Connect with us

Highlights

প্রকৃত ইসলামের হেযাব নারী-স্বাধীনতার অন্তরায় নয়

Avatar photo

Published

on

মনে রাখতে হবে ইসলামের প্রত্যেকটা নীতিই কল্যাণকর। এই কল্যাণ তখনই পূর্ণরূপে পাওয়া যাবে যখন ইসলাম নামক জীবনব্যবস্থাটি আমাদের ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জীবনে প্রতিষ্ঠা করা যাবে। বর্তমানে আমাদের জীবনের সকল অঙ্গনে চলছে পাশ্চাত্য ইহুদি-খ্রিষ্টানদের তৈরি করা জীবনব্যবস্থা। সুদভিত্তিক পুঁজিবাদী অর্থনীতি, মানবরচিত আইন-বিধান, হানাহানির রাজনীতি, চরম ভোগবাদী জীবনদর্শন, অশ্লীল ও নোংরা সমাজব্যবস্থা এক কথায় জাতীয়-আন্তর্জাতিক ও সামাজিক সকল অঙ্গনে চলছে পাশ্চাত্যদের প্রতারণামূলক এক জীবনব্যবস্থা যা আমাদের ব্যক্তিগত জীবনকেও প্রভাবিত করছে প্রতিনিয়ত। অন্যদিকে ব্যক্তিগত জীবনের একটা ক্ষুদ্র পরিসরে আমরা কিছু আচার-ব্যবহারকেই ধর্মজ্ঞান করে তা পালন করে চলেছি। এই ক্ষুদ্র পরিসরেও যে রীতি-রেওয়াজগুলো পালন করছি তাও আবার অতি বাড়াবাড়ি করে বিকৃত করে ফেলা হয়েছে।
.
এমতাবস্থায় মুক্তির জন্য আমাদের প্রথমত এই বিকৃতিগুলো দূর করে ইসলামের প্রকৃত রূপটি ফিরিয়ে আনতে হবে, এরপর সেই প্রকৃত রূপটি সংগ্রামের মাধ্যমে মানবসমাজে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আল্লাহর রহম মহান আল্লাহ টাঙ্গাইলের ঐতিহ্যবাহী পন্নী পরিবারের সন্তান এমামুয্যামান জনাব মোহাম্মদ বায়াজীদ খান পন্নীকে ইসলামের সেই সঠিক রূপটি বুঝিয়ে দিয়েছেন। তিনি আমাদেরকে সেই রূপটি বুঝিয়ে দিয়ে আল্লাহর সান্নিধ্যে চলে গেছেন। এখন আমরা সংগ্রাম করে যাচ্ছি প্রকৃত ইসলাম প্রতিষ্ঠার জন্য। এখানে কেবল হেযাব কীভাবে আমাদের সমাজকে ধর্ষণ, ব্যাভিচার, ইভটিজিং জাতীয় নারী নির্যাতনমূলক অপরাধ থেকে মুক্তি দিতে পারে সেটাই তুলে ধরব।
.
যে কোনো অপরাধ দূর করতে হলে ভারসাম্যপূর্ণ বিধান লাগে। চুরি বন্ধ করতে হলে প্রথমে মানুষের অভাব দূর করতে হবে যেন কেউ চুরি করতে বাধ্য না হয়। এরপর আত্মিকভাবে প্রত্যেককে চুরি না করার শিক্ষা দিতে হবে, যেন ভেতর থেকে প্রতিটা মানুষের আত্মা চুরি করার ব্যাপারে বাধা সৃষ্টি করে। এরপরও চুর করলে তার উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। – এই হলো ভারসাম্য।
.
একইভাবে সমাজ থেকে ব্যাভিচার, ধর্ষণ, ইভটিজিং জাতীয় অপরাধ দূর করতে হলে-

১. প্রথমত- যারা বিবাহের উপযুক্ত হয়েছে তাদের বিবাহ দিয়ে দিতে হবে এবং বিবাহ-পদ্ধতি সহজ করতে হবে যেন জৈবিক চাহিদা পূরণের জন্য কেউ অন্যায় পন্থা বেছে নিতে বাধ্য না হয়। এজন্য মহান আল্লাহ হেযাবের নির্দেশ দিয়ে পরবর্তী আয়াতেই বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও এবং তোমাদের দাস ও দাসীদের মধ্যে যারা সৎকর্মপরায়ণ, তাদেরও। তারা যদি নিঃস্ব হয়, তবে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে সচ্ছল করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময়, সর্বজ্ঞ (সুরা নুর- ৩২)। প্রকৃত ইসলামে বিবাহ-পদ্ধতি ছিল অত্যন্ত সহজ। কেউ কাউকে পছন্দ করলে বিনা দ্বিধায় প্রস্তাব করতে পারত। পরস্পর রাজি থাকলে একাধিক স্বাক্ষীর সামনে মোহরানা পরিশোধ করে বিবাহ সম্পন্ন করে ফেলত। এমনও হয়েছে যে, একে অপরকে পছন্দ করেছে কিন্তু পাত্রের কাছে মোহরানা দেবার মতো কিছুই নেই, তখন রসুলাল্লাহ (সা.) কেবল কয়েকটি সুরা মুখস্থ করিয়ে দেবার শর্তে বিয়ের অনুমোদন দিয়েছেন। বিবাহ পড়ানোর জন্য কোনো কাজী ভাড়া করে আনা লাগত না, কাউকে টাকা দিতে হতো না। এর চেয়ে সহজ বিবাহ-পদ্ধতি আর কী হতে পারে?
.
২. দ্বিতীয়ত নারী-পুরুষ উভয়কে কামরিপু নিয়ন্ত্রণের জন্য নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। এই শিক্ষাই মহান আল্লাহ দিয়েছেন এই নির্দেশের মাধ্যমে যে, “যারা বিবাহে সামর্থ নয়, তারা যেন সংযম অবলম্বন করে যে পর্যন্ত না আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেন” (সুরা নুর- ৩৩)। “…তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে, যৌনাঙ্গের হেফাজত করে, তাদের কাপড়কে বুকের উপর টেনে নেয়…ইত্যাদি।” (সুরা নুর: ৩০-৩১)।

একজন মানুষ ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে এই স্বাক্ষ্য দিয়ে যে, “আমি আল্লাহর হুকুম ছাড়া কারো হুকুম মানব না।” কাজেই একজন মো’মেন, মুসলিমের জন্য আল্লাহর এই নির্দেশ যথেষ্ট হবে কামরিপু নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে।
.
৩. তৃতীয়ত- এর পরও যারা সীমালঙ্ঘন করবে তাদের জন্য আখেরাতে তো ভয়ঙ্কর শাস্তি আছেই তবে দুনিয়াতেও কঠিন শাস্তির বিধান রয়েছে। মহান আল্লাহ বলেন, “ব্যভিচারিণী নারী ব্যভিচারী পুরুষ; তাদের প্রত্যেককে একশ’ করে বেত্রাঘাত করো। আল্লাহর বিধান কার্যকর করতে গিয়ে তাদের প্রতি যেন তোমাদের মনে দয়ার উদ্রেক না হয়, যদি তোমরা আল্লাহর প্রতি ও পরকালের প্রতি বিশ্বাসী হয়ে থাক। মুসলমানদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে।” (সুরা নুর- ২)।
.
এই ভারসাম্যপূর্ণ বিধান যে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা যাবে সেখানে আর এই অন্যায়গুলো হবে না। এভাবে প্রতিটা অন্যায়, অপরাধের জন্যই ইসলামে ভারসাম্যপূর্ণ বিধান রয়েছে। প্রকৃত ইসলাম হলো ভারসাম্যপূর্ণ জীবনব্যবস্থা (দীনুল ওয়াসাতা)। ইসলামের সঠিক শিক্ষাই পারে সমস্ত অন্যায়, অবিচার দূর করতে।
.
যারা পাশ্চাত্যদের আলোর ঝলকানিতে আর নারী-স্বাধীনতা, নারী-অধিকার জাতীয় প্রতারণামূলক শব্দগুচ্ছের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে ইসলাম থেকে দূরে সরে যাচ্ছেন তাদের জ্ঞাতার্থে বলছি- আপনাদের মুক্তি ওখানে নেই। নারীদের প্রকৃত সম্মান, প্রকৃত মর্যাদা, সত্যিকারের মুক্তি দিয়েছে ইসলাম।
.
পাশ্চাত্যদের কাছে আত্মিক শিক্ষার কোনো গুরুত্ব নেই (তারা আত্মায় বিশ্বাসী না)। বিয়ে ব্যবস্থা তারা প্রায় বিলুপ্ত করে ফেলেছে। এবার অবাধ করে দিয়েছে যৌন সম্পর্ক। তাদের ধারণা- যেহেতু যৌন চাহিদা মিটানোর জন্য মানুষ অন্যের উপর জোর-জবরদস্তি করে তাই এটাকে অবাধ করে দিলে মানুষ আর কারো উপর জবরদস্তি করবে না, সুতরাং ধর্ষণও হবে না। আসলে রিপুগুলো এমন নয় বরং ঠিক এর উল্টো। প্রাপ্তিতে লালসা আরও বৃদ্ধি পায়, নিয়ন্ত্রণে তা কমে। কিন্তু শুধুই নিয়ন্ত্রণ অপ্রাকৃতিক, তাই ভারসাম্যপূর্ণভাবে অভাবও মেটাতে হবে। পাশ্চাত্যদের ঐ ধারণা যে ভুল এবং তাদের ঐ কার্যের ফল যে উল্টো হচ্ছে তা নিম্নের এই পরিসংখ্যানই প্রমাণ করে-
.
ভারতের নাম করা নিউজ পোর্টাল ২৪ঘণ্টা গত ২৫ অক্টোবর ২০১৬ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে যা বাংলাদেশের দৈনিক যুগান্তর, বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ প্রায় সবকটি জাতীয় দৈনিকে পরের দিন প্রকাশিত হয়েছিল। প্রতিবেদনটি নিম্নে তুলে ধরা হলো।
.
বিশ্বে সবচেয়ে বেশি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে আমেরিকায়। আমেরিকার ব্যুরো অব জাসটিস স্ট্যাটিস্টিক অনুযায়ী আমেরিকায় ধর্ষণের শিকার নারীর পরিসংখ্যান ৯১% এবং ৮% পুরুষ। ন্যাশনাল ভায়োলেন্স এগেইনস্ট উইম্যানের সার্ভে অনুযায়ী আমেরিকার প্রতি ৬ জন মহিলার মধ্যে ১ জন ধর্ষণের শিকার। পুরুষদের ক্ষেত্রে পরিসংখ্যানটা ৩৩ জনে ১ জন ধর্ষণের শিকার। এই দেশে ১৪ বছর বয়স থেকেই ধর্ষণের মতো অপরাধের প্রবণতা তৈরি হয় শিশু মননে।

সন্তান এবং শিশুদের ওপর যৌন নির্যাতনের বিষয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা গোটা পৃথিবীর মধ্যে দ্বিতীয়। এই দেশে ধর্ষণের শাস্তি মাত্র দুই বছরের জেল। ইউরোপের সুইডেনেই সবচেয়ে বেশি (৫৮%) ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। তালিকায় তৃতীয় স্থনে আছে সুইডেন।

তালিকায় চার নাম্বারে আছে ভারত। ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো অনুযায়ী ২০১২ সালে ভারতে ধর্ষণের অভিযোগ জমা পড়ে ২৪ হাজার ৯২৩টি। দেশটিতে ধর্ষণের শিকার হওয়া ১০০ জন নারীর মধ্যে ৯৮ জনই আত্মহত্যা করেন। প্রতি ২২ মিনিটে ভারতে একটি করে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয়।

তালিকার পাঁচ নাম্বারে আছে ব্রিটেন। দেশটিতে চার লাখ মানুষ প্রতিবছর ধর্ষণের মতো ঘটনার শিকার হন এদেশে। প্রতি পাঁচ জন মহিলার মধ্যে একজন করে ধর্ষণের শিকার হন।

তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে থাকা জার্মানিতে এখন পর্যন্ত ধর্ষণের শিকার হয়ে দুই লাখ ৪০ হাজার নারীর মৃত্যু হয়েছে। প্রতি বছর জার্মানিতে ধর্ষণের অভিযোগ দায়ের হয় ৬৫ লাখ ৭ হাজার, ৩৯৪।

সপ্তম স্থানে আছে ফ্রান্স। ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ধর্ষণের মতো ঘটনা ফ্রান্সে অপরাধ বলেই মানা হতো না। সরকারি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি বছরে এই দেশে ধর্ষণের শিকার হন অন্তত ৭৫ হাজার নারী।

তালিকায় অষ্টম স্থানে থাকা কানাডায় এখনও পর্যন্ত লিখিত অভিযোগের সংখ্যা ২৫ লাখ ১৬ হাজার ৯১৮টি। প্রতি ১৭ জনের মধ্যে এক জন নারী এই দেশে ধর্ষণের শিকার হন।

নবম স্থানে থাকা শ্রীলংকায় অপরাধের শতাংশের বিচারে ১৪.৫ শতাংশ অপরাধ সংগঠিত হয় ধর্ষণের। ধর্ষণে অভিযুক্তদের ৬৫.৮% ধর্ষণের মতো নারকীয় কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থেকেও কোনও প্রকার অনুশোচনা তাদের মধ্যে হয় না।

১০ নম্বরে থাকা ইথিওপিয়ায় ৬০% নারীই ধর্ষণের শিকার।
.

পরিশিষ্ট:

নারীর প্রতিভা আছে, মেধা আছে, সমাজে অবদান রাখার যোগ্যতা আছে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সাহস আছে; কিন্তু আজকের সমাজে তার সেই গুণগুলোর কোনো মূল্যায়ন নেই, কোনো স্বীকৃতি নেই। সে তার মেধা ও যোগ্যতাকে কাজে লাগানোর সুযোগ পাচ্ছে না। তাকে ধর্মের নাম করে, তার উপর সামাজিক বিধিনিষেধ আরোপ করে অবদমিত করে রাখা হচ্ছে, তাকে বিকশিত হতে দিচ্ছে না। সে এই অন্যায় অবস্থা, এই জাহেলিয়াতের কারাগার থেকে মুক্ত হওয়ার পথ খুঁজে পাচ্ছে না, কোনো উদ্ধাকারীর সন্ধানও তার জানা নেই। এজন্য নারীরা আজ নীরবে কাঁদে।
.
চৌদ্দশ বছর আগের আরবে নারীর এই একই অবস্থা ছিল। সেই কান্না থেকে তাদেরকে মুক্তি দিয়েছিলেন আল্লাহর রসুল। নারীরা কান্নাকাটি রেখে বীরাঙ্গনা হয়েছিলেন। যে হাতে নারী রুটি বানাতো, সেই হাতকে রসুলাল্লাহ এত বলিষ্ঠ করে তুললেন যে তারাই বল্লম আর তলোয়ার চালিয়ে শত্রুর মনে ত্রাস সৃষ্টি করে ফেলেছে। রসুল তাদের মুখে ভাষা দিলেন, তাদের প্রাপ্য মর্যাদা দিলেন, শক্তি দিলেন। তারা তাদের মেধা যোগ্যতার প্রমাণ রাখল। সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরাও অবদান রাখল। হাসপাতাল ব্যবস্থাপনায়, উপার্জনে, বাজার ব্যবস্থাপনায়, যুদ্ধে, মসজিদে এক কথায় জাতীয় জীবনের সর্ব অঙ্গনে তাদের অবাধ বিচরণ রসুল নিশ্চিত করলেন।
.
আজ আবারও নারী নীরবে কাঁদছে। অলিখিত সিস্টেম, আচার-বিচার-কুসংস্কার ও প্রথাগুলো নারীদের অগ্রগতির জন্য বিরাট বাধা। যেমন আজ যদি গ্রামের কোনো নারীকে চিকিৎসক প্রতিদিন সকালে দৌড়ানোর পরামর্শ দেন তাহলে সে বিকৃত ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গির কারণে তা করতে পারবে না। কিন্তু আল্লাহ-রসুলের ইসলাম তো তাকে এক্ষেত্রে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয় নি। আমরা হেযবুত তওহীদ তাদেরকে ফতোয়ার বেড়াজাল থেকে মুক্ত করার জন্য প্রকৃত ইসলামের শিক্ষাগুলো তাদের সামনে তুলে ধরছি। কেবল শহরের সুবিধাপ্রাপ্ত নারীদেরকেই নয়, প্রত্যন্ত গ্রামের অশিক্ষিত অর্ধ-শিক্ষিত গৃহবধুকেও হেযবুত তওহীদ সামাজিক ও জাতীয় অঙ্গনে শক্তিশালী ভূমিকা রাখার যোগ্য করে গড়ে তুলতে চেষ্টা করছে। তাদেরকে আর নীরবে কাঁদতে হবে না যদি তারা হেযবুত তওহীদের কথা শোনে। একদিকে যেমন তাদেরকে গৃহে বন্দী থাকতে হবে না অপর দিকে তাকে পাশ্চাত্য দর্শনের অনুকরণ করে নগ্ন, অশ্লীলভাবেও চলার সুযোগ থাকবে না। এতে তারা দুনিয়াতেও যেমন মুক্তি পাবে, সমৃদ্ধ হবে তেমনি আখেরাতেও তারা জান্নাতে যাবার সৌভাগ্য অর্জন করতে পারবে।

উম্মেহানী ইসলাম
-লেখক কলামিস্ট

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Highlights

ওরা সওমকে ব্যবসার হাতিয়ারে পরিণত করেছে : হেযবুত তওহীদের এমাম

Avatar photo

Published

on

রাজধানীতে হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে বিশাল আলোচনা সভা ও ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছে। গতকাল শনিবার (১৬ মার্চ ২০২৪) সকাল সাড়ে ১০ টায় রাজধানীর ইন্সটিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স-আইডিইবি মিলনায়তনে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে হেযবুত তওহীদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণ শাখা।

সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি মো. তসলিম উদ্দীন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম সওমের নিয়ম, উদ্দেশ্য, শিক্ষা এবং দেশ ও সমগ্র বিশ্ব জুড়ে বিদ্যমান সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সংকটময় পরিস্থিতি, মুসলমানদের দুর্দশা এবং এ থেকে উত্তরণের পথ নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, সওম মানে আত্মসংযম, নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা, বিরত থাকা। রোযা তথা সওমের উদ্দেশ্য এই যে, মো’মেন ব্যক্তি সারাদিন পানাহার ও জৈবিক চাহিদা পূরণ থেকে নিজেকে বিরত রাখবেন, নিজের আত্মাকে শক্তিশালী করবেন। তিনি অপচয় করবেন না, পশুর ন্যায় উদরপূর্তি করবেন না। তিনি হবেন নিয়ন্ত্রিত, আত্মত্যাগী। বঞ্চিত, ক্ষুধার্ত, দরিদ্র মানুষের দুঃখ অনুভব করে তিনি তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেবেন। আল্লাহর হুকুম মানার ক্ষেত্রে যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকবেন অর্থাৎ তিনি হবেন তাকওয়াবান। তার এই চরিত্রের প্রতিফলন ঘটবে সামাজিক ও জাতীয় জীবনে। গড়ে উঠবে এমন এক সমাজ যেখানে সবাই একে অপরের জন্য ত্যাগ স্বীকার করতে উৎসাহী হবে, বিরাজ করবে পরস্পর সহমর্মিতা, সহানুভূতি, ভ্রাতৃত্ব। প্রতিষ্ঠিত হবে শান্তি।

তিনি আরও বলেন, আজকের বাস্তবতা এই যে, বর্তমানে এই মৌলিক শিক্ষা হারিয়ে সওম বা রোযা যেন হয়ে গেছে কেবল না খেয়ে থাকা। দেখা যায়, রমজান আসলেই মুসলিমদের মধ্যে হুলুস্থুল পড়ে যায়। নিত্য প্রয়োজনীয় প্রতিটি দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়ে হয়ে ওঠে আকাশছোঁয়া। সংযমের মাস এলেই মুসলিমদের সংযমের সব বাঁধ যেন ভেঙে যায়। আজ রোযাকে ব্যবসার হাতিয়ারে পরিণত করা হয়েছে। সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পণ্যের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে। মানুষ বাজারে গিয়ে নিত্য পণ্যের দাম শুনে অসহায় হয়ে পড়ে। সবাই যেন অসাধু ব্যবসায়ীদের হাতে জিম্মি। ধর্মব্যবসাও জমজমাট হয়ে ওঠে এই মাসে। এ জাতীয় অপরাধ ঢাকা দেয়ার জন্য আত্মপ্রচারের আশায় কিছু দান-খয়রাত করতে দেখা যায় মাত্র। কিন্তু রোযা তথা সওমে সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়ের বোধ অর্থাৎ তাকওয়া সৃষ্টি হয়না, প্রকৃত সিয়ামের সাধনা হয় না মন্তব্য করেন তিনি।

উপস্থিত অতিথি ও শুভানুধ্যায়ীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, রোজার নির্দেশনাটা মূলত মো’মেনদের জন্য। তার মানে মো’মেনরা রোজা পালন করবে। প্রশ্ন হচ্ছে- এই মো’মেন কারা? তারাই মো’মেন যারা আল্লাহ ও রাসুলের উপর ঈমান আনে, কোনো সন্দেহ পোষণ করে না এবং সম্পদ ও জীবন দিয়ে আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করে। এই মো’মেনের জন্যই হলে রোজা, নামাজ, হজ্ব সবকিছু। আমরা হেযবুত তওহীদ আমাদের জীবন ও সম্পদ আল্লার রাস্তায় কোরবান করে দিয়ে প্রকৃত মোমেন হবার চেষ্টা করছি বলেন তিনি।

এর আগে পবিত্র কোরআন থেকে তোলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। পবিত্র কোরআন থেকে তোলওয়াত করেন কারি মো. আসাদ। এরপর দলীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের মূল পর্ব শুরু হয়। অনুষ্ঠানের সভাপতি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি তসলিম উদ্দিন তার শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের প্রধান উপদেষ্টা খাদিজা খাতুন, ঢাকা মহানগর হেযবুত তওহীদের সভাপতি ডা. মাহবুব আলম মাহফুজ, হেযবুত তওহীদের তথ্য বিষয়ক সম্পাদক এস এম সামসুল হুদা প্রমুখ।

এক পর্যায়ে হামদ নাত ও গজল পরিবেশন করেন মাটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর নিয়মিত শিল্পী শাহীন আলম, রাফে আহমেদ, তাহমিনা আক্তার চাঁদ, তাহী ও ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ। তাদের পরিবেশনায় মুগ্ধ হয় দর্শকরা।

দুপুর ২ টায় অনুষ্ঠানস্থলে প্রবেশ করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। তার আগমনে স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত হয়ে যায় অনুষ্ঠানস্থল।

নামাজ শেষে দ্বিতীয় অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন প্রধান অতিথি এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। বক্তব্য শেষে তিনি মানবজাতির শান্তি কামনা করে দোয়া করেন। মোনাজাত শেষে মাগরিবের আযান দিলে সবার মাঝে ইফতার বিতরণ করা হয়। অতিথিরা সবাই মিলে একাকার হয়ে ইফতার করেন।

সংগঠনের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি তসলিম উদ্দিনের সভাপতিত্বে এবং কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য শাহ নেওয়াজ খানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় নারী বিষয়ক সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী, হেযবুত তওহীদের সাহিত্য ও গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক রিয়াদুল হাসান, মিরপুর শাখার সভাপতি আব্দুল হক বাবুল, হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জাফর আহমেদ, কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক সাইফুর রহমান, ঢাকা জেলার সভাপতি ইউনুস মিয়া, উত্তরা শাখার সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান টিটু, মাটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সাধারণ সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিনসহ ঢাকার বিভিন্ন থানার সভাপতি ও সহস্রাধিক নেতাকর্মী।

Continue Reading

Highlights

দেশের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে জাতীয় ঐক্যের ডাক হেযবুত তওহীদের

Avatar photo

Published

on

হেযবুত তওহীদের গাজীপুর জেলা ও মহানগর শাখার আয়োজনে ‘বাংলাদেশের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (৮ মার্চ ২০২৪) বিকালে গাজীপুর মহানগরের বাসন থানাধীন তেলিপাড়াস্থ সাগর সৈকত কনভেনশন হলে এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে বক্তব্য রাখেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। প্রধান অতিথির বক্তব্যে হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, রাজতন্ত্রের কবর হয়ে গেছে বহু আগে। ফ্যাসিবাদ মানুষের কাছে প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। বহু ফ্যাসিস্ট আত্মহত্যা করেছে। সমাজতন্ত্রও ব্যর্থ হয়েছে। গণতন্ত্রও লাইফ সাপোর্টে আছে- মন্তব্য করেন তিনি।

হেযবুত তওহীদের এই নেতা বলেন, গণতন্ত্রের সৌন্দর্য আমরা দেখেছি। প্রতি ৫ বছর পর পর মহা সংকটে পরতে হচ্ছে জাতিকে। একদল ক্ষমতায় গেলে পরের দিন থেকেই শুরু হয় তাকে টেনে নামানোর চেষ্টা। সমানে চলে জ্বালাও পোড়াও। বাসে আগুন দিয়ে নিরপরাধ নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। সাপের মত পিটিয়ে পুলিশ হত্যা করা হচ্ছে। ক্ষমতায় যাবার লড়াইয়ে হরতাল, অবরোধ, ধর্মঘটের নামে নৃশংসতা মানুষ দেখেছে। এই সিস্টেম আর মানুষ দেখতে চায় না। মানুষের তৈরি সব সিস্টেমই তো আমরা অ্যাপ্লাই করলাম। সবগুলো ব্যর্থ হয়েছে। মানুষের তৈরি তন্ত্রমন্ত্র বাদ দিয়ে আল্লার দেওয়া সিস্টেমে প্রত্যাবর্তন করার আহ্বান জানান তিনি।

তিনি আরও বলেন, পশ্চিমারা আমাদের ব্যাপারে মাতব্বরি করে আসছে বরাবরই। তারা একে একে ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, আফগানিস্তান ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন তাদের শকুনি দৃষ্টি পড়েছে আমার প্রিয় জন্মভূমির উপর। তারা বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে তাদের কূট চাল চালছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

তিনি বলেন, শকুন যত ভয়ঙ্করই হোক না কেন আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারলে কোনো সাম্রাজ্যবাদী অপশক্তি আমাদের ক্ষতি করতে পারবে না। হেযবুত তওহীদ থাকতে তাদের এই দুরাশা কোনো দিন পূর্ণ হবে না। প্রয়োজনে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য জীবন দেব তবুও দেশকে ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান হতে দিব না- বলেন এই নেতা।

সংগঠনের কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক উপকমিটির সদস্য শাহ নেওয়াজ খানের সঞ্চালনায় ও ঢাকা বিভাগীয় সভাপতি ডা. মাহবুব আলম মাহফুজের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- হেযবুত তওহীদের আন্তর্জাতিক প্রচারণা বিষয়ক সম্পাদক মো. মশিউর রহমান, হেযবুত তওহীদের সমন্বয়কারী মো. নিজাম উদ্দিন, দৈনিক বজ্রশক্তি পত্রিকার সম্পাদক এসএম সামসুল হুদা, হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক মো. সাইফুর রহমান, হেযবুত তওহীদের ঢাকা বিভাগের সাধারণ সম্পাদক ও গুলশান শাখার সভাপতি মো. ফরিদ উদ্দিন রাব্বানী, ঢাকা বিভাগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো. ইউনুস মিয়া ও মো. তসলিম উদ্দিন এবং হেযবুত তওহীদের গাজীপুর জেলা সভাপতি মো. শাহজাহান প্রধান, মহানগর সভাপতি শহিদুল ইসলাম প্রমুখ।

Continue Reading

Highlights

রাজধানীতে ‘বাংলা ভাষার মান রক্ষায় আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা

Avatar photo

Published

on

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ‘বাংলা ভাষার মান রক্ষায় আমাদের করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বিকাল সাড়ে পাঁচটায় রাজধানীর সেগুনবাগিচায় কচি-কাচার মেলা হলে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে হৃদয়ে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক পরিষদ।

সংগঠনটির উপদেষ্টা শাহ মুহাম্মদ সেলিম রেজা চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানের শুভ উদ্বোধন করেন হেযবুত তওহীদের সর্বোচ্চ নেতা এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, ‘বাংলা ভাষা বিকৃত করার প্রবণতা তরুণদের মধ্যে বেশ লক্ষণীয়। অফিস-আদালত, চলচ্চিত্র, নাটক, বিজ্ঞাপনসহ প্রায় জায়গাতেই চলছে বিদেশি ভাষার ব্যবহার। বিদেশি ভাষার আগ্রাসনে খাঁটি বাংলা ভাষার চর্চা দিন দিন কমে যাচ্ছে। সবচেয়ে বড় আফসোসের বিষয় হলো, আমাদের সমাজে কিছু সুশীল ব্যক্তিবর্গ আছেন যারা বেশি ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করেন। যার প্রভাব পড়ে দর্শক-শ্রোতাদের মধ্যে। তারাও মিশ্র ভাষায় কথা বলতে শেখে। বেসরকারি বেতারগুলোর উপস্থাপকরা তো বাংলা বলেন না বললেই চলে। পৃথিবীর প্রায় ২৮ কোটি মানুষ বাংলা ভাষায় কথা বলে। জনসংখ্যার দিক থেকে বিশ্বে বাংলা ভাষার স্থান সপ্তম। বাংলা ভাষার ঐতিহ্য এবং সাহিত্যসম্ভারও বিপুল। অথচ নতুন প্রজন্ম বাংলা ভাষার প্রতি উৎসাহী ও মনোযোগী নয়। আরেকদিকে ইংলিশ মিডিয়ামের দৌরাত্বে অনেক ছেলেমেয়ে যদিও বাংলা ভাষায় কথা বলতে পারে কিন্তু লিখতে পারে না। একটু শিক্ষিতরা বাংলার সাথে ইংলিশ শব্দ মিশ্র করে ককটেল বানিয়ে ব্যবহার করে গৌরব করে। অন্যদিকে একজন অশিক্ষিত কৃষক শ্রমিকের কথায় যদি আঞ্চলিকতা প্রকাশ পায় তাকে আমরা ক্ষেত বলে পরিহাস করতে ছাড়ি না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

বক্তব্য রাখছেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম

বক্তব্য রাখছেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম

তিনি বলেন, ‘নব্বইয়ের দশকে ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। কিন্তু আমরা কি বাংলা ভাষাকে সঠিক মর্যাদা দিতে পারছি? আমরা কি বিশুদ্ধ বাংলায় কথা বলতে পারি? আমরা কি বাংলা ভাষার বিকৃতি রোধ করতে পেরেছি? ১৯৪৮ সালে করাচিতে নিখিল পাকিস্তান শিক্ষা সম্মেলনে পাকিস্তানিরা উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রয়াসে আরবি হরফে বাংলা লেখার প্রস্তাব করেছিল। আমরা কিন্তু তাদের অযৌক্তিক প্রস্তাব গ্রহণ করিনি। হয়েছে প্রতিবাদ, আন্দোলন। কিন্তু এখন তরুণ প্রজন্মের বড় অংশই ইংরেজি অক্ষরে বাংলা লিখছে প্রতিনিয়ত। কিন্তু কোনো মহল থেকেই এর কোনো প্রতিবাদ উঠছে না -বলেন এই বক্তা।

তিনি আরো বলেন, ‘বাংলা ভাষার শুদ্ধ ও সঠিক ব্যবহারের প্রতি অনেকের আগ্রহ কমছে বলে মনে হয়। বিশেষ করে আমাদের শিশু ও তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ভাষার প্রতি মমত্ব ও আগ্রহ নিয়ে উদাসীনতা মোটেও ভালো কিছু নয়। শিশু ও তরুণদের একাংশ বাংলার চেয়ে ইংরেজি ভাষা ব্যবহারে বেশি আগ্রহী। এর জন্য আমাদের বিদ্যমান পরিস্থিতিও অনেকাংশে দায়ী। ইংরেজি ভাষা শিক্ষা নিয়ে আমার কোনো আপত্তি নেই, কিন্তু নিজের ভাষাকে অবহেলা করার পক্ষেও আমি নইÑ বলেন হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।

তিনি বলেন, ‘বিমা-ব্যাংকে গেলে বাংলার ব্যবহার প্রায় অদৃশ্য। অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানেও ইংরেজিতে প্রতিষ্ঠানের নাম লেখা হয়; এমনকি কর্মরতদের নাম, পদবিও থাকে ইংরেজিতে। ব্রিটিশরা আমাদের মনে পরনির্ভরতা ও বিদেশি ভাষার প্রতি যে অনুরাগ তৈরি করে গেছে, সেটি বদলাতে হবে। বিদেশি শব্দ ও ভাবধারার প্রতি আমাদের দুর্বলতা দূর করতে হবে। পৃথিবীর অনেক দেশ সরকারিভাবে তাদের নিজস্ব ভাষা ব্যবহারে সাফল্য দেখিয়েছে; তাহলে আমরা কেন পারব না?”

সবশেষে তিনি বলেন, মানবজাতি এক জাতি। ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ ইসলামের নিষিদ্ধ। সব ভাষাই আল্লাহর দেওয়া। প্রকৃতির বৈচিত্র্য যেমন স্বাভাবিক তেমনি ভাষার বৈচিত্র্যও স্বাভাবিক। ইসলাম ভূপ্রকৃতির কারণে জাতীয়তাবাদ এবং ভাষার কারণে বিভিন্নতার কারণে জাতীয়তাবাদ কোনটাকেই স্বীকার করে না। ইসলামের বিধানে সমস্ত মানুষ এক জাতি ভাষার কারণে কোনো জাতি অন্য জাতির উপরে শ্রেষ্ঠ হতে পারে না।

বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন দৈনিক দেশেরপত্রের সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নী, লায়ন কেফায়েত উল্লাহ, বাংলাদেশ ওয়ার্ল্ড ক্যান্সার সোসাইটির সভাপতি সৈয়দ হুমায়ুন কবির, অতিথি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও লায়ন সাইফুল ইসলাম, বাংলাদেশ নারী উদ্যোক্তার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রূপা আহমেদ, দৈনিক বজ্রশক্তির সম্পাদক এসএম সামসুল হুদা, মাটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সহ-সভাপতি রিয়াদুল হাসান প্রমুখ।

বিশেষ অতিথি মাটি সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর সহ-সভাপতি রিয়াদুল হাসান তার বক্তব্যে বর্তমানের বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় ভাষা ইংরেজি ভাষার বিভিন্ন দুর্বলতা তুলে ধরে বাংলা ভাষার সমৃদ্ধ সুশৃঙ্খল রূপ তুলে ধরেন।

বিশেষ অতিথি দৈনিক বজ্রশক্তির সম্পাদক এস এম সামসুল হুদা তার বক্তব্যের সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসহ আদালতে ইংরেজি ভাষার ব্যবহারের নিন্দা জানিয়ে অনতিবিলম্বে এসব দপ্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানান।

সবশেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানের বিশিষ্ট শিল্পীদের পরিবেশিত ভাষার গানে দেশের গানে মুখরিত হয় মিলনায়তন।

Continue Reading