দাবি আদায়ে অনড় শিক্ষকরা, অচল বিশ্ববিদ্যালয়
কর্মবিরতিতে অনড় থেকে টানা চতুর্থ দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করেছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোতে সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল পুনর্বহালসহ অন্যান্য দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকে সারা দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এ কর্মবিরতি পালন চলছে। শিক্ষকরা বলছেন, সমস্যার সমাধান নিয়েই তারা ক্লাসে ফিরে যেতে চান। অথচ শিক্ষামন্ত্রীর আশ্বাস ছাড়া এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকরী উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জানান, চতুর্থ দিনের মতো শিক্ষকরা সারা দেশে কর্মবিরতি পালন করেছেন। আমরা আমাদের সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে ক্লাস রুমে ফিরে যেতে চাই। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর পরিস্থিতি অনেকটা ইতিবাচক। সরকারের পক্ষ থেকে এবং আমাদের পক্ষ থেকে কিন্তু সবাই আন্তরিক। সেজন্য আমরা অনেক বেশি আশাবাদী যে অল্প সময়ে মধ্যে সমাধানে পৌঁছাতে পারব।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক জানান, কর্মসূচির অংশ হিসেবে গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা কর্মবিরতি পালন করেন। এ সময় বিভিন্ন বিভাগ ও ইনস্টিটিউটের ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে পূর্বনির্ধারিত সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, শিক্ষকদের এ টানা কর্মবিরতিতে চার দিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হচ্ছে না। ফলে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। সেশনজটের আশঙ্কায় অনিশ্চিত শিক্ষা জীবন কাটাচ্ছেন তারা। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে অনেক শিক্ষার্থীই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শিক্ষকদের বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরে সমালোচনা করছেন। অন্যদিকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো. খবির উদ্দিন বলেন, বেতন কাঠামো ঠিক করে নতুন করে প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত এ আন্দোলন চলবে।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, কর্মবিরতির কারণে জেনেটিকস ইঞ্জিনিংয়রিং অ্যান্ড বায়োটেকনোলজি, ইনফরমেশন সায়েন্স ও রসায়ন বিভাগের মাস্টার্স পরীক্ষাসহ আরও কয়েকটি বিভাগের পরীক্ষা বানচাল হয়ে গেছে। তবে নতুন সেশনের ভর্তি কার্যক্রম চলছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, বৈষম্যমূলক অষ্টম জাতীয় বেতন কাঠামোর প্রতিবাদ ও স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর দাবিতে গতকাল চতুর্থ দিনের মতো এ কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষকরা। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি থাকলেও কোনো বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এতে সেশনজটের আশঙ্কায় এ অবস্থার দ্রæত পরিবর্তন চান সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এর আগে শিক্ষকদের অনির্দিষ্টকালের সর্বাত্মক কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচিতে সমর্থন দিয়েছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ।
চট্টগ্রাম থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, গতকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) এবং চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (চুয়েট) শিক্ষকদের পূর্ণাঙ্গ কর্মবিরতিতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন অব্যাহত আছে। চতুর্থ দিনেও প্রতিষ্ঠান দুটি অচল থাকে। দুই শীর্ষ বিদ্যাপীঠের পুরো ক্যাম্পাসই এখন শিক্ষার্থীশূন্য হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকটি বিভাগের ‘পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত সকল প্রকার ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ’ থাকার নোটিসও দেওয়া হয়েছে। যথারীতি শিক্ষার্থীশূন্য চবির শাটল ট্রেন। চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ড. কাজী খসরুল আলম কুদ্দুসী বলেন, আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনসহ নানা আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। আমরা প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে একটি শুভ উদ্যোগের অপেক্ষায় আছি।
শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, অষ্টম বেতন কাঠামোতে ‘বৈষম্য ও অসঙ্গতি’ নিরসনের দাবিতে লাগাতার কর্মবিরতির চতুর্থ দিনেও অচল ছিল বিশ্ববিদ্যালয়। কর্মবিরতির কারণে বিশ্ববিদ্যালযের কোনো বিভাগে কোনো ক্লাস হয়নি, পরীক্ষাও নিতে দেখা যায়নি কোনো বিভাগে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস চলাচল করলেও ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি ছিল স্বাভাবিক দিনের তুলনায় অনেক কম।
বরিশাল থেকে আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, কর্মবিরতিতে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা হয়নি। কিছু শিক্ষার্থী গতকাল ক্যাম্পাসে এলেও গল্প আর আড্ডায় সময় কাটিয়ে ফিরে গেছেন। শিক্ষকরাও তাদের কক্ষে অসল সময় কাটিয়েছেন। এ কারণে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. জামাল উদ্দিন জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফেডারেশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অবিরাম কর্মবিরতির কারণে কোনো ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া হচ্ছে না।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, লাগাতার কর্মবিরতিতে অচল রয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়। গতকাল বন্ধ ছিল সব বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা। ক্যাম্পাসের একাডেমিক ক্লাস রুমগুলো ছিল তালাবদ্ধ। টানা তিন দিনের কর্মবিরতিতে প্রায় ২০টি চূড়ান্ত পরীক্ষা বাতিল হয়েছে বলে জানিয়েছে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রণ অফিস।
দিনাজপুর প্রতিনিধি জানান, শিক্ষকদের দাবি পূরণে চতুর্থ দিনের মতো কর্মবিরতি পালন করেছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি। হাবিপ্রবির প্রগতিশীল শিক্ষক ফোরামের আহ্বায়ক প্রফেসর মো. মিজানুর রহমান জানান, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শিক্ষকদের এ কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। এদিকে কর্মবিরতির ফলে হাবিপ্রবি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। এতে সেশনজটের আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা।
জামালপুর প্রতিনিধি জানান, সব ক্যাডারের পদোন্নতির সমান সুযোগ ও ক্যাডার-নন ক্যাডার বৈষম্য দূরীকরণসহ বিভিন্ন দাবিতে জামালপুরের সরকারি আশেক মাহমুদ কলেজের শিক্ষকরা শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রেখে কর্মবিরতি পালন করেছেন। এ সময় কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মুজাহিদ বিল্লাহ ফারুকী ও শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক হারুনুর রশিদ বক্তব্য রাখেন।
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি জানান, চতুর্থ দিনের কর্মবিরতিতে কার্যত অচল হয়ে পড়ে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়। সকাল থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় দুটিতে অষ্টম জাতীয় পে-স্কেলে বেতন গ্রেড নিয়ে সৃষ্ট সংকট নিরসনের দাবিতে আন্দোলন করেছেন শিক্ষকরা। প্রশাসনিক ভবনের সামনে দুই ঘণ্টা করে কালো ব্যাজ ধারণ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়। এদিকে ত্রিশালে প্রতিষ্ঠিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও এ কর্মসূচি পালন করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি সোহেল রানা বলেন, দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ আন্দোলন চলবে।