হাতীবান্ধা,লালমনিরহাট প্রতিনিধি: লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারীর জনপদ এখন সিলোকোসিস রোগের ঝুঁকিতে রয়েছে। সিলোকোসিস একটি মরণ ব্যাধি। পাথর কারখানার সিলিকন মিশ্রিত ধুলা শরীরে প্রবেশ করে এ রোগের বিস্তার ঘটায়। মূলত পাথর ভাঙ্গার কারখানার বিষাক্ত সিলিকন থেকেই দেখা দিচ্ছে এ ভয়ংকর রোগ। এ রোগে আক্রান্ত হলে রোগীর শ্বাসকষ্ট, কাশি, কাশির সাথে রক্ত, বুকে জাম, শরীর দুর্বল সহ নানা রকম লক্ষন দেখা দেয়। এ রোগে আক্রান্ত হলে রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়না। শুরুতে পাথর শ্রমিকদের মধ্যে এ রোগের প্রাদুভাব দেখা দিলেও বর্তমানে গোটা বুৃড়িমারীর জনপদই রয়েছে ঝুঁকির মুখে। কিন্তু পাথর কারখানাগুলো উচ্ছেদে নেই প্রশাসনিক কিংবা পরিবেশ বিষয়ক অধিদপ্তরের উদ্যোগ। এ ভয়াবহ রোগ থেকে রক্ষা পেতে শ্রমিকদের মুখে মাক্স, চোখে সানগ্লাস, হাতে মোজা, পায়ে জুতা পরিধান করে কাজ করা প্রয়োজন। যা কারখানার মালিকরা সরবরাহ করবে। কিন্তু কারখানার মালিকরা এসব সামগ্রী সরবরাহ না করায় এবং শ্রমিকরা পেটের দায়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করতে গিয়ে এ রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন। এ জনপদে স্বল্পমূল্যে শ্রমিক ও কাঁচামালের সহজ লভ্যতার কারনে অল্প সময়ের মধ্যে গড়ে উঠেছে এসব কারখানা । পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র বাধ্যতামূলক হলেও বুড়িমারীর পাথর কারখানাগুলো এ নিয়ম মানছে না। মহাসড়কের আশে পাশে , শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও রেলস্টেশনে গড়ে উঠেছে এসব পাথর ক্রাসিং কারখানা। জন গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় অবস্থিত এসব কারখানা থেকে আসা ধুলোয় রাস্তা অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে থাকে। এতে পথচারী , শিক্ষার্থী , নারী, শিশুসহ এসব এলাকা সব পেশা-শ্রেণীর লোকজন সিলোকোসিস ঝুঁকিতে থাকলেও কারখানা কর্তৃপক্ষের এ বিষয়ে কোন মাথাব্যাথা নেই। এতে করে শ্রমিক ও পথচারীদের নাক, মুখ দিয়ে ধুলোর মাধ্যমে সিলিকন প্রবেশ করছে দেহের অভ্যন্তরে। এভাবেই সিলোকোসিস রোগ ওই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে। এ পর্যন্ত ৭১ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে এ মরণ ব্যাধিতে। কয়েকশত রোগী আক্রান্ত হয়ে ঢাকা বক্ষব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। দিন দিন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে।
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী গ্রামের সিলোকোসিস রোগে আক্রান্ত এ হয়ে চিকিৎসাধীন পাথর শ্রমিক কামাল হোসেন বলেন, অভাবের তাড়নায় ভিক্টোরী মোজাইক কোম্পানীর শ্রমিক হিসাবে ২০০৩ সালে কাজ শুরু করি। এরপর ২০১০ সালে অসুস্থ্য হয়ে পড়লে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। সেখানকার চিকিৎসক সিলোকোসিস রোগে আক্রান্ত হওয়ার কথা বলে ঢাকা বক্ষব্যাধি হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার জন্য আমাকে পাঠায়। সেখানেই বর্তমানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছেন বলে জানান। তিনি আরও বলেন, প্রথমে ৪৫ দিন , তারপর ২২ দিন এরপর ১৮ দিন ওই বক্ষব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। কিন্তু শরীরের অবস্থা ক্রমান্বয়ে খারাপ হয়ে আসছে।নিজের চিকিৎসা নিতে সর্বশান্ত হলেও ওই কোম্পানী আমার কোন খোঁজ খবর নেইনি। ওই গ্রামের সহিদার রহমানের পুত্র সিলোকোসিস রোগে আক্রান্ত নুরুল আলী একই কথা বলেন। বুড়িমারী হাসর উদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল আলম খন্দকার, সহকারি শিক্ষক সুরাইয়া পারভীন স্মৃতি অত্র বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রোকনুজ্জামান, আব্দুল্যাহ আল নোমান, ফারজানা অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে অবস্থিত মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর এসব পাথর কারখানাগুলো অবিলম্বে উচ্ছেদের দাবী জানান। বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাদ বলেন, নেপাল ও ভূটান থেকে আসা পাথর কাস্টমসের সীমানার মধ্যে পরিবেশ বজায় রেখে ক্রাসিং করার নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে বুড়িমারী কাস্টমসের সহকারি কমিশনার বেনজির আহমেদ বলেন, পাথর কারখানা বিষয়ে আমাদের করণীয় কিছুই নেই। এটা দেখভাল করার দায়িত্ব পরিবেশ অধিদপ্তরের।