মহেশপুরে কয়লার অভাবে ইট পোড়াতে পারছেন না ভাটা মালিকরা
মহেশপুর প্রতিনিধি, ঝিনাইদহ:
ঝিনাইদহের মহেশপুরে কয়লার অভাবে ইটভাটাগুলো বন্ধ হতে চলেছে। ইট পোড়াতে না পেরে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি জিকজাক (হাওয়া) ভাটা মালিক তাদের ভাটা বন্ধ করে দিয়েছেন। আবার অনেকে কাঁচা ইট তৈরি করে অপেক্ষায় আছেন কয়লার। আর স্থায়ী চিমনির ভাটার মালিকরা বিকল্প হিসেবে গোপনে কাঠ ব্যবহার করে ভাটা চালু রেখেছেন।
তবে জিকজাক ভাটার ক্ষেত্রে এটাও সম্ভব হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ভাটা মালিকরা। ভাটা মালিকরা আরো জানিয়েছেন, দ্রুত কয়লার ব্যবস্থা না করলে এ বছর মহেশপুরে প্রায় ৮ থেকে ১০ কোটি ইট কম তৈরি হবে। যা স্থানীয় উন্নয়নে ব্যাপক প্রভাব পড়বে। পাশাপাশি এ সকল ভাটায় কর্মরত কয়েক হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। অনেকে কাজ ছেড়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। ২০০০ সালের পর থেকে ইটভাটায় কাঠ পোড়ানোর ওপর পরিবেশ মন্ত্রণালয় কড়াকড়ি শুরু করলে ভাটামালিকরা তাদের ভাটায় কাঠের পরিবর্তে কয়লা ব্যবহার করতে শুরু করে। এরই মধ্যে বেশ কিছু ভাটা শুধুমাত্র কয়লা ব্যবহার উপযোগী করে তোলা হয়। যেগুলোর জিকজাক (হাওয়া) ভাটা বলে। এগুলো পরিবেশবান্ধব ভাটা। প্রতিটি ভাটা মালিক কাঁচা ইট তৈরি করে কয়লার অপেক্ষায় বসে আছেন। এতে স্থানীয় উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি ইটের মূল্য ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। কয়লার চাহিদা সম্পর্কে কয়েকজন ভাটা মালিক বলেন এক একটি জিকজাক (হাওয়া) ইটভাটায় কমপক্ষে ৯শ থেকে ১ হাজার মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন হয়। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় তারা কয়লা পাচ্ছেন না। গত বছর ৮ থেকে ৯ হাজার টাকা টন মূল্যে কয়লা পেয়েছেন। এ বছর ২৫ হাজার টাকা টন দিয়েও কয়লা পাচ্ছেন না। ভারত থেকে যে কয়লা আমদানি হতো সেটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সিলেটের তামাবিল ও দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ায় যে কয়লা উত্তোলন হয় সেটা বিদ্যুৎ উৎপাদন কাজে ব্যবহার করতেই শেষ হয়ে যায়। সরেজমিনে দেখা যায়, মহেশপুর উপজেলার ভৈরবা মাঠের মধ্যে রয়েছে এম বি ভাটা। যার মালিক মহেশপুরের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল আজম খান। ভাটা দেখাশোনা করেন মহেশপুর পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড মেম্বার হজ্জেল হক। তিনি জানান, প্রতি বছর এ ভাটায় ২০ থেকে ৪০ লাখ ইট তৈরি হয়। তিন শতাধিক শ্রমিক এখানে কাজ করেন। সরকার পরিবেশবান্ধব জিকজাক ভাটা করার জন্য চাপ দিলে ভাটাটি আধুনিকায়ন করা হয়। ভাটা এমনভাবে তৈরি করা হয় কয়লা ছাড়া বিকল্প কোনো ব্যবস্থায় ইট পোড়ানো সম্ভব নয়। সেই ভাটা এবার কয়লা না পেয়ে বন্ধ করে দেওয়ার উপক্রম হয়ে দাঁড়িয়েছে। সেপ্টেম্বর মাসে ভাটার কার্যক্রম শুরু করেছেন। ইতোমধ্যে কয়েক লাখ কাঁচা ইট তৈরি হয়ে গেছে। এখন কয়লা না পেয়ে ভাটা বন্ধ হতে চলেছে। কয়লা না থাকায় ইট পোড়ানো সম্ভব হচ্ছে না। এক প্রকার কাজ ছাড়াই শ্রমিকদের টাকা দিতে হচ্ছে। তিনি জানান, এভাবে অনেকগুলো ভাটা বন্ধ হওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে।