বিশেষ নিবন্ধ
ধর্ম কী? -রাকীব আল হাসান
সন্তান যদি মায়ের কাছ থেকে অনেক দূরেও থাকে তবু তার বিপদ হলে মায়ের মন ছটফট করতে থাকে। ছেলে-মেয়ে অসুস্থ হলে বাবা-মায়ের সারারাত ঘুম আসে না, বাবা ছুটাছুটি করতে থাকেন ছেলেকে সুস্থ করার প্রচেষ্টায়, মা সারারাত জেগে সন্তানের সেবা-সুশ্রুষা করেন। এর কারণ হলো সন্তানের সাথে মা-বাবার আত্মা এক অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা থাকে।
এই যে সন্তানের জন্য মায়ের আত্মার টান, সন্তানের কষ্টে মায়ের মন অশান্ত হওয়া, সন্তানের সুখে নিজেও আনন্দিত হওয়া- এটা হলো তার মাতৃধর্ম। একইভাবে সন্তানের জন্য পিতার যে অনুভূতি তা হলো পিতৃধর্ম। আর সন্তান যখন কষ্টে থাকে তখন তার কষ্ট দূর করার যে প্রচেষ্টা তা হলো পিতা-মতার (ঐ ধর্মের) ইবাদত বা কর্তব্য। একইভাবে সন্তান হিসাবে পিতা-মাতার প্রতি যে কর্তব্য তা সন্তানের জন্যও ইবাদত।
প্রতিটা মানুষের মধ্যে আল্লাহর রূহ রয়েছে, এ কারণে প্রতিটা মানুষের সাথে প্রতিটা মানুষের আত্মাও এক অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা থাকে। যখন পৃথিবীর অপর প্রান্তে একটা মানুষ কষ্টে থাকবে তখন এ প্রান্তে বসবাসকারী মানুষের আত্মাও কষ্ট অনুভব করবে আর তার কষ্ট দূর করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করবে- এটাই হলো মনুষ্য ধর্ম। মানুষের মধ্যে যখন এই ধর্মটি পূর্ণরূপে জাগ্রত থাকে তখন সমাজ শান্তিতে পূর্ণ হয়ে যায়, এই শান্তিপূর্ণ সমাজই হলো ইসলামী সমাজ। যুগে যুগে সকল ধর্মের নামই ইসলাম ছিল আর ধর্মগুলোর মূল লক্ষ্যই ছিল মানুষের এই মনুষ্য ধর্মকে জাগ্রত করে সমাজকে শান্তিপূর্ণ করা।
উদ্দেশ্য পূরণের প্রক্রিয়া কেবল স্থান-কাল-পাত্র ভেদে ভিন্ন ভিন্ন হয়েছে। কিন্তু সব ধর্মের লক্ষ্য একটিই- সমাজকে শান্তিপূর্ণ করা, মানুষের মনুষ্য ধর্মকে জাগ্রত করা। এজন্যই ধর্মের প্রকৃত অর্থ হচ্ছে- গুণ, বৈশিষ্ট, চরিত্র। যে গুণ, বৈশিষ্ট ধারণ করলে কোনো বস্তুর স্বকীয়তা বজায় থাকে সেটিই হলো তার ধর্ম। আগুনের ধর্ম পোড়ানো, চুম্বকের ধর্ম আকর্ষণ করা ঠিক একইভাবে মানুষের প্রকৃত ধর্ম হলো অন্য মানুষের দুঃখ, কষ্ট হৃদয়ে ধারণ করা অর্থাৎ মানবতা। এজন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত সকল দীনের উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানুষের শান্তি (ইসলাম)।
আজকে ধর্মগুলোর মূল লক্ষ্য পাল্টে গেছে। কিছু প্রথা আর আনুষ্ঠানিকতায় বাঁধা পড়েছে ধর্মগুলো। মনে করা হচ্ছে ধর্ম দুনিয়ার কোনো বিষয় নয়, বরং মৃত্যুর পরের জীবনের মুক্তির পন্থা। এ কারণে মানবসমাজ আজ অন্যায়-অবিচার, যুলুম-নির্যাতনে পরিপূর্ণ, শোষিত-বঞ্চিত জনতা ত্রাহী সুরে চিৎকার করছে, নিরপরাধ শিশু, অসহায় নারীর হৃদয়বিদারী চিৎকারে আকাশ-বাতাশ প্রকম্পিত হচ্ছে তবু আমাদের সমাজের ধার্মিকরা ব্যস্ত আছে কেবল সওয়াব কামানোর নেশায়, নিজেরা-নিজেরা দ্বন্দ্ব-কলহে লিপ্ত আছে কেবল ধর্মীয় প্রথা-অনুষ্ঠানের মতপার্থক্য নিয়ে, শরীয়তের সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ নিয়ে।
যতদিন মানুষ ধর্মের প্রকৃত উদ্দেশ্য না জানতে পারবে ততদিন তাদের মধ্যে বিরাজিত বিরোধ মিটিয়ে সত্যিকারের ইসলামী সমাজ তথা শান্তিপূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা চালানো সম্ভব হবে না। বিডিপি/আমিরুল