরআরএফ কমান্ড্যান্ট (এসপি) মাসুদ করিম বলেন, দেশ ও জনগণের স্বার্থে জঙ্গিবাদ নির্মূলে সবার ভেতরে সুপ্ত দেশপ্রেম ও শুভবোধ জাগ্রত করার দায়িত্ব বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের। বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ বিভ্রান্তির হাত থেকে মানুষকে ফেরাতে সহায়তা করতে পারেন। জঙ্গি কার্যক্রমকে প্রতিহত করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জোর তৎপরতা অব্যাহত আছে।
বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ চট্টগ্রাম জেলা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সাহাব উদ্দিন ও মহানগর কমান্ডার মোজাফফর আহম্মদ দেশের স্বার্থে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণ সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ দমনে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বাত্মক সহযোগিতার আশ্বাস দেন। সভা শেষে বীর মুক্তিযোদ্ধাগণের মাঝে বস্ত্র বিতরণ করা হয়।
চট্টগ্রাম বিভাগ
রাঙ্গুনিয়ায় বড় ভাইকে না পেয়ে ছোট ভাইকে হত্যা
চট্টগ্রাম বিভাগ
৪০ হাজার পিস ইয়াবাসহ দুই রোহিঙ্গা আটক
চট্টগ্রাম বিভাগ
চট্টগ্রামে ক্যাব’র পোল্ট্রি খামারী, ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের মার্কেট লিংকেজ সভা অনুষ্ঠিত
-
আন্তর্জাতিক8 years ago
গ্রিস প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের ঘোষণা
-
আন্তর্জাতিক8 years ago
যুক্তরাষ্ট্রে দুটি বিমানের সংঘর্ষে ৪ জনের মৃত্যু
-
স্বাস্থ্য8 years ago
গলা ব্যথার কারণ ও চিকিৎসা
-
দেশজুড়ে9 years ago
আজ চন্দ্র গ্রহন সন্ধা ৬টা ১২ মিনিট থেকে রাত ৮ টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত
-
বিবিধ9 years ago
আর অটো রিক্সা নয় এবার অবিশ্বাস্য কম দামের গাড়ি!
-
জাতীয়8 years ago
আন্তর্জাতিক নারী দিবস আজ
-
জাতীয়9 years ago
স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমি ও মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা
-
ফিচার8 years ago
বাংলাদেশের ৬৪ জেলার নামকরণের ইতিহাস