দীর্ঘ সেশনজটের থাবায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়
তপন কুমার রায়, বেরোবি সংবাদদাতা : রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশনজট ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেশনজট নিরসনে শিক্ষকগণ বিভিন্ন প্রতিশ্র“তি দিলেও বাস্তবে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেনা না বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের। এদিকে ক্রমশই সেশনজট বৃদ্ধি পাওয়ায় শিক্ষার্থীদেও মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা লক্ষ্য করা গেছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের একুশটি বিভাগের মধ্যে ২-১টি ছাড়া সব বিভাগেই সেশন জট বড় আকার ধারণ করেছে। গত গত ৯ আগস্ট সশন জট নিরসনসহ ৭ দফা দাবিতে শ্রেণিকক্ষে তালা লাগিয়ে বিক্ষোভ করে গণিত বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
তবে সবচেয়ে নাজুক অবস্থা তৈরী হয়েছে কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ, ইলেকট্রনিক্স এন্ড টেলিকমিউনিকেশন বিভাগ, রসায়ন বিভাগ, গণিত বিভাগ, পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগ, পরিসংখ্যান বিভাগ, ভুগোল ও পরিবেশ বিদ্যা বিভাগ, দূর্যোগ ব্যাবস্থাপন্ াবিভাগ, বাংলা বিভাগ, ইংরেিেজ বিভাগ, অর্থনীতি বিভাগ ও গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে। এ বিভাগ গুলোর মধ্যে বাংলা, ইংরেজি, অর্থনীতি, গণিত ও কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের শিক্ষার্থী ভর্তির ৭ বছর অতিক্রম করলেও একটি ব্যাসও স্নাতকোত্তর শেষ করতে পারেনি।এরই মধ্যে কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থী জনি রায়হান একটি অনলাইন নিউজ পোর্টালের মাধ্যমে উপাচার্য বরাবর সেশনজটের ভয়াবহ স্বরূপ বিবরণ দিয়ে খোলা চিঠি লিখেছেন। সেখানে এই শিক্ষার্থী উল্লেখ্য করেন যে, ৬ মাসের সেমিস্টার তাদের ১৪ মাসেও শেষ হচ্ছেনা।
বিশ্বদ্যিালয়ের কয়েকজন শিক্ষক সেশন জটের মূল কারণ হিসেবে শিক্ষক ও শ্রেণিকক্ষের সল্পতাকে দায়ী করেন। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১টি বিভাগের ১২৫টি ব্যাচের প্রায় ৭০০০ শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন ১৪২ জন। এর মধ্যে ৭-৮জন শিক্ষক শিক্ষা ছুটিতে আছেন। শিক্ষক সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম হওয়ায় একজন শিক্ষককে কয়েকটি করে ব্যাচের ক্লাস নিতে হচ্ছে বলে জানান শিক্ষকগণ।
সরজমিনে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ টি বিভাগের প্রায় ১২৫টি ব্যাচের জন্য চারটি একাডেমিক বিল্ডিংয়ে শ্রেণিকক্ষ রাখা হয়েছে মাত্র ৭০ টির মত। শিক্ষকরা জানান, শ্রেনিকক্ষ অপ্রতুল হওয়ার কারণে রুটিন মাফিক ক্লাস নেয়া সম্ভব হয় না। যার ফলে কোর্স কমপ্লিট করতে সময় বেশি লাগায় সেশন জটের সৃষ্টি হচ্ছে।
গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের দ্বিতীয় ব্যাচের শিক্ষার্থী কামরুল জানান, আমাদের বিভাগে বর্তমানে চারটি ব্যাচ। কিন্তু ক্লাসরুম মাত্র দুটি। একারণে ক্লাস করতে এসে আমাদেরকে প্রতিনিয়ত অন্য ব্যাচের ক্লাস শেষ হওয়া পর্যন্ত দীর্ঘসময় অপেক্ষা করতে হয়।
সেশনজটের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী সুমন ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, অনেক আশা নিয়ে এই বিশ্ববিদ্যায় ভর্তি হয়েছিলাম। ভেবেছিলাম প^াঁচ বছরের মধ্যে পড়ালেখা শেষ করে ভালো চাকুরী করে পরিবারের সপ্ন পূরণ করব। কিন্তু ভর্তির আট বছর অতিক্রান্ত হলেও স্নাতকোত্তর শেষ করতে পারলাম না। আমার বন্ধুরা যারা অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলো তারা অনেকেই এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বা সরকারী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছে। অথচ আমি এখনও পরিবারের বোঝা হয়ে আছি।
সোমবার এসব বিষয়ে উপাচার্যের সাথে কথা বলতে তার কার্যালয়ে গেলে তিনি কয়েকদিন পর দেখা করতে বলেন। এসময় তিনি জরুরী মিটিংএ ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন এক কর্মকর্তা।
বাংলাদেশেরপত্র/এডি/আর