Connect with us

ফিচার

আটকে থাকা ড্রাইভিং লাইসেন্স যেভাবে পাবেন

Avatar photo

Published

on

দুই বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর সোমবার ১১ই অক্টোবর থেকে নতুন করে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার কাজ শুরু করছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, সোমবার থেকে এ কাজ শুরু হলেও একজন চালকের লাইসেন্স পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরো কয়েকদিন।

বিআরটিএ’র পরিচালক এবং মুখপাত্র শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বিবিসিকে বলেছেন, ইতিমধ্যে লাইসেন্স ছাপানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে। বিআরটিএ থেকে লাইসেন্স পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন প্রায় সাড়ে ১২ লাখ চালক।

সংস্থাটি বলছে, কারিগরি জটিলতায় তাদের লাইসেন্স ইস্যু করা যায়নি। এই চালকদের অস্থায়ী লাইসেন্স ইস্যু করে আসছিল বিআরটিএ। কিন্তু অস্থায়ী লাইসেন্স নিয়ে বিভিন্ন সময় সড়কে নাজেহাল হবার অভিযোগ করেন অনেক চালক।

যেভাবে লাইসেন্স হাতে পাবেন চালক:
বিআরটিএ’র পরিচালক মি. মাহবুব-ই-রব্বানী বলেছেন, লাইসেন্স ছাপা হলে আবেদনকারী চালককে এসএমএস বা মোবাইল বার্তার মাধ্যমে সংগ্রহের তারিখ জানিয়ে দেয়া হবে। একই সঙ্গে প্রিন্ট হওয়া লাইসেন্স কার্ড প্যাকেজিং করে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জেলা সার্কেল অফিসে পাঠিয়ে দেয়া হবে।

যিনি যে অফিসে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন তিনি সেই অফিস থেকে লাইসেন্স পাবেন। কিন্তু সোমবার থেকেই লাইসেন্স হাতে পাচ্ছেন না কোন আবেদনকারী। মি. মাহবুব-ই-রব্বানী বলেছেন, “এগুলো প্রস্তুত হয়ে বিভিন্ন জেলায় সার্ভিস ডেলিভারি আউটলেটে পৌঁছাতে এবং আবেদনকারীদের হাতে দিতে তিন-চারদিন সময় তো লাগবে।

তবে তিনি বলেন, “আগামী ছয় মাসের মধ্যে পেন্ডিং সব লাইসেন্স দেয়া শেষ করা যাবে।” বাংলাদেশে বিআরটিএ’র ৫৪টি মাঠ পর্যায়ের অফিস রয়েছে, যার অধীনে মোট ৭০টি সার্ভিস ডেলিভারি আউটলেট রয়েছে। এসব সার্ভিস ডেলিভারি আউটলেট থেকেই ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করা হবে।

কেন আটকে ছিল লাইসেন্স দেয়া?
কারিগরি জটিলতার কারণে গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে চালকদের লাইসেন্স – যা কার্যত এক ধরণের ডিজিটাইজড স্মার্ট কার্ড – দেয়া বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে ১২ লাখ ৪৫ হাজার চালক লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন, যারা লিখিত, মৌখিক এবং ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।

বিআরটিএ বলছে, এই আবেদনের সবই পুরনো আবেদন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক অর্থাৎ পাঁচ লাখের মত আবেদন করা হয়েছে ছয় মাস আগে। এরআগে দুই দফায় স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাপার জন্য অন্য দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকার চুক্তি করলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা কাজ সম্পাদনে ব্যর্থ হয়।

সর্বশেষ ২০২১ সালের অগাস্টের শেষে সেনাবাহিনীর অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি বিএমটিএফের সঙ্গে বিআরটিএ নতুন করে চুক্তি স্বাক্ষর করে। এরপর স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড ছাপার কাজ শুরু হয়। বিএমটিএফের কারখানায় দিনে নয় হাজারের বেশি লাইসেন্স ছাপানো হচ্ছে।

তবে নতুন করে যারা ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন করছেন, তাদের ক্ষেত্রে বাড়তি সময় লাগছে না বলে জানিয়েছে বিআরটিএ। তাদের নির্ধারিত তারিখেই বায়োমেট্রিক দিয়ে যথাসময়ে স্মার্ট কার্ড সরবরাহ করা হচ্ছে।কর্মকর্তারা বলেছেন, নতুন লাইসেন্স ছাপানোর কাজ বিএমটিএফ করছে না।

বিএমটিএফ কেবল পেন্ডিং বা আটকে থাকা লাইসেন্স ছাপিয়ে দ্রুত সরবারহের কাজ করছে। ২০১১ সালের নভেম্বর থেকে স্মার্ট লাইসেন্স দেয়া শুরু করে বিআরটিএ।

-BBC Bangla

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফিচার

বাংলাদেশ ছাড়াও যে দেশে সরকারি ভাষা বাংলা

Avatar photo

Published

on

বাংলা আমাদের প্রাণের ভাষা। বাংলা ভাষার জন্য আমাদের রক্ত দিতে হয়েছে। বিশ্বের আর কোন জাতিকে তাদের মুখের বুলির জন্য প্রাণ বলি দিতে হয় নি। তাই এই ভাষা নিয়ে আমাদের অনেক গর্ব। মাতৃভাষার প্রতি বাঙালি জাতির এই আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের বিপুল সংখ্যক মানুষ বাংলায় কথা বলে। এছাড়াও বাংলাদেশ ছাড়াও যে দেশে সরকারি ভাষা তা নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।

তবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, আন্দামান-নিকোবর, মেঘালয় সহ বেশ কিছু অঙ্গরাজ্যের প্রধান ভাষা বাংলা। জনসংখ্যা বিচারে হিন্দির পর ভারতের সবচেয়ে বড় ভাষা হওয়া সত্ত্বেও দেশটিতে সরকারিভাবে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া হয় নি। কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন যে, বিশ্বে এমন একটি দেশ রয়েছে যেখানে বাংলায় কথা বলার মতো লোক খুব একটা নেই, অথচ দেশটিতে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৫ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দেশটির নাম সিয়েরা লিওন। পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলবর্তী একটি দেশ এই সিয়েরা লিওন। ৭১,৭৪০ বার্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে বাস করে প্রায় ৭৬ লাখ মানুষ। ১৬টি ভিন্ন ভিন্ন জাতিসত্ত্বার এই দেশটির ২য় সরকারি ভাষা বাংলা।

২০০২ সালে ভাষা আন্দোলনের সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হয় বাংলাদেশে। আর ওই বছরই সিয়েরা লিওনের সরকার বাংলাকে তাদের সরকারি ভাষার মর্যাদা দেয়। সিয়েরা লিওন ভৌগলিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশের সাথে কোন মিল না থাকলেও তারা বাংলা ভাষাকে আপন করে নিয়েছে। তবে বাংলা ভাষার এই অর্জনের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবহিনীর।

সিয়েরা লিওনে সোনা ও হীরার মতো মূল্যবান খনি থাকলেও এখানকার মানুষজন অত্যন্ত দরিদ্র। ১৯৬১ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে সিয়েরা লিওন স্বাধীনতা লাভ করলেও দেশটির মানুষ শান্তি পায়নি। অভ্যন্তরীণ কলহ, দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্তিরতা লেগেই থাকতো। এতে করে সাধারণ মানুষের মাঝে বাড়তে থাকে ক্ষোভ ও অসন্তোষ। যার ফলে দেশটির স্বাধীনতার ত্রিশ বছরের মাথায় ১৯৯১ সালে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। এই যুদ্ধ আফ্রিকার সবচেয়ে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধগুলোর মধ্যে অন্যতম। যুদ্ধের ফলে দেশিটির ৫০ হাজার মানুষ মারা যায় এবং ৫ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
ওই সময় সিয়েরা লিওনে শান্তি ফেরাতে বিপুল সংখ্যক শান্তি বাহিনী নিয়োগ করে জাতিসংঘ। এই মিশনের বড় একটি অংশজুড়ে ছিল বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সদস্যরা। যুদ্ধ শেষ হওয়া অবধি বাংলাদেশের সর্বমোট ১২ হাজার সেনা সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজ করেন এবং তাদের এই ভূমিকা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়।

তবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সেখানে কেবল যুদ্ধ বা সামরিক ক্ষেত্রেই নয় বরং সামাজিক ও রাজনৈতিক শান্তি শৃঙ্খলা ফেরাতেও অবদান রাখে। এসকল কাজ করতে গিয়ে সাধারণ জনগণের সাথে তাদের গড়ে ওঠে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক। সিয়েরা লিওনে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ৩১টি দেশের সেনাদল কর্মরত ছিল। তবে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি মন জয় করার চেষ্টায় সবসময়ই এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তাই বাংলাদেশ সেনাদলের মাধ্যমে সেখানকার মানুষজন বাংলা ভাষা শিখতে শুরু করে এবং এর পাশাপাশি বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যেরও প্রসার ঘটে। এভাবে ইংরেজি ও আঞ্চলিক ভাষার দেশটিতে বাংলা ভাষা হয়ে ওঠে যোগাযোগের অন্যতম বড় মাধ্যম।

শান্তি কমিশনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০০২ সালে অর্থাৎ প্রায় ১০ বছর পর সিয়েরা লিওনে গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে। দেশটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বন্ধুসুলভ আচরণ ও সম্প্রীতির জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভোলেনি সিয়েরা লিওন। সে বছর ১২ ডিসেম্বর সিয়েরা লিওনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ তেজান কাব্বা বাংলা ভাষাকে দেশটির অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেন।

আমাদের দেশের সেনারা শান্তি কমিশনের সদস্য হয়ে সিয়েরা লিওনে বাঙালি সংস্কৃতি ও ভাষার যে প্রসার ঘটিয়োছিলেন, তা অবশ্য পরবর্তীতে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে। কেননা, দেশটির সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার পথ এখনও ঝাপসা। তাদের হৃদয়ে বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার প্রতি যে আবেগ ও অনন্য সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, তা যেন কমে না আসে সে ব্যাপারে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।

Continue Reading

পটুয়াখালী

দুমকির ভারানি খালের সেতু নয়, যেন মরণ ফাঁদ

Avatar photo

Published

on

দুমকি সংবাদদাতা:
পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার ভারানি খালের উপর নির্মিত সেতুটি অতি পুরানো এবং জরাজীর্ণ হওয়ায় এর স্লিপার ভেঙ্গে মূল অবকাঠামো বেঁকে গিয়ে জনচলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লেবুখালী হাবিবুল্লাহ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ১১শতাধিক শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর প্রতিনিয়ত যাতায়াত করতে হচ্ছে এই সেতুটি দিয়ে।

ভারানি খালের দু’পাশে রয়েছে ৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লেবুখালী সরকারি হাবিবুল্লাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দুটি নূরানী মাদ্রাসা, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, রশি শিল্প এবং খালের পশ্চিম পাড়ে সেতু সংলগ্ন ঐতিহ্যবাহী একটি বাজার রয়েছে, যেটি সপ্তাহে দুই দিন সোম ও শুক্রবার হাট বসে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিসহ কাঁচা বাজার বেচাকেনা করা হয়।

এ ব্যাপারে দুমকি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদ বলেন, সেতুটি অতি পুরানো হওয়ায় ইতোপূর্বে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে উভয় তীরে সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়েছে এবং জনসাধারণ চলাচলে নিষেধ করা হয়েছে।

লেবুখালী সরকারি হাবিবুল্লাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলা প্রশাসনের নিষেধ সত্ত্বেও তার বিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সময় বাঁচানোর জন্য এই সেতু দিয়ে পারাপার হচ্ছে। অতিদ্রুত তম সময়ের মধ্যে সেতুটি সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করার পাশাপাশি নতুন আরেকটি সেতু নির্মাণের জন্য এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি করেন।

এ ব্যাপারে দুমকি উপজেলা প্রকৌশলী আজিজুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে আমরা সেতুটির ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় স্কীম পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Continue Reading

ঠাকুরগাঁও

ঐতিহ্য রক্ষায় ‘ডিজিটাল ঢেঁকি’ উদ্ভাবন করলেন রাণীশংকৈলের ওমর ফারুক

Avatar photo

Published

on

ঠাকুরগাঁও: গ্রামবাংলা থেকে ধীরে ধীরে বিলীন হচ্ছে ঢেঁকি। তবে ঢেঁকির এই ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈলের ভরনিয়া গ্রামের এক যুবক ওমর ফারুক নিজ বাড়িতে গড়ে তুলেছেন আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি ডিজিটাল ঢেঁকি।

বর্তমান প্রযুক্তি ও আধুনিকতার যুগে ঢেঁকির মাধ্যমে ধান থেকে চাল তৈরি করা প্রায় বিলুপ্তির পথে। তারপরও প্রাচীন এ ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে নতুন রূপে আধুনিক পদ্ধতিতে তৈরি হচ্ছে ঢেঁকি ছাটা চাল। এই ঢেঁকি ছাটা চাল বেশ সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ায় সারা ফেলেছে এলাকায়। এ পদ্ধতির মাধ্যমে অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাও করছেন ওমর ফারুক

তার স্বপ্ন ছিল পড়ালেখা শেষ করে চাকরি না করে নিজের মাধ্যমে অন্যের কর্মসংস্থান তৈরি করার। সে লক্ষ্য থেকেই নিজস্ব চিন্তা-চেতনায় আধুনিক পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ ও মটরের মাধ্যমে গত ৯ মাস আগে স্থাপন করেন ‘ডিজিটাল ঢেঁকি’।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের দেহট বিন্নাকুড়ি গ্রামে আবুল হোসেনের ছেলে ওমর ফারুক বিলুপ্তপ্রায় প্রাচীন ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে নতুন রূপে ও আধুনিক পদ্ধতিতে ঢেঁকি ব্যবহার করে চাল প্রস্তুত করছেন। তিনি ঢেঁকিতে যান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করে ধান ভেঙে চাল তৈরি করে রংপুর সহ সারাদেশে বাজারজাত করেছেন।

প্রাচীন ঢেঁকিতে ধানের তুষ ছাড়িয়ে চাল বের করা খুব কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ। তবে ওমর ফারুকের তৈরি করা আধুনিক পদ্ধতির ঢেঁকিতে ধান ভানা খুবই সহজ। এতে কম সময়ে বেশি পরিমাণ চাল বের করা যায়।

প্রাচীন ঢেঁকিতে ধান থেকে চাল বের করতে ঢেঁকির একপ্রান্তে পা দিয়ে পালাক্রমে চাপ প্রয়োগ করে বা পাড় দিয়ে। এই ঢেঁকি বিদ্যুৎচালিত মোটর দিয়ে চলে। এটিতে ব্যবহার করা হয়েছে লোহার হাতল। হাতল দিয়ে পালাক্রমে চাপ দিয়ে ধানের তুষ ছাড়িয়ে চাল বের করা হচ্ছে স্বল্প সময়ে। এতে সময় ও শ্রম দুটোই খরচ হচ্ছে কম।

নিজ উদ্যোগে নিজের অর্থায়নে নিজ স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে মোটর বসিয়ে আধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে প্রত্যন্ত এ অঞ্চলে বিলুপ্তপ্রায় ঢেঁকিকে আধুনিকায়ন করে আলোচনার ঝড় তুলেছেন ওমর ফারুক।

কৃষকের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করে মধ্যযুগীয় পদ্ধতিতে বড় পাতিলে ধান ঢেলে চুলাতে খড়ির মাধ্যমে জ্বাল দিয়ে ধান সিদ্ধ করা হয় এখানে। আবার সেই ধান শুকিয়ে ঢেঁকির মাধ্যমে ভেঙে প্রস্তুত করা হচ্ছে চাল। এই চালের ফাইবার নষ্ট না হওয়ায় ও পুষ্টিসমৃদ্ধ এবং স্বাস্থ্যসম্মত হওয়ার কারণে ওমর ফারুকের ডিজিটাল ঢেঁকির চালের চাহিদা বেড়েছে ব্যাপক।

সহজেই এই ঢেঁকির মাধ্যমে দিনে পাঁচ থেকে ছয় মণ ধান ভাঙতে পারেন বলে শ্রমিক ও মেশিন অপারেটর মানিরুল ইসলাম জানান। স্থানীয় মেম্বার কাবুল হোসেন এবং ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক জানান, বর্তমানে বাজারে যে চাল পাওয়া যায়, তাতে অনেক কেমিক্যাল যুক্ত থাকে। তাই অসুখ বেশি হচ্ছে। কিন্তু ঢেঁকি দিয়ে তৈরি চাল খেলে অসুখ থেকে বাঁচব। তাই এ চালের চাহিদা বাড়বে।

পুষ্টিবিজ্ঞানীদের মতে, ঢেঁকি দিয়ে ভাঙা চালের পুষ্টিগুণ অনেক বেশি। মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়তে থাকায় এখন শহরে ক্রমশ তার কদর বাড়ছে। অথচ জোগান তেমন নেই।

বর্তমানে স্বল্প পরিসরে হলেও ওমর ফারুকের ডিজিটাল ঢেঁকিতে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন অনেকে। প্রযুক্তিগত বা কারিগরি সহায়তা পেলে বৃহদাকার করে গ্রামীণ জনগণের কর্মসংস্থান করতে পারবেন বলে জানান ওমর ফারুক মাসুদ ও তার বাবা আবুল মাস্টার।

ওমর ফারুকের বাবা আবুল হোসেন মাস্টার বলেন, এটি করাতে এলাকায় বেশ আলোচনা হচ্ছে। আমরা নিয়মিত ভাবে রংপুরে অবস্হিত ‘দিনাজপুর চাউল ঘর’ সার্কিট হাউসের সামনে ডিসি মোড়ে এ চাল বিক্রি করছি। এছাড়াও আমাদের ফেইসবুকে “গাঁয়ের চাউল-ঢেঁকি ছাটা” নামে একটি পেজ রয়েছে। এখানে সারাদেশ থেকে চালের সকল অর্ডার হয় অনলাইন। যারা যেখান থেকে অর্ডার করেন আমরা কুরিয়ারের মাধ্যমে তাদের কাছে চাউল পাঠিয়ে দেই। তবে ব্যাপক আকারে এটিকে আরো বড় করার জন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রত্যাশা করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল সুলতান জুলকারনাইন কবির স্টিভ বলেন, এরই মধ্যে ঢেঁকির বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি। নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার ব্যাপারে আমার সার্বিক সহযোগিতা থাকবে। বিভিন্ন অটোরাইস ও হাস্কিং মিল হওয়ায় গ্রামবাংলা থেকে ঢেঁকি উঠে গেছে প্রায়। ওমর ফারুক তার নিজস্ব পরিকল্পনা ও প্রযুুক্তি ব্যবহার করে ঢেঁকিকে আবার জনপ্রিয় করে তুলেছেন।

আনোয়ার হোসেন আকাশ/শাহাদৎ হোসেন/বিডিপি

Continue Reading