Connect with us

আন্তর্জাতিক

জিকা ভাইরাস ও ব্রাজিলের ষড়যন্ত্র তত্ত্ব

Avatar photo

Published

on

zikaআন্তর্জাতিক ডেস্ক: জিকা ভাইরাসের বিরুদ্ধে রীতিমতো যুদ্ধ ঘোষণা করেছে ব্রাজিল সরকার। কিন্তু ভাইরাসটি শনাক্তকরণে ব্রাজিলীয় প্রশাসন একের পর এক পদক্ষেপে চরম ব্যর্থ হয়েছে এবং ভাইরাসটিতে আক্রান্তদের সঠিক সংখ্যা প্রকাশে দেশটির ব্যর্থতায় প্রশ্ন উঠেছে যে জিকা সংক্রমণের বিষয়টি প্রশাসন কতটা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে।
মশাবাহিত এ ভাইরাসে আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্রাজিল এবং ব্রাজিলের সবচেয়ে বেশি জিকা সংক্রমিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় প্রদেশ পার্নামবুকোতে চিকিৎসক, নার্স ও রোগী, কাউকেই ছাড়েনি ভাইরাসটি। বলা হচ্ছে, চলতি বছর অনুষ্ঠিতব্য অলিম্পিক গেমস নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ভাইরাসটিতে আক্রান্তদের শনাক্তকরণে ও জিকায় আক্রান্তদের সঠিক সংখ্যা প্রকাশে ব্যর্থ হচ্ছে দেশটির সরকার প্রশাসন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা সত্ত্বেও দেশটির স্বাস্থ্য প্রশাসন হাজার হাজার জিকা আক্রান্ত গুরুতর অসুস্থ রোগীদের সেবা দিতে পারছে না, কারণ রোগীর সংখ্যা ধারণক্ষমতার তুলনায় ভীষণ রকমের বেশি হয়ে যাওয়ায় প্রশাসন নিজেই সংকটে পড়ে গেছে। কিন্তু অনেকে বলছে, জিকা শনাক্তকরণে এ ব্যর্থতা অনেকটাই উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং এ ভাইরাসে আক্রান্তের সঠিক সংখ্যা অনেক বেশি। বিশেষজ্ঞদের দাবি, রোগনির্ণয়ের অসম্পূর্ণ পদ্ধতির কারণে খুব অল্পসংখ্যক রোগীদের জিকায় আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

পার্নামবুকোর স্বাস্থ্য সংস্থা স্বীকার করেছে যে সব রোগীদের ক্ষেত্রে রোগনির্ণয়ের প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়নি। কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, রোগটি মহামারী আকার ধারণ করায় জিকার সঙ্গে জন্মগত ত্রুটি নিয়ে শিশুর জন্মের সম্পর্ক রয়েছে বলে শঙ্কা থাকায় অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। অপরিণত মস্তিষ্ক নিয়ে জন্ম নেওয়া ‘মাইক্রোসিফ্যালিক’ শিশুদের এ ত্রুটির সঙ্গে জিকা ভাইরাসের সম্পর্ক রয়েছে বলে আশঙ্কা করলেও এখনো বিষয়টি নিয়ে নিশ্চিত নন চিকিৎসকরা।

বৃটিশ দৈনিক দ্য ইন্ডিপেনডেন্ট জানিয়েছে, গত বছর ব্রাজিলে মাইক্রোসিফ্যালিতে আক্রান্ত হয়ে জন্ম নেওয়া মোট শিশুর এক-তৃতীয়াংশই জন্মগ্রহণ করেছে পার্নামবুকোর রিসিফ শহরে। নিকটবর্তী অলিন্ডায় অসংখ্য মানুষের মধ্যে জিকা ও চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ দেখা গেছে বলে জানিয়েছে ভাইরাসটি ধ্বংসের অভিযানে নামা স্বেচ্ছাসেবকরা। এডিস এইজিপ্টি মশা ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার পাশাপাশি জিকা ভাইরাস ছড়ানোর জন্যও দায়ী। গত ছয় মাসে এই তিন ধরনের ভাইরাস ছেয়ে গেছে ব্রাজিলে।

ব্রাজিলের পরিবেশ স্বাস্থ্য সংস্থা সেভালের পরিসংখ্যানবিদ পলা অ্যালেন (৩৫) জানান, সংস্থাটির জিকা নির্মূলকারী ১০টি দল অলিন্ডায় প্রতিদিন গড়ে নতুন করে জিকায় আক্রান্ত হওয়া একশ’ জন রোগী পাচ্ছে। অলিন্ডার পথে প্রান্তরে মশা নিবারক উপাদান ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করছে সংস্থাটি।

ব্রাজিলে এ মহামারী শুরুর পর থেকে এ ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা পাঁচ লাখ থেকে ১৫ লাখে পরিণত হয়েছে। কিন্তু প্রতিনিয়ত ভাইরাসটিতে আক্রান্তের সংখ্যা এত দ্রুতগতিতে বেড়ে চলেছে যে এখন রোগী গণনাই বন্ধ করেছে দেওয়া হয়েছে বলে স্বীকার করে নিয়েছে প্রশাসন।

অ্যালেনের দাবি, ভাইরাসটি দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়লেও প্রেসিডেন্ট দিলমা রুসেফের সরকারের সহযোগিতার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। অথচ মহামারীটির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে সরকার প্রকৃত পরিস্থিতি লুকোনোর চেষ্টা করছে, কারণ এ বছরকে ঘিরে সরকারের অনেক বড় বড় পরিকল্পনা রয়েছে। ব্রাজিলে এ বছর পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে, অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী বার্ষিক উৎসব রিও কার্নিভ্যাল- যেখানে অংশ নেন হাজারো বিদেশী পর্যটক এবং এ বছরের অলিম্পিক গেমসের আয়োজক দেশও ব্রাজিল। এসব আয়োজনকে ঘিরে বিপুল পরিমাণ অর্থ আয়ে ব্রাজিলের জাতীয় পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন অব্যাহত রাখতেই জিকা মহামারীর আসল রূপ তুলে ধরছে না প্রশাসন।’

জিকাই প্রথম মহামারী নয়, যার সুষ্ঠু প্রতিক্রিয়া দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছে ব্রাজিলীয় প্রশাসন। গণস্বাস্থ্য প্রশিক্ষক ও চিকিৎসাবিদ আর্থার শিয়োরোকে তার দায়িত্ব থেকে গত সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু মহামারীর সময়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অব্যাহতি দিয়েছে। এরপর তার স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে মার্সেলো কাস্ত্রো নামের এক পেশাদার রাজনীতিবিদকে, যার গণস্বাস্থ্য বিষয়ে কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল না। তাকে এ দায়িত্ব হস্তান্তর করেন স্বয়ং রুসেফ। আর জিকা মহামারীর সময়ে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার পাশাপাশি কাস্ত্রোর বিভিন্ন মন্তব্য নানাসময়ে বিতর্ক ও সমালোচনা উস্কে দিয়েছে। এরকমই এক বিবৃতিতে তিনি বলেছিলেন, ‘নারীরা পা উন্মুক্ত রাখা পোশাক পড়েন’ বলে মশার কামড়ে পুরুষের তুলনায় তারাই বেশি আক্রান্ত হন বলে তিনি মনে করেন।’

অ্যালেন বলেন, ‘এই এলাকার লোকজন একজোট হয়ে কাজ করছে এবং একে অপরের জন্য স্বেচ্ছায় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে। আমরা এখনো পর্যন্ত কোনো আর্থিক বা অন্যান্য ত্রাণ সহায়তা পাইনি। কিন্তু আমাদের ওপর সমানে কাজের চাপ বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। গত ১২ বছর ধরে এই সংস্থায় কাজ করছি আমি, এমন আগে কখনো দেখিনি।’

সরকারিভাবে জিকায় আক্রান্তদের সঠিক সংখ্যা কম দেখানোর প্রচেষ্টা হিসেবেও জিকা ভাইরাস সঠিকভাবে শনাক্ত করা হচ্ছে না বলেও দাবি করেছেন তিনি। অ্যালেন নিজেও জিকায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কায় স্বাস্থ্যপরীক্ষা করিয়েছেন এবং তার মতোই আরো অনেককেই আনুষ্ঠানিক স্বাস্থ্যপরীক্ষা ছাড়াই বলে দেওয়া হয়েছে যে তাদের ‘চিকুনগুনিয়ার মতো কিছু’ হয়েছে এবং মাথাব্যথার জন্য সাধারণ ঔষধ ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ‘হাসপাতাল থেকে একমাত্র যে সুবিধা আমি পেয়েছি, তা হলো তিনদিনের ছুটির জন্য একটি স্বাস্থ্যসনদ।’

রিসিফ ইউনিভার্সিটির মহামারী বিষয়ক স্নাতকোত্তর পর্যায়ের অধ্যাপক অ্যানা লুসিয়া হিলারিও জানান, জিকা শনাক্তকরণে ব্যর্থ হলে মহামারী রোধে সঠিক পদক্ষেপ সরকার কখনোই নিতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘রোগ ছড়ানো প্রতিহত করার লক্ষ্য অর্জনের মূল চাবি হল এ বিষয়ে শিক্ষা।’

এদিকে, জিকা প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের অভাবে শঙ্কিত দেশটির জনসাধারণ। একইসঙ্গে যেসব এলাকায় সংক্রমণ বেশি, সেখানে নিরাপত্তামূলক কোনো ব্যবস্থাও নেই। হিলারিও বলেন, ‘অসুস্থ হয়ে পড়ার আশঙ্কায় নারীরা ঘরের বাইরে বের হওয়া ছেড়ে দিয়েছেন। বাড়িঘরে মশারি সরবরাহের জন্য কোনো অর্থসহায়তা নেই। আর বস্তি এলাকাগুলোর ব্যাপারে তো কিছু বলারই নেই।’

সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে জিকা প্রতিরোধে ব্রাজিল সরকারের দুই লাখ সেনাসদস্য মোতায়েনের খবর। কিন্তু সেনাবাহিনী মোতায়েনের কয়েকদিন পর থেকেই অলিন্ডার বস্তি এলাকাগুলো বা শহরের কেন্দ্রীয় এলাকাগুলোতে কোনো সেনাসদস্যের উপস্থিতি নেই।

অলিন্ডার একটি সরকারি হাসপাতালে কর্মরত সেবিকা গিল্ডা সিয়ারা (৩৭) জিকায় আক্রান্ত বলে নিজেই সন্দেহ করেছিলেন। কিন্তু স্বাস্থ্যপরীক্ষার পর ফল পেয়েছেন ১৫দিন পর। অথচ চিকিৎসকরা বলছেন, কয়েক ঘণ্টায় জিকায় আক্রান্ত হওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত করতে প্রস্তুত তারা। সিয়ারা জানান, তার প্রতিবেশীদের মধ্যে ৪০ শতাংশের ক্ষেত্রে একই ধরনের লক্ষণ দেখা গেছে। এসব লক্ষণের মধ্যে ভীষণ জ্বর, হাড়ের সংযোগে ব্যথা, প্রদাহ ও ফুসকুড়িও রয়েছে।

সরকারের যুক্তি, বিপুলসংখ্যক রোগীর প্রত্যেককে চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব নয় বলে হাসপাতালগুলো অন্তঃসত্ত্বা নারীদের প্রাধান্য দিচ্ছে। কেন রোগনির্ণয় প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা হচ্ছে না জানতে চাওয়া হলে পার্নামবুকোর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় স্বীকার করে নিয়েছে যে মহামারীর সময়ে প্রত্যেককে সম্পূর্ণ সেবা দেওয়া সম্ভব নয়। তাই ‘কেবলমাত্র অন্তঃসত্ত্বা নারী ও মাইক্রোসিফ্যালি আক্রান্ত শিশুদেরই এ সেবা দেওয়া হচ্ছে।’

একই মত প্রকাশ করেছেন রিসিফের অসওয়াল্ডো ক্রুজ হাসপাতালের প্রধান ইনফেক্টোলজিস্ট অ্যাঙ্গেলা রোশা, ৬৭, জানান, ‘এ সংকট বাড়তে থাকার প্রধান কারণ হল শৌচাগার ব্যবস্থা উন্নত করতে প্রচেষ্টার অভাব’।

একই শহরের ইমিপ হাসপাতালের স্বাস্থ্য সমন্বয়ক আদ্রিয়ানা স্কাভাজ্জি, ৪২, জানান, রোগটি সংক্রমণ পরিস্থিতির সঠিক চিত্র বুঝতে সরকারি প্রচেষ্টা ভীষণ ঢিলে গতিতে চলছে। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি রোগেরই একটি প্রাথমিক চিত্র থাকে, যা দেখে প্রথমেই সচেতন হলে সরকার পরিস্থিতি শুরুতেই নিয়ন্ত্রণে নিতে পারে। কিন্তু জিকার ক্ষেত্রে এ মহাদেশে এমন কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। ২০১৫ সালের আগস্টে প্রথমবার হঠাৎ করে রোগটিতে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির বিষয়টি জাতীয় পর্যায়ে লক্ষ্য করা হয়। কিন্তু এর পাঁচ মাস পর ডিসেম্বর অবধিও কোনো সচেতনতা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি।’

তিনি জানান, তার হাসপাতালে কোনো আর্থিক বা ত্রাণ সহায়তা সরকার পাঠায়নি। জিকা প্রতিরোধী কর্মী দল হাসপাতালটিকে নিজস্ব প্রচেষ্টায় সংগঠিত করতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘সঠিক তথ্য না পেলে পরিস্থিতি কতটা খারাপ, তা কিভাবে অনুমান করব আমরা বা কিভাবে সে পরিস্থিতির সঙ্গে লড়ব? এমন পরিস্থিতি যে শুধু রিসিফেই, এমনটা মনে করার কোনো কারণ নেই। এই মহামারী অলিম্পিক গেমসকে বাধাগ্রস্ত করতেই পারে।’

আর এটাই, অর্থাৎ বিশাল বাজেটের আসন্ন অলিম্পিক গেমসই ব্রাজিল সরকারের কাছে মূল সমস্যা, ভাষ্য সমালোচকদের।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Highlights

মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারের একদিন পরই অব্যহতি পেল হিজবুত তওহীদ ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের সদস্যরা

Avatar photo

Published

on

ভারতের পশ্চিমবঙ্গে হিজবুত তওহীদ ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন আয়োজিত ধর্মান্ধতা, উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ বিরোধী সভায় হামলা চালিয়েছে ইসলামী মৌলবাদীরা। এছাড়াও সভার আয়োজনকারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়েও হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে মৌলবাদী গোষ্ঠীটি। ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে কয়েকটি বাড়িতে। গত ২৯ জুলাই, দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরা বাজার থানার বৃন্দাবন গ্রামে বেলা ১টার দিকে হিজবুত তওহীদ ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের সদস্যদের উপর এ হামলা চালায় স্থানীয় মৌলবাদী গোষ্ঠী।

জানা যায়, এ ঘটনার পর উগ্রবাদী গোষ্ঠীর দেওয়া মিথ্যা তথ্যে অন্যায়ভাবে হেযবুত তওহীদের ৫ সদস্যকে গ্রেফতার করে মন্দিরা বাজার থানা পুলিশ। পরে তাদের ওই দিনই কোর্টে চালান করা হয়। এদিকে ঘটনার একদিন বাদেই কোর্টের নির্দেশে মিথ্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছে হিজবুত তওহীদ ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের সদস্যরা।

উল্লেখ্য বাংলাদেশ ভিত্তিক অরাজনৈতিক ধর্মীয় আন্দোলন হিজবুত তওহীদ ভারতীয় অংশে কার্যক্রম পরিচালনা করছে হিজবুত তওহীদ ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন নামে। ফাউন্ডেশনটির সদস্যরা কিছুদিন ধরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে ধর্মান্ধতা, উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রকৃত ইসলাম প্রচারে কাজ করছে। এই ফাউন্ডেশনটি পশ্চিমবঙ্গের সরকার অধিকারকের পক্ষ থেকে অনুমোদিত হয়ে কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল।

প্রত্যক্ষদর্শী, স্থানীয় ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ জুলাই বৃন্দাবন গ্রামে হিজবুত তওহীদ ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ধর্মান্ধতা, উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী একটি মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। মতবিনিময় সভা আয়োজনের পূর্ব থেকেই এক শ্রেণির উগ্রবাদী গোষ্ঠী মন্দিরা বাজারে হামলার হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল। ঘটনার দিন ১১টার দিকে বৃন্দাবন গ্রামের নজরুল ইসলাম পাইকের ছেলে আলি হায়দার পাইককে মারধর করে। পরে তারা তাদের বাড়িতে এসে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায়। এ সময় উগ্রবাদীরা হিজবুত তওহীদ ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশনের সদস্য বৃন্দাবন গ্রামের মৃত হারুন মল্লিকের ছেলে আবুল খায়ের মল্লিক, মৃত ওসীমুদ্দীন মল্লিকের ছেলে জয়নাল আবেদীন মল্লিক, ইমরান মল্লিকের ছেলে আব্দুল মালেক মল্লিক ও রাইহান মল্লিককেও মারধর করে এবং মিথ্যা তথ্য দিয়ে অন্যায়ভাবে পুলিশের হাতে তুলে দেয়।

হামলায় অংশগ্রহণকারীরা হলেন- মন্দিরা বাজার থানার অচিনা গ্রামের মৃত আমির আলী মোল্লার ছেলে মাওলানা কিবরিয়া মোল্লা, পূর্ব নিলামবরপুর গ্রামের মাওলানা কুতুব উদ্দিন, নীলাম্বরপুর গ্রামের আব্দুর রহিম, পূর্ব নীলাম্বরপুর গ্রামের মাওলানা আকরাম শেখ, বৃন্দাবনপুর গ্রামের মফিজ উদ্দিন আহমেদের ছেলে হাফেজ কামরুদ্দিন আহমেদ, মৃত ইজ্জত মল্লিকের ছেলে মাওলানা আব্দুস সালাম মল্লিক, রায়পুর থানার কুলপি গ্রামের হাফেজ আব্দুল গফফার।

ভুক্তভোগীরা জানান, মাওলানা কিবরিয়া মোল্লা গংরা হিজবুত তওহীদ সদস্যদের বাড়িতে হামলা করে একটি ঘর মাটির সাথে মিশিয়ে দেয় ও ভাঙচুর করে। হামলার সময় তাদের হাতে ছিল রড, লাঠি, এবং অন্যান্য দেশীয় অস্ত্র। তারা আরও বলেন, পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ ২৪ পরগনার মন্দিরা বাজার এলাকায় বেশ কিছুদিন ধরে সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে প্রকৃত ইসলাম প্রচারে কাজ করে যাচ্ছে হিজবুত তওহীদ ইন্ডিয়া ফাউন্ডেশন। এরই প্রেক্ষিতে এক শ্রেণির ধর্মব্যবসায়ী উগ্রবাদী গোষ্ঠী ষড়যন্ত্র করে আসছিল। তারা হিজবুত তওহীদ ফাউন্ডেশনের সদস্যদের বিভিন্নভাবে হয়রানি ও নির্যাতন করেছে। সর্বশেষ গত ২৯ তারিখ আয়োজিত মতবিনিময় এবং আলোচনা সভাকে বানচাল করার জন্য তারা এই ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে। বৃন্দাবন এলাকার প্রোগ্রাম সম্পর্কে আগে থেকেই মন্দিরা বাজার থানা পুলিশকে মৌখিক ও লিখিতভাবে অবহিত করা হয়। থানা কর্তৃপক্ষের অনুমতি ক্রমেই সেখানে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছিল বলেও জানান হিজবুত তওহীদ ফাউন্ডেশনের নেতৃবৃন্দ।

Source : ধর্মান্ধতা-উগ্রবাদ-জঙ্গিবাদ বিরোধী সভায় মৌলবাদীদের হানা । আয়োজকদের বাড়ি বাড়ি হামলা

Continue Reading

Highlights

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলে রাশিয়ার হামলা, নিহত ৮

Avatar photo

Published

on

পূর্ব ইউক্রেনের শহর স্লোভিয়ানস্কে শুক্রবার ফ্ল্যাটের একটি ব্লকে রাশিয়ার গোলাবর্ষণে শিশুসহ ৮ জন নিহত হয়েছে। শিশুটিকে ধ্বংসস্তুপ থেকে বের করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় অ্যাম্বুলেন্সে মারা যায়। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন নাগরিকদের সেনাবাহিনীতে সংগঠিত করা সহজ করতে এবং তাদের দেশ থেকে পালাতে বাধা দেওয়ার জন্য একটি খসড়া বিলে স্বাক্ষর করার মধ্যেইপ্রতিবেশীদের ওপর এই হামলা চালালো।

রাশিয়া আরও বলেছে, তারা স্লোভিয়ানস্কের ৪৫ কিলোমিটার (২৭ মাইল) দক্ষিণ-পূর্বে বাখমুতের ভয়াবহ যুদ্ধের হটস্পট আরও ঠেলে দিচ্ছে, কিয়েভ যদি দীর্ঘতম এবং রক্তক্ষয়ী বাখমুতের যুদ্ধে হেরে যায় তাহলে সেটি এই বড় শহরটির জন্য ঝুঁকি গুরুতর ঝুঁকি সৃষ্টি হবে। স্লোভিয়ানস্ক দোনেৎস্ক অঞ্চলের একটি অংশে অবস্থিত যা ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণাধীন।

অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে রাশিয়ান হামলার পর দোনেৎস্ক অঞ্চলের গভর্নর পাভলো কিরিলেনকো ইউক্রেনের টেলিভিশনে বলেছেন, হামলায় ‘২১ জন আহত হয়েছে এবং আটজন মারা গেছে।’

তিনি বলেন, নিহতদের মধ্যে একটি ছেলে শিশু রয়েছে। এএফপি সাংবাদিকরা ঘটনাস্থল থেকে বলেছেন, উদ্ধারকর্মীরা সাধারণ সোভিয়েত যুগের হাউজিং ব্লকের উপরের তলায় বেঁচে যাওয়া লোকদের উদ্ধার প্রচেষ্টা চালাচ্ছে এবং সেখান থেকে আগুনের কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে।

ইউক্রেনীয় পুলিশ টুইটারে জানিয়েছে, ‘ধ্বংসস্তুপ থেকে বের করে আনার পর একটি অ্যাম্বুলেন্সে এক শিশু মারা গেছে।’ ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি ওলেনা জেলেনস্কা এই ‘অবর্ণনীয় শোকের’ সময় শিশুটির পরিবারের প্রতি তার সমবেদনা পাঠিয়েছেন।

প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এর আগে আবাসিক ভবনে ‘নৃশংসভাবে গোলাবর্ষণ’ এবং ‘দিবালোকে মানুষ হত্যার’ জন্য রাশিয়ার নিন্দা করেছেন।

Continue Reading

Highlights

মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করে পুরস্কার পেলেন রাশিয়ান পাইলটরা

Avatar photo

Published

on

কৃষ্ণ সাগরে মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত করা ফাইটার পাইলটদের পুরস্কৃত করেছে রাশিয়া। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সের্গেই শোইগু দুটি রাশিয়ান এসইউ-২৭ যুদ্ধবিমানের পাইলটদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানায় বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবার (১৪ মার্চ) একটি রাশিয়ান এসইউ-২৭ যুদ্ধবিমানের সঙ্গে সংঘর্ষের পর মার্কিন এমকিউ-৯ রিপার ড্রোনটি কৃষ্ণ সাগরে বিধ্বস্ত হয়।

মার্কিন সেনাবাহিনী জানিয়েছে, ড্রোনটি আন্তর্জাতিক আকাশসীমায় একটি রুটিন মিশনে ছিল। রাশিয়ার দুটি যুদ্ধবিমান তা আটকানোর চেষ্টা করে। রাশিয়ার একটি যুদ্ধবিমানের আঘাতে ড্রোনটি অকেজো হয়ে পড়ে। পাইলটরা যারা দূর থেকে ড্রোনটি পরিচালনা করেছিল তারা তখন এটিকে কৃষ্ণ সাগরে ফেলে দিতে বাধ্য হয়।

ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসন শুরুর পর মঙ্গলবারের সংঘর্ষটি ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে প্রথম সরাসরি সামরিক সংঘর্ষ। যদিও মস্কো মার্কিন ড্রোন ধ্বংস করার দাবি অস্বীকার করেছে।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, কৃষ্ণ সাগরে মার্কিন ড্রোন দেখে তারা ফাইটার জেট পাঠিয়েছিল। তবে ড্রোনের সঙ্গে এর সংঘর্ষ হয়নি। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ড্রোনটি বিধ্বস্ত হয়।

রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, যুদ্ধবিমানের পাইলটদের পুরস্কৃত করা হয়েছে। সংঘর্ষের ঘটনার বিষয়ে তাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাশিয়ান যুদ্ধবিমান ও ড্রোনের মধ্যে কোনো সংঘর্ষ হয়নি।

মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, মস্কোর স্থানীয় সময় সকাল সাড়ে ৯টার দিকে এমকিউ-রিপার ড্রোনটি প্রবল বেগে চলার সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় এবং পানিতে পড়ে যায়। ড্রোনটি ট্রান্সপন্ডার বন্ধ রেখে উড়ছিল। যা ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে রুশ আকাশসীমায় রাশিয়ার আরোপিত নিষেধাজ্ঞার লঙ্ঘন।

তবে যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, রাশিয়ান যুদ্ধবিমান ড্রোনের কাছে এসে এটিকে হয়রানি করে এবং এতে জ্বালানি ছিটিয়ে দেয়। ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ধরে এটিকে আটকানোর চেষ্টা করার পর একটি যুদ্ধবিমান দ্বারা ড্রোনটির প্রপেলারটি কেটে যায় এবং এটি সমুদ্রে পড়ে যায়।

বৃহস্পতিবার (১৬ মার্চ) মার্কিন সেনাবাহিনী এই এনকাউন্টারের ৪০ সেকেন্ডের সম্পাদিত ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করে। এতে দেখা গেছে, রাশিয়ার যুদ্ধবিমান ড্রোনের কাছে আসছে। এ সময় এটি ড্রোনটির উপর জ্বালানি ছিটিয়ে দিচ্ছে। এরপর ড্রোনটির প্রপেলার নষ্ট হয়ে যায়। এই ঘটনাকে রাশিয়ার ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী আচরণের বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন একজন শীর্ষ মার্কিন জেনারেল।

Continue Reading