সংকটকালে দেশ ছাড়েন সরকারের দুই ডজন মন্ত্রী-এমপি
ছাত্রদের কোটা আন্দোলন ও দেশের পরিস্থিতি সহিংস হওয়ার মধ্যেই অনেক মন্ত্রী-এমপি দেশ ছেড়েছেন। আবার বিদেশে অবস্থান করা কেউ কেউ এসেছেন ফিরে। গত ১৪ জুলাই দেশের পরিস্থিতি নাজুক দেখে বিদেশ থেকে ফ্লাইটের টিকিট কেটে ঢাকা ছাড়েন অনেক প্রভাবশালী। তারা যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, ভারত, থাইল্যান্ড, চীন ও দুবাই পাড়ি জমান। এ পরিস্থিতিকে দুর্ভাগ্যজনক বলে মন্তব্য করেন বিশিষ্টজনেরা।
আওয়ামী লীগ দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে, দেশের এই টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যে তাদের এই বিদেশযাত্রা নিয়ে সরকারি দলের মধ্যে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া রয়েছে। আওয়ামী লীগের সভায় এদের নাম নিয়েও তুমুল হইচই হয়।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান বলেন, অনেক লোক দলে উড়ে এসে জুড়ে বসার কারণে এমনটা হয়েছে। দলের পরিস্থিতি খারাপ দেখলেই তারা লুকিয়ে থাকেন। গত কয়েকদিন আগেও দেশের পরিস্থিতি যখন কিছুটা খারাপ ছিল, তখন টেলিভিশনে টকশো করার মতো লোক পাওয়া যায়নি।
দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, কোটা আন্দোলন ঘিরে দেশ যখন উত্তাল, সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছিল চারদিকে-এমন জটিল পরিস্থিতিতে গত ১৫ জুলাই মধ্যরাতে দেশ ছাড়েন সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল (লোটাস কামাল)। পরিবারের পাঁচ সদস্যকে নিয়ে তিনি রাত ১টা ৪০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন। এক দিন পর ১৬ জুলাই লন্ডন যান মিরপুরের (ঢাকা-১৬) এমপি ইলিয়াস মোল্লা। পরে তিনি ২৬ জুলাই দেশে ফিরে আসেন বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে। একই দিন পরিবারের ১১ সদস্য নিয়ে কুমিল্লা-১১ আসনের এমপি ও সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক দুবাই যান। রাত ১১টার কিছু আগে এমিরেটসের একটি ফ্লাইটে তারা ঢাকা ছাড়েন।
ইমিগ্রেশন সূত্র জানায়, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রুমানা আলী ১৬ জুলাই যান মালয়েশিয়া। তার সঙ্গে ছিলেন পরিবারের চার সদস্য। এ দিন আরও দুই এমপি বিদেশ যান। তাদের মধ্যে রয়েছেন ময়মনসিংহ-৮ আসনের এমপি মাহমুদ হাসান সুমন। তিনি পরিবারের চার সদস্য নিয়ে গেছেন সিঙ্গাপুরে। অপরজন হলেন কুমিল্লা-৮ আসনের এমপি আবু জাফর মোহাম্মদ শফি উদ্দিন। তিনি গেছেন চীন। ১৭ জুলাই রাত ১টা ১১ মিনিটে হংকং এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে যান চট্টগ্রাম-১ আসনের এমপি মাহবুব উর রহমান। তিনি অস্ট্রেলিয়ায় তার পরিবারের কাছে যান। এ সময় ঢাকা-৫ আসনের আওয়ামী লীগের এমপি মশিউর রহমান মোল্লা সজল ভারত সফরে ছিলেন।
সূত্র বলছে, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী সাবের হোসেন চৌধুরী আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে আসেন ১৭ জুলাই। রাত ১১টা ২২ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে তিনি সস্ত্রীক ঢাকা অবতরণ করেন। ভোলা-৪ (চরফ্যাশন-মনপুরা) আসনের এমপি আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব দুবাই গেছেন পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর ২৭ জুলাই।
যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনের পুরো সময়টাতেই তিনি ছিলেন তার নির্বাচনি এলাকায়। যদিও তার এলাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন এমপি ছিলেন আমেরিকায়। তিনি ফিরে আসেন ২৮ জুলাই। ভোলা-৩ আসনের এমপি নুরুন্নবী চৌধুরী শাওন সস্ত্রীক থাইল্যান্ড থেকে দেশে ফিরেছেন গত ২৬ জুলাই। থাই এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে দুপুর ১২টা ১৫ মিনিটে তিনি ঢাকায় আসেন। যশোর-৩ আসনের এমপি কাজী নাবিল আহমেদ তার পরিবারের এক সদস্যসহ ভারত যান ২৯ জুলাই। দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে নভোএয়ারের একটি ফ্লাইটে তারা কলকাতার উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। নারী সংরক্ষিত আসনের এমপি পারভীন জামান গত ২৬ জুলাই ব্যাংকক গেছেন। রাত সাড়ে ১১টায় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তারা যাত্রা করেন।
ফরিদপুর-৪ আসনের এমপি মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন গত ২৩ জুলাই রাত ১১টা ৫৪ মিনিটে থাই এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে ব্যাংকক থেকে দেশে ফিরেছেন। ময়মনসিংহ-৩ আসনের এমপি নিলুফার আঞ্জুম লন্ডন থেকে গত ২৫ জুলাই সন্ধ্যা ৭টা ৫২ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে দেশে ফেরেন।
অর্থ প্রতিমন্ত্রী ওয়াসিকা আয়শা খান ২৫ জুলাই কানাডা গেছেন। যদিও এটি তার সরকারি সফর বলে জানা গেছে। সফরসঙ্গী হিসেবে তার সঙ্গে আরও দুই কর্মকর্তা রয়েছেন। এমিরেটস এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন। চট্টগ্রাম-১০ আসনের এমপি মহিউদ্দিন বাচ্চু ২৮ জুলাই টরন্টো থেকে ঢাকায় ফেরেন। রাত ১১টা ৫৫ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তিনি দেশে আসেন। চাঁদপুর-৪ আসনের এমপি শফিকুর রহমান ১৮ জুলাই স্ত্রীসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান। এমিরেটস এয়ারলাইনসের সন্ধ্যা ৭টা ৩০ মিনিটের ফ্লাইটে তিনি ঢাকা ত্যাগ করেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ আসনের এমপি ফয়েজুর রহমান ২৭ জুলাই স্ত্রীসহ পরিবারের তিন সদস্য নিয়ে হংকং থেকে দেশে ফেরেন। কুমিল্লা-৩ আসনের এমপি জাহাঙ্গীর আলম সিঙ্গাপুর গেছেন ২৮ জুলাই। সঙ্গে নিয়েছেন পরিবারের তিন সদস্যকে। রাত সাড়ে ১০টার একটি ফ্লাইটে তারা ঢাকা ত্যাগ করেন। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক এমপি ১৮ জুলাই পরিবার নিয়ে সিঙ্গাপুর গেছেন।
সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিনি।