Connect with us

দেশজুড়ে

গ্রাম্য কোন্দলে আবারও উত্তপ্ত নড়াইলের মলি­কপুর, ভাংচুর লুটপাট চলছে, পাল্টাপাল্টি মামলা

Avatar photo

Published

on

Narail Village clash.02উজ্জ্বল রায়, নড়াইল: হত্যা পাল্টা হত্যা আর ভাংচুর-লুটপাটের রাজনীতিতে আবারও উত্তপ্ত নড়াইলের কয়েকটি গ্রাম। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে হত্যা মারামারি আর তার পরবর্তী লুটপাট, নারী নির্যাতন এখানকার নিত্যদিনের ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। এরকম একটি গ্রামের নাম মলিকপুর। প্রায় ২০ বছর ধরে এখানকার দুটি গ্রাম্য দলের সংঘাত আর হানাহানি চলছে। আর এর ফলে নষ্ট হচ্ছে প্রান, ধ্বংস হচ্ছে বাড়িঘর আর লুটপাট হচ্ছে অন্যের সম্পত্তি। লুটপাটের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালাচ্ছে নিরীহ বাসিন্দারা। এছাড়া ও সবচেয়ে বড় যে ক্ষতি হচ্ছে তা হলো এগুলো চলার কারনে এলাকার ছেলেদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে মামলা আর হামলার আশংকায়। জানা যায় গত ০৯ ও ১০ ফেব্রুয়ারি নড়াইলের দাঙ্গা কবলিত মলি­কপুর ইউনিয়নের দোয়া মলি­কপুর, চর মলি­কপুর গ্রাম ঘুরে ভয়ংকর সব তথ্য বেরিয়ে এসেছে। দোয়া মলি­কপুর গ্রামের পুর”ষশূন্য মনিরুজ্জামান মলি­ক এর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল গোয়ালঘরে পড়ে আছে ৪ টি দুধ খাওয়া বাছুর। আর সেই সব বাছুর জড়িয়ে ধরে কাদছেন তার স্ত্রী মাঝবয়সী শাহিনা বেগম। জানালেন শুক্রবার ৬ ফেব্র”য়ারী রাত সাড়ে আটটার দিকে মারামারি হবার পরে রাত সাড়ে এগারোটার দিকে প্রতিপক্ষের অন্ততঃ ১৫ জন লোক দেশীয় অস্ত্র রামদা,সড়কি ছেনি দা নিয়ে তার বাড়িতে হামলা চালায়,তাকে মারধোর করে এবং বাড়ির ভিতর থেকে ডাকাতির মতো সোনা আর টাকা পয়সা লুট করে নিয়ে যায়। এসময় তার গোয়ালে থাকা ৪টি গাভী সহ মোট ৮টি গর” লুট করে নিয়ে যায়। ভয়ে তিনি কাউকে কিছু না বলতে পেরে পরদিন থেকে বাছুুরগুলো জড়িয়ে কাদছেন। দুধ খাওয়া বাছুরগলোকে বাচাতে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেছেন তিনি।
একই রকম ঘটনা ঘটেছে পাশের মন্টু মলি­ক, ওহাব শেখসহ কয়েকটি বাড়িতে। এসব বাড়িতে আবার হামলা চালিয়ে ভাংচুর ও করা হয়েছে। মন্টু মলি­কের স্ত্রী নেহারুল বেগম (৩৮) বাড়িতে একা, স্বামী আর সন্তান মামলার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। গত ৩ দিনে এবাড়িতে কোন রান্না হয়নি,মহিলা নিজেও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন আর এ বাড়ি ও বাড়ি করে কখনও খাচ্ছেন কখনও না খেয়েই দিন পার হয়ে যাচ্ছে দুশ্চিন্তায়। ৬ ফেব্র”য়ারী রাতে তার বাড়িতেই এসেছিলো প্রতিপক্ষের ডাকাতদল, সেরাতে পুরুষেরা কেউ বাড়িতে ছিলেন না এই সুযোগে প্রতিপক্ষের লোকেরা এসে প্রথমে তার ছেলের খোজ করে। তার ঘর খুলে দিতে বলে এসময় নেহারুন কে ঘরের দরজা ভেঙ্গে মারধোর করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আর ডাকাতেরা তার সবকিছু লুট করে নিয়ে যায়।
এরপর খোজ নিয়ে জানা গেল এই গন্ডগোলের কারনে এলাকার অন্ততঃ ৫ জন এস এসসি পরিক্ষার্থী তাদের পরীক্ষা বন্ধ করে দিয়ে মামলার ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। অনেক কষ্টে তাদের সাথে যোগাযোগ করা গেল,একজন মহিলা আমাদের সাথে করে নিয়ে গেলেন একটি নির্জন বাশবাগানের তলে। সেখানে আমাদের দেখে কয়েকটি ছেলে ভয়ে দৌড়ে পালাতে গেলে সাথে থাকা এলাকার মহিলাকে দেখে আশ্বস্ত হয়ে ফিরে এলো। কথা বলে জানা গেল এরা সবাই এবারের এসএসসি পরীক্ষার্থী কয়েকজন আবার এইচ এসসি দেবে সামনে।
এদের একজন হিরন মৃধা (১৭) দোয়া মলি­কপুর গ্রামের হারুন মৃধার ছেলে হিরন লক্ষ্মীপাশা আদর্শ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছিল। বাংলা ২টি পরীক্ষা দেবার পরে সে আর পরীক্ষা দিতে পারছে না। একদিকে প্রতিপক্ষের হামলা আর অন্যদিকে মামলার ভয়, গত ৮ ফেব্রুয়ারী হওয়া একটি মামলায় তার নাম আছে বলে সে জেনেছে। ১০ম শ্রেনীতে পড়াকালীন সময়ে ২০১৫ সালে একটি হত্যা মামলায় সে সাড়ে ৩ মাস জেলহাজত খেটে ডিসেম্বর মাসে জেল থেকে বের হয়েছে এর পর আর নতুন মামলা।
একই রকমভাবে চরমলি­কপুর গ্রামের ওহাব শেখের ছেলে সজল শেখ (১৭) সে ও এবারের এসএসসি পরিক্ষার্থী। স্থানীয় মঙ্গলহাটা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে অন্য সবার মতো সেও পরীক্ষা দিচ্ছিল কিন্তু বাধ সাধলো গ্রাম্য কোন্দল। আর তাতে তার পরীক্ষা শেষ মাত্র দুটি পরীক্ষা দেবার পরে সে আর পরীক্ষা দিতে পারছে না, দিনের বেলা এখানে সেখানে পালিয়ে সময় কাটাচ্ছে আর রাতে দুরের মামাবাড়ি গিয়ে ঘুমায় এভাবে চলছে এই ছাত্রের দিনরাত। হিরনের মতো দশম শ্রেনীতে পড়াকালীন সময়ে সেও সাড়ে তিন মাস বিনাকারনে জেলের ঘানি টেনে এসেছে। গ্রামের বড়দের কল্যানে এখন পর্যন্ত তার নামে ৩টি অমিমাংসিত মামলা ঘাড়ে নিয়ে দিন পার করছে এই মেধাবী ছাত্রটি।
শুধু তাই নয় মারের ভয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে দোয়া মলি­কপুর গ্রামের মন্টু মলি­কের ছেলে বশির মলি­ক (১৭) সেও মলি­কপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএস সি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলো। বর্তমানে সে গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় অবস্থান করছে,তার সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলে জানা গেল সেও দুটো পরীক্ষা দিয়ে হামলা আর পুলিশের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালিয়ে ঢাকা এক আত্মীয়ের বাড়িতে উঠেছে।
একই রকম ভাবে পরীক্ষা না দিতে পারা নাজিম শেখ, সাজ্জাদ শেখ পরীক্ষার হলে না গিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
শুধু এসএসসি পরীক্ষার্থী নয় আতঙ্কে আছে লোহাগড়া সরকারী কলেজের এবারের এইচ এসসি পরীক্ষার্থী শিহাব মৃধা। সে জানালো, প্রতিনিয়ত লুটপাট আর হুমকীর ভয়ে সে বাড়িতে থাকতে পারছে না আর ওদিকে মামলা হবার কারনে পুলিশের ভয়ে বাইরে বের হতে পারছে না। তার কলেজ, পড়ালেখা প্রাইভেট টিউটর সব বাদ দিয়ে অন্যদের মতো সেও এখানে সেখানে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
এলাকার ক্রমাগত মামলা আর কোন্দলের কারনে লেখাপড়া শেষ হয়ে গেছে যশোর উপশহর আলীম মাদ্রাসায় পড়–য়া তরিকুল ইসলামের। মাদ্রসায় আলমি পড়াকালীন সময়ে গত ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হত্যা মামলায় জেলে যায় সে। সাড়ে ৩ মাস জেল খেটে ডিসেম্বর মাসে বের হয়ে আসে, প্রায় ৪ মাস মাদ্রাসায় অনুপন্থিত থাকার কারনে তাকে আর ক্লাস করতে দেয়নি মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। এখন তাকে আবার নতুনভাবে ভর্তি হতে হবে।
এখানেই শেষ নয় গ্রাম্য কোন্দলে বাদ যাচ্ছে না ঢাকায় পড়–য়া ছেলেরাও। চর মলি­কপুর গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিল শেখের ছেলে সাজ্জাদ শেখ সে ঢাকার উত্তরা মডেল ইউনিভার্সিটিতে হিসাব বিজ্ঞানের ৩য় বর্ষের ছাত্র। তার ৩য় বর্ষের পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে এই গন্ডগোল হলে ও মামলা থেকে সেও বাদ পড়েনি। তাকে ও হত্যা চেষ্টা মামলার আসামী করা হয়েছে।
লুটের ভয়ে এলাকার লোকেরা তাদের মালামাল নিয়ে ভিন্ন কোন জায়গায় চলে যাচ্ছে। এ যেন নিজ ভ’মে পরবাসীর মতো অবস্থা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার কয়েকজন অভিযোগে জানান এলাকায় পুলিশের উপস্থিতিতেই এসব ভাংচুর আর লুটপাট হয়েছে।
ঘটনার পর থেকে এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মলি­কপুর চৌরাস্তায় লোহাগড়া থানার এস আই শাহিনের নেতৃত্বে প্রায় ১২ জনের একটি পুলিশ দলকে টহল দিতে দেখা গেল। এস আই শাহীন পুলিশের উপস্থিতিতে ভাংচুর লুটপাটের কথা অস্বীকার করে জানান,বর্তমানে এলাকার পরিস্থিতি সম্পূর্ন স্বাভাবিক আছে।
লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ কামর”জ্জামান জানান,এলাকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আমরা সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে গ্রাম্য দলাদলি বন্ধ করার জন্য আমি স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং ঐ এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করেছি। আশা করছি অচিরেই আমরা এ ঘটনার সমাধান করতে পারবো।
স্থানীয় গ্রাম্য দলাদলির কারনে ছেলে মেয়েদের লেখাপড়া বন্ধ হওয়া প্রসঙ্গে লোহাগড়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মৃতুঞ্জয় কুমার দাস বলেন, এ জাতীয় গ্রাম্য কোন্দলের কারনে কোমলমতি শিশুদের যে কি ক্ষতি হচ্ছে তা উনারা বুঝতে পারছেন না। উনারা তাদের আধিপত্য বিস্তারকেই প্রধান করে দেখছেন। এভাবে চলতে থাকলে এলাকার সকল ছাত্রই মামলায় জড়িয়ে তাদের ভবিষৎ নষ্ট হবে। এলাকায় কিছু দাঙ্গাবাজ তৈরী হবে।
নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার মলি­কপুর ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে কাকামিয়া শেখ পক্ষের সাথে আজিম শেখ পক্ষের গন্ডগোল চলে আসছে প্রায় কুড়ি বছর ধরে। এর জের ধরে গত বছরের ১৪ আগষ্ট রাতে খুন হন দোয়া মলি­কপুর গ্রামের মোহাম্মদ মলি­ক (৬০)। এ সময় থেকে আগের মামলা সহ প্রতিপক্ষের ঘাড়ে নতুনভাবে হত্যামামলা যোগ হয় আর বাড়িঘর ভাংচুর এবং লুটপাট শুর” হয়। সর্বশেষ গত ৬ ফেব্র”য়ারী রাতে প্রতিপক্ষের আঘাতে মারাতœক আহত হয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে খান আলাউদ্দিন (১৬) নামের দশম শ্রেণির এক ছাত্র। এ ঘটনায় মলি­কপুর ইউপি চেয়ারম্যানের ভাই মনির”ল ইসলাম কে আটক করেছে ডিবি পুলিশ।
এঘটনায় একটি হত্যা প্রচেষ্টা মামলা এবং আরো দুটি মামলা হয় লুটপাট ও বাড়িঘর ভাংচুরের। এলাকার সচেতন মানুষের আশংকা এভাবে চলতে থাকলে এই অঞ্চলের মানুষ দিনে দিনে সর্বশ্রান্ত হবে মামলায় আর লেখাপড়া বঞ্চিত হয়ে শিশুরা হয়ে উঠবে দাঙ্গাবাজ।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Highlights

লালমনিরহাটে টাখনুর নিচে প্যান্ট ঝুলে থাকায় বর্বরোচিত হামলা, আহত ৭

Avatar photo

Published

on

লালমনিরহাট প্রতিনিধি:
‘টাখনুর নিচে প্যান্ট ঝুলে আছে কেন?’ এই বিষয় নিয়ে তর্ক জুড়ে দিয়ে লালমনিরহাটে বর্বরোচিত হামলা করা হয়েছে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপর। এতে হেযবুত তওহীদের ৭ সদস্য রক্তাক্ত জখম হয়। তাদের মধ্যে ১ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

শনিবার বেলা ১২টার দিকে লালমনিরহাটের পাটুরিয়া বাজারে উগ্রবাদ, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে সচেতন করে তুলতে গণসংযোগকালে হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপর এই হামলার ঘটনা ঘটে।

সোস্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত একটি ভিডিও ক্লিপে দেখা যায়, দাড়ি টুপি পড়া কয়েকজন লোক, হ্যান্ডবিল হাতে প্রচারকার্যে নিয়োজিত হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপর চড়াও হয়ে তাদের স্থান ত্যাগ করতে বলছে। একজন পাঞ্জাবি টুপি পরিহিত দাড়িওয়ালা ব্যক্তিকে উত্তেজিতভাবে বলতে শোনা যায়, ‘আপনারা কিসের কথা বলেন, ইসলাম কি আলাদা? জবাবে হেযবুত তওহীদের কর্মীকে বলতে শোনা যায়, ‘ইসলাম আলাদা হবে কেন? ইসলামতো আল্লার রসুল (সা.) প্রেরিত এক ইসলামই।’ এরপর পাঞ্জাবি টুপি পরিহিত দাড়িওয়ালা সেই ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘আপনাদের টাখনুর নিচে কাপড় কেন?’ এই বলে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয় প্রচারকর্মীদের।

জবাবে হ্যান্ডবিল হাতে থাকা হেযবুত তওহীদের এক সদস্যকে বলতে শোনা যায় যে, ‘আমরা অন্যায় কিছু করছি না। গায়ে হাত দিচ্ছেন কেন? আমরা কোনো অন্যায় করলে থানায় যান’।

পরমুহূর্তেই পাঞ্জাবি পড়া দাড়িওয়ালা অপর এক ব্যক্তি তাকে ধাক্কা দেয় এবং তাদের সাথে থাকা লোকজনকে লাঠি নিয়ে আসতে বলে। পরক্ষণেই ৪-৫ জন করে কয়েকটি দল লাঠিসোটা, লোহার পাইপসহ দেশীয় অস্ত্র-সস্ত্র নিয়ে অতর্কিত হামলা করে। ভিডিওতে উস্কানি দেওয়া ব্যক্তির হাতে লোহার পাইপ লক্ষ করা যায়। এবং পাইপের মাথা বাঁকানো দেখা যায়। যা দ্বারা বোঝা যায় কাউকে আঘাত করার পর পাইপটি বেঁকে গেছে।

স্থনীয়রা জানায়, হেযবুত তওহীদের লোকেরা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে তাদের প্রচারকার্য চালাচ্ছিল। এসময় কয়েকজন হুজুর এসে তাদের প্রচারকার্যে বাধা দেয়। তাদের সুরত ও লেবাসে চরমোনাই পীরের অনুসারী বলে মনে হয়। ‘টাখনুর নিচে কাপড় ঝুলে আছে কেন?’ এমন প্রশ্ন তুলে তর্ক জুড়ে দেয় তারা। কথায় কথায় ঘটনাস্থলে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে হুজুরদের নির্দেশে একদল লোক হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপর হামলা করে। হামলায় হেযবুত তওহীদের কয়েকজন সদস্য আহত হয়। পরে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে লালমনিরহাট ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে। জানা যায়, আহতদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

লালমনিরহাটের জেলা আমীর একরামুল হক বলেন, চলমান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে শান্তিপূর্ণভাবে আমরা প্রচারকার্য চালাচ্ছিলাম। হঠাৎ পাঞ্জাবি, টুপি পরা কয়েকজন লেবাসধারী লোক এসে আমাদের কাজে বাঁধা দেয়। আমরা তাদের বলি, আমরা কোনো অন্যায় করছি না। আমরা যা করছি প্রশাসনকে জানিয়ে করছি। আমরা যদি কোনো অন্যায় করে থাকি তাহলে আপনি থানায় যান। আপনার আমাদের কাজে বাধা দেবার কোনো রাইট নাই। এই কথা শুনে তারা আরো উত্তেজিত হয়ে ওঠে। পড়নের প্যান্ট টাখনুর নিচে ঝুলে পড়ল কেন? এটা কেমন ইসলাম এসব কথা বলে তাদের আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা লোকেদের লাঠি নিয়ে আসতে বলে। পরক্ষণেই ৪-৫ জনের কয়েকটি দল হেযবুত তওহীদের সদস্যদের উপর হামলা চালায়।

হেযবুত তওহীদের রংপুর বিভাগীয় আমীর মশীউর রহমান বলেন, কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রশাসনকে অবগত করে শান্তিুপূর্ণভাবে জনসংযোগ করছিল হেযবুত তওহীদ। হঠাৎ বিনা উস্কানিতে লেবাসধারী ধর্মান্ধ একটি গোষ্ঠী কর্মসূচিতে বাধা দেয়। ৭জন সদস্যকে তারা বেদম প্রহার করেছে। যাদের মধ্যে একজনের অবস্থা গুরুতর।

লেবাসধারী এই ধর্মব্যবসায়ীরা আসলে চায়না প্রকৃত ইসলামটা মানুষ জানুন। তাহলে তাদের ধর্মব্যবসা, ধর্ম নিয়ে অপরাজনীতি বন্ধ হয়ে যাবে। তাদের মুখোশ খুলে যাবে। সেজন্যই পরিকল্পিতভাবে তারা আমাদের এই জনসংযোগে হামলা করেছে। হামলাকারীদের লেবাস দেখে, পোশাক-আসাক দেখে মনে হচ্ছে তারা চরমোনাই পন্থী। তবে এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি, তথ্য সংগ্রহ চলছে। এ বিষয়ে লালমনিরহাট থানায় মামলা প্রক্রিয়াধীন।

উল্লেখ্য, উগ্রবাদ, ধর্মান্ধতা, ধর্মব্যবসা, অপ-রাজনীতি, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িকতা, হুজুগ, গুজব এবং নারী নির্যাতনসহ সকল প্রকার অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে জনসাধারণকে সচেতন করে তুলতে দেশব্যাপী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে মানবতার কল্যাণে নিবেদিত অরাজনৈতিক আন্দোলন হেযবুত তওহীদ। চলমান কার্যক্রমের অংশ হিসেবে লালমনিরহাটেও গণসংযোগ করে আন্দোলনটির নেতাকর্মীরা। গতকাল শনিবার বেলা ১২টার দিকে লালমনিরহাটের পাটুরিয়া বাজারে ‘বাংলাদেশসহ সমগ্র মানবজাতির সংকট ও পরিত্রাণের পথ’ নামে সচেতনতামূলক একটি হ্যান্ডবিল প্রচার করছিলেন হেযবুত তওহীদের সদস্যরা।

Continue Reading

দেশজুড়ে

বৃহৎ চরাঞ্চলে জাপা সেক্রেটারির একক প্রার্থীতা ঘোষণা

Avatar photo

Published

on

শেরপুর প্রতিনিধি:
শেরপুর জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক মনি সদর-১ আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বৃহৎতর চরাঞ্চলে নিজেকে জাতীয় পার্টির একক প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। এই উপলক্ষে তার গ্রামের বাড়িতে ২৫ আগষ্ট শুক্রবার সকালে চরশেরপুর ইউনিয়নের তালুকপাড়া গ্রামে এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

এসময় স্থানীয় প্রবীণ রাজনীতিবিদ আব্দুর রশিদ বিএসসির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা জাপা সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুল হক মনি। এতে জেলা জাপার সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আশরাফ আলী, যুব সংহতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মুরাদসহ ১৪টি ইউনিয়নের জাপা নেতাকর্মী এবং সর্বসাধারণ মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

জানা যায়, ১৪টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা নিয়ে শেরপুর সদর-১ আসন। এর মধ্যে ৮টি ইউনিয়ন চরাঞ্চল। ইতিহাস রয়েছে চরের মানুষ ঐক্যবদ্দ হয়ে গেলে তাদের কাছ থেকে এমপি আর ছুটানো যায় না। স্থানীয় সাবেক এমপি শাহ রফিকুল বারী চৌধুরী এরশাদের জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। তিনি ১৯৮৬ সালের তৃতীয়, ১৯৮৮ সালের চতুর্থ ও ১৯৯১ সালের পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পরপর তিনবার এরশাদের জাতীয় পার্টির মনোনয়নে শেরপুর-১ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। এরপর তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর জাতীয় পার্টির মনোনয়নে নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। এরপর থেকে অত্র এলাকায় কোন দল থেকেই আর এমপি পায়নি বৃহত্তোর চরবাসী। এখানে বর্তমানে টানা ৫ বারের এমপি ও দুই বারের হুইপ রয়েছেন শেরপুর-১ সদর আসনের জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মো. আতিউর রহমান আতিক এমপি। তাই শেরপুর-১ সদর আসনের বৃহত্তোর চরাঞ্চলের পশ্চিমাঞ্চল হিসেবে পরিচিত বৃহত্তোর চরাঞ্চলের মানুষ একাট্টা হয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনে জাপা থেকে মনিকে মনোনয়ন এবং এমপি হিসেবে দেখতে চায়।

Continue Reading

দেশজুড়ে

শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের বিক্ষোভ-সমাবেশ

Avatar photo

Published

on

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনার উপর ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার প্রতিবাদে শেরপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২১ আগস্ট সোমবার বিকেলে শহরের থানামোড় বঙ্গবন্ধু স্কয়ারে ওই বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে শেরপুর জেলা আওয়ামীলীগ। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুইপ বীর মুক্তিযোদ্ধা আতিউর রহমান আতিক এমপির সভাপতিত্বে বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছানুয়ার হোসেন ছানু, সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট চন্দন কুমার পাল পিপি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর রুমান, পৌর মেয়র গোলাম মোহাম্মদ কিবরিয়া লিটন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম, শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হাসান উৎপল, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শোয়েব হাসান শাকিল ও সাবেক সাধারণ সম্পাদকসহ আরো অনেকেই । সমাবেশটি সঞ্চালনা করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক প্রচার সম্পাদক দেবাশীষ ভট্টাচার্য।সভাপতির বক্তব্যে হুইপ আতিউর রহমান আতিক এমপি বলেন, সেদিনের ওই ন্যাক্কারজনক হামলার মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে হত্যা করে বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূন্য করতে চেয়েছিল। ১৫ আগস্ট, ১৭ আগস্ট ও ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা একই সূত্রে গাঁথা। অথচ বিএনপি এখন তাদের দোসর জামায়াতকে নিয়ে দেশরক্ষার নামে গণতন্ত্রের কথা বলে। বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের ছবক মানায় না। তাদের ষড়যন্ত্র রুখে দিতে দলীয় নেতা-কর্মীসহ সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
বিক্ষোভ সমাবেশে জেলা, উপজেলা ও শহর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের কয়েক হাজার নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।

Continue Reading