Connect with us

Highlights

হেযবুত তওহীদের উদ্যোগে উগ্রবাদ-সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক

Published

on

‘সকল ধর্মের মর্মকথা – সবার ঊর্ধ্বে মানবতা’ এই কথাকে হৃদয়ে ধারণ করে “উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া সময়ের দাবি”- শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার (৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩ টায় রাজধানীর বিজয়নগরে হোটেল ৭১ এর কনফারেন্স রুমে সাংবাদিক, লেখক, সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদসহ বিভিন্ন ধর্মের প্রতিনিধিত্বকারী ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তওহীদ।

দৈনিক দেশেরপত্রের সম্পাদক রুফায়দাহ পন্নীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের মূল প্রতিপাদ্য উপস্থাপন করেন হেযবুত তওহীদের চেয়ারম্যান এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম। অনুষ্ঠানে আগত অতিথিবৃন্দ একে একে প্রতিপাদ্যের উপর আলোচনা রাখেন এবং তাদের মূল্যবান মতামত প্রদান করেন।

অনুষ্ঠানের মূল প্রতিপাদ্য উপস্থাপনকালে হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, আমাদের দেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। একটি গোষ্ঠী ইসলামকে ব্যবহার করে অর্থনৈতিক স্বার্থ উদ্ধার (ধর্মব্যবসা) করছে। তারা ধর্মকে অবলম্বন করে উগ্রতা, বাড়াবাড়ি, ধর্মান্ধতার চর্চা করছে। সুযোগ পেলেই ভিন্নমতের মানুষকে কাফের, মুরতাদ, মালাউন, ভারতের দালাল, ইসরাইলের দালাল, নাস্তিকের দালাল বলে ফতোয়াবাজি, উন্মাদনা সৃষ্টি করে বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে সেটাকে তওহীদী জনতার হামলা বলে চালিয়ে দিচ্ছে। এরা ধর্মপ্রাণ জনতার ইমানী চেতনাকে হাইজ্যাক করে তা ভুল পথে চালিত করে নিজেদের ব্যক্তি ও গোষ্ঠীস্বার্থ হাসিল করছে।

তাদের উগ্রবাদী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদে মাঠে ময়দানে সোচ্চার ভূমিকা রাখছে অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তওহীদ।এজন্য তারা হেযবুত তওহীদকে টার্গেট করেছে। সারাদেশে সাড়ে চার শতাধিক স্থানে তারা এ আন্দোলনের সদস্যদের উপরে, তাদের বাড়িঘরে, আন্দোলনের কার্যালয়ে হামলা করেছে।

বাংলাদেশে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, পাহাড়ী, সমতলবাসী সকলের সমান অধিকার রয়েছে এই মাটির উপরে। ইতিহাসের গোড়ায় যদি ফিরে যাই, যদি প্রধান কয়েকটি ধর্মগ্রন্থে দৃষ্টি রাখি, তাহলে দেখতে পাব আমরা সবাই একই পিতা-মাতার সন্তান, সমগ্র মানবজাতি এক জাতি। তাই ভাষা, বর্ণ, জন্মপরিচয়, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক, ভৌগোলিক সীমানার দ্বারা সৃষ্ট কৃত্রিম বিভাজন কোর’আন মোতাবেক নিষিদ্ধ। স্রষ্টা মানুষকে মাত্র দুটো ভাগে ভাগ করেছেন- ভালো ও মন্দ। মানুষের মর্যাদাও নির্ণিত হবে ভালো কাজ ও মন্দ কাজের ভিত্তিতে। এর বাইরে কোনোরূপ বংশীয় আভিজাত্য, অর্থ বা ক্ষমতার ভিত্তিতে মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব ইসলাম স্বীকার করে না।

কালপরিক্রমায় ধর্মগুলো ভিন্ন পরিচয় ধারণ করলেও সেগুলোর মধ্যে অগণিত মিল রয়েছে। যেমন ইসলামের এক নাম দীনুল কাইয়্যেমা। শব্দটি এসেছে ‘কায়েম’ থেকে যার অর্থ শাশ্বত, সুপ্রতিষ্ঠিত, চিরন্তন, সনাতন জীবনব্যবস্থা। যে নীতি বা ধর্ম ছিল, আছে এবং থাকবে সেটাই হচ্ছে সনাতন বা কাইয়্যেমাহ। সনাতন, ইসলাম ও সেমেটিক প্রতিটি ধর্মই মনে করে ঈশ্বর বা পরমাত্মা এক ও অখণ্ড সত্তা। ইসলাম বলে- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ এক আল্লাহ ছাড়া কোনো হুকুমদাতা নেই। সনাতন ধর্ম বলে, একমেবাদ্বীতিয়ম, একমব্রহ্ম দ্বৈত্ব নাস্তি। যার অর্থ হচ্ছে- ব্রহ্ম একজন। তাঁর কোনো দ্বিতীয় নাই।
খ্রিষ্টধর্মেও একই কথা- There is only one Lawgiver and Judge. (New Testament: James ৪:১২). যিশুকে মুসলিমরা নবী বলে বিশ্বাস করেন। কোর’আনের নিরানব্বইটি আয়াতে ঈসা (আ.) এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং তাঁকে স্রষ্টা থেকে প্রাপ্ত ‘পবিত্র আত্মার অধিকারী’ বলা হয়েছে।

বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারীরা নিরিশ্বরবাদী হলেও তারা সকল ধর্মের মতই পরকালে বিশ্বাসী। বুদ্ধের জীবনী পাঠ করলে এটা বুঝতে কষ্ট হয় না যে, তিনিও নবী-রসুলগণের মতই একজন শ্রেষ্ঠ শিক্ষক ছিলেন। আমরা সেই সকল মহান শিক্ষকের শিক্ষাকে অনুসরণ করে একত্রে পথ চলতে চাই।

এজন্য আমরা সমাজের বিভিন্ন স্তরে অবস্থানকারী সুধীজন, চিন্তাশীল ব্যক্তিবর্গ, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দকে নিয়ে একটা সমন্বিত কর্মসূচির প্রস্তাব করছি। উগ্রবাদীরা তাদের বইপত্রে, ওয়াজে, খোতবায়, সোশ্যাল মিডিয়ায় কোর’আন, হাদিসের ভুল ব্যাখ্যা, বিকৃত ব্যাখ্যা, উদ্দেশ্যমূলক ব্যাখ্যা দিচ্ছে। সাধারণ মানুষ তাদেরকে ইসলামের কর্তৃপক্ষ মনে করে অন্ধভাবে সেগুলোকে মেনে নিচ্ছে। এভাবে তারা ইসলামপ্রিয় মানুষকে বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট করছে। তাদের কাছে ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যা তুলে ধরতে হবে যা আমাদের কাছে রয়েছে, যা অকাট্য, বিতর্কের ঊর্ধ্বে। বিশেষজ্ঞরা একেই বলেন Counter Ideology ev Counter Narrative. একটি ভুল মতবাদকে এভাবে সঠিক যুক্তিসঙ্গত দলিল প্রমাণ দিয়ে অপনোদন করার নাম আদর্শিক লড়াই বা ওফবড়ষড়মরপধষ ডধৎ. যা করে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ। এই লড়াই করতে গিয়ে আমাদের ৫ জন সদস্য শহীদ হয়েছে। আমরা বারবার আক্রমণের স্বীকার হচ্ছি। তবুও আমরা থেমে থাকিনি, থাকব না। এই লড়াইয়ে সাথি হিসেবে আমরা আপনাদের মত শুদ্ধচিন্তার মানুষদের পাশে চাই।

আসুন আমরা সবাই স্বার্থের রাজনীতি, ধর্মব্যবসা, ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতি, ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে আপসহীন অবস্থান গ্রহণ করি। এতে করে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম নিরাপদ হবে, প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশের মাটি অস্ত্রব্যবসায়ী পরাশক্তিধর রাষ্ট্রের ষড়যন্ত্রের কবল থেকে রক্ষা পাবে। এটা একাধারে আমাদের ধর্মীয় কর্তব্য এবং সামাজিক কর্তব্য। এখনও যদি আমরা দেশ ও জাতির স্বার্থে এসকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ না গড়ে তুলি তাহলে অনেক দেরি হয়ে যাবে, তখন আর হয়ত কিছুই করার থাকবে না।

এসময় হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম কিছু প্রস্তাবনা পেশ করেন। প্রস্তাবনাগুলো হলো-
১. ধর্মীয় উগ্রবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে একটি রেনেসাঁ সৃষ্টির জন্য যে আদর্শ ও শক্তিশালী বক্তব্য প্রয়োজন সেটা হেযবুত তওহীদের কাছে রয়েছে। কিন্তু আমাদের সম্পর্কে সম্যক ধারণা না থাকায় অথবা কারো অপপ্রচারে প্রভাবিত হওয়ার দরুন অনেকেই আমাদের বিষয়ে ভুল ধারণা পোষণ করেন। হেযবুত তওহীদ সম্পর্কে যাবতীয় অস্পষ্টতা ও দ্বিধাদ্বন্দ্ব থেকে সকলকে মুক্ত হতে হবে।
২. আলোচনা সভার জন্য হল অথবা স্থান সহজলভ্য ও নিরাপদ করতে হবে। আমাদের সদস্যরা সবাই সাধারণ, তাদের পক্ষে ব্যয়বহুল অনুষ্ঠান করা সব সময় সম্ভব নয়। তাই আলোচনা অনুষ্ঠানের স্থান বা সরকারি হলরুম সহজলভ্য করতে হবে। জাতির কল্যাণে আমরা শুধু মসজিদ নয়, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডায় বা যে কোনো রাজনৈতিক দলের কার্যালয়ে গিয়েও কথা বলতে প্রস্তুত আছি। এ জাতীয় স্থানগুলোকে সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি সৃষ্টি সংক্রান্ত আলোচনা করার জন্য ব্যবহারের ক্ষেত্রে সহযোগিতা কামনা করছি।
৩. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সৃষ্টি ও উগ্রবাদ মোকাবেলায় সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দের ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি প্রস্তাবনা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানোর অনুরোধ করছি।
৪. প্রত্যেক জেলায় এ ধরনের আলোচনা অনুষ্ঠান, সেমিনার ইত্যাদি করার জন্য হেযবুত তওহীদ প্রস্তুত রয়েছে। এজন্য সকল ধর্মীয় সংগঠনের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।

সর্বধর্মীয় সম্প্রীতি স্থাপনের লক্ষ্যে আয়োজিত অনুষ্ঠানগুলোকে মিডিয়ার মাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণায় আওতায় আনতে হবে। এজন্য সকল ধর্মীয় সংগঠনের দায়িত্বশীলগণকে মুখ্য ভূমিকা পালন করার অনুরোধ জানান তিনি।

অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে নিজ গ্রাম চাষীরহাটকে ‘স্মার্ট গ্রাম’ হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে হাতে নেয়া উন্নয়ন কার্যক্রমের উপরে একটি ডকুমেন্টারি প্রদর্শন করা হয়। অনুষ্ঠনে আরো আলোচনা করেন- আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর ও বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট রানা দাস গুপ্ত, মার্কেন্টাইল ব্যাংকের সাবেক ব্যববস্থাপনা পরিচালক মনিন্দ্র কুমার নাথ, সেন্টার ফর ইন্টার রিলিজিয়াস অ্যান্ড ইন্টার কালচারাল ডায়লগ এর পরিচালক অধ্যাপক ড. ফারজিন হুদা, বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট মমতাজ লতিফ, সম্প্রিতি বাংলাদেশে সাধারণ সম্পাদক ও বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. মামুন আল মাহতাব, বাংলা একাডেমির পদকপ্রাপ্ত কথা সাহিত্যিক রফিকুর রশিদ, বাংলাদেশ অনলাইন একটিভিস্ট ফোরামের প্রেসিডেন্ট কবির চৌধুরী তন্ময়, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও কবি সৌমিত্র দেভ, বাংলাদেশ খ্রিস্টান মহাজোটের প্রেসিডেন্ট ও বিশিষ্ট আইনজীবী মিস্টার ডেনিয়েল নির্মল ডি কোস্টা, শিশু সাহিত্যিক হুমায়ূন কবির ঢালি, চারুলিপির প্রকাশক হুমায়ূন কবির প্রমুখ।

আলোচকরা অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য বিষয়ের উপরে সহমত পোষণ করেন। তারা হোসাইন মোহাম্মদ সেলিমের এই সংগ্রামকে সাধুবাদ জানান। তার সাহসীকতার প্রসংশা করেন এবং এই উগ্রবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার ইচ্ছা পোষণ করেন।

 

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *