গাজীপুর
বোমা ফাটিয়ে শ্রীপুরে স্বর্ণের দোকানে দূর্ধর্ষ ডাকাতি
শ্রীপুর(গাজীপুর)প্রতিনিধি: গাজীপুরের শ্রীপুরে মাওনা চৌরাস্তার ইয়াকুব আলী মাস্টার সুপার মার্কেটের দ্বিতীয় তলায় হাত বোমা ফাটিয়ে ও পিস্তলের গুলি ছুড়ে আতংক সৃষ্টি করে শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সঙ্গীতা জুয়েলারীতে দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। ডাকাত দল দোকানের কর্মচারী ও ক্রেতাদের পিস্তলের মুখে জিম্মি করে প্রায় দু’কোটি টাকা মূল্যের প্রায় ৪’শ ভরি স্বর্নালংকার, নগদ ৩০ লাখ টাকা লুটে নেয়। ডাকাতদের ছোঁড়া বোমার স্প্লিন্টারের আঘাতে দোকান মালিকের পুত্র সুব্রত চন্দ্র দাস (৩০), দোকানের কর্মচারী নয়ন চন্দ্র দাস (৪০), নারায়ন চন্দন (২৫), পথচারী জাহাঙ্গীর আলম (৪০), হাবিবুর রহমান (২৫) ও রহমত আলী (২০) আহত হয়। আহতদের মধ্যে আশংকাজনক অবস্থায় সুব্রত ও জাহাঙ্গীর আলমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।
এ সময় মাওনা চৌরাস্তার দুই কিলোমিটার এলাকার দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। জনশুন্য হয়ে পড়ে পুরো এলাকা। ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে আধ ঘন্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে।
দোকান মালিক ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রে জানা যায়, সন্ধ্যা অনুমান ৭টার দিকে দোকানের ভিতর দু’জন মহিলা ক্রেতা ছিল। এসময় ক্রেতা সেজে ৬/৭জন ব্যক্তি সঙ্গীতা জুয়েলারীতে প্রবেশ করে ভিতর থেকে গেইট বন্ধ করে দিয়ে দোকান মালিক, কর্মচারীসহ গ্রাহিকাদের বুকে পিস্তল ঠেঁকিয়ে জিম্মি করে। চারজন ডাকাত দোকানে থাকা সমস্ত স্বর্নালংকার, টাকা পয়সা প্রায় আধ ঘন্টা যাবত লুটপাট করে দুইটি চটের বস্তায় ভরে বের হয়ে পড়ে। দোকানের মালিক শংকর দাস, ম্যানেজারসহ বের হয়ে আসতে চাইলে ডাকাতরা হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটায়। বোমার স্প্লিন্টারে ওই ৫ জন আহত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, ডাকাতরা মার্কেটের ভিতরে, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এবং ফ্লাইওভারের ওপরেসহ বিভিন্ন স্থানে একযোগে মুহুর্মূহু হাত বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও পিস্তলের ফাঁকা গুলি ছুড়ে ময়মনসিংহের দিকে একটি কালো গ্লাস লাগানো মাইক্রোবাসে চলে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী রাশিদুল জানায়, বোমা বিস্ফোরনের শব্দ শুনে তারা সন্ত্রাসীদের বোমা হামলা মনে করে দৌড়ে পালাতে থাকে। কাপড় ব্যবসায়ী ফয়সাল আহম্মেদ জানান, ব্রীজের ওপর থেকে বিকট শব্দে শুধু আগুন পড়তে দেখেছি। পার্শ্ববর্তী ক্লিনিকের মালিক আব্দুল মালেক জানান, প্রায় ২২টি বোমার শব্দ শুনতে পেয়েছি। প্রায় ৩০ মিনিট পর্যন্ত বোমা ও গুলির শব্দে আতঙ্কিত হাজার হাজার মানুষ দিকদ্বিদিক ছুটে পালাতে থাকে। এ সময় গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ী থেকে জৈনা বাজার পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বোমা গুলির শব্দ থামলেও ডাকাতির ঘটনা কেউ বুঝতে পারেনি। পরে দোকানের আহত কর্মচারীদের চিৎকার শুনে লোকজন এগিয়ে আসলে ডাকাতির ঘটনা দেখতে পায়।
প্রত্যক্ষদর্শী পথচারীদের অভিযোগ, ঘটনাস্থলের অদূরে পুলিশ বক্স, ৫-৭জন পুলিশ টহলরত, ৫০ মিটার দূরে মাওনা হাইওয়ে ফাঁড়ি ও মাওনা হাইওয়ে থানার দূরত্ব ১০০ মিটার। তারপরও ঘটনার প্রায় আধ ঘন্টা পর পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছেনি। মাওনা চৌরাস্তায় শ্রীপুর থানা পুলিশের ভূমিকাও ছিল রহস্যজনক।
ক্ষোভের সাথে সুবল দাস জানান, চৌরাস্তা এলাকায় হাইওয়ে পুলিশ ও থানা পুলিশের টহল দল থাকা সত্বেও পুলিশ ডাকাতদের বিরুদ্ধে কোন ভূমিকাই রাখেননি।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ঘটনার পরপরই শ্রীপুর থানার ওসি আসাদুজ্জামানকে ফোন করলে তিনি ছুটিতে আছেন, মাওনা হাইওয়ে থানার ওসি হাফিজুর রহমান ট্রেনিংয়ে রয়েছেন বলে জানান। দোকানের মালিক শংকর চন্দ্র দাস জানান, ডাকাতরা প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের ৪’শ ভরি স্বর্নালংকার ও নগদ ৩০ লাখ টাকা লুট করে নিয়ে গেছে। মাওনা হাইওয়ে থানার ওসি হাফিজুর রহমান জানান, আমি ট্রেনিং এ আছি ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানি না।
শ্রীপুর মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামানের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলেও কথা বলা যায়নি। ঘটনার পরপরই সংবাদ পেয়ে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল ও পৌর মেয়র আনিছুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।