Connect with us

জাতীয়

৪ বছরে কুইক রেন্টালে লোকসান ১৭ হাজার কোটি টাকা

Published

on

স্টাফ রিপোর্টার:
দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর আওয়ামী লীগ সরকারের আলোচিত প্রজেক্ট কুইক রেন্টাল বা দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন। এ প্রকল্প নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা হলেও দমে যায়নি সরকার। একটার পর একটা বাড়তে বাড়তে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এখন ঠেকেছে ১৭টিতে। এর মধ্যে পাঁচটি গ্যাসভিত্তিক। বাকিগুলো চলে তেলে। তবে কোনোটিই লাভে নেই। এ প্রকল্প চালাতে গিয়ে লোকসানের পর লোকসান গুনছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কুইক রেন্টাল বা দ্রুত ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রে গত চার বছরে ১৭ হাজার কোটি টাকা লোকসান দিয়েছে পিডিবি। এর মধ্যে গত অর্থবছর লোকসান হয়েছে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।
২০১০-১১ অর্থবছরে কুইক রেন্টাল বিদ্যুতকেন্দ্রগুলো উৎপাদনে আসতে শুরু করে। বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ওই অর্থবছর পিডিবির লোকসান হয় ১ হাজার ৭০২ কোটি টাকা। পরের অর্থবছর লোকসান দাঁড়ায় ৫ হাজার ১০ কোটি ও ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৫ হাজার ২১৮ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০১৩-১৪ অর্থবছরে লোকসান হয় প্রায় ৫ হাজার ১০০ কোটি টাকা। ১৭টি কুইক রেন্টাল কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচটি গ্যাসভিত্তিক। তেলচালিত কেন্দ্রগুলোর পাশাপাশি গ্যাসভিত্তিক এসব কুইক রেন্টালেও লোকসান করছে পিডিবি। গত অর্থবছর গ্যাসভিত্তিক পাঁচটি কুইক রেন্টালে লোকসান হয়েছে প্রায় ৫৭৪ কোটি টাকা। পিডিবির গ্যাসচালিত কেন্দ্রে ইউনিটপ্রতি বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় ২ টাকার নিচে হলেও কুইক রেন্টালে (গ্যাসভিত্তিক) এ ব্যয় গড়ে ৬ টাকা ৫৮ পয়সা। এমনকি বেসরকারি খাতের দীর্ঘমেয়াদি কেন্দ্রগুলোর উৎপাদন ব্যয়ও গড়ে ২ টাকা। গ্যাসের অভাবে প্রায় এক হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা বসিয়ে রেখেছে পিডিবি। এর মধ্যেই গ্যাসভিত্তিক কুইক রেন্টালের মেয়াদ বাড়ছে। তিনটির মেয়াদ পাঁচ বছর করে বাড়ানো হয়েছে। বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে বাকি দুটির মেয়াদও। চুক্তি অনুযায়ী, উৎপাদন বন্ধ থাকলেও ক্যাপাসিটি চার্জ হিসেবে ভাড়া পরিশোধ করতে হয় পিডিবিকে। ফলে এসব কেন্দ্রের গড় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায়। পিডিবির সদস্য (কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স) তমাল চক্রবর্তী এ প্রসঙ্গে বলেন, গ্যাসস্বল্পতায় অনেক সময় কুইক রেন্টাল বিদ্যুতকেন্দ্র বন্ধ রেখে সরকারি কেন্দ্রগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। বন্ধ রাখা হলেও চুক্তি অনুযায়ী ভাড়া পরিশোধ করতে হয়। তাই গড় উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যায়। বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০০০-০১ অর্থবছরে জাতীয় গ্রিড থেকে শিল্পে বিদ্যুতের ব্যবহার ৪৬ দশমিক ৫৫ শতাংশ হলেও ২০১১-১২ অর্থবছরে তা কমে দাঁড়ায় ২৮ দশমিক ৬৭ শতাংশে। ২০০৩-০৪ অর্থবছরে এ হার ছিল ৪৩ দশমিক ৫৮, ২০০৬-০৭-এ ৩৩ দশমিক ৯৮ ও ২০০৯-১০ অর্থবছরে ৩৬ দশমিক ৬ শতাংশ। শিল্পে ধারাবাহিকভাবে কমতে থাকলেও বেড়েছে আবাসিকে বিদ্যুতের ব্যবহার। ২০০০-০১ অর্থবছরে আবাসিকে বিদ্যুতের ব্যবহার ছিল ৪০ দশমিক ২৮ শতাংশ, ২০১১-১২ অর্থবছর তা বেড়ে হয় ৪৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। গত দুই বছরে এ ব্যবধান আরো বেড়েছে বলে জানা গেছে।
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ম. তামিমের মতে, জাতীয় গ্রিড থেকে শিল্পে বিদ্যুৎ ব্যবহার বাড়ছে না। সে হিসেবে কুইক রেন্টালের বিদ্যুৎ যাচ্ছে আবাসিকে। ব্যয়বহুল এসব বিদ্যুতের অধিকাংশ আবাসিকে ব্যবহার হওয়ায় অর্থনীতিতে তেমন কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়ার সুযোগ নেই। তার পরও বাধ্য হয়ে কুইক রেন্টালের মেয়াদ বাড়াতে হচ্ছে। মেয়াদ বাড়ানোর ক্ষেত্রে দাম কমানোর দিকে নজর দেয়া উচিত। ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) এক গবেষণায়ও শিল্প খাতে নিজস্ব বা ক্যাপটিভ বিদ্যুৎ ব্যবহারের তথ্য উঠে এসেছে। ইন্ডাস্ট্রি স্পেসিফিক স্টাডি অন সাসটেইনেবিলিটি এনার্জি ফিন্যান্স মার্কেট পোটেনশিয়াল ফর ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক ওই গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের উৎপাদনমুখী বড় শিল্প খাতগুলোয় বিদ্যুতের চাহিদার সিংহভাগ মেটানো হচ্ছে ক্যাপটিভ থেকে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো বস্ত্র, তৈরি পোশাক ও রাসায়নিকদ্রব্য খাত।
প্রতিবেদনের তথ্যানুযায়ী, টেক্সটাইল বা বস্ত্র খাতের স্পিনিং মিলগুলোর ৮০ শতাংশ চাহিদা মেটানো হচ্ছে নিজস্ব উতস থেকে। বাকি ২০ শতাংশ ন্যাশনাল গ্রিডের। উইভিং ও প্রসেসিংয়ের ক্ষেত্রে নিজস্ব বিদ্যুতের ব্যবহার ৭০ ও ন্যাশনাল গ্রিড থেকে ৩০ শতাংশ। তৈরি পোশাকের নিটওয়্যার ও ওভেন কারখানায়ও একই হারে ক্যাপটিভ ও ন্যাশনাল গ্রিডের বিদ্যুৎ ব্যবহার হচ্ছে। কেমিক্যালস খাতে অনুপাতটি হলো ক্যাপটিভ ৮০ ও ন্যাশনাল গ্রিড ২০ শতাংশ। এদিকে, ২০১৮ সালের আগে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। তাই ভাড়াভিত্তিক (রেন্টাল-কুইক রেন্টাল) বিদ্যুতকেন্দ্রের মেয়াদ তিন থেকে পাঁচ বছর বাড়ানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এ হিসাবে ২০১৮ পর্যন্ত চলবে ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। অবশ্য কোনো কোনোটির মেয়াদ ২০২০ পর্যন্তও বাড়ছে। উল্লেখ্য, ১৭টি কুইক রেন্টালের মধ্যে চারটি এগ্রিকো ইন্টারন্যাশনাল ও ওরিয়ন গ্র“পের। এছাড়া শিকদার গ্র“প, বাংলাক্যাট, সিনহা গ্র“প, এনা গ্র“প, ইউনাইটেড গ্র“প, সামিট গ্র“প, খানজাহান আলী পাওয়ার, কেপিসিএল, ডিপিএ পাওয়ার জেনারেশন, ম্যাক্স পাওয়ার ও দেশ এনার্জির একটি করে কুইক রেন্টাল বিদ্যুতকেন্দ্র রয়েছে।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *