নড়াইলে র্যাব-পুলিশের পাহারায় নৌকা!
জেলা প্রতিনিধি, নড়াইল: আ.লীগের দলীয় প্রতিক ‘নৌকা’ নিয়ে এলো র্যাব-পুলিশ পাহারায়। সোমবার রাতে নড়াইলের লোহাগড়া পৌরসভায় আওয়াীলীগের দলীয় মনোনিত প্রার্থী লিপি খানম তার নির্বাচনী এলাকায় আর্ধশতাধিক মোটরসাকেল এবং র্যাব-পুলিশের বহর নিয়ে এলে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, নৌকা প্রতিক প্রাপ্ত মেয়র প্রার্থী লিপি খানমের আপন ভাসুর দিলু, আকরামুজ্জামান মিলু, আনিসুজ্জামান আনিস এবং স্বামী আলিমুজ্জামান টুলু কট্টর বিএনপির সমর্থক ও নেতা-কর্মী। অনুসন্ধানে বিএনপি বা তার অঙ্গ সংগঠনের কার্যনির্বাহী পদে তাদের পরিবারের উপস্থিতি মিলবে। বিএনপি পরিবারেরর সদস্য গৃহবধু লিপি খানম নৌকা প্রতিক পাওয়ায় এলাকায় সমালোচনার ঝড় বইছে। নেতা-কর্মীরা ক্ষোভে-কষ্টে আওয়ামীলীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী দিতে পারে বলে সূত্র জানায়।
এদিকে, বিএনপির একক প্রার্থী হয়ে এডভোকেট নেওয়াজ আহম্মেদ ঠাকুর নজরুল প্রতিদ্বন্দিতায় থাকছেন। স্থানীয় ভোটারদের ধারণা বিএনপির একক প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের নৌকার প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ভোটের মাঠে থাকলে তৃতীয়বারের মতো মেয়র পদটি দখলে যাবে বিএনপির। জানাগেছে, লোহাগড়া পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন সঠিক না হওয়ায় ২০০৫ সালে প্রথম ও ২০১১ সালে দ্বিতীয়দফা মেয়র পদটি হাতছাড়া হয়ে যায় আওয়ামীলীগের। এ সুযোগে বিএনপির প্রার্থী এডভোকেট নেওয়াজ আহম্মেদ ঠাকুর নজরুল দু’বার মেয়র নির্বাচিত হন। প্রথম নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনিত প্রার্থী ছিলেন আওয়ামীলীগ নেতা ও সাবেক লোহাগড়া ইউপি চেয়ারম্যান শিকদার শাহিদুর রহমান। প্রথম নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হয়ে শিকদার শাহিদুর রহমান ৫০৬ ভোট পান আর আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে উপজেলা ছাত্রলীগের তৎকালীন সভাপতি ও যুবলীগের বর্তমান সভাপতি আশরাফুল আলম ১৬৭৬ ভোট পেয়ে পরাজিত হন।
২০১১ সালে দ্বিতীয় পৌর নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনিত প্রার্থী ছিলেন আওয়ামীলীগ নেতা মুন্সী আলাউদ্দিন। দলীয় প্রার্থী হয়ে মুন্সী আলাউদ্দিন ৯১১ ভোট পান আর বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে যুবলীগের বর্তমান সভাপতি আশরাফুল আলম ৪৫৮৬ ভোট পেয়ে পরাজিত হন। সে নির্বাচনে ৪৮০০ ভোট পেয়ে বিএনপি প্রার্থী বিজয়ী হন। বিগত দুটি নির্বাচনে আওয়ামীলীগের দলীয় সমর্থন না দিলেও শুধুমাত্র ব্যক্তি ইমেজে দলের নেতা কর্মীরা আশরাফুলকে বিজয়ী করতে মরিয়া হয়ে উঠলেও সামান্য ভোটে পরাজয় বরণ করে। অপরদিকে বিএনপির দলীয় মনোনিত প্রার্থী এবারও বর্তমান মেয়র এডভোকেট নেওয়াজ আহম্মেদ ঠাকুর নজরুল।
এদিকে আওয়ামীলীগের কর্মি-সমর্থকরা ক্ষোভের সাথে বলেন, এখানে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মি না থাকায় নৌকা প্রতিকের প্রার্থী দেওয়ার লোকের অভাবের কারনে বিএনপি পরিবারের একজনকে নৌকা প্রতিক দেওয়া হয়েছে। মনোনয়ন বিষয়ে লোহাগড়া পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ কামাল বলেন “ছাত্রজীবন থেকে আওয়ামীলীগের রাজনীতি করি, তৃনমূল থেকে আজ পর্যন্তু নিজের পয়সা খরচ করে দলকে সংগঠিত করে আসছি। কিন্তু লোহাগড়া পৌর নির্বাচনে দলীয় হাইকমান্ড মেয়র পদে অপরিচিত মুখকে মনোনয়ন দেওয়ার মাধ্যমে প্রমান করেছে ত্যাগী রাজনীতিক বলে কিছুই নেই” ।
কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য মেয়রপ্রার্থী শরিফুল ইসলাম বলেন, আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনিত প্রার্থী এত জনপ্রিয় যে এলাকায় আসতে র্যাব-পুলিশ নিয়ে আসতে হচ্ছে। লিপি খানমের পরিবার বিএনপির সমর্থীত হয়েও ডিজিএফআই এর বদৌলতে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। তিনি আরো বলেন, এসময় র্যাবের সদস্যরা যুবলীগের সভাপতি আশরাফুল আলম এবং আমার বাড়ি কোথায় থাকি কোথায়সহ বিভিন্ন ধরনের খোঁজ খবর নেন।
লোহাগড়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ও মেয়রপ্রার্থী আশরাফুল আলম আশরাফ লোহাগড়া পৌরবাসী আমার সাথে আছে জানিয়ে তিনি বলেন, গতকাল সোমবাররাতে র্যাব-পুলিশ নিয়ে আওয়ামীলীগের মনোনিত প্রার্থী লোহাগড়ায় আসে এসময় র্যাব সদস্যরা আমামি কোথায় থাকি বাড়ি কোথায় আমাকে খুঁজতে থাকে। এঘটনায় আমার সমর্থদের মাঝে আতংকের সৃষ্টি হয়। তিনি অভিযোগ করেন, সরকারি দলের প্রার্থী হয়ে র্যাব-পুলিশ দিয়ে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন।
উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়জুল আমীর লিটু এ প্রসংগে বলেন, নেত্রী যাকে মনোনয়ন দিয়েছেন, তাঁর বাইরে কাজ করার সুযোগ নেই।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ জুন নড়াইলের লোহাগড়া পৌরসভার তফসিল ঘোষনা করেন নির্বাচন কমিশন। ঘোসিত তফসিল অনুযায়ী ভোট গ্রহন আগামী ৭ আগষ্ট অনুষ্ঠিত হবে। ১৪ জুলাই মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ২২ জুলাই।