Connect with us

Highlights

বন্যা পরিস্থিতির ব্যাপক অবনতি, বিপাকে বন্যাদুর্গতরা

Avatar photo

Published

on

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে নদ-নদীর পানি বাড়তে থাকায় দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। কোমর পানিতে তলিয়ে আছে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও ফসলি জমি। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে চরম বিপাকে দুর্গত এলাকার মানুষ।

রবিবার থেকে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় দেশের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হতে পারে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। দেশের ১০টি নদ-নদীর ২২টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে বইছে। কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুরসহ ১১ জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। এদিকে, বন্যায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। দেখা দিয়েছে শুকনো খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট।

বন্যা পূর্বাভাস সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া শনিবার বলেন, আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হবে এবং তারপর থেকে উন্নতি হতে শুরু করবে। এছাড়াও মধ্যাঞ্চলে আরো ৪৮ ঘণ্টা বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা আছে, তারপর থেকে উন্নত হবে।

ব্রহ্মপুত্র ও ধরলার পানি বেড়ে যাওয়ায় কুড়িগ্রামে বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। প্লাবিত হয়ে পড়েছে নদ-নদী অববাহিকার দুই শতাধিক চরাঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ। গত ৪ দিন ধরে পানির নিচে তলিয়ে আছে জেলার ২৫ হাজার ১৫০ হেক্টর রোপা আমন, বীজতলা ও সবজি ক্ষেত। এতে চরম ক্ষতির মুখে চাষিরা। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে দেখা দিয়েছে খাবার, বিশুদ্ধ পানি ও গো-খাদ্যের সংকট।

এদিকে, সরকারিভাবে ত্রাণ সহায়তা বরাদ্দ করা হলেও তা না পাওয়ার অভিযোগ বন্যার্তদের। গাইবান্ধায় ব্রহ্মপুত্র ও ঘাঘট নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে। তলিয়ে গেছে বিভিন্ন এলাকার নিম্নাঞ্চল।

যমুনা নদীর পানি বাড়ায় বগুড়ার সারিয়াকান্দি, সোনাতলা ও ধুনট উপজেলার নদীতীরবর্তী ও চরাঞ্চলের প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। ২৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার প্রবেশ করেছে। বিভিন্ন ফসল বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ২শ হেক্টর জমির মাশকালাই ও রোপা আমনের বীজতলা। ভেসে গেছে অন্তত ৯০টি পুকুরের মাছ।

এদিকে উজানে ভারি বৃষ্টিপাত আর পাহাড়ি ঢলে নীলফামারীতে বিপৎসীমা ছাড়িয়েছে তিস্তা নদীর পানি। এতে তিস্তার তীরবর্তী জেলার ১০টি ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে, ফরিদপুরে নদ-নদীর পানি বেড়ে ৬টি উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার পানির বাড়ার ফলে জেলার সদর উপজেলার ডিক্রিরচর, নর্থচ্যানেল, চরমাধবদিয়া ও আলিয়াবাদ ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ এলাকাসহ নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় উপজেলাগুলোর সাথে চরাঞ্চলের যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। স্থানীয় কয়েকটি সড়কের বিভিন্ন অংশ ভেঙে গেছে। ভেসে গেছে ফসলের ক্ষেত। দেখা দিয়েছে গবাদি পশুর খাদ্য সংকট।

এছাড়া ফরিদপুরের সদরপুর ও চরভদ্রাসন উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে পানি ঢুকে যাওয়ায় সেখানকার প্রায় ৬০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার অনেক জায়গায় শুরু হয়েছে নদীভাঙন। অনেক স্থানে জিওব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।

সিরাজগঞ্জে যমুনাসহ অভ্যন্তরীণ নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় বন্যা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে। যমুনায় পানি বৃদ্ধির ফলে জেলার অভ্যন্তরীণ সব নদ-নদী ও চলন বিলের পানি বৃদ্ধিও অব্যাহত রয়েছে। কাজিপুর, সদর, বেলকুচি, চৌহালী ও শাহজাদপুর উপজলার কমপক্ষে ৪০টি ইউনিয়নে লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। তলিয়ে গেছে প্রায় পাঁচ হাজার হেক্টর ফসল। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপসহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেন, কয়েক দিন ধরে যমুনায় পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।

বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি আরো দুদিন অব্যাহত থাকবে। দুদিন পর থেকে পানি কমতে শুরু করবে।

সিরাজগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. ফারুক আহাম্মদ জানান, বন্যা মোকাবিলায় আমাদের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। ৫৪১ টন চালসহ ডাল, শুকনো খাবার প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। এছাড়া নগদ ১ কোটি ৮২ লাখ টাকা হাতে রয়েছে। এরই মধ্যে বন্যাকবলিত উপজেলাগুলোতে খাদ্যসামগ্রী বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। বন্যার্তদের জন্য ৭৫টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।

টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি বেড়ে চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। সদরসহ ছয়টি উপজেলার প্রায় দুই লাখ মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে পড়েছে। ভাঙন দেখা দেওয়ায় হুমকিতে টাঙ্গাইল শহর রক্ষা বাঁধ। প্রবল স্রোতে সড়ক ছাপিয়ে লোকালয়ে ঢুকছে বন্যার পানি। সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। তলিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। সার্বিকভাবে টাঙ্গাইলে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। যমুনাসহ বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়ে জেলা সদর, বাসাইল, কালিহাতি, ভূয়াপুর, গোপালপুর, নাগরপুর ও মির্জাপুর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ভেসে গেছে রাস্তাঘাটসহ বিস্তীর্ণ এলাকার সবজি ক্ষেত। পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবন পার করছেন লক্ষাধিক মানুষ।

জামালপুরে সড়কে ঢুকছে বন্যার পানি। ঝুঁকি নিয়ে চলছে ছোটবড় যানবাহন। এরই মধ্যে জেলার ইসলামপুর, দেওয়ানগঞ্জ, মেলান্দহ, মাদারগঞ্জ ও সরিষাবাড়ী উপজেলার ৩৬টি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দি লক্ষাধিক মানুষ। বন্যা দুর্গতরা আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়াও বিভিন্ন উঁচু বাঁধ ও সড়কে আশ্রয় নিয়েছেন। তলিয়ে আছে প্রায় ৮ হাজার হেক্টর ফসলি জমি। বন্যার্তদের জন্য জেলায় একশ ১২ মেট্রিক টন চাল, সাড়ে ৩৪ লাখ টাকা এবং ১ হাজার শুকনো খাবারের প্যাকেট বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া অন্যান্য জেলার বন্যা ও ভাঙনে বিপর্যস্ত তিস্তাপাড়ের গ্রামগুলোর বাসিন্দারা। ভাটির টানে হারিয়ে যাচ্ছে জমি। ঘরবাড়ি হারিয়ে দিশেহারা আশ্রয়হীন মানুষ। সর্বগ্রাসী হয়ে উঠেছে তিস্তা, ভাঙনের শব্দে দিশাহারা মানুষ। পড়ে আছে বিধ্বস্ত বাড়িঘর। আশ্রয়হারা মানুষ চলে গেছে উঁচু স্থানের খোঁজে, কেউ গেছে অজানার উদ্দেশে।

এবার এ নিয়ে অন্তত ১০ বার বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে তিস্তা নদীর পানি। প্রতিবার পানি বাড়লে বন্যায় ভাসে আর কমলে পাড় ভাঙার নিষ্ঠুর খেলায় নিঃস্ব, অসহায় মানুষ। রংপুরের গঙ্গাচড়ায় বাঁমতীর ভেঙে গতিপথ বদলেছে তিস্তা। ভাঙনের ঝুঁকিতে পড়েছে রংপুর-লালমনিরহাট সড়কসহ অসংখ্য স্থাপনা

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Highlights

How to Choose the Most Effective Essay Writing Service

Avatar photo

Published

on

If you are looking to know what the best online essay writing services are I’ve compiled some guidelines for you. There are many websites on the web that claim to offer quality essay writing assistance, however they’re often frauds. Be aware of the scams to avoid being swindled. Read and study as much information as you can on each website. Check (more…)

Continue Reading

Highlights

অধিকার আদায়ে শেরপুর প্রেসক্লাবে তালা দিয়ে সাংবাদিকদের অবস্থান কর্মসূচি পালন

Avatar photo

Published

on

শেরপুর প্রতিনিধি:

শেরপুর প্রেসক্লাবের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি বাতিলসহ ৬ দফা দাবী আদায়ের লক্ষে অধিকার বঞ্চিত জেলায় কর্মরত সাংবাদিকরা শেরপুর প্রেসক্লাবে তালা ঝুলিয়ে অবস্থান ও প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করেছে। পরে পুলিশ প্রশাসনের অনুরোধে উভয়পক্ষ ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে জেলায় কর্মরত শতাধিক সাংবাদিক প্রথম দিনের অবস্থান কর্মসূচী তুলে নেয়।

কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, পেশাজীবী সংগঠন পেশার মান উন্নয়ন, নিপীড়িত কর্মীদের পাশে দাঁড়ানো, তাদের বিপদে সহযোগিতা এবং পেশায় কর্মরতদের দক্ষতা বৃদ্ধিতে কাজ করার কথা। কিন্তু প্রেসক্লাবের মত একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান কিছু ব্যক্তির জন্য কুলুষিত হচ্ছে। যা এই শেরপুরের জন্যেও লজ্জাজনক। দেশের প্রথম সারির মিডিয়াতে কাজ করা কিছু সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হিংসা বসবত হয়ে কালো তালিকার ঘটনাও ঘটিয়েছে। এছাড়াও বিএনপি জামাত নেতৃবৃন্দের হাত থেকে প্রেসক্লাব মুক্ত করার দাবিও জানান তারা।

এসময় দৈনিক ভোরের চেতনা পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার ও মানবাধিকার সংস্থা আমাদের আইনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক নূরে আলম চঞ্চলের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে যমুনা টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার আদিল মাহমুদ উজ্জল, দেশ টিভির জেলা প্রতিনিধি আব্দুর রফিক মজিদ, আনন্দ টিভির জেলা প্রতিনিধি মারুফুর রহমান মারুফ, দেশ রুপান্তর পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি শফিউল আলম সম্রাট, দৈনিক আমাদের নতুন সময় পত্রিকার জেলা প্রতিনিধি ইসমাইল হোসেন ও দৈনিক কালবেলা পত্রিকায় জেলা প্রতিনিধি তারিকুল ইসলাম প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।

এসময় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অপস), শেরপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বছির আহমেদ বাদল সহ উভয়পক্ষের তিনজন প্রতিনিধি নিয়ে বৈঠক হয়। এসময় শেরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি মো. শরিফুর রহমান, সাবেক সভাপতি রফিকুল ইসলাম আধার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আদিল মাহমুদ উজ্জাল, মহিউদ্দিন সোহেল, সাংগঠনিক সম্পাদক মারুফুর রহমান মারুফ ও বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি নুরে আলম চঞ্চল বৈঠকে বসেন। বৈঠকে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হিসেবে আগামীকাল পর্যন্ত আন্দোলন স্থগিত করা হয়। এছাড়াও পরবর্তিতে এ বিষয়ে জেলার শীর্ষ স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকতা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের নিয়ে পরবর্তীতে বৈঠক করে সমাধানের সিদ্ধান্ত নেয়া হয় বলে জানা যায়।

Continue Reading

Highlights

কর্মচারী ‘নয়ন সিন্ডিকেটের’ দাপটে তটস্থ রমেক হাসপাতাল

Avatar photo

Published

on

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রকেম) হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগী ও রোগীর স্বজনদের হয়রানি নতুন কিছু নয়। বিষয়টি সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে স্বাভাবিক বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এবারে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রোগী, রোগীর স্বজন, চাকুরি প্রত্যাশীদের হয়রানি, কথায় কথায় হাসপাতালের নিরীহ কর্মচারীদের নানাভাবে হয়রানি, হাসপাতাল প্রশাসনকে দাপটের সাথে দাবিয়ে রাখাসহ নানা অভিযোগ উঠেছে ‘নয়ন সিন্ডিকেট’র বিরুদ্ধে।

জানা যায়, নয়ন সিন্ডিকেটের প্রধান নয়ন হাসপাতাল থেকে বরখাস্ত হলেও ‘কর্মচারি ইউনিয়নের সাইনবোর্ড’ এর সাধারণ সম্পাদক এর পদ ব্যবহার করে সব পর্যায়ের কর্মকাণ্ডকে জিম্মি করে রেখেছে। তার বিস্তর অপরাধের কাহিনী এখন ভুক্তভোগীসহ চিকিৎসাসেবীদেরও মুখে মুখে। এদের দৌরাত্মের নিকট অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছেন স্বয়ং হাসপাতালের বিদায়ী পরিচালক ডা. শরিফুল হাসানও। এক সাক্ষাতকারে এই নয়ন সিন্ডিকেটের কাছে আত্মসমর্পণ করে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছেন বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

সূত্র জানায়, রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ৪০টি ওয়ার্ড রয়েছে। যার প্রতিটি ওয়ার্ডে বহিরাগত লোকবল নিয়োগ দিয়ে তাদের কাছে ওষুধের দালালিসহ সরকারি বরাদ্দকৃত ওষুধ ও সার্জিক্যাল যন্ত্রপাতি চুরি করার মোটা কমিশন হাতিয়ে নেয় নয়ন সিন্ডিকেট। এমন কি নয়নের সিন্ডিকেটের সদস্যরা হাসপাতালের নিয়মনীতি তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে বহিরাগত মাদকসেবীদের দিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডের ডিউটি করান। যেসব মাদকসেবীদের দিয়ে অবৈধভাবে ডিউটি করান দিন শেষে তাদের হাজিরা না দিয়ে উল্টো তাদের কাছ থেকে নেয়া হয় সারাদিনের কু-কর্মের ভাগ বাটোয়ারার হিস্যা।

সেবাগ্রহীতা, স্বজন ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নয়ন ও তার গ্রুপের লোকেরা একক কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে সেবা নিতে আসা রোগীর স্বজদের সামান্য বিষয় নিয়ে লাঞ্ছিত, রোগী ও চিকিৎসাসেবীদের সাথে দুর্ব্যবহার, ওষুধ-সরঞ্জামাদি চুরি, চাঁদাবাজিসহ নানা অভিযোগ তার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। এছাড়ও হাসপাতাল প্রশাসনকে দাপটের সাথে দাবিয়ে রাখাসহ এমন কোনো অপরাধ নেই যা নয়ন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সংঘঠিত হয় না। বরখাস্ত হওয়া সত্ত্বেও হাসপাতালের কর্মচারি ইউনিয়নের সাইনবোর্ড এর খুঁটির নামে হাসপাতালের সব পর্যায়ের কর্মকাণ্ডকে জিম্মি করে রাখছে তার সিন্ডিকেট। প্রতিনিয়ত এই সিন্ডিকেটের নানামুখি অনৈতিক কর্মকাণ্ডে অসহায় ও উদ্বিগ্ন রমেক কর্তৃপক্ষও। এদের হয়রানি ও অত্যাচারের ভয়ে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়না বলেও জানান অনেক ভুক্তভোগী।

আরও জানা যায়, নয়ন চাঞ্চল্যকর হত্যা ও অস্ত্র মামলার আসামি। হাসপাতালেও অভ্যন্তরে হত্যা, হত্যার উদ্দেশে মারপিট, গুরুত্বর জখম, চুরি, চাঁদাবাজিসহ নানা অপকর্মের হোতা ও হুকুমদাতার অপরাধে আসামী নয়নের বিরুদ্ধে রংপুর মেট্রোপলিনের কোতয়ালী থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এছাড়াও নানাবিধ ন্যাক্কারজনক অপরাধ অব্যাহতভাবে সংঘটিত করে আসছে এরা। নয়ন সিন্ডিকেটের এমন অপকর্ম রোধে দক্ষ প্রশাসনিক দায়িত্বের কোনো পরিচালক রংপুর মেডিকেল হাসপাতালে বেশিদিন টিকতে পারেন না বলে একটি কথা এখন কর্মচারীদের মুখে মুখে প্রচলিত হয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি বদলি হওয়া রমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. শরিফুল হাসান সরকারের নির্দেশে হাসপাতালে আউর্সোর্সিংয়ের মাধ্যমে কিছুসংখ্যক জনবল নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছিলেন। বিদায়ী ওই পরিচালককে সেই নিয়োগ নয়ন সিন্ডিকেট মনোনীত ঠিকাদারকে দিতে চাপ প্রয়োগ করেন যা বিধিবহির্ভূত হওয়ায় হাসপাতাল প্রশাসন তা মানেন নি। পরে তাদের মনগড়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে জনবল নিয়োগ বানিজ্যের সুযোগ করে না দেয়ায় সেই সূত্রপাত ধরে তৎকালীন পরিচালকের বিষয়ে নানা মিথ্যা অপবাদ তুলে অযৌক্তিক আন্দোলনের ধোয়া তুললে পরিচালক বদলি হন।

কথা বলতে চাইলে বিদায়ী পরিচালক ডা. শরিফুল হাসান টেলিফোনে জানান, ‘যুদ্ধে আমি পরাজিত সৈনিক। অনেক চেষ্টা করেও রমেক হাসপাতালের দীর্ঘদিন থেকে গড়ে ওঠা দুর্নীতিবাজ অপশক্তি নয়ন সিন্ডিকেটের কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছি। যতদিন এই সিন্ডিকেটের হাত থেকে হাপাতালকে মুক্ত করা না হবে, ততোদিন উত্তরাঞ্চলের মানুষ স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্ছিত হতেই থাকবে।’

এদিকে প্রশ্ন উঠেছে বরাদ্দ ছাড়াই সাময়িক বরখাস্ত হওয়া নয়ন একজন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হয়ে কর্মকর্তাদের জন্য বরাদ্দ রমেক ক্যাম্পাসের ১০নং কোয়ার্টারে থাকেন কিভাবে? এছাড়াও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি) সহ গৃহস্থালি নানা রকম ইলেক্ট্রিক সরঞ্জাম ব্যবহার করে সরকারি বিদ্যুৎ অপচয় করছেন নির্বিঘ্নে। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালে কর্মচারীদের মধ্যেও কানাঘোষা চলছে কিছুদিন ধরে।
এ বিষয়ে রমেক হাপাতালের কর্মচারি ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক নয়ন এর সাক্ষাতকার নিতে চাইলেও তাদের দেখা মেলেনি। পরে টেলিফোনে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাংবাদিকের পরিচয় পেয়ে অসুস্থতার কথা বলে ফোন কেটে দেন নয়ন। কর্মচারি ইউনিয়নের সভাপতি শাহিনের সাথে রোববার (২৮ মে’ ২৩) তার মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেনি।

হাসপাতালের বর্তমান পরিচালক ডা. মোহাম্মদ ইউনুস আলী জানান, দীর্ঘদিন থেকে জিইয়ে রাখা অযুত সমস্যাগুলো সমাধানে কাজ করছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, সময় ও সবার সহযোগিতা পেলে হাসপাতালের উন্নত স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবেন বলে তিনি আশাবাদী। তবে সংঘবদ্ধ নয়ন সিন্ডিকেটের ব্যাপারে বলেন, আমি সদ্য যোগ দিয়েছি। এখনও ভালো করে বুঝে উঠতে পারিনি। যথাযথ অভিযোগ পেলে দায়িদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Continue Reading