রাজধানীতে হেযবুত তওহীদের জনসভায় সন্ত্রাস দমনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান
নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজধানীর বাসাবো বালুর মাঠে শুক্রবার বিকেল ৩ টায় হেযবুত তওহীদের আয়োজনে এক জনসভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সন্ত্রাস দমনে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান জানানো হয়। সভায় অনুষ্ঠানের উদ্বোধক ও মুখ্য আলোচক হিসাবে মূল বক্তব্য তুলে ধরেন হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম।অনুষ্ঠান শুরুর আগেই কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে ওঠে সভাস্থল। মুখ্য আলোচকের দিকনির্দেশনামূলক জ্বালাময়ী বক্তব্যে দর্শক-শ্রোতাগণ মুহুর্মুহু করতালির মাধ্যমে তাদের উচ্ছাস, একাত্মতা প্রকাশ করেন। দুপুর থেকে রাত অবধি দর্শক-শ্রোতারা আলোচকদের বক্তব্য শুনছিলেন অত্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে।
পৃথিবী এখন এক মহাযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে। এর জন্য প্রধানত দায়ী বিশ্বব্যাপী জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদের বিস্তার ও পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলোর লোলুপ দৃষ্টি। আমাদের দেশেও একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করার হীন উদ্দেশ্যে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র চলছে। এই পরিস্থিতিতে দেশকে নিরাপদ রাখতে ষোল কোটি মানুষ সকল প্রকার সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ-ধর্মব্যবসা-অপরাজনীতি এবং সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে, সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হওয়া অপরিহার্য। সে লক্ষ্যেই দেশের জনগণকে সঠিক আদর্শের ভিত্তিতে ধর্মীয় কর্তব্যবোধ এবং দেশপ্রেমের প্রেরণায় উজ্জীবিত করে যাচ্ছে হেযবুত তওহীদ। এরই ধারাবাহিকতায় “বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল রাষ্ট্রে পরিণত করার নানামুখী ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় সন্ত্রাস দমনে জনসম্পৃক্ততার বিকল্প নেই” শীর্ষক এই জনসভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা দক্ষিণের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি লায়ন চিত্তরঞ্জন দাস। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন দৈনিক বজ্রশক্তির প্রকাশক ও সম্পাদক এস এম সামসুল হুদা। অনুষ্ঠানে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন। রাজধানীর সবুজবাগের বাসাবো বালুরমাঠে এ অনুষ্ঠানের মিডিয়া পার্টনার ছিল ‘দৈনিক বজ্রশক্তি’, ‘বাংলাদেশেরপত্র.কম’ ও ‘জেটিভি অনলাইন’।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদে আক্রান্ত বিশ্বের বহু দেশ। আমাদের প্রিয় জন্মভূমি এই বাংলাদেশকে নিয়ে ভেতরে বাইরে গভীর ষড়যন্ত্র চলছে। যদি কোনোভাবে এই দেশকে সন্ত্রাসবাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত করে দেওয়া যায় তবে ষড়যন্ত্রকারী স্বার্থান্বেষীদের উদ্দেশ্য সফল হবে। তাই এই মুহূর্তে করণীয় হলো আগে এই সঙ্কট অনুধাবন করা এবং দেশের আপামর জনগণকে সঙ্কটের বিরুদ্ধে ইস্পাতকঠিন ঐক্যবদ্ধ করা। এ জন্য প্রয়োজন একটি সঠিক আদর্শের। আমাদের প্রিয় জন্মভূমির পবিত্র মাটিকে যাবতীয় সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, সামাজিক অপরাধ ও হানাহানির কবল থেকে রক্ষার জন্য দেশের জনগণকে সেই সঠিক আদর্শের ভিত্তিতে ধর্মীয় কর্তব্যবোধ এবং দেশপ্রেমের প্রেরণায় উজ্জীবিত করতে হবে। বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার নানামুখি ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় জনসম্পৃক্ততার বিকল্প নেই বলেও উল্লেখ করেন তারা।
মুখ্য আলোচকের বক্তব্যে হেযবুত তওহীদের এমাম হোসাইন মোহাম্মদ সেলিম বলেন, সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ হিসাবে আমাদের কিছু দায়িত্ব রয়েছে। পশুর ন্যায় শুধু খাওয়া আর বংশবৃদ্ধি করলে চলবে না। শুধু নিজেকে নিয়ে, নিজের পরিবারকে নিয়ে ভাবলেই চলবে না, আমাদেরকে অবশ্যই সমাজ, রাষ্ট্র ও বিশ্বকে নিয়ে ভাবতে হবে। এ সমাজকে শান্তিময় করার জন্যই আল্লাহ আমাদেরকে তাঁর রুহ থেকে ফুঁকে দিয়ে তাঁর খলিফা হিসাবে এ পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। আমরা যেন ভালো-মন্দ দেখতে পারি, শুনতে পারি অতঃপর চিন্তা করে উত্তম সিদ্ধান্ত নিতে পারি সে জন্যই আল্লাহ আমাদের চোখ, কান ও মস্তিষ্ক দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদেরকে জানতে হবে বর্তমান পৃথিবী মহাযুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে যে জঙ্গিবাদকে ইস্যু করে সেই জঙ্গিবাদের উৎস কোথায়, কারা এর জন্ম দিল, কেন জন্ম দিল। আসলে বিশ্বের পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলোই এই জঙ্গিবাদের জন্ম দিয়েছে। আফগান যুদ্ধের সময় আমেরিকা মুসলমানদেরকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিজেদের পক্ষে কাজে লাগানোর জন্য এই জঙ্গিবাদের সৃষ্টি করে। ধর্মবিশ্বাসী সাধারণ মুসলমানদেরকে ধর্মীয় অপব্যাখ্যা দ্বারা জেহাদের নামে জঙ্গিবাদে আকৃষ্ট করে। সেখান থেকেই বর্তমান জঙ্গিবাদের উদ্ভব এবং বিশ্বব্যাপী তার বিস্তার। এই যে মানুষের ঈমানকে ভুল খাতে প্রবাহিত করে জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটানো হলো এর প্রধান কারণ হলো এই ধর্মবিশ্বাসী মানুষের ইসলাম সম্পর্কে সঠিক আকীদা না থাকা। সাধারণ মানুষ যদি ইসলামের সঠিক আকীদা জানত তবে আর কেউ তাদের ধর্মবিশ্বাসকে ভুল পথে ব্যবহার করতে পারতো না। একটা বিষয় বুঝতে হবে যে, আকীদা বিহীন ঈমানের কোনো দাম নেই আর ঈমান বিহীন আমলেরও কোনো মূল্য নেই। ইসলামের সঠিক আকীদা হলো ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ও সম্যক ধারণা। ইসলাম আসলে কেন এসেছে, এর উদ্দেশ্য কী, রসুলাল্লাহ কেন উম্মতে মোহাম্মদী নামক জাতি গঠন করে গেলেন ইত্যাদি বিষয় আমাদেরকে বুঝতে হবে। ইসলাম শব্দের অর্থ হলো শান্তি। সমগ্র পৃথিবী থেকে সমস্ত অন্যায়, অবিচার, অশান্তি দূর করে ন্যায়, সুবিচার ও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্যই ইসলামের আগমন। ইসলাম অশান্তিপূর্ণ সমাজকে শান্তিপূর্ণ করে। আর ঈমানের মূল বিষয় হলো কলেমা- লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অর্থাৎ ‘আল্লাহর হুকুম ছাড়া অন্য কিছু না মানা’ এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করা এবং আমল হলো সালাহ (নামাজ), যাকাত, হজ্ব, সওম (রোজা) ইত্যাদি এক কথায় সেই সমস্ত কাজ যা মানুষের কল্যাণ করে, সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে তা সবই আমল। কিন্তু নিজের জীবন-সম্পদ উৎসর্গ করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা না করলে কারও আমলই কবুল হবে না। আজ পৃথিবীময় আমল হচ্ছে কিন্তু ইসলাম সম্পর্কে সঠিক আকিদা না থাকার কারণে ইমান ও আমল সবই অর্থহীন হয়ে যাচ্ছে। আসন্ন সঙ্কট থেকে আজ দেশ ও জাতিকে রক্ষা করতে হলে আমাদের সকলকে উদ্যোগী হয়ে ইস্পাতকঠিন ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কারণ এটি একদিকে আমাদের ঈমানী দায়িত্ব অপরদিকে সামাজিক কর্তব্য। আমরা যারা ধর্মে বিশ্বাস করি তাদেরকে বুঝতে হবে মানুষের শান্তির জন্য কাজ করাই হলো প্রধান ইবাদত। কাজেই মানুষ যখন কষ্টে থাকে, সমাজ যখন অন্যায়-অবিচারে পূর্ণ হয়ে যায় তখন প্রধান ঈমানী দায়িত্বই হয়ে পড়ে মানুষের কষ্ট লাঘব করা ও সমাজ থেকে অন্যায়-অবিচার দূর করা। অপরদিকে এই সমাজে বসবাসকারী প্রত্যেকের সামাজিক কর্তব্য হলো সমাজের শান্তি নিশ্চিত করা, ধ্বংসের হাত থেকে সমাজকে বাঁচানো। এই কথা সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে যে, আমার সমাজ, আমার দেশ যদি ধ্বংস হয়ে যায় তবে আমিও বাঁচব না, আমাদের কারোরই কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ঢাকা মহানগর হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি লায়ন চিত্তরঞ্জন দাস বলেন, “ইসলাম শান্তির ধর্ম, সাম্যের ধর্ম, সব মানুষের জন্য ইসলাম এসেছে। আইয়্যামে জাহেলিয়াতের যুগে যে সমাজব্যবস্থাটি ছিল তার বৈশিষ্ট্য ছিল ক্ষমতাবানের শাসন, জোর যার মুল্লুক তার। ইসলাম সেই সমাজকে পরিবর্তিত করে সকল ধর্মের, বর্ণের মানুষের জন্য সমান অধিকার নিশ্চিত করেছিল। তার পরে আবার ব্রিটিশরা সেই জাহেলিয়াতের শাসনের বীজ রোপণ করে এবং শক্তিমানের শাসন কায়েম করে। তারই ধারাবাহিকতায় পাকিস্তানও একই পদ্ধতির চর্চা করে যায়। তারাই সাদ্দামের মতো একজন দুঃসাহসী প্রেসিডেন্ট তৈরি করেছে, আবার তারাই তাকে প্রহসনমূলক বিচারের দ্বারা হত্যা করেছে। এই ব্রিটিশ তথা পশ্চিমাদের দুঃশাসন ও ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আজ হেযবুত তওহীদ কথা বলছে, সেই কথা সর্বত্র বলতে হবে, সবাইকে বলতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আল্লাহ পবিত্র কোর’আনে বলেছেন, লাকুম দীনুকুম ওয়ালিয়া দীন। এটি হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতার মূলনীতি যা বাস্তবায়ন করে গেছেন মোহাম্মদ (দ.)। সনাতন ধর্মগ্রন্থেও আছে দশাবতারের কথা। এর মধ্যে একজন অবতার হবেন যার অনুসারী হবে অগণিত। তিনিই মোহাম্মদ (দ.)। তিনি তার চলার পথে কাঁটা বিছিয়ে রাখত যে বৃদ্ধা তার প্রতিও সদয় ছিলেন। সব ধর্মেই মানবতার শিক্ষা মূল শিক্ষা। সনাতন ধর্মে বলা হচ্ছে, জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর। বৌদ্ধধর্মে বলা হয়, অহিংসা পরম ধর্ম। অথচ আমাদের দেশের তেঁতুল হুজুর নারীদেরকে বলেন তেঁতুল, তাদের দেখলে জিভে জল আসে। তিনি একজন আলেম হয়ে কী করে এমন জঘন্য কথা বলতে পারলেন, তা আমাদের বোধগম্য নয়।
আমাকে যখন আমন্ত্রণ জানানো হয়, আমি ভেবেছিলাম এটি হিযবুত তাহরীরের অনুষ্ঠান। আমি তাদের একটি পোস্টারে লেখা দেখেছিলাম, ইসলামের বৃক্ষ রক্ত চায়। আমি ভাবলাম এরা কীভাবে অনুমতি পেল? পরে আমাকে হেযবুত তওহীদের ছেলেরা তাদের বই-হ্যান্ডবিল দেয়। আমি সেগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়ি। আমি চমৎকৃত হই যে, এটাই তো সঠিক ইসলামের শিক্ষা। এর মধ্যে তো কোনো জঙ্গিবাদ নেই, মওদুদিবাদ নেই। হেযবুত তওহীদ অন্য ধর্মের নারীদেরকে গনিমতের মাল মনে করে না। পাকিস্তান সেনাবাহিনী আমাদের দেশের ত্রিশ লক্ষ মানুষকে শহীদ করেছিল দুই লক্ষ মা বোনকে ধর্ষণ করেছিল ধর্মের নামে। আমি নির্দ্বিধায় বলব, হেযবুত তওহীদের বক্তব্যগুলো যত বেশি প্রচার করা হবে ততই এদেশ থেকে ধর্মের অপব্যবহার দূরীভূত হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে, সবুজবাগ থানা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান শাহরিয়া বলেন, আমাদের দেশে এক শ্রেণির মানুষ রয়েছে যারা ধর্মের দোহাই দিয়ে নানা রকম অপকর্ম করে থাকে, অধর্ম করে থাকে। জামায়াত-হেফাজতের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আপনারা দেখেছেন তারা ইসলামের দোহাই দিয়ে কীভাবে মানুষকে আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে মেরেছে, দেশের সম্পদ ধ্বংস করেছে। একাত্তরে এই জামায়াতরাই অন্য ধর্মের মানুষের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, তাদের হত্যা করেছে ধর্মের নামে। তিনি আরও বলেন, আমরা সন্ত্রাসকে ঘৃণা করি, সর্বরকম সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান। তিনি হেযবুত তওহীদের কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করে বলেন, এই কাজ সীমিত না রেখে বিভিন্ন জায়গায়, বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে মানুষকে বোঝাতে হবে, মানুষকে সচেতন করতে হবে।
ঢাকা দক্ষিণের ৩৯ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আলহাজ্ব ইয়াহিয়া মাহমুদ খোকন বক্তব্যের শুরুতেই হেযবুত তওহীদের এমামের বক্তব্যের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, ‘তাঁর বক্তব্যের পরে আসলে আমাদের আর কিছু বলার থাকে না। তবু তাঁর সুরে সুর মিলিয়েই কিছু কথা বলব।’ হেযবুত তওহীদের কর্মকাণ্ডের সাথে, বক্তব্যের সাথে ঐকমত্য পোষণ করে বলেন, আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে এই সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, ধর্মব্যবসা, অপরাজনীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হবে। কারণ ঐক্য ছাড়া কোনো বড় কাজ সম্ভব নয়। আমরা যতবার ঐক্যবদ্ধ হয়েছি ততবারই বিজয় ছিনিয়ে এনেছি। ১৯৭১ সাথে এদেশের আপামর জনতা বঙ্গবন্ধুর ডাকে সাড়া দিয়ে ঐক্যবদ্ধ হয়েছি তার ফলেই আমাদের স্বাধীনতা। সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই। কাজেই মানুষের জন্য কাজ করাই আসলে আমাদের বড় ইবাদত। এটা সকলকে বুঝতে হবে। এই সমাজে বসবাস করতে হলে স্বার্থপরের মতো থাকা যাবে না, মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। স্বার্থপরের নামাজ নাই, সমাজ নাই, জান্নাত নাই।
৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের নেতা হুমায়ূন কবির ভূইয়া সোহাগ বলেন, আমাদের এই দেশে শত শত বছর ধরে সকল ধর্মের মানুষ সহাবস্থান করছে শান্তিপূর্ণভাবে, তারা নিজ নিজ ধর্ম পালন করে আসছে স্বাধীনভাবে। কিন্তু বর্তমানে জঙ্গিবাদের করাল থাবায় আমাদের এই দেশও আক্রান্ত। তিনি বলেন, সকল ধর্মে মানবতার কথা বলা আছে, আমাদের অনাগত সন্তানদের জন্য আমাদের দেশকে গড়ে তুলতে হবে সেই মানবতার শিক্ষা দিয়ে। উপস্থিত নারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা আপনাদের সন্তানদেরকে ধর্মের প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলুন।
কাজী আরেফ ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মাসুদ আহমেদ বলেন, “১৭ বছর পর কাজী আরেফের হত্যাকারীদের ফাঁসির আদেশ হয়েছে, এজন্য আমি জননেত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। যারা তাকে হত্যা করেছিল, তারাই আজ ধর্মের নামে বাসে আগুন দেয়, তারাই একাত্তর সনে পাকিস্তানের দোসর ছিল। তারা পাকিস্তান আমলেই প্রচার করেছিল যে, বঙ্গবন্ধুকে ভোট দিলে বিবি তালাক হয়ে যাবে। তারাই বাংলাদেশের প্রকৃত ধর্মব্যবসায়ী। তারা প্রচার করে দিয়েছে যে সাঈদীকে নাকি চাঁদে দেখা গেছে। এই কথা বলে তারা দেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। তারা হরকাতুল জেহাদ, জেএমবি ইত্যাদি বহু নামের দলকে ইন্ধন দিয়ে দেশে জঙ্গিবাদী কর্মকাণ্ড করে। হেফাজতের ৫ মে শাপলা চত্ত্বরের সমাবেশটির দ্বারা তারা একটি মৌলবাদী অভ্যূত্থান ঘটাতে চেয়েছিল। হেযবুত তওহীদ যে আদর্শ তুলে ধরছে তা যদি ব্যাপকভাবে প্রচার করা হয় তাহলে মানুষের মনঃস্তত্বে, চেতনায় ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। আমরা মৌলবাদমুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তুলতে পারব। আমি তাদের সকল বক্তব্যের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করছি।”
রাজারবাগ ইউনিট আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম ও ৫নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা ইসমত তাকির বাবুসহ আরও অনেকে বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা দেশবাসীর প্রতি ঐক্যবদ্ধ হবার আহ্বান করে বলেন, ধর্মব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রচারিত ধর্মের অপব্যাখ্যা থেকে বের হয়ে আমাদের ধর্মের প্রকৃত চেতনা দ্বারা জাতিকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। মানুষের ধর্ম হলো মানবতা, সত্য-মিথ্যা, ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য বোঝা, অন্যের দুর্দশা দেখার পর হৃদয়ে দুঃখ অনুভব করা এবং সেটা দূর করার জন্য আপ্রাণ প্রচেষ্টা করা। আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থপর মানুষ কখনোই ধার্মিক বা মো’মেন-মুসলিম হতে পারে না। প্রকৃত মো’মেন হলেন সেই ব্যক্তি যিনি আল্লাহর হুকুমের পরিপন্থী অর্থাৎ যাবতীয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে তার জীবন-সম্পদকে মানবতার কল্যাণে উৎসর্গ করেন। সুতরাং স্বার্থপরের নামাজ নেই, স্বার্থপরের সমাজ নেই, স্বার্থপরের জান্নাত নেই। বর্তমানে আমাদের দেশে যে ষড়যন্ত্র চলছে, দেশ যে সঙ্কটে পতিত হয়েছে তা থেকে দেশকে বাঁচানো আমাদের ঈমানী দায়িত্ব ও সামাজিক কর্তব্য।
অনুষ্ঠানে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ার গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।