ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহ শৈলকুপায় জলজপ্রাণীসহ জীববৈচিত্র হুমকির মুখে
মনিরুজ্জামান সুমন, ঝিনাইদহ:
ঝিনাদহের শৈলকুপা পৌরসভাসহ ৩টি ইউনিয়নের সহস্রাধিক পুকুর, খাল-বিল, ডোবা-নালা, জলাশয়ের প্রাণীকূলসহ জীববৈচিত্র হুমকির মুখে। প্রায় অর্ধশত গ্রামের খোলা পানি নষ্ট হওয়ায় গৃহস্থালী ব্যবহার্য্য পানি সংকটে পড়েছে বেশীরভাগ মানুষ। বিকল্প হিসাবে গভীর নলকুপের পানি ব্যবহার করছে। একই সাথে নষ্ট হওয়া প্রায় ১ হাজার পুকুরে প্রতিদিন মারা যাচ্ছে বিপুল পরিমাণ মাছ। ডোবা-নালা খালবিলের হরেক রকম প্রাকৃতিক মাছসহ জলজপ্রাণীকূল টিকে থাকার অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা জানা যায়, ৬ এপ্রিল গভীর রাতে উপজেলার ৬নং সারুটিয়া, ৫নং কাঁচেরকোল, ৭নং হাকিমপুর ও পৌরসভাসহ অন্তত ৫ হাজার পরিববার দারুণভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। লন্ড-ভন্ড হয় অন্তত ৫০টি গ্রাম, সহায় সম্বল ঘরবাড়ি হারিয়ে শুন্যভিটায় এখনো ত্রাণের জন্য হাহাকার চলছে বহুপরিবারে। ক্ষেতের ফসল নষ্টের পাশাপাশি মরে গেছে শত শত পুকুরের মাছ, ব্যবহার অনুপযোগী হয়েছে খোলা পানি। দেখা দিয়েছে পানি বাহিত রোগের প্রাদূর্ভাব, বাড়ছে মাছ সংকট আর হুমকিতে পড়েছে ক্ষতিগ্রস্থ এসব এলাকার গোটা জীববৈচিত্র। খালবিল, নদী-নালার পানি পঁচে বিকট দূর্গন্ধ এবং কালো হয়ে গেছে, যাকে ব্লাকডেড হিসেবে আখ্যায়িত করেছে উপজেলা প্রাণী সম্পাদ ও মৎস্য কর্মকর্তাগণ। বিপাকে পড়েছে মৎস্য চাষী ও পারিবারিকভাবে গড়ে তোলা খামারীরা। ব্যাপক ঝড় আর শিলাবৃষ্টির কবলে পড়া মৎস্য খামারীদের পোঁয়াবারো। তাদের বেশিরভাগ পুকুর, দিঘি আর চাষযোগ্য বিল-ঝিলের পানি এখন ব্লাকডেড, বাধ্য হয়ে পোনা মাছ তাড়াহুরা করে কমদামে বিক্রি হচ্ছে ’শ-’শ মণ, সেই সাথে এসব জলাশয়ে বেঁচে থাকা প্রাকৃতিক মাছ, ছোট ছোট কীটপতঙ্গ আর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী জীববৈচিত্রের আঁধার পুরোটাই বিপাকে। সারুটিয়া ইউনিয়নের জেলে সম্প্রদায়ের এক প্রতিনিধি অসিত কুমার জানান, তার ৬ একর খামারের পানি নষ্ট হয়েছে, ফলে অল্প বয়সেই বিক্রি করতে হচ্ছে শত শত মন মাছ, এতে কয়েক লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে। তিনি আরো বলেন, হঠাৎ ঝড় ও শিলাবৃষ্টির কবলে ক্ষতিগ্রস্থ মৎস্যজীবি পরিবারগুলি বিশেষ করে জেলে সম্প্রদায়ের লোকেরা ঋণের জালে জড়িয়ে যাবে। এ সংকট উত্তরণের জন্য তিনি সরকারের উচ্চ মহলের সু-দৃষ্টি কামনা করেন।
কীর্ত্তিনগর গ্রামের মাছ চাষী হেলাল উদ্দিন জানান, ৩ একর জলাশয়ে তার মাছ চাষ বিদ্যমান, শিলাবৃষ্টি আর ঝড়ের পর থেকে পঁচে কালো হয়ে যাচ্ছে পানি, পটাশ ও চুন প্রয়োগের ফলে মাছ মরা কিছুটা স্থিতিশীল থাকলেও পানির রং ভাল হয়নি বলে আতঙ্কে রয়েছেন তিনি। মৌকুড়ী গ্রামের আব্দুস সোবহান বলেন, পানিতে বাইরের আবর্জনা পড়ে ও শিলাবৃষ্টির প্রভাবে পুকুরের পানি কালো এবং এভাবে জলজপ্রাণী মারা যাওয়ার ঘটনা ইতপূর্বে ঘটেনি। বেশিরভাগ পানিই বিষাক্ত হয়েছে গেছে বলে ধারনা করা হচ্ছে। কমে গেছে মানুষের পানিতে নামা ও গৃহস্থালী কাজ কর্মে ডোবা-নালা, পুকুরের পানি ব্যবহার করা। উপজেলার বিভিন্ন হাটবাজারে প্রতিদিন অল্পদামে বিক্রি হচ্ছে এসব জলাশয়ের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা সর্দার আবুল বাসার মোঃ খাইরুল ইসলাম বলেন, গত ৬ এপ্রিলের কালবৈশাখী ঝড় ও প্রচন্ড শিলাবৃষ্টির পর থেকে বিভিন্ন এলাকার পুকুরের পানি ও মাছসহ ছোট ছোট জলজ প্রাণী মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে, এ অবস্থায় পানি শোধন করা প্রয়োজন। এ ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয় জীববৈচিত্র নষ্ট এবং একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রাকৃতিক মাছ সংকটের পাশাপাশি ভবিষ্যতে এসব এলাকার পরিবেশ বান্ধব জলজ কীটপতঙ্গ হুমকিতে পড়তে পারে।