দেশজুড়ে
পাটগ্রামে কাজীর ভূয়া লাইসেন্স: তদন্তে সিনিয়র সহ: সচিব
পৌরসভার ১, ২ ও ৩ নং ওয়ার্ডের কাজী আনোয়ার হোসেন এবং ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের বিয়ে রেজিস্ট্রার ইউনুছ আলী অনিয়ম করে কাজীর লাইসেন্স নিয়েছেন মর্মে লালমনিরহাট জেলা রেজিস্ট্রারের নিকট গত বছরের ৪ ডিসেম্বর অভিযোগ করেন পাটগ্রাম উপজেলা ও পৌরসভার ৭ সাত জন কাজী। জেলা রেজিস্ট্রার অভিযোগ তদন্তে পাটগ্রাম সাব রেজিস্ট্রি অফিসার সবুজ মিয়াকে প্রধান করে ১ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটিকে দায়িত্ব দেন। তদন্ত কমিটি উক্ত কাজীদ্বয়ের লাইসেন্স প্রাপ্তির আবশ্যকীয় শর্তাবলীর ডকুমেন্টসহ তদন্তের স্বার্থে ডাকেন। পাশাপাশি মুসলিম বিবাহ ও তালাক(নিবন্ধন) বিধিমালা ২০০৯- এর বিধি ৪ অনুযায়ী নিকাহ্ রেজিস্ট্রার লাইসেন্স মঞ্জুরীর জন্য উপদেষ্টা কমিটি কর্তৃক প্যানেল গঠিত হওয়ার বিধান থাকলেও এ সংক্রান্ত কোনো রেজুলেশন বা কোনো দালিলিক প্রমাণ পায়নি তদন্ত কমিটি। ০৫ জুলাই’১১ সালে ১৫৮(৭) নম্বর স্মারকের বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক বিয়ে রেজিস্ট্রারের লাইসেন্স প্রদানের দরখাস্ত আহবানকৃত সময়েও উক্ত কাজীদ্বয়ের কোনো দরখাস্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। তদন্ত কমিটিকে কাজী নিয়োগ কমিটির উপদেষ্টা তৎকালীন ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমীন বাবুল এবং মেয়র শমসের আলী সংশ্লিষ্ট নিকাহ্ রেজিস্ট্রারদ্বয়ের নিয়োগ বা প্যানেল বিষয়ে স্পস্ট কোনো কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন। এছাড়াও তদন্তকালীন কাজীদ্বয় কোনো প্রকার প্যানেল, প্রমাণাদী দেখাতে ব্যর্থ হওয়ায় পাটগ্রাম পৌরসভার বিয়ে রেজিস্ট্রার আনোয়ার হোসেন এবং ইউনুছ আলী বানোয়াট প্যানেল তৈরি করে নেয়া নিকাহ্ রেজিস্ট্রারের লাইসেন্সটি ভূয়া ও জাল পদ্ধতিতে নিয়েছেন বলে তিনি সবিস্তর প্রতিবেদন দাখিল করেন।
বিধিনুযায়ী কাজী বিহীন এলাকা বা বৃহত কোনো এলাকা ভাগ হলে অথবা কোনো কাজীর মৃত্যু ঘটলে এসব কারণে শূন্য এলকায় পুণঃ কাজী নিয়োগ দেয়া হয়। কিন্তু ওই সময়ে লাইসেন্স প্রাপ্ত কাজীদ্বয়ের ওয়ার্ড সমুহে বিয়ে রেজিস্ট্রার কাজী হিসেবে কাজী ওসমান গণি দায়িত্ব পালনরত ছিলেন। এলাকা শূন্য ঘোষিত না হলে দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় একই এলাকার জন্য কাজীর লাইসেন্স দেয়ার বিধান নেই। তথাপিও লাইসেন্স ইস্যু কিভাবে হল এটি নানা প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
অভিযোগ ও তদন্ত প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা রেজিস্ট্রার কাজীদ্বয়কে ২৯৪ ও ২৯৫ স্মারকে ভূয়া বানোয়াট প্যানেল ও নিকাহ্ রেজিস্ট্রারের লাইসেন্স সংগ্রহের বিপরীতে ১৫ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় প্রমাণসহ জবাবদিহীর জন্য পত্র দেন। কিন্তু অভিযুক্ত কাজীদ্বয় জেলা রেজিস্ট্রারকেও সদুত্তর প্রদানে বিরত থাকেন। ফলে লাইসেন্স বাতিল এবং প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা রেজিস্ট্রার সরকার লুৎফুল কবীর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিবের নিকট ৪১৪ নম্বর স্মারকে বিস্তারিত লিখে অগ্রগতি পত্র দেন। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনা জানার পর আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মনিরুজ্জামান চলতি বছরের ১৮ ডিসেম্বর ভূয়া ও জাল লাইসেন্সের ঘটনা পুণঃতদন্ত করেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কাজী সাংবাদিকদের অভিযোগ করেন, উক্ত কাজীদ্বয় বাল্য বিয়ের হোতা, একাধিক নকল ভলিয়ম দিয়ে বিয়ে রেজিস্ট্রি করে থাকেন। শিক্ষাগত যোগ্যতার জাল সার্টিফিকেটও সরবরাহ করেন। সর্বশেষ সচিব কর্তৃক তদন্তকালীন অভিযোগকারীদের কোনো বক্তব্য শোনা হয়নি বলে জানান তাঁরা।
এ ব্যাপারে কাজী আনোয়ার হোসেন বলেন, কোনো সমস্যা নাই। সবই ঠিক আছে। অভিযোগ ভিত্তিহীন। ইউনুস আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে, অভিযোগ মিথ্যা দাবী করে বলেন, সহকারী সচিব বুঝেছেন আমরা সঠিক না বেঠিক। আমাদের কাগজ-পত্র সবই ঠিক আছে। উভয়ে জানান, আমরা সঠিক আছি বলে উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র আমাদের পাশে আছেন।
পাটগ্রাম সাব- রেজিস্ট্রার আজমেরি নির্ঝর বলেন, আমি কোনো কিছুই বলতে পারব না। কে তদন্ত করতে এসেছেন এটিও বলা যাবে না। বিষয়টি যেহেতু তদন্তাধীন সেহেতু কথা বলা নিষেধ আছে। আপনি আইন মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করুন।
জেলা সাব- রেজিস্ট্রার সরকার লুৎফুল কবীর বলেন, অভিযোগ অনুযায়ী তদন্ত প্রতিবেদন, জবাব দাখিলে কাজীদ্বয় ব্যর্থ হওয়ায় বিষয়টি আইন ও সংসদীয় মন্ত্রণালয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব মো. মনিরুজ্জামানের সাথে চেষ্টা করে কথা বলা সম্ভব হয়নি।
বিস্বস্ত সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে ওই দুই কাজী ভূয়া লাইসেন্স সংক্রান্ত বিষয়টি ধামা চাপা দিতে বিভিন্ন মাধ্যমে উঠে পড়ে লেগেছে।