Connecting You with the Truth

ট্রাম্পকে সমর্থন দিলেন মিশরীয় মুসলিম 

trump_india

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: এলহামি ইব্রাহিম, ৬২, একজন মুসলিম। কিন্তু মুসলিম হলেও মুসলিমবিদ্বেষী মার্কিন ধনকুবের ও প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি ক্ষুব্ধ অন্যান্য মুসলিমদের মতো নন তিনি।
মিশরীয় বংশোদ্ভূত এই ব্যবসায়ী যুক্তরাষ্ট্রে গিয়েছিলেন ১৯৮১ সালে এবং প্রায় দুই দশক সেখানে বসবাসের পর নাগরিকত্ব অর্জন করেন তিনি। শুক্রবার এক সাক্ষাৎকারে তিনি জানিয়েছেন, মিশরের পরিবর্তন নিয়ে শঙ্কিত তিনি। তার মতে, মিশরের বর্তমান বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের হার বৃদ্ধিই দেশটিতে তরুণ মিশরীয়দের মধ্যে ইসলামপন্থী উগ্রবাদ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি প্রসঙ্গে ট্রাম্পের প্রতি জোরালো সমর্থন জানিয়েছেন ইব্রাহিম। এক্ষেত্রে যদিও তিনি নিজেও এ ধরনের নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়তে পারেন, তাতেও হুমকি বলে মনে হলে মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ ঠেকানো উচিত বলে মত তার।

সাউথ ক্যারোলাইনার মার্টেল বিচে এক জনসমাবেশে আবাসন শিল্প ব্যবসায়ী ট্রাম্পের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘আমি একজন মুসলিম এবং আমি আপনাকে ভালোবাসি।’

যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যায় সাউথ ক্যারোলাইনায় রিপাবলিকান প্রচারণার আগে তার এই বক্তব্যের একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে এনবিসি নিউজ। ভিডিওটি নিজের ফেসবুক পেইজেও প্রকাশ করেছেন ইব্রাহিম।

তিনি জানিয়েছেন, নিয়মিত মসজিদে যান না তিনি।

মুসলিমবিদ্বেষী একের পর এক মন্তব্যের কারণে কেবল যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, গোটা বিশ্বেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সমালোচনা চলছে। কিন্তু ইব্রাহিমসহ ট্রাম্পের সংখ্যালঘু ভক্তরা মনে করেন, ট্রাম্পের ভাষণ স্পর্শকাতর বা বর্জনীয় নয়, বরং বিশ্বজুড়ে প্রায় অর্ধেক অঞ্চলে চলমান সহিংসতা যুক্তরাষ্ট্রেও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা মাত্র।

ইব্রাহিম বলেন, ‘ট্রাম্পের দাবি কার্যকর হলে যদি আমিও যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে না পারি, তাহলেও তা মেনে নেব আমি… যদি তার প্রতি আস্থার কোনো পরীক্ষা দিতে হয়, তাহলে সবার আগে তা আমিই দেব।’

কে এই ইব্রাহিম? জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন মিশরের প্রয়াত রাষ্ট্রপ্রধান আনোয়ার সাদাতের শাসনামলে দু’বার নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করেছেন ইব্রাহিম। এরপর ১৯৭৩ সালে তাকে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মিশরের যুদ্ধে পাঠানো হলে সেখানে এক বিস্ফোরণে তার এক চোখ অন্ধ হয়ে যায়।

তিনি জানান, মিশরীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা নির্যাতনের সময়ে তার পায়ের আঙুলের উপড়ে ফেলেছিল, কারণ ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধে সাদাতের অবস্থানের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন তিনি।

উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করার পর তিনি ইয়েমেনে চলে যান এবং দেশটির রাজধানী সনায় মার্কিন কনস্যুল জেনারেলের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব হয়। সেই বন্ধুত্বের যোগসূত্রেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। সেখানে প্রথমে তিনি নিউ ইয়র্কে এবং পরে বাল্টিমোরে বসবাস শুরু করেন। বাল্টিমোরে তিনি আবাসন শিল্পের ব্যবসা শুরু করেন এবং এক পর্যায়ে মার্টেল বিচে স্থায়ী হন।

যে নির্যাতন সহ্য করেছেন, তা সত্ত্বেও সন্দেহভাজন জঙ্গিদের জিজ্ঞাসাবাদে ‘মধ্যযুগীয় বর্বর নির্যাতনের কায়দা আবারো ব্যবহার শুরু করার জন্য’ ট্রাম্পের আহ্বানের সঙ্গে একমত ইব্রাহিম। তিনি বলেন, ‘সারা বিশ্বেই নির্যাতন চলছে, আজ, আগামীকাল বা গতকাল… আর ট্রাম্প তা প্রকাশ্যে বলছেন মাত্র।’

ট্রাম্পের যে বিষয়টি ইব্রাহিমের সবচেয়ে পছন্দ, তা হল ব্যবসায় ট্রাম্পের সংশ্লিষ্টতার দীর্ঘ সাফল্যের ইতিহাস।

তিনি বলেন, ‘তিনিই যুক্তরাষ্ট্রকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনবেন- যে আমেরিকাকে আমি চিনতাম, সেই আমেরিকা দেখতে চাই আমি, ওবামা (বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা) বা জর্জ ডব্লিউ বুশের (সাবেক প্রেসিডেন্ট) ধ্বংস করে যাওয়া আমেরিকা দেখতে চাই না আমি।’

তিনি এমন একজন প্রেসিডেন্ট চান, যিনি মুসলিমদের এমন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখবেন, যে দৃষ্টিকোণ থেকে ইব্রাহিম মুসলিমদের দেখেন। তার মা ও বোন হাই হিলের জুতো ও মাঝারি দৈর্ঘ্যের স্কার্টের মতো পশ্চিমা ধাঁচের পোশাকে অভ্যস্ত হয়ে বেড়ে উঠলেও ১৯৯০’র দশকে মিশরের রাজধানী কায়রোর মতো শহরেও হয়রানি এড়াতে তারা মাথা ঢেকে রাখা পোশাক পড়তে বাধ্য হয়েছিলেন।

তিনি বলেন, ‘সেখানকার (মিশরের) সংবাদমাধ্যমগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। তারা মিশরের তরুণ প্রজন্মের আত্মা নষ্ট করে দিয়েছে। ভেড়ার পালের মতো এক ধর্মে তরুণ প্রজন্মকে আটকে দিয়েছে তারা।’

Comments
Loading...