জাতীয়
রিজার্ভ চুরির প্রতিবেদন প্রকাশ বৃহস্পতিবার
বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন আগামী ২২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
রবিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানিয়েছেন। প্রতিবেদন জনসমক্ষে প্রকাশের পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং ডিভিশনের ওয়েবসাইটেও দেয়া হবে। আর এই প্রতিবেদন নিয়ে কোন ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন হলে তা কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে করা হবে।
এর আগে গত মাসে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, তিনি ২৪ সেপ্টেম্বর ওয়ার্ল্ড ব্যাংক গ্রুপের বার্ষিক সভায় যোগদানের জন্য ওয়াশিংটনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার আগেই এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান মোহাম্মদ ফরাস উদ্দিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন গত ৩০ মে অর্থমন্ত্রীর কাছে জমা দেন।
সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে অর্থমন্ত্রী বলেন, আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর আমি দেশের বাইরে যাব। তার আগেই ২২ সেপ্টেম্বর তদন্ত কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করা হবে।
জানা গেছে, আগামী তিন সপ্তাহের সফরে ২৪ সেপ্টেম্বর সৌদি আরবের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়বেন অর্থমন্ত্রী। এই সফরে তিনি নেদারল্যান্ডস ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন ডিসিতে বিশ্ব ব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক বৈঠকে অংশ নেবেন। সফর শেষে ১২ অক্টোবর তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
এদিকে, গত ফেব্রুয়ারির শুরুতে সুইফট মেসেজিং সিস্টেমের মাধ্যমে ৩৫টি ভুয়া বার্তা পাঠিয়ে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্কে রক্ষিত বাংলাদেশের এক বিলিয়ন ডলার সরিয়ে ফেলার চেষ্টা হয়। এর মধ্যে পাঁচটি মেসেজে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার যায় ফিলিপিন্সের একটি ব্যাংকে। আর আরেক আদেশে শ্রীলঙ্কায় পাঠানো হয় ২০ লাখ ডলার।
শ্রীলঙ্কায় পাঠানো অর্থ ওই এ্যাকাউন্টে জমা হওয়া শেষ পর্যন্ত আটকানো গেলেও ফিলিপিন্সের ব্যাংকে যাওয়া অর্থের বেশিরভাগটাই স্থানীয় মুদ্রায় বদলে জুয়ার টেবিল ঘুরে চলে যায় নাগালের বাইরে। বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ সাইবার চুরির এই ঘটনা বাংলাদেশের মানুষ জানতে পারে ঘটনার এক মাস পর, ফিলিপিন্সের একটি পত্রিকার খবরের মাধ্যমে। বিষয়টি চেপে রাখায় সমালোচনার মুখে গবর্নরের পদ ছাড়তে বাধ্য হন ড. আতিউর রহমান।
পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে আনা হয় বড় ধরনের রদবদল। ওই সময়ই কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে রিজার্ভ চুরির ঘটনায় মামলা করা হয়। গত ১৫ মার্চ সরকারের পক্ষ থেকে গঠন করা হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি, যার প্রধান করা হয় সাবেক গবর্নর ফরাসউদ্দিনকে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন-বুয়েটের কম্পিউটার সাইন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ কায়কোবাদ এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের অতিরিক্ত সচিব গকুল চাঁদ দাস। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কীভাবে, কার বরাবরে ভুয়া পেমেন্ট ইন্সস্ট্রাকশন পাঠানো হয়েছিল, অবৈধ পরিশোধ ঠেকাতে পর্যাপ্ত পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল কি না, রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রায় এক মাস গোপন রাখা যৌক্তিক ছিল কি না, কেন্দ্রীয় ব্যাংক কর্মকর্তাদের অবহেলা ছিল কি না এবং অর্থ উদ্ধারের সম্ভাবনা, গৃহীত কার্যক্রমের পর্যাপ্ততা ও পুনরাবৃত্তি রোধে গৃহীত ব্যবস্থা খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল কমিটিকে। বেধে দেয়া সময় অনুযায়ী গত ২০ এপ্রিল অর্থমন্ত্রীর কাছে অন্তবর্তীকালীন প্রতিবেদন জমা দেয় ফরাসউদ্দিনের কমিটি। এরপর ৩০ মে দেয়া হয় পুরো প্রতিবেদন।