Connect with us

জাতীয়

দেশের বিভিন্ন স্থানে মামলার আসামিসংখ্যা সহস্রাধিক

Published

on

mamla picডেস্ক রিপোর্ট:
দশম সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূতির দিনে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের পাল্টাপাল্টি কর্মসূচির মধ্যে পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের সঙ্গে বিএনপি ও শরিকদের সংঘর্ষের ঘটনায় দেশের বিভিন্ন স্থানে এক ডজনেরও বেশি মামলা হয়েছে।
চট্টগ্রাম, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলায় পুলিশের করা এসব মামলায় বিএনপি-জামায়াতের কয়েক হাজার কর্মীকে আসামি করা হয়েছে। হত্যা, বিস্ফোরক ও পুলিশের ওপর হামলাসহ বিভিন্ন অভিযোগে আনা হয়েছে আসামিদের বিরুদ্ধে। এর মধ্যে রাজশাহীর তিনটি মামলায় ৭-৮ হাজার এবং চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুটি মামলায় তিন হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করেছে পুলিশ।
রাজশাহী জেলার পুঠিয়ার বানেশ্বরে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় হত্যা, বিস্ফোরক দ্রব্য আইন ও পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে তিনটি মামলা হয়েছে। এছাড়া আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার ঘটনায় দ্রুত বিচার আইনে করা হয়েছে আরেকটি মামলা। সোমবার বিকালে বানেশ্বর বাজার এলাকায় রাজশাহী-নাটোর মহাসড়কে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি কর্মীদের সংঘর্ষের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মজির উদ্দিন নামের এক বিএনপি কর্মী নিহত হন। এ সময় ১৩ পুলিশ সদস্যসহ আরও অন্তত ৩০ জন আহত হন। ওই ঘটনায় পুঠিয়া থানার এসআই রফিকুল ইসলাম একটি হত্যা মামলা করেছেন। এছাড়া একই ঘটনায় এসআই আসাদুজ্জামান বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে এবং এসআই ডেভিড হেমাদ্রি পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে আরো দুটি মামলা দায়ের করেছেন। রাজশাহীর পুলিশ সুপার আলমগীর কবির জানান, মজির উদ্দিন কার গুলিতে মারা গেছেন, তা কেউ বলতে পারেনি। এ জন্য অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আসামি করা হয়েছে। তদন্তে যাদের পাওয়া যাবে তাদের নামে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। এদিকে সোমবার সকালে রাজশাহী মহানগরীর উপশহরে আওয়ামী লীগের উত্তরাঞ্চলীয় শাখা কার্যালয়ে আগুন দেয়া এবং আগুনে দুইটি মোটরসাইকেল ও একটি টেলিভিশনসহ কার্যালয়ের আসবাবপত্র পুড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে গত কাল সকালে বোয়ালিয়া মডেল থানায় দ্রুত বিচার আইনে মামলা করেন থানা (পশ্চিম) আওয়ামী লীগের ত্রাণ বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ শামীম হোসেন। এতে বিএনপি-জামায়াতের ১৯ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও অর্ধশত নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। বোয়ালিয়ার ওসি খন্দকার নূর হোসেন জানান, মামলায় আটক আবদুর রশীদ দেওয়ান নামের এক জামায়াত কর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য রিমান্ডের আবেদন করছেন তারা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটে সোমবার বিকেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা হয়েছে পুলিশের কাজে বাধা ও হামলা এবং বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে। শিবগঞ্জ থানার ওসি মইনুল ইসলাম জানান, একটি মামলায় ৪৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরও ৩ হাজার বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীকে আসামি করেছেন এসআই আব্দুস সবুর। এছাড়া বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে এসআই হাফিজুর রহমানের করা মামলায় একই সংখ্যক অজ্ঞাতপরিচয় আসামি রয়েছেন। এ মামলায় নাম উল্লেখ করা হয়েছে ৫১ জনের।
চট্টগ্রাম জেলার কোতোয়ালি থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম জানান, নগরীর নাসিমন ভবনে বিএনপি কার্যালয় ও আশপাশের এলাকায় পুলিশের ওপর হামলা, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুরের ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী ও বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে দলটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে। নগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন, জেলা উত্তর শাখার আহ্বায়ক আসলাম চৌধুরী, দক্ষিণের সহ-সভাপতি এনামুল হক এনামসহ অন্তত ৫০০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে আসলাম চৌধুরী ও এনামুল হক এনামসহ ২৬০ জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এদিকে চকবাজার থানার জামায়াত-শিবিরের অজ্ঞাত ১৫০-২০০ নেতাকর্মীকে আসামি করে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে আরেকটি মামলা হয়েছে বলে জানান থানার ওসি আতিক আহমেদ চৌধুরী। সোমবার চট্টগ্রামে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি-জামায়াত কর্মীদের সংঘর্ষের পর সন্ধ্যায় বিএনপি কার্যালয়ের আশপাশে অভিযান চালিয়ে আড়াই শতাধিক নেতাকর্মীকে আটক করে পুলিশ। এর আগে বিকাল পৌনে চারটার দিকে নগরীর কাজীরদেউড়ি মোড়ে জামায়াত-শিবিরের নেতৃত্বে ভাংচুর ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। পরে নগর বিএনপির দলীয় কার্যালয় নাসিমন ভবনসহ সংলগ্ন এলাকায় সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় সরকারবিরোধীরা কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেয় এবং বিজয় মেলার কয়েকটি দোকানের কাঠামো পুড়িয়ে দেয়।
চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনায় স্থানীয় থানার এসআই শামীম আহম্মেদ যে মামলা করেছেন, তাতে বিএনপির ৫২ জনের নাম উল্লেখ করে আরও চার শতাধিক নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। হাজীগঞ্জ থানার ওসি মো. শাহ আলম জানান, মামলায় চাঁদপুর-কুমিল্লা সড়কের টোরাগড় থেকে এনায়েতপুর পর্যন্ত যানবাহন ভাংচুর, লুটপাট ও পুলিশকে আহত করার অভিযোগ আনা হয়েছে। সোমবার বিকেল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সেখানে তিন ঘণ্টা ধরে বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ চলে। এতে ছয় পুলিশসহ ১৫ জন আহত হন।
ঝিনাইদহে সোমবার দুপুরে শৈলকুপার শেখপাড়ায় বিএনপি-জামায়াতের মিছিল থেকে হামলা চালিয়ে তিন পুলিশকে আহত করার ঘটনায় রাতেই দুই দলের সাড়ে তিনশ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। শৈলকুপা থানার ওসি ছগির মিঞা জানান, এসআই আব্দুর রউফের করা মামলায় নাম রয়েছে ৭০ জনের, যাদের মধ্যে থেকে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
ময়মনসিংহ জেলায় সোমবার রাতে শহরের জেলাস্কুল রোডে পেট্রোলবোমা মারার ঘটনায় বিএনপি-জামায়াতের ৫৯ জনসহ আট শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কোতোয়ালি মডেল থানায় দুটি মামলা হয়েছে। ওই ঘটনায় জড়িত সন্দেহে পুলিশ ছয়জনকে আটক করেছে বলে জানিয়েছেন থানার ওসি ফজলুল করিম। দুর্বৃত্তের ছোড়া পেট্রোল বোমায় আহত অটোরিকশা চালক ছিদ্দিকুর রহমানকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের টিএরোডসহ বিভিন্নস্থানে পুলিশ ও সরকার সমর্থকদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় ১৩৮ জনকে আসামি করে দুটি মামলা হয়েছে। গত কাল শহর বিএনপির সভাপতি শফিকুল ইসলামসহ জেলা বিএনপির ৮ নেতাকে আটকের পর এ দুই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *