Connect with us

রাজনীতি

নিষেধাজ্ঞায় ২৩ দিন ধরে চুপচাপ জি এম কাদের

Published

on

দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে আদালতের ‘অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞার’ আওতায় থাকা জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান জি এম কাদের টানা ২৩ দিন ধরে চুপচাপ রয়েছেন। নিষেধাজ্ঞার কারণে ১ নভেম্বর থেকে শুধু দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রেই নয়, কার্যত রাজনীতিরই বাইরে রয়েছেন তিনি। দলের বনানী ও কাকরাইল কার্যালয়েও আসছেন না। দলের কোনো কর্মসূচিতেও অংশ নিচ্ছেন না। এমনকি, দলের কেউ মারা গেলে শোকও জানাচ্ছেন না। এর মধ্যেই তার বিরুদ্ধে এবার আদালত অবমাননার মামলা হয়েছে।

দল থেকে বহিষ্কৃত সাবেক সংসদ সদস্য জিয়াউল হক মৃধার একটি মামলায় গত ৩১ অক্টোবর জি এম কাদেরের ওপর দলীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা দেন ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ মাসুদুল হক। নিষেধাজ্ঞা খারিজ চেয়ে জি এম কাদেরের করা আবেদন গত ১৬ নভেম্বর খারিজ করে দেয় আদালত। নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকার মধ্যে জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব ‘অসত্য’ মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে ইতিমধ্যে ঢাকা ও রংপুরে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ-সমাবেশ করেছে জাপা। এতে আদালত অবমাননা হয়েছে দাবি করে ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতে নতুন আরেকটি মামলা করেছেন জিয়াউল হক মৃধা।

গতকাল বুধবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক সংবাদ সম্মেলনে জিয়াউল হক মৃধা মামলা করার বিষয়টি জানিয়ে বলেছেন, ‘আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে জি এম কাদেরের লোকজন রাজপথে অবস্থান নিয়েছেন। এর পেছনে জি এম কাদেরের হাত আছে। আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে রাজপথে অবস্থান নেওয়া মানে তারা আইন-আদালত মানেন না, আদালত অবমাননা করছেন।’

এদিকে, অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা প্রত্যহারের আবেদন খারিজ করার বিরুদ্ধে জজ কোর্টে আপিল করেছেন জি এম কাদেরের আইনজীবীরা। আজ বৃহস্পতিবার এর ওপর শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে। জাপা মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু গতকাল ইত্তেফাককে বলেন, ‘ঢাকার প্রথম যুগ্ম জেলা জজ আদালতের রায় বাতিলের জন্য আমরা আবেদন করেছি। জজ কোর্টে ন্যায়বিচার পেলে জাপা চেয়ারম্যান আগের মতো স্বাভাবিকভাবে দল পরিচালনা করতে পারবেন। আর জজ কোর্টে ন্যায়বিচার না পেলে আমরা হাইকোর্টে যাব।’

জি এম কাদেরের ওপর আদালতের ‘অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা’ দেওয়ার ঘটনাকে নজিরবিহীন বলে মনে করছেন দলটির নেতারা। জাপার কো-চেয়ারম্যান ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জাপার সভাপতি সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি বলেছেন, জি এম কাদের দেশ ও মানুষের অধিকারের প্রশ্নে সর্বদা সোচ্চার। তাই তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মানে দেশ ও মানুষের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। ‘অসত্য’ মামলায় একটি রাজনৈতিক দলের প্রধানের কণ্ঠরোধের অপচেষ্টা নজিরবিহীন। জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে মঙ্গলবার রাজধানীর বিজয়নগরে আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে বিজয়নগর পানির ট্যাংক পর্যন্ত মূল সড়কে আয়োজিত এই মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর জাপার নেতাকর্মীরা অংশ নেন। তারা জি এম কাদেরের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সব মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে স্লোগান দেন। সমাবেশে সভাপতিত্বকারী ঢাকা-৪ আসনের জাপা দলীয় এমপি আবু হোসেন বাবলা বলেন, জি এম কাদের দেশ ও মানুষের নেতা। দেশের মানুষ তার নেতৃত্ব গ্রহণ করেছে। এতে হতাশ হয়ে দল থেকে বহিষ্কৃৃত ও কিছু অর্বাচীন জি এম কাদের ও জাপার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, আদালত অসত্য মামলা খারিজ করে দেবে। জি এম কাদের আবারও মুক্তভাবে দেশ ও মানুষের কথা বলবেন।

রওশন ফিরছেন রবিবার:

মাঝখানে কয়েক দিন বাদ দিয়ে টানা এক বছর ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাপার প্রধান পৃষ্ঠপোষক রওশন এরশাদ আগামী ২৭ নভেম্বর রবিবার দেশে ফিরছেন। বিরোধীদলীয় নেতার একান্ত সচিব এ কে এম আবদুর রহিম ভূঞা স্বাক্ষরিত গতকাল এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রবিবার দুপুর সোয়া ১২টার দিকে ব্যাংকক থেকে ঢাকায় এসে পৌঁছাবেন রওশন এরশাদ।

ব্যাংককে চিকিৎসাধীন রওশন এরশাদ হঠাত্ গত ৩০ সেপ্টেম্বর এক চিঠির মাধ্যমে জাপার দশম জাতীয় কাউন্সিল ডাকেন। ২৬ নভেম্বর এই কাউন্সিল হওয়ার কথা ছিল। পরদিনই (১ অক্টোবর) ‘দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকায় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হিসেবে রওশন এরশাদ সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না’—এমন কারণ দেখিয়ে তার পরিবর্তে জাপা চেয়ারম্যান জি এম কাদেরকে বিরোধীদলীয় নেতা করার জন্য সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীকে চিঠি দেয় দলটির পার্লামেন্টারি পার্টি। এ নিয়ে জাপায় বিবাদ দেখা দেয়। এ অবস্থায় জি এম কাদেরকে ‘সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা’ হিসেবে স্পিকার স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ না করা পর্যন্ত ৩১ অক্টোবর থেকে সংসদ বর্জনের ঘোষণা দেয় দলটির পার্লামেন্টারি পার্টি। আগের দিন রাতে এই ঘোষণা দিলেও ‘স্পিকারের আশ্বাসে’ পরদিনই জি এম কাদেরের নেতৃত্বে সংসদে ফিরেন জাপার এমপিরা। অন্যদিকে, আগের দিন রাতে রওশন এরশাদও ২৬ নভেম্বর ডাকা দলের কাউন্সিল স্থগিত করেন।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *