দেশজুড়ে
‘আমি মরে গিয়ে উনি বেঁচে থাকতেন’
নামটা হয়তো অজানা অনেকের, কিন্তু পরিচয়ে তাকে চেনেন সবাই। বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের পালিত কন্যা তিনি। নড়াইলের রূপগঞ্জে এস এম সুলতানের বাড়ির পাশেই একটি বাড়িতে থাকেন নিহার বালা।
এস. এম সুলতানের অতি প্রিয় ছিলেন নিহার। কিন্তু আজ তাকে দেখার কেউ নেই। তার পরিবারে রয়েছেন তার মেয়ে, নাতি, নাতবৌ ও নাতির শিশুপুত্র। পাঁচজনের এই সংসারটা কোনোভাবে চলছে জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে নিহার বালার প্রাপ্ত মাসিক পাঁচ হাজার টাকায়। এই টাকাই পরিবারটির আয়ের একমাত্র উৎস। নিহার বালা বার্ধক্যজনিত কারণে নানা অসুখে ভুগছেন। জানালেন, ওষুধ কিনতে অনেক টাকা প্রয়োজন হয়। কিন্তু ওষুধ কেনার মতো টাকাও নেই তার।
নিহার বালা সাহার নাতি পড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চারুকলা ইনস্টিটিউটে। নানার মতোই আঁকতে ভালোবাসেন। ঘরের দেয়ালে টাঙানো রয়েছে তার আঁকা কিছু ছবি। নাতির জন্য একটা চাকরিই এখন নিহার বালার একমাত্র চাওয়া। বারবার শুধু বললেন, ‘ওর একটা চাকরি হলে আমাদের আর দুঃখ থাকে না। দেখনা লক্ষ্মী, ওরে একটা চাকরি দিতে পারো কিনা।’ বাবার কথা জিজ্ঞেস করলে ধরা গলায় নিহার বালা বললেন, উনি থাকলে কি আর আজ আমার এই অবস্থা হতো? উনি থাকলে আমাকে কোনো কষ্ট করতে হতো না। উনি আমার সব দায়িত্ব নিতেন, আমাকে অনেক ভালো রাখতেন। একটুক্ষণ থেমে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দুঃখের সঙ্গে আবার বললেন, আমার মনে হয়, বাবার বদলে আমি মরে গেলেই ভালো হতো। উনি নেই, আমাকে দেখার কেউ নেই। এর চেয়ে আমি মরে গিয়ে উনি বেঁচে থাকতেন, তাই তো ভালো ছিল। বলতে বলতেই চোখ দুটো ভিজে এলো তার।