জাতীয়
মীর কাসেম আলীর চূড়ান্ত রায় আজ
গত শনিবার রাজধানীতে একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সেমিনারে গভীর উদ্বেগ ও সংশয় প্রকাশ করেন সরকারের দুই মন্ত্রী। খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম প্রধান বিচারপতিকে বাদ দিয়ে নতুন করে মীর কাসেম আলীর আপিলের শুনানির দাবি তোলেন। মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ. ক. ম. মোজাম্মেল হক পরামর্শ দেন, আসনে থাকতে চাইলে প্রধান বিচারপতিকে তার ‘অতিকথন’ বন্ধ করা উচিত। কিন্তু প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে দুই মন্ত্রীর বক্তব্য ‘সরকারের নয়’ বলে গতকাল সোমবার জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। মন্ত্রিসভার বৈঠকের নির্ধারিত আলোচ্যসূচি শেষে কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘একটি সংগঠনের অনুষ্ঠানে গিয়ে দুই মন্ত্রী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে মনে হয় ওই সংগঠনটি যেন সরকারের কোনো সংগঠন এবং এই বক্তব্য যেন সরকারের বক্তব্য।’ ওই বক্তব্যকে ‘ডিসওন’ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, মন্ত্রীদের এ ধরনের বক্তব্যে তিনি এবং তার সরকার বিব্রত হয়েছেন।
মীর কাসেম আলীর মামলা আপিল বিভাগের আজকের দৈনন্দিন কার্যতালিকায় রায়ের জন্য এক নম্বরে রাখা হয়েছে। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার ও বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান।
রায় ঘোষণা উপলক্ষে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। গতকাল বিকেল থেকে সর্বোচ্চ আদালত, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও এর আশপাশ এলাকায় অসংখ্য পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা বাহিনী মোতায়েন করা হয়। যে কোনো ধরনের নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে আদালত এলাকায় অবস্থান নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। রায়ের পরবর্তী পরিস্থিতি মাথায় রেখে কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আপিল আবেদনের ওপর উভয়পক্ষের চূড়ান্ত শুনানি শেষ হয়। এর পর মীর কাসেম আলীর মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য সর্বোচ্চ আদালত আজকের দিন ধার্য করেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় চট্টগ্রামে হত্যা, লুণ্ঠন, অপহরণ ও নির্যাতনের দায়ে ২০১৪ সালের ২ নভেম্বর আলবদর কমান্ডার শীর্ষ যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেম আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের নির্দেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। হত্যা, লুণ্ঠন, অপহরণ, দেশত্যাগে বাধ্য করা, নির্যাতনসহ ১৪টি অভিযোগের মধ্যে ১০টিতে তাকে দোষী সাব্যস্ত করে এ রায় ঘোষণা করা হয়। মীর কাসেম বর্তমানে জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদের সদস্য।
রায়ে দুটি অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ৬৪ বছর বয়সী মীর কাসেমকে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। চারটি অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাকে খালাস দেওয়া হয়। ১১ নম্বর অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল-২-এর তিন বিচারপতি সর্বসম্মত মৃত্যুদণ্ডের রায় দিলেও ১২ নম্বর অভিযোগে ফাঁসির সিদ্ধান্ত হয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে। ১১ নম্বর অভিযোগে শহীদ কিশোর মুক্তিযোদ্ধা জসিম উদ্দিনসহ ছয়জনকে এবং ১২ নম্বর অভিযোগে রঞ্জিত দাস লাতু ও টুন্টু সেন রাজুকে হত্যার অভিযোগ আনা হয়। ১১ নম্বর অভিযোগে সর্বসম্মত ও ১২ নম্বর অভিযোগে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে ফাঁসির রায় দেন বিচারকরা।
সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত আটটি অভিযোগে অপহরণ ও আটকে রেখে নির্যাতনের দায়ে মীর কাসেমকে সব মিলিয়ে ৭২ বছরের কারাদ দেন ট্রাইব্যুনাল। মীর কাসেমের নেতৃত্বে চট্টগ্রামে শহরের যে হোটেলে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোকদের ধরে নিয়ে নির্যাতন চালানো হতো, সেই ডালিম হোটেলকে ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয় ‘ডেথ ফ্যাক্টরি’।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেওয়া এ রায়ের বিরুদ্ধে ওই বছরের ৩০ নভেম্বর আপিল করেন জামায়াতের কর্মপরিষদের সদস্য মীর কাসেম। দেড়শ’ পৃষ্ঠার মূল আপিলসহ এক হাজার ৭৫০ পৃষ্ঠার আপিলে মোট ১৬৮টি কারণ দেখিয়ে ফাঁসির আদেশ বাতিল করে খালাস চান তিনি। গত ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে এ মামলার আপিলের শুনানি শুরু হয়। ২৪ ফেব্রুয়ারি শুনানির সপ্তম দিনে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে তা শেষ হয়।
আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়েও মীর কাসেমের মৃত্যুদণ্ড বহাল থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। অপরদিকে মীর কাসেম অভিযোগ থেকে খালাস পাবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তার প্রধান আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন।