কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে ৩৬ কোটি টাকার টেন্ডারে ঘাপলা
নিজস্ব প্রতিবেদক, কুড়িগ্রাম: কুড়িগ্রামে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের আওতায় কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার ৩০টি কলেজের ৩৬ কোটি টাকার নির্মান কাজের টেন্ডারে ব্যাপক ঘাপলা ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এই টেন্ডারে সরকার প্রায় চার কোটি টাকার রাজস্ব হারাতে বসেছে। নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমানের সহতায়তায় একটি সিন্ডিকেট ওই কাজগুলি ভাগাভাগি করে নেয়ায় সাধারণ ঠিকাদারদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। এমতাবস্থায় কুড়িগ্রামে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের ক্ষুব্ধ ঠিকাদাররা অনিয়মের মাধ্যমে সম্পন্ন ৩৬ কোটি টাকার টেন্ডার বাতিল এবং নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমানের অপসারণ চেয়ে উদ্ধর্তন মহলের কাছে লিখিত অভিযোগ করেছে।
কুড়িগ্রামে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরটি অনেক আগেই সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি হয়ে পড়েছে। এ অধিদপ্তরের সব টেন্ডার গোপন করে সিন্ডিকেটের লোকজন কাজ ভাগাভাগি করে নেয়। আর এই সিন্ডিকেটকে পৃষ্ঠপোষকতা করছেন নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমান। তিনি টানা ৬ বছর ধরে কুড়িগ্রাম শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে নির্বাহী প্রকৌশলীর দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ইতোমধ্যে তার দু/তিন বার বদলীর আদেশ আসলেও তিনি অর্থের জোরে সেই বদলী আদেশ বাতিল করেছেন মর্মে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ব্যাপক তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে- ইতোপুর্বে কুড়িগ্রাম এবং লালমনিরহাট জেলার স্কুল ও কলেজের ভবন নির্মান এবং ২য় তলা উর্ধ্বমুখীকরণের নির্মান কাজে নিম্নমানের রড, সিমেন্ট, বালু ও ইট ব্যবহার করা হয়েছে। এছাড়াও নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে কম নির্মান সামগ্রী ব্যবহার করার ফলে নির্মানাধীন ওই ভবনগুলি এখন অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। সর্বশেষ কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার ৩০টি কলেজের ৩৬ কোটি টাকার টেন্ডার ভাগাভাগি করা নেয়ার ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়েছে। অন্যান্য জেলায় এলটিএম পদ্ধতি অনুসরণ করে ৫ভাগ কম দরে টেন্ডার করার নিয়ম থাকলেও এখানে করা হচ্ছে ওটিএম পদ্ধতিতে টেন্ডার। সেই সাথে জুরে দেয়া হচ্ছে নিত্যনতুন শর্ত। এসবের মাধ্যমে টেন্ডার সিন্ডিকেট এখন কুড়িগ্রাম শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে শক্তভীত গেড়ে বসেছে। এই গড়ে উঠা টেন্ডার সিন্ডিকেটকে ভেঙ্গে দেয়ার জন্য সাধারণ ঠিকাদাররা ফুঁসে উঠায় পরিস্থিতি ক্রমাগত জটিলতার দিকে এগুচ্ছে। অবস্থার বেগতিক দেখে নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান এখন সিন্ডিকেটের পালিত সন্ত্রাসী দ্বারা বেষ্টিত থাকছেন। এদিকে ওটিএম পদ্ধতিতে টেন্ডার করায় সরকার প্রায় চার কোটি টাকার রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে। অথচ এলটিএম পদ্ধতিতে টেন্ডার করলে একদিকে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়তো, অন্যদিকে সাধারণ ঠিকাদাররা নির্বিঘ্নে শত শত সিডিউল ক্রয় করে টেন্ডারে অংশ নিতে পারতো। কিন্তু নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান এসব নিয়ম-কানুন তোয়াক্কা না করে তিনি সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ না দিয়ে উচ্চ দরদাতাকে কাজ দেয়ার মাধ্যমে সরকারের বিপুল অংকের রাজস্ব ক্ষতিগ্রস্থ করেছেন।
অভিযোগ রয়েছে- কুড়িগ্রাম শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমান উচ্চহারে কমিশন নিয়ে ঠিকাদার ফরিদ উদ্দিনসহ স্থানীয় ৩/৪ জন ঠিকাদারের নামে সকল ঠিকাদারী কাজ দিচ্ছেন। এই অনিয়ম করতে গিয়ে তিনি গোপনে টেন্ডার বাক্সে টেন্ডার ফেলছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও যাদেরকে কাজ দিচ্ছেন তাদের সাথে তিনি শেয়ারে ব্যবসা করছেন। তার এ জাতীয় আরো বহুবিধ অনিয়ম-দুর্নীতি’র ঘটনা ফাঁস হয়ে পড়ায় ঠিকাদার মহলে ক্ষোভের সঞ্চার হচ্ছে। এ নিয়ে যেকোন মহুর্তে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে বলে তীব্র আশংকা রয়েছে।
এব্যাপারে কুড়িগ্রাম শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মিজানুর রহমানের সাথে কথা হলে তিনি দাম্ভিকতার সাথে বলেন- কারো যদি কিছু করার থাকে তাহলে তারা করে দেখান। আমি আমার গতিতেই চলবো। উপর মহল আমার উপর সু দৃষ্টি রাখার কারণে আমি এখানে ৬ বছর ধরে আছি। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে কোন লাভ হবে না।