দিল্লী বিধান সভা নির্বাচন মোদির জনপ্রিয়তার প্রথম পরীক্ষা
গতকাল অনুষ্ঠিত হয়ে গেল দিল্লী বিধানসভা নির্বাচন, ফল ঘোষণা হবে মঙ্গলবার। আর এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে সত্যিকারের জনপ্রিয়তার মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন সদ্য প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়া নরেন্দ্র মোদি। কেননা, তিনি ক্ষমতায় আসার পর এটিই প্রথম বিধান সভা নির্বাচন। আর এই নির্বাচনের মাধ্যমে অনেকাংশে প্রমাণিত হবে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রিয়তা। এমনটাই মনে করছে ভারতের গণমাধ্যমগুলো।
এই নির্বাচনে গত মেতে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে গো-হারা কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা আরো নিচে নেমে যাওয়ার বিষয়টিও প্রমাণিত হতে পারে। মে মাসের পর থেকে মোদির বিজেপি বেশ ক’টি বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করে। এর এই জয়ের কৃতিত্ব পেয়েছেন মোদি। তবে দিল্লীতে ২০১৩ সালের মতো এবারও বিজয় বিজেপির জন্য অধরাই থেকে যেতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর শনিবার দিল্লী বিধানসভা নির্বাচনে প্রথমবারের মতো সত্যিকার জনপ্রিয়তার পরীক্ষার সম্মুখীন হচ্ছেন। মতামত জরিপে দেখা যাচ্ছে, ৪৯ দিন দিল্লীর ক্ষমতায় থেকে পদত্যাগ করা মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল আবারো দিল্লীর মসনদে ফিরে আসছেন। কেজরিওয়াল মে মাসে বেনারস আসন থেকে বিজয় অর্জনে মোদিকে ঠেকাতে পারেননি। দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী পদের জন্য মোদি বেছে নিয়েছেন সাবেক শীর্ষ নারী পুলিশ কর্মকর্তা কিরণ বেদিকে। তার তাকে বিজয়ী করতে প্রচারণার মাঠে নামিয়েছেন তার দুই বিশ্বস্ত সহযোগী বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ও অর্থমন্ত্রী অরুন জেটলিকে। তবে ৬৫ বছর বয়সী কিরণ বেদিকে দলের প্রার্থী করায় বিজেপির অনেক কর্মীই নাখোশ। অতীতে বিজেপিকে খাটো করে দেখার ইতিহাস থাকায় কিরণ বেদির ওপর ক্ষুব্ধ তারা।
কিরণ বেদি সাবেক টিভি কো হোস্ট এবং দক্ষ মিডিয়া পারফর্মার হলেও শ্রমজীবী ও সংখ্যালঘু ভোটারদের কাছে টানার ক্ষেত্রে কেজরিওয়ালই অধিকতর সফলতার স্বাক্ষর রেখেছেন। তার আকস্মিক সভা-সমাবেশগুলোতেই তাৎক্ষণিকভাবে হাজার হাজার মানুষ ভিড় করছে। ৪৬ বছর বয়সী কেজরিওয়াল ৪৯ দিন দিল্লীর মুখ্যমন্ত্রী দায়িত্ব পালনের পর পদত্যাগ করার জন্য বেশ কয়েকবার জনগণের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেছেন। কেজরিওয়াল এবার ক্ষমতায় এলে দিল্লীতে একটি স্থিতিশীল সরকার প্রতিষ্ঠা, সুলভে বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ এবং বিনা মূল্যে ওয়াইফাই সেবা প্রদানের প্রতিশ্র“তি দিয়েছেন। কেজরিওয়াল গত সপ্তাহে উত্তর-পশ্চিম দিল্লীতে এক নির্বাচনী জনসভায় বলেছেন, ‘আমরা লড়াই, আপনাদের লড়াই, আমি কে? এক সাধারণ লোক, যে আপনাদের হয়ে লড়ছে।’
কেজরিওয়ালের জনপ্রিয়তা দেখে স্বয়ং মোদি তার বিরুদ্ধে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমেছেন। মোদি কেজরিওয়ালকে ‘পেছন থেকে ছুরি চালানো লোক’ অভিহিত করে বলেন, ক’দিনের মাথায় ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে তিনি জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। পূর্ব দিল্লীতে এক রোড শো চলাকালে এএফপির সঙ্গে আলাপকালে কিরণ বেদিও কেজরিওয়ালকে নাকচ করে দেয়ার চেষ্টা করেন।
তিনি বলেন, জনগণ এখন নাটক, তামাশার ওপর বিরক্ত। তারা আর এটি চায় না, তারা চায় স্থিতিশীলতা, ঐকান্তিক শাসন এবং অগ্রগতি, যা কেবল আমরাই দিতে পারি।’ দিল্লীর অবজারভার রিচার্স ফাউন্ডেশনের মনোজ যোশী বলেন, নির্বাচনে খুবই হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে, তাই কে জিতবে তা বলা মুশকিল। তবে বিজেপি হারলে তা হবে মোদি সরকারের জন্য বিরাট আঘাত, কেননা তারা এই নির্বাচনের প্রচারণায় প্রচুর বিনিয়োগ করেছেন।
তিনি বলেন, এছাড়া দিল্লীতে ‘বিরোধী সরকার কেন্দ্র সরকারের জন্য সমস্যা তৈরি করবে। কারণ কেজরিওয়াল ও তার দল খুচরা বাজারে প্রত্যক্ষ বিদেশী বিনিয়োগ, ভূমি অধিগ্রহণ বিল এবং মোদি সরকারের আরো বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার পরিকল্পনার বিরোধী। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দিল্লীর এক বিজেপি নেতাও স্বীকার করেন যে দিল্লীর ১ কোটি ৩০ লাখ ভোটারের রায়ের একটি ব্যাপক প্রভাব থাকবে। তিনি বলেন, ‘এলাকা ও জনসংখ্যার বিচারের এটিকে একটি ছোট পৌরসভা মনে হলেও এটি অন্যান্য বিধানসভার চেয়ে অনেক বেশি প্রচারণা এবং মিডিয়া মনোযোগ পেয়ে থাকে। তিনি বলেন, নির্বাচনে ভাল ফল করলে তা কেজরিওয়াল ও আম আদমি পার্টিতে নতুন জীবন দেবে।