Connecting You with the Truth

রাজাপুরের খরস্রোতা পোনা নদী এখন মরা খাল, খনন জরুরি

Rajapur photo-2রাজাপুর প্রতিনিধি, ঝালকাঠী:
ঝালকাঠীর রাজাপুরের ঐতিহ্যবাহী পোনা নদী কালের বিবর্তনে খননের অভাব ও একাধিক সুইচ গেটের কারণে মরা খালে পরিণত হয়ে ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে বসেছে।
এ নদী রাজাপুর উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুরের আঙ্গারিয়া গ্রামের সত্যনগর এলাকার জাঙ্গালিয়া নদী থেকে শুরু করে আংগারিয়া, আলগী, জীবনদাসকাঠি, কৈবর্তখালী, গালুয়া, চাড়াখালি গ্রাম হয়ে ভাণ্ডারিয়ার কচানদী পর্যন্ত বাঁকে বাঁকে প্রায় ১৫-২০ কিলোমিটার দীর্ঘ। এ নদীর খরস্রোতায় পলি মাটির কারণে দুপাশের কৃষকরা অধিক ফসল ফলাতো। বেশি বেশি প্রাকৃতিক মাছ জন্মাতো। কিন্তু বর্তমানে এ নদীটি মরা খালে পরিণত হওয়ায় তীরবর্তী অনেক গ্রামে পানি সংকট ও কৃষকরা পানি সমস্যায় ভুগছেন। এই পোনা নদী দিয়ে একসময় বড় বড় জাহাজ, স্টিমার, লঞ্চ চলাচল করত। কিন্তু এখন নৌকাও চলছে না। বিভিন্ন স্থান দিয়ে পানি প্রবাহই হচ্ছে না। এ উপজেলার ঐতিহ্যবাহী ধানসিঁড়ি নদী নিয়ে কবি জীবনানন্দ দাশ কবিতা লেখায় বিশ্বের মানুষের কাছে অনেক পরিচিতি লাভ করলেও ওই নদীর চেয়ে পোনা নদীর গুরুত্বও কোন অংশেই কম ছিল না। এছাড়া এ নদীটিও যদি সময়মত খনন হতো তাহলে ধানসিঁড়ি নদীও তার যৌবন হারাতো না। কারণ ধানসিঁড়ি নদী দিয়ে জাহাজ, স্টিমার ও লঞ্চ এসে এ নদী দিয়ে খুলনা মংলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করতো।
নদী তীরের জীবনদাশকাঠি গ্রামের আলহাজ্ব নুরুল ইসলাম হাওলাদার (৯০), আলহাজ্ব মোকছেদ আলী (৯২) ও আবদুল মজিদসহ (৮৫) একাধিক মানুষ জানান, প্রায় দেড়শ’ বছর আগে এ নদীতে বড় বড় জাহাজ-স্টিমার, লঞ্চ ও পাল তুলে নৌকা চলতো।
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা বড় বড় মালবাহী জাহাজ স্টিমারসহ বিভিন্ন প্রকারের জলযান বরিশাল হয়ে প্রথমে ধানসিঁড়ি হয়ে পোনা নদী দিয়ে কচা নদী হয়ে খুলনা বন্দরে যেত। এই পোনা নদী তখন চ্যানেল হিসাবে ব্যবহার করা হতো। এ নদীতে খরস্রোত থাকায় নদীর দু’পাশের ফসলি জমিতে পানি আটকে না থাকায় এবং পলি মাটি আসায় ধানসহ সকল প্রকারের প্রচুর পরিমাণে ফসল ফলতো। এ নদীতে স্রোত থাকায় এর সাথের খালগুলোতেও স্রোত ছিল ফলে এলাকার পুকুর ও ডোবায় প্রচুর পরিমাণে দেশীয় মাছ পড়তো। বর্তমানে নদীটি মরে যাওয়ায় এসব এলাকা থেকে দেশীয় মাছও হারিয়ে গেছে। ওইসব গ্রামের কৃষক খালেক শিকদার, কাছেম মল্লিক, নান্নু শিকদার, ইউসুব আলী হাওলাদার ও হারুন অর রশিদ জানান, নদীটি এখন নালায় পরিণত হয়েছে। এখন পানির মৌসুমে হাঁটু পর্যন্ত পানি থাকে এবং শুকনো মৌসুমে আদৌ কোন পানি থাকে না। এ নদীর দুই পাশে হাজার হাজার হেক্টর ধান ফসলী জমি রয়েছে। এ নদীতে বিভিন্ন স্থানে একাধিক সুইচ গেট থাকার কারণে এবং খননের অভাবে বোরো ও আমন ধান চাষের সময় পানি আটকে থাকায় আগের তুলনায় ধানের ফলন অনেক কম হয়। পলি মাটির অভাবে নদীর দুই পাশের জমির উর্বরতা কমে যাওয়ায় মরিচ, আলু, ডাল, পিঁয়াজ, রসুনসহ বিভিন্ন রবি শষ্য আবাদ না করে ওই জমিতে বৃক্ষের বাগান এবং বসতবাড়ি নির্মাণ শুরু করেছে। জীবনদাশকাঠির গ্রামের প্রবীণ কৃষক আবদুল মজিদ জানান, ইংরেজি ১৯৫০ সালে পুরাতন গভীরতা বাদে নতুন ১০ ফুট গভীরতায় এ নদীটি খনন করা হয়েছিল।
এ দেশ স্বাধীনের পরে নামমাত্র কয়েকবার খনন করা হলেও পূর্বের যৌবন ফিরিয়ে আনতে না পারায় নদীটি বর্তমানে মরা খালে পরিণত হয়েছে। তাই নদীটি দ্রুত খননের ব্যবস্থা করে কৃষি উন্নয়নের জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানিয়েছেন এ নদী সংশ্লিষ্ট হাজারো কৃষক।

Comments
Loading...