বার কাউন্সিল নির্বাচন নিয়ে হাইকোর্টে রিট
আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নির্বাচনের ফল ঘোষণা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ। আজ রোববার হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট আবেদনটি জমা দেওয়া হয়েছে।
পরে ইউনূস আলী আকন্দ বলেন, বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনারস ও বার কাউন্সিল অর্ডার-১৯৭২-এর বিধিমালার ১৫ (২) বিধি অনুসারে সারা দেশের সব কেন্দ্র থেকে ব্যালট পেপার আসার পর কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে সবগুলো ব্যালট গুনে ফল ঘোষণা করতে হয়। কিন্তু কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তা করেননি। বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে আসা ফল ঘোষণা করেছেন তিনি। এর ফলে বিধি ভঙ্গ করা হয়েছে। এ জন্য এই ফলকে চ্যালেঞ্জ করে রিট আবেদন করা হয়েছে।
বার কাউন্সিলের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়েছেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবীরা। গত বৃহস্পতিবার সকালে বার কাউন্সিল নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণা করা হয়। কাউন্সিলের ১৪টি সদস্য পদে সরকার-সমর্থিত আইনজীবীদের প্যানেল সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ ১১টি পদ পেয়েছে। আর বিএনপি-সমর্থিত জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেল পেয়েছে তিনটি।
তবে নির্বাচনের ফলকে ‘বেআইনি’ ও ‘অবৈধ’ দাবি করেছেন বিএনপি-সমর্থিত কয়েকজন আইনজীবী। তাঁরা পুনর্নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন।
গত ২৬ আগস্ট সারা দেশের ৭৭টি কেন্দ্রে বার কাউন্সিলের ভোট গ্রহণ হয়। এতে ভোটার ছিলেন ৪৩ হাজার ৩০২ জন আইনজীবী। ওই দিনই ভোটের বেসরকারি ফলাফলে জানা যায়, আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জিতেছেন। বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীরাও জানান, তাঁরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাননি।
গত বুধবার বিকেল থেকে সারা দেশের সব কেন্দ্র থেকে আসা ফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। সারা রাত চলে প্রার্থী ও কেন্দ্রভিত্তিক ফল ঘোষণা। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে কাউন্সিলের পদাধিকারবলে চেয়ারম্যান ও অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম আনুষ্ঠানিকভাবে চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করেন।
চূড়ান্ত ফল অনুসারে কাউন্সিলের সাধারণ সদস্যের সাতটি আসনের মধ্যে পাঁচটিতে জিতেছেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবীরা। এ প্যানেল থেকে সর্বোচ্চ ১৫ হাজার ১০৯ ভোট পেয়েছেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আবদুল বাসেত মজুমদার। এই প্যানেলের নেতৃত্বে থাকা জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এম আমীর-উল ইসলাম, সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু, মানবাধিকার আইনজীবী জেড আই খান পান্না এবং সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ ম রেজাউল করিমও নির্বাচিত হয়েছেন। নির্বাচিত এই পাঁচজনের মধ্যে আমীর-উল ইসলাম ও বাসেত মজুমদার এর আগে ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীরা এবারের নির্বাচনে সাধারণ সদস্যের দুটি আসনে জিতেছেন। তাঁরা হলেন বার কাউন্সিলের বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান খন্দকার মাহবুব হোসেন ও সদস্য এম মাহবুব উদ্দিন খোকন।
কাউন্সিলের বাকি সাতটি অঞ্চলভিত্তিক গ্রুপ সদস্যের মধ্যে ছয়টিতে জিতেছেন আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবীরা। তাঁরা হলেন কাজী মো. নজীবুল্লাহ হিরু, এইচ আর জাহিদ আনোয়ার, মো. ইব্রাহীম হোসেন চৌধুরী, পারভেজ আলম খান, মো. ইয়াহিয়া ও মো. রেজাউল করিম-১। বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের মধ্যে শুধু মো. কাইমুল হক কাউন্সিলের গ্রুপ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ঐক্য প্যানেলের তিন নেতা এ জে মোহাম্মদ আলী, আবদুর রেজাক খান ও মাহবুব উদ্দিন খোকন।
ওই সংবাদ সম্মেলনে মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন, ‘গত বুধবার ফল ঘোষণার আগে আমরা অ্যাটর্নি জেনারেলের কাছে আবেদন করেছিলাম, বাংলাদেশ লিগ্যাল প্র্যাকটিশনারস ও বার কাউন্সিল অর্ডারের বিধিমালার ১৫ (২) বিধি অনুসারে কাউন্সিলের চেয়ারম্যানকে প্রতিটি ব্যালট পেপার গুনতে হয়। অ্যাটর্নি জেনারেল আমাদের আবেদন গ্রহণ করে সেই অনুসারে ব্যালট গণনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু সরকার-সমর্থক আইনজীবীদের চাপে পরে অ্যাটর্নি জেনারেল তাঁর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে আসা প্রিসাইডিং কর্মকর্তার ফল ঘোষণা শুরু করলেন। এটা সম্পূর্ণ অবৈধ ও বেআইনি। এ ছাড়া বেসরকারি ফলে আমাদের চারজন জিতলেও চূড়ান্ত ফলে তিনজন জিতেছেন। এখানে নয়ছয় হয়েছে।’
বিএনপি-সমর্থিত আইনজীবীদের এমন দাবি নাকচ করেছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের দেশে নির্বাচনে হেরে গেলে এর ফল প্রশ্নবিদ্ধ করতে নানা রকম কথা বলা হয়। এটাও তার ব্যতিক্রম নয়।’
সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের অভিযোগ অস্বীকার করে কাউন্সিলের চেয়ারম্যান আরও বলেন, ‘আপিল বিভাগের দায়িত্বে আমি ভোটার তালিকা ও সুষ্ঠু নির্বাচন করেছি। যদি কোনো অন্যায় হয়ে থাকে, আদালত সেটা দেখবেন। আদালত নির্দেশ দিলে ব্যালট পেপার পুনর্গণনা করা হবে।’ বাংলাদেশেরপত্র/এডি/আর