Connect with us

জাতীয়

আজ পবিত্র শবে বরাত

Published

on

ক্ষমা প্রার্থনা করে নিষ্কৃতি লাভের সৌভাগ্যের রাত আজ। দিবসের আলো পশ্চিমে মিলিয়ে যাওয়ার পরই শুরু হবে কাঙ্ক্ষিত এই রজনী, পবিত্র শবে বরাত। বর্ণিত আছে যে, এই রাতে আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নূরের তাজাল্লি পৃথিবীর নিকট আসমানে প্রকাশ পায়। তখন আল্লাহপাক বলতে থাকেন—আছে কি কেউ ক্ষমাপ্রার্থী? যাকে আমি ক্ষমা করব? আছে কি কেউ রিজিক প্রার্থী? যাকে আমি রিজিক প্রদান করব? আছে কি কেউ বিপদগ্রস্ত? যাকে আমি বিপদমুক্ত করব? আল্লাহ তায়ালার মহান দরবার থেকে প্রদত্ত এ আহ্বান অব্যাহত থাকে ফজর অবধি। বস্তুত আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালার নৈকট্য ও সান্নিধ্য লাভের এক দুর্লভ সুযোগ এনে দেয় লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান। অতএব প্রতিটি কল্যাণকামী মানুষ এ সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে থাকেন। মহান আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগিতে নিমগ্ন হয়ে রাত অতিবাহিত করেন।

শবে বরাতকে ‘লাইলাতুল বারাআত’ নামে অভিহিত করা হয়। লাইলা আরবি শব্দ, আর ‘শব’ শব্দটি ফার্সি। দুটি শব্দের অর্থই হলো রাত। অপরপক্ষে ‘বারাআত’ শব্দের অর্থ হলো নাজাত, নিষ্কৃতি বা মুক্তি। এ রাতে বান্দারা মহান আল্লাহতায়ালার নিকট মার্জনা প্রার্থনা করে থাকেন। এ কারণে এ রাতকে ‘লাইলাতুল বারাআত’ বা শবে বরাত বলা হয়। হাদিস শরিফে এটাকে ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’ বা ‘মধ্য শাবানের রাত্রি’ নামে অভিহিত করা হয়েছে। এর পক্ষকাল পরেই আসবে রহমত-বরকত-নাজাতের মাহে রমজান। ২৮ মে রবিবার প্রথম রোজা। এ কারণে এটাকে বলা হয়, ‘রমজানের মুয়াজ্জিন।’

লাইলাতুল বারাআত মাসব্যাপী প্রশিক্ষণের পূর্বপ্রস্তুতিস্বরূপ। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রকাশিত ‘ইসলামী বিশ্বকোষ’ গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে যে, “ইরান ও ভারতীয় উপমহাদেশে এ মাসের একটি রজনীকে ‘শব-ই-বরাত’ বলা হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কোনো কোনো দেশের কোনো কোনো এলাকায় শবে বরাত ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত। আরববাসীরা এ রাতকে ‘লাইলাতুন নিসফে মিন শাবান’ বলেন।”

বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, সিরিয়ার কিছু এলাকা ছাড়া কোথাও ঘটা করে শবে বরাত পালন করা হয় না। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম এই শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোজা রাখতেন। রমজানের প্রস্তুতির মাস হিসেবে তিনি এ মাসকে পালন করতেন। শবে বরাতের বরকত, ফজিলত ও মর্যাদা নিয়ে বেশকিছু হাদিসে বর্ণনা আছে। হাদিস থেকে প্রমাণ হয় যে, শবে বরাত ফজিলতময় এবং এ রাতে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে ক্ষমা করে থাকেন। তবে ক্ষমা পাওয়ার শর্ত হলো শিরক ও বিদ্বেষ থেকে মুক্ত থাকা।

হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়, এ রাতে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে নফল নামাজ পড়া, যাতে সেজদাও দীর্ঘ হবে, কাম্য। কুরআনু তেলওয়াত করা, বেশি বেশি দরুদ শরিফ পড়া, ইসেতগফার করা, দোয়া করা, তাসবিহ তাহলিল ও জিকির-আসকার করা। আর সঙ্গে সঙ্গে অবশ্যই নিজের জন্য, নিজের পিতা-মাতা, সন্তান-সন্ততি,আত্মীয়-স্বজন,বন্ধু-বান্ধব, পাড়া-প্রতিবেশী ও সব মুসলমানের জন্য বেশি বেশি দোয়া করা, তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা। সম্ভব হলে পুরুষদের কবরস্থানে গিয়ে কবর জিয়ারত করা, কবরবাসীদের জন্য দোয়া করাও সওয়াবের কাজ। এ রাতে নফল আমলসমূহ বিশুদ্ধ মতানুসারে একাকী করণীয়। ফরয নামায জামায়াতের সঙ্গে অবশ্যই মসজিদে আদায় করতে হবে। নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার কোনো প্রমাণ হাদিস শরিফে নেই আর সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন-তাবে তাবেঈনদের যুগেও এর রেওয়াজ ছিল না।

উলামা-মাশায়েখগণ বলেন, এই রাতে শুদ্ধ মনে তওবা করার পর নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়াতে এবং ইসলামী বিধান মেনে চলতে হবে। এ রাতে হালুয়া-রুটি, ফিন্নী-পায়েশ, খিচুড়ি, বিরিয়ানি প্রভৃতি বিতরণ বাধ্যতামূলক নয়। আলোকসজ্জা আর আতশবাজির মেলা এ রাতের পবিত্রতায় আঘাত হানে। উত্সব নয়, কেবল প্রার্থনার রাত ‘শবেবরাত’।

যথাযথ মর্যাদায় ধর্মীয় ভাবগম্ভীর পরিবেশে আজ পবিত্র শবে বরাত পালিত হবে। রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি মসজিদে ওয়াজ মাহফিল, জিকির-আজকারের আয়োজন হয়েছে।

শবেবরাত উপলক্ষে আগামীকাল সরকারি ছুটি। এ রাতের তাত্পর্য তুলে ধরে রেডিও-টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে। সংবাদপত্র প্রকাশ করবে বিশেষ ক্রোড়পত্র। এই উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া পৃথক বাণীতে পবিত্র শবেবরাতের শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সবার প্রতি মানব কল্যাণে ও দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করার আহবান জানান।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *