মা ওরা আমারে মাইরা ফালাইবো
রৌমারী প্রতিনিধি: ‘মা আমারে বাঁচাও, ওরা আমারে মাইরা ফালাইবো।’ সোমবার (১৬ মার্চ) বিকেলে মৃত্যুর আগে তার মা’কে মোবাইল ফোনে এভাবেই বলেছিলেন শামীমা আক্তার (১৮)। পরদিন মঙ্গলবার গাজীপুরের খোটাপাড়া এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে শামীমার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পুলিশের ধারণা, গণধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে তাকে। বুধবার বিকেলে শামীমার মরদেহ কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার ডাংগুয়াপাড়া গ্রামে এলে স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে সেখানকার বাতাশ। চোখে পানি ধরে রাখা দুষ্কর হয়ে পড়ে উপস্থিত সবার।
রৌমারীর বড়াইকান্দি দাখিল মাদ্রসার ১০ম শ্রেণিতে পড়–য়া শামীমা আক্তার লেখাপড়ার খরচ জোগাতে দেড় মাস আগে পাড়ি জমান ঢাকার গাজীপুরে। সেখানে একটি গার্মেন্ট এ কাজ করতেন তিনি। গরীব পিতা তার লেখাপড়ার খরচ জোগাতে পারতেন না বলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলে মাঝে মাঝে তিনি ওই গার্মেন্টে যেতেন। থাকতেন খোটাপাড়া এলাকার একটি ভাড়া বাসাতে। শামীমার মা ফেরেজা বেগম জানান, গার্মেন্টে কাজ করার সময় মোবাইল ফোনে পরিচয় হয় জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলার কলাকান্দা গ্রামের মোকতেল হোসেনের ছেলে ইসমাইলেই সঙ্গে। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে মন দেয়া নেয়া হয়। এমনকি গত ১৫ দিন আগে তাদের মধ্যে রেজিষ্ট্রি বিয়েও হয়। বিয়ের পর নববধুকে নিয়ে ইসলামাইল বাড়িতে গেলে বাধসাধেন পিতা মোকতেল হোসেন। তিনি পুত্রবধুকে মেনে নেননি। অগত্যা আবার ঢাকায় ফিরে যান দুজন। এরপর সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দেন ইসমাইল। কিন্তু মাঝে মধ্যে অন্যের মোবাইল ফোন দিয়ে শামীমাকে হত্যার হুমকি দিতো এবং বলতো বিয়ের কথা কাউতে না বলতে। এমন কথাই জানালেন শামীমার পিতা আবু বকর ছিদ্দিক। তিনি জানান, ৩ ভাই বোনের মধ্যে শামীমা ছোট। তার লেখাড়ার প্রতি খুব ঝোক ছিল। আমি লেখাপড়ার খরচ দিতে পারি না বলে মাঝে মাঝেই ঢাকার গাজীপুরের একটি গার্মেন্টে কাজ করতো সে। দুএক মাসে যা আসতো তাই দিয়ে পড়ার খরচ চালাতো সে।
মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) মৃত্যু সংবাদ শামীর স্বজনদের প্রথম দেন খোটাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রফিকুল ইসলাম। খবর শুনে বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে। অবশেষে বুধবার তার মৃতদেহ আনা হয় রৌমারীতে। মোবাইল ফোনে খোটাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, লাশ উদ্ধারের পর মামলা করা হয়েছে। তদন্তের পর যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।