Connect with us

ফিচার

বাংলাদেশের ৬৪ জেলার নামকরণের ইতিহাস

Avatar photo

Published

on

বাংলাদেশ ৭টি বিভাগে ভাগ করে ৬৪টি জেলা রয়েছে। আর এই ৬৪ জেলার প্রত্যেকটি জেলার নামকরণেরয়েছে ইতিহাস। কোন জেলা কি কারণে নামকরণ করা হয়েছে তা হয়তো আমাদের অনেকেরই অজানা।তাই আমাদের এবারের আয়োজন ৬৪ টি জেলার নামকরণের ইতিহাস।

বাংলাদেশে মোট বিভাগ  ৭ টি। নিম্নে বিভাগ অনুযায়ী প্রত্যেক জেলার নামকরণের ইতিহাস তুলে ধরা হল।

(ক) ঢাকা বিভাগ
(খ) চট্টগ্রাম বিভাগ
(গ) খুলনা বিভাগ
(গ) রাজশাহী বিভাগ
(ঘ) বরিশাল বিভাগ
(ঙ) রংপুর বিভাগ ও
(চ) সিলেট বিভাগ।

(ক) ঢাকা বিভাগ:

১. ঢাকা জেলা:
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা মোঘল-পূর্ব যুগে কিছু গুরুত্বধারন করলেও শহরটি ইতিহাসে প্রসিদ্ধি লাভকরে মোঘল যুগে। ঢাকা নামের উৎপত্তি সম্পর্কে স্পষ্ট করে তেমন কিছু জানা যায় না। এ সম্পর্কে প্রচলিতমতগুলোর মধ্যে কয়েকটি নিম্নরূপ:

ক) একসময় এ অঞ্চলে প্রচুর ঢাক গাছ (বুটি ফুডোসা) ছিল; খ) রাজধানী উদ্বোধনের দিনে ইসলাম খানেরনির্দেশে এখানে ঢাক অর্থাৎ ড্রাম বাজানো হয়েছিল; গ) ‘ঢাকাভাষা’ নামে একটি প্রাকৃত ভাষা এখানেপ্রচলিত ছিল; ঘ) রাজতরঙ্গিণী-তে ঢাক্কা শব্দটি ‘পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র’ হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে অথবাএলাহাবাদ শিলালিপিতে উল্লেখিত সমুদ্রগুপ্তের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ডবাকই হলো ঢাকা।

কথিত আছে যে, সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভ্রমণকালে সন্নিহিতজঙ্গলে হিন্দু দেবী দুর্গার বিগ্রহ খুঁজে পান। দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ রাজা বল্লাল সেন ঐ এলাকায় একটিমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। যেহেতু দেবীর বিগ্রহ ঢাকা বা গুপ্ত অবস্থায় পাওয়া গিয়েছিল তাই রাজা মন্দিরেরনাম ঢাকেশ্বরী মন্দির। মন্দিরের নাম থেকেই কালক্রমে স্থানটির নাম ঢাকা হিসেবে গড়ে ওঠে।আবারঅনেক ঐতিহাসিকদের মতে, মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর যখন ঢাকাকে সুবা বাংলার রাজধানী হিসেবে ঘোষণাকরেন, তখন সুবাদার ইসলাম খান আনন্দের বহিঃপ্রকাশ স্বরূপ শহরে ‘ঢাক’ বাজানোর নির্দেশ দেন। এইঢাক বাজানোর কাহিনী লোকমুখে কিংবদন্দির রূপ ধারণ করে এবং তা থেকেই এই শহরের নাম ঢাকা হয়েযায়। এখানে উল্লেখ্য যে, ১৬১০ খ্রিষ্টাব্দে ইসলাম খান চিশতি সুবাহ বাংলার রাজধানী রাজমহল থেকেঢাকায় স্থানান্তর করেন এবং সম্রাটের নামানুসারে এর নামকরণ করে জাহাঙ্গীরনগর।

২. ফরিদপুর জেলা:
ফরিদপুরের নামকরণ করা হয়েছে এখানকার প্রখ্যাত সুফী সাধক শাহ শেখ ফরিদুদ্দিনের নামানুসারে।

৩. মাদারীপুর জেলা:
মাদারীপুর জেলা একটি ঐতিহাসিক সমৃদ্ধ জনপদ ছিল। পঞ্চদশ শতাব্দীতে সাধক হযরত বদরুদ্দিন শাহমাদার (র) এর নামানুসারে এই জেলার নামকরণ করা হয়। প্রাচীনকালে মাদারীপুরের নাম ছিল ইদিলপুর।১৯৮৪ সালে মাদারীপুর জেলা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।

৪. গোপালগঞ্জ জেলা:
গোপালগঞ্জ জেলা শহরের রয়েছে প্রাচীন ইতিহাস। অতীতের রাজগঞ্জ বাজার আজকের জেলা শহরগোপালগঞ্জ। আজ থেকে প্রায় শতাব্দীকাল পূর্বে শহর বলতে যা বুঝায় তার কিছুই এখানে ছিলোনা। এরপরিচিতি ছিলো শুধু একটি ছোট্ট বাজার হিসেবে। এঅঞ্চলটি মাকিমপুর ষ্টেটের জমিদার রানী রাসমণিরএলাকাধীন ছিলো। উল্লেখ্য রানী রাসমণি একজন জেলের মেয়ে ছিলেন। সিপাই মিউটিনির সময় তিনিএকজন উচ্চ পদস্থ ইংরেজ সাহেবের প্রাণ রক্ষা করেন। পরবর্তীতে তারই পুরস্কার হিসাবে বৃটিশ সরকাররাসমণিরকে মাকিমপুর ষ্টেটের জমিদারী প্রদার করেন এবং তাঁকে রানী উপাধিতে ভূষিত করেন। রানীরাসমণির এক নাতির নাম ছিলো নব-গোপাল তিনি তাঁর স্নেহাস্পদ নাতির নাম এবং পুরানো ইতিহাসকেস্মরণীয় করে রাখার জন্য নাতিন নামের ‘গোপাল’ অংশটি প্রথমে রেখে তার সাথে রাজগঞ্জের ‘গঞ্জ’ যোগকরে এ জাযগাটির নতুর নামকরণ করেন গোপালগঞ্জ। ১৯৮৪ সালে ফরিদপুর জেলার মহকুমা থেকেগোপালগঞ্জ জেলা সৃষ্টি হয়।

৫. জামালপুর জেলা:

সাধক দরবেশ হযরত শাহ জামাল (র) এর পূণ্যস্মৃতি বিজড়িত নয়নাভিরাম সৌন্দর্যমন্ডিত গরো পাহাড়েরপাদদেশে যমুনা-ব্রক্ষ্মপুত্র বিধৌত বাংলাদেশের ২০-তম জেলা জামালপুর। হযরত শাহ জামাল (র) এরনামানুসারে জামালপুরের নামকরণ হয়।

৬. কিশোরগঞ্জ জেলা:
১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে কিশোরগঞ্জ মহকুমার জন্ম হয়। মহকুমার প্রথম প্রশাসক ছিলেন মিঃ বকসেল। বর্তমানকিশোরগঞ্জ তৎকালীন জোয়ার হোসেনপুর পরগনার অন্তর্ভক্ত ছিল। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ দিকেওকিশোরগঞ্জ এলাকা ‘কাটখালী’ নামে পরিচিত ছিল। ইতিহাসবিদদের ধারণা ও জনশ্রুতি মতে এ জেলারজমিদার ব্রজকিশোর মতান্তরে নন্দকিশোর প্রামানিকের ‘কিশোর’ এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত হাট বা গঞ্জের ‘গঞ্জ’যোগ করে কিশোরগঞ্জ নামকরণ করা হয়।

৭. গাজীপুর জেলা:
বিলু কবীরের লেখা ‘বাংলাদেশের জেলা : নামকরণের ইতিহাস’ বই থেকে জানা যায়, মহম্মদ বিনতুঘলকের শাসনকালে জনৈক মুসলিম কুস্তিগির গাজী এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছিলেন এবং তিনিবহুদিন সাফল্যের সঙ্গে এ অঞ্চল শাসন করেছিলেন। এ কুস্তিগির/পাহলোয়ান গাজীর নামানুসারেই এঅঞ্চলের নাম রাখা হয় গাজীপুর বলে লোকশ্রুতি রয়েছে। আরেকটি জনশ্রুতি এ রকম সম্রাট আকবরেরসময় চব্বিশ পরগনার জায়গিরদার ছিলেন ঈশা খাঁ। এই ঈশা খাঁরই একজন অনুসারীর ছেলের নাম ছিলফজল গাজী। যিনি ছিলেন ভাওয়াল রাজ্যের প্রথম ‘প্রধান’। তারই নাম বা নামের সঙ্গে যুক্ত ‘গাজী’ পদবিথেকে এ অঞ্চলের নাম রাখা হয় গাজীপুর। গাজীপুর নামের আগে এ অঞ্চলের নাম ছিল জয়দেবপুর। এজয়দেবপুর নামটি কেন হলো, কতদিন থাকল, কখন, কেন সেটা আর থাকল না সেটিও প্রাসঙ্গিক ওজ্ঞাতব্য। ভাওয়ালের জমিদার ছিলেন জয়দেব নারায়ণ রায় চৌধুরী। বসবাস করার জন্য এ জয়দেবনারায়ণ রায় চৌধুরী পীরাবাড়ি গ্রামে একটি গৃহ নির্মাণ করেছিলেন। গ্রামটি ছিল চিলাই নদীর দক্ষিণপাড়ে। এ সময় ওই জমিদার নিজের নামের সঙ্গে মিল রেখে এ অঞ্চলটির নাম রাখেন ‘জয়দেবপুর’ এবং এনামই বহাল ছিল মহকুমা হওয়ার আগ পর্যন্ত। যখন জয়দেবপুরকে মহকুমায় উন্নত করা হয়, তখনই এরনাম পাল্টে জয়দেবপুর রাখা হয়। উল্লেখ্য, এখনো অতীতকাতর-ঐতিহ্যমুখী স্থানীয়দের অনেকেই জেলাকে‘জয়দেবপুর’ বলেই উল্লেখ করে থাকেন। গাজীপুর সদরের রেলওয়ে স্টেশনের নাম এখনো ‘জয়দেবপুররেলওয়ে স্টেশন’। তবে বিস্তারিত আলোচনায় গেলে বলতেই হয়, গাজীপুরের আগের নাম জয়দেবপুর এবংতারও আগের নাম ভাওয়াল। গাজীপুরকে ১৯৮৪খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চ জেলা এবং ২০১৩ খ্রিস্টাব্দের ৭জানুয়ারী রোজ: সোমবার সিটি কর্পোরেশন ঘোষণা করা হয়।

৮. মানিকগঞ্জ জেলা:
মূরত সংস্কৃত ‘মানিক্য’ শব্দ থেকে মানিক শব্দটি এসেছে। মানিক হচ্ছে চুনি পদ্মরাগ। গঞ্জ শব্দটি ফরাসী।মানিকগঞ্জের নামের ঋৎপত্তি ইতিহাস আজও রহস্যবৃত। অষ্টাদশ শতকের প্রথমার্ধে সুফি দরবেশ মানিকশাহ সিংগাইর উপজেলার মানিকনগরে আসেন এবং খানকা প্রতিষ্ঠা করে ইসলাম ধর্ম প্রচার শুরু করেন।কারও মতে র্দূর্ধষ পাঠান সর্দার মানিক ঢালীর নামানুসারে মানিকগঞ্জ নামের উৎপত্তি। আবার কারোমতে, নবাব সিরাজ উদ-দৌলার বিশাবাস ঘাতক মানিক চাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরূপ তার নমানুসারে১৮৪৫ সালের মে মাসে মানিকগঞ্জ মহকুমার নামকরণ হয়। মানিকগঞ্জ মহকুমার নামকরণ সম্পর্কীতউল্লেখ্য তিনটি পৃথক স্থানীয় জনশ্রুতি এবং অনুমান নির্ভর। এর কোন ঐতিহাসিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি,তবে মানিক শাহের নামানুসারে মানিকগঞ্জ মহকুমার নামকরণ সম্পর্কীত জনশ্রুতি এবং ঘটনা প্রবাহথেকে যে চিত্র পাওয়া যায় তাই সঠিক বলে ধরা হয়।

৯. মুন্সীগঞ্জ জেলা:
মুন্সিগঞ্জে প্রাচীন নাম ছিল ইদ্রাকপুর। মোঘল শাসনামলে এই ইদ্রাকপুর গ্রামে মুন্সী হায়দার হোসেন নামেএকজন ব্যক্তি ছিলেন। তিনি মোঘল শাসক দ্বারা ফৌজদার নিযুক্ত ছিলেন। অত্যন্ত সজ্জন ও জনহিতৈষীমুন্সী হায়দার হোসেনের নামে ইদ্রাকপুরের নাম হয় মুন্সীগঞ্জ। কারো কারো মতে জমিদার এনায়েত আলীমুন্সীর নামানুসারে মুন্সীগঞ্জে নামকরণ করা হয়।

১০. ময়মনসিংহ জেলা:
ময়মনসিংহ জেলার নাম নিয়ে ইতিহাসবিদদের মধ্যে ভিন্ন ভিন্ন মত প্রচলিত আছে। ষোড়শ শতাব্দীতেবাংলার স্বাধীন সুলতান সৈয়দ আলাউদ্দিন হোসেন শাহ তাঁর পুত্র সৈয়দ নাসির উদ্দিন নসরত শাহ’র জন্যএ অঞ্চলে একটি নুতুন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, সেই থেকে নসরতশাহী বা নাসিরাবাদ নামের সৃষ্টি।সলিম যুগের উৎস হিসেবে নাসিরাবাদ, নাম আজও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কোথাও নাসিরাবাদ কথাটিউল্লেখ্য করা হচ্ছে না। ১৭৭৯ সালে প্রকাশিত রেনেল এর ম্যাপে মোমেসিং নামটি ‘ময়মনসিংহ’ অঞ্চলকেইনির্দেশ করে। তার আগে আইন-ই-আকবরীতে ‘মিহমানশাহী’ এবং ‘মনমনিসিংহ’ সকার বাজুহার পরগনাহিসেবে লিখিত আছে। যা বর্তমান ময়মনসিংহকেই ধরা হয়।

১১. নারায়ণগঞ্জ জেলা:
১৭৬৬ সালে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতা বিকন লাল পান্ডে( বেণু ঠাকুর বা লক্ষীনায়ায়ণ ঠাকুর) ইস্ট ইন্ডিয়াকোম্পানির নিকট থেকে এ অঞ্চলের মালিকানা গ্রহণ করে। তিনি প্রভু নারায়ণের সেবার ব্যয়ভার বহনেরজন্য একটি উইলের মাধ্যমে শীতলক্ষা নদীর তীরে অবস্থিত মার্কেটকে দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে ঘোষণাকরেন। তাই পরবর্তীকালে এ স্থানের নাম হয় নারায়ণগঞ্জ।

১২. নেত্রকোণা জেলা:

ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৮০ খিস্টাব্দে হওয়া নেত্রকোণা মহকুমাকে ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জানুয়ারিনেত্রকোণা জেলা করা হয়। নেত্রকোণার নামকরণ হয়েছে নাটেরকোণা নামক গ্রামের নাম থেকে।

১৩. নরসিংদী জেলা:
কথিত আছে, প্রাচীনকালে এ অঞ্চলটি নরসিংহ নামক একজন রাজার শাসনাধীন ছিল। আনুমানিক পঞ্চদশশতাব্দীর প্রথম দিকে রাজা নরসিংহ প্রাচীন ব্যক্ষ্মপুত্র নদের পশ্চিম তীরে নরসিংহপুর নামে একটি ছোটনগর স্থাপন করেছিলেনঅ তাঁরই নামানুসারে নরসিংদী নামটি আবির্ভূত হয়। নরসিংহ নামের সাথে ‘দী’যুক্ত হয়ে নরসিংদী হয়েছে। নরসিংহদী শব্দের পরিবর্তিত রূপই “নরসিংদী”।

১৪. রাজবাড়ী জেলা:
রাজা সূর্য্য কুমারের নামানুসারে রাজবাড়ীর নামকরণ করা হয়। রাজা সূর্য্য কুমারের পিতামহ প্রভুরামনবাব সিরাজ-উদ-দৌলার রাজকর্মী থাকাকালীন কোন কারণে ইংরেজদের বিরাগভাজন হলে পলাশীরযুদ্ধের পর লক্ষীকোলে এস আত্মগোপন করেন। পরে তাঁর পুত্র দ্বিগেন্দ্র প্রসাদ এ অঞ্চলে জমিদারী গড়েতোলেন। তাঁরই পুত্র রাজা সূর্য্য কুমার ১৮৮৫ সালে জনহিতকর কাজের জন্য রাজা উপাধি প্রাপ্ত হন।১৯৮৪ সালে ১মার্চ জেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

১৫. শরীয়তপুর জেলা:
বৃটিশ বিরোধী তথা ফরায়েজী আন্দোলনের অন্যতম নেতা হাজী শরীয়ত উল্লাহর নামানুসারেশরীয়তপুরের নামকরণ করা হয়। ১৯৮৪ সালে ১লা মার্চ শরীয়তপুর জেলা শুভ উদ্বোধন করেনতৎকালীন তথ্য মন্ত্রী জনাব নাজিম উদ্দিন হাসিম।

১৬. শেরপুর জেলা:
বাংলার নবাবী আমলে গাজী বংশের শেষ জমিদার শের আলী গাজী দশ কাহনিয়া অঞ্চল দখল করেস্বাধীনভাবে রাজত্ব করেন। এই শের আলী গাজীর নামে দশ কাহনিয়ার নাম হয় শেরপুর।

১৭. টাঙ্গাইল জেলা:
টাঙ্গাইলের নামকরণ বিষয়ে রয়েছে বহুজনশ্রুতি ও নানা মতামত। ১৭৭৮ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত রেনেল তাঁরমানচিত্রে এ সম্পূর্ণ অঞ্চলকেই আটিয়া বলে দেখিয়েছেন। ১৮৬৬ খ্রিস্টাব্দের আগে টাঙ্গাইল নামে কোনোস্বতন্ত্র স্থানের পরিচয় পাওয়া যায় না। টাঙ্গাইল নামটি পরিচিতি লাভ করে ১৫ নভেম্বর ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দেমহকুমা সদর দপ্তর আটিয়া থেকে টাঙ্গাইলে স্থানান্তরের সময় থেকে।
টাঙ্গাইলের ইতিহাস প্রণেতা খন্দকার আব্দুর রহিম সাহেবের মতে, ইংরেজ আমলে এদেশের লোকেরা উচুশব্দের পরিবর্তে ‘টান’ শব্দই ব্যবহার করতে অভ্যস্ত ছিল বেশি। এখনো টাঙ্গাইল অঞ্চলে ‘টান’ শব্দের প্রচলনআছে। এই টানের সাথে আইল শব্দটি যুক্ত হয়ে হয়েছিল টান আইল। আর সেই টান আইলটি রূপান্তরিতহয়েছে টাঙ্গাইলে। টাঙ্গাইলের নামকরণ নিয়ে আরো বিভিন্নজনে বিভিন্ন সময়ে নানা মত প্রকাশ করেছেন।কারো কারো মতে, বৃটিশ শাসনামলে মোগল প্রশাসন কেন্দ্র আটিয়াকে আশ্রয় করে যখন এই অঞ্চল জম-জমাট হয়ে উঠে। সে সময়ে ঘোড়ার গাড়িছিল যাতায়াতের একমাত্র বাহন, যাকে বর্তমান টাঙ্গাইলেরস্থানীয় লোকেরা বলত ‘টাঙ্গা’। বর্তমান শতকের মাঝামাঝি পর্যন্তও এ অঞ্চলের টাঙ্গা গাড়ির চলাচল স্থলপথে সর্বত্র। আল শব্দটির কথা এ প্রসঙ্গে চলে আসে। বর্তমান টাঙ্গাইল অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানের নামের সাথেএই আল শব্দটির যোগ লক্ষ্য করা যায়। আল শব্দটির অর্থ সম্ভবত সীমা নির্দেশক যার স্থানীয় উচ্চারণআইল। একটি স্থানকে যে সীমানা দিয়ে বাঁধা হয় তাকেই আইল বলা হয়। টাঙ্গাওয়ালাদের বাসস্থানেরসীমানাকে ‘টাঙ্গা+আইল’ এভাবে যোগ করে হয়েছে ‘টাঙ্গাইল’ এমতটি অনেকে পোষণ করেন। আইল শব্দটিকৃষিজমির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এই শব্দটি আঞ্চলিক ভাবে বহুল ব্যবহৃত শব্দ। টাঙ্গাইলের ভূ-প্রকৃতি অনুসারেস্বাভাবিক ভাবে এর ভূমি উঁচু এবং ঢালু। স্থানীয়ভাবে যার সমার্থক শব্দ হলো টান। তাই এই ভূমিরূপেরকারণেই এ অঞ্চলকে হয়তো পূর্বে ‘টান আইল’ বলা হতো। যা পরিবর্তীত হয়ে টাঙ্গাইল হয়েছে।

(খ) চট্টগ্রাম বিভাগ:

১. বান্দরবন জেলা:
বান্দরবন জেলার নামকরণ নিয়ে একটি কিংবদন্তি আছে, এলাকার বাসিন্দাদের মুখে প্রচলিত রূপকথায়অত্র এলাকায় এ সময় অসংখ্য বানর বাস করত। আর এ ই বানরগুলো শহরের প্রবেশ মুখে ছড়ার পাড়েপ্রতিনিয়ত লবণ খেতে আসত। এক সময় অতি বৃষ্টির কারণে ছড়ার পানি বৃদ্ধি পেলে বানরের দল ছড়াপাড় থেকে পাহাড়ে যেতে না পারায় একে অপরকে ধরে সারিবদ্ধভাবে ছড়া পার হয়। বানরের ছড়াপারাপারের এই র্দশ্য ধেকতে পায় এই জনপদের মানুষ। এই সময় থেকে জায়গাটি “ম্যাঅকছি ছড়া” হিসেবেপরিচিতি লাভ করে। মার্মা ভাষায় ম্যাঅক শব্দটির অর্থ হল বানর আর ছিঃ শব্দটির অর্থ হল বাধঁ। কালেরপ্রবাহে বাংল ভাষাভাষির সাধারণ উচ্চারণে এই এলাকার নাম বান্দরবন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।তবে মার্মা ভাষায় বান্দরবনের প্রকৃত নাম “রদ ক্যওচি চিম্রো’।

২. ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলা:

১৯৮৪ সালে ব্রাক্ষ্মবাড়িয়া জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। তার আগে এটি কুমিল্লা জেলার একটি মহকুমাছিল। ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া জেলার নামকরণের সঠিক ইতিহাস খুঁজে পাইনি, আপনাদের জানা থাকলে দয়া করেজানাবেন।

৩. চাঁদপুর জেলা:
১৭৭৯ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটিশ শাসনামলে ইংরেজ জরিপকারী মেজর জেমস রেনেল তৎকালনি বাংলার যেমানচিত্র অংকন করেছিলেন তাতে চাঁদপুর নামে এক অখ্যাত জনপদ ছিল। তখন চাঁদপুরের দক্ষিণেনরসিংহপুর নামক ( বর্তমানে যা নদীগর্ভে বিলীন) স্থানে চাঁদপুরের অফিস-আদালত ছিল। পদ্মা ও মেঘনারসঙ্গমস্থল ছিল বতৃমান স্থান থেকে পাওয়া প্রায় ৬০ মাইল দক্ষিণ-পশ্চিমে। মেঘনা নদীর ভাঙ্গাগড়ার খেলায়এ এলাকা বর্তমানে বিলীন। বার ভূঁইয়াদের আমলে চাঁদপুর অঞ্চল বিক্রমপুরের জমিদার চাঁদরায়ের দখলেছিল। ঐতিহাসিক জে.এম সেনগুপ্তের মতে চাঁদরায়ের নামানুসারে এ অঞ্চলের নাম চাঁদপুর। কথিত আছেচাঁপুরের (কোড়ালিয়া) পুরিন্দপুর মহল্লার চাঁদ ফকিরের নামানুসারে এ অঞ্চলের নাম চাঁদপুর। কারো কারোমতে, শাহ আহমেদ চাঁদ নামে একজন প্রশাষক দিল্লী থেকে পঞ্চদশ শতকে এখানে এসে একটি নদী বন্দরস্থাপন করেছিলেন। তাঁর নামানুসারে চাঁদপুর। ১৮৭৮ সালে প্রথম চাঁদপুর মহকুমার সৃষ্টি হয়। ১৮৯৬সালের ১ অক্টোবর চাঁদপুর শহরকে পৌরসভা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। ১৯৮৪ সালের ১৫ ই ফেব্রুয়ারীচাঁদপুর জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

৪. চট্টগ্রাম জেলা:
চট্টগ্রামের প্রায় ৪৮ টি নামের খোঁজ পাওয়া যায়। এর মধ্যে রম্যভূমি, চাটিগাঁ, চাতগাও, রোসাং, চিতাগঞ্জ,জাটিগ্রাম ইত্যাদি। চট্টগ্রাম নামের উৎপত্তি নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতপার্থক্য আছে, পন্ডিত বার্নোলিরমতে, আরবি ‘শ্যাত (খন্ড) অর্থ বদ্বীপ, গাঙ্গ অর্থ গঙ্গা নদী থেকে চট্টগ্রাম নামের উৎপত্তি। অপর এক মতেত্রয়োদশ শতকে এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করতে এসেছিলেন বার জন আউলিয়া। তাঁরা একটি বড় বাতি বাচেরাগ জ্বালিয়ে উঁচু জায়গায় স্থাপন করেছিলেন। চট্টগ্রামের আঞ্চলিক ভাষায় ‘চাটি’ অর্থ বাতি বা চেরাগএবং গাঁও অর্থ গ্রাম। এ থেকে নাম হয় ”চাটিগাঁও”। এশিয়াটিক সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা স্যার উইলিয়ামজোন্সের মতে, এ এলাকার একটি ক্ষুদ্র পাখির নাম থেকে চট্টগ্রাম নামের উৎপত্তি। ১৬৬৬ খ্রিস্টাব্দে চট্টগ্রামমোঘল সম্রাজের অংশ হয়। আরাকানদের পরাজিত করে মোঘল এর নাম রাখেন ইসলামাবাদ। ১৭৬০খ্রিস্টাব্দে মীর কাশিম আলী খান ইসলামাবাদকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কাছে হস্তান্তর করেন। পরেকোম্পানি এর নাম রাখেন চিটাগাং।

৫. কুমিল্লা জেলা:
প্রাচীনকালে এটি সমতট জনপদের অন্তর্গত ছিল এবং পরবর্তীতে এটি ত্রিপুরা রাজ্যের অংশ হয়। কুমিল্লানামকরণের অনেকগুলো প্রচলিত লোককথা আছে, যার মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য চৈনিক পরিব্রাজক ওয়াংচোয়াং কর্তৃক সমতট রাজ্য পরিভ্রমণের বৃত্তান্ত। তাঁর বর্ণনায় কিয়া-মল-ঙ্কিয়া (করধসড়ষড়হশরধ) নামকস্থানের বর্ণনা রয়েছে তা থেকে কমলাঙ্ক বা কুমিল্লার নামকরণ হয়েছে। ১৯৮৪ সালে কুমিল্লা জেলা হিসেবেআত্মপ্রকাশ করে।

৬. কক্সবাজার জেলা:
আরব ব্যবসয়ী ও ধর্ম প্রচারকগণ ৮ম শতকে চট্টগ্রাম ও আকিব বন্দরে আগমন করেন। এই দুই বন্দরেরমধ্যবর্তী হওয়ায় কক্সবাজার এলাকা আরবদের ঘনিষ্ঠ সংস্পর্শে আসে। নবম শতাব্দীতে কক্সবাজার সহবৃহত্তর চট্টগ্রাম হরিকেলার রাজা কান্তিদেব দ্বারা শাসিত হয়। ৯৩০ খ্রিস্টাব্দে আরাকান রাজা সুলাত ইঙ্গচট্টগ্রাম দখল করে নেবার পর থেকে কক্সবাজার আরাকান রাজ্যের অংশ হয়। ১৭৮৪ সালে রার্মারাজবোধাপায়া আরাকান দখল করে নেয়। ১৭৯৯ সালে বার্মারাজের হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রায় ১৩ হাজারআরাকনি কক্সবাজার থেকে পালিয়ে যায়। এদর পূনর্বাসন করার জন্য ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একজনহিরাম কক্সকে নিয়োগ করে। পূনর্বাসন প্রক্রিয়া শেষ হবার পূর্বেই হিরাম কক্স মৃত্যু বরণ করেন। পূনর্বাসনপ্রক্রিয়ায় তাঁর অবদানের জন্য কক্স-বাজার নামক একটি বাজার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই কক্স-বাজারথেকে কক্সবাজার নামের উৎপত্তি।

৭. ফেনী জেলা:
ফেনী নদীর নাম অনুসারে এ অঞ্চলের নাম রাখা হয় ফেনী। মধ্যযুগে কবি ও সাহিত্যিকদের কবিতা ওসাহিত্যে একটি বিশেষ নদীর স্রোদধা ও ফেনী পরাপারের ঘাট হিসেবে আমরা ফনী শব্দটি পাই। ষোড়শশতাব্দীতে কবি কবীন্দ্র পরমেশ্বর পরাগলপুরের বর্ণনায় লিখেছেন, ‘ফনী নদীতে বেষ্টিত চারিধার, পূর্বেমহাগিরি পার পাই তার’। সতের শতকে মির্জা নাথানের ফার্সী ভাষায় রচিত ‘বাহরিস্থান-ই-গায়েরীতে’ফনী শব্দ ফেনীতে পরিণত হয়। আটারো শতকের ষেষ ভাগে কবি আলী রেজা প্রকাশ কানু ফকির তাঁরপীরের বসতি হাজীগাঁওয়ের অবস্থান সম্পর্কে বর্ণনা দিতে গিয়ে লিখেছেন, ‘ফেনীর দক্ষিণে এক বর উপাম,হাজীগাঁও করিছিল সেই দেশের নাম’। মোহাম্মদ মুকিম তাঁর পৈতৃক বসতির বর্ণনাকালে বলেছেন,”ফেনীরপশ্চিমভঅগে জুগিদিয়া দেশৃৃৃৃৃ.। বলাবাহুল্য তাঁরাও নদী অর্থে ফেনী শব্দ ব্যবহার করেছেন। মুসলমানকবি-সাহিত্যিকদের ভাষায় আদি শব্দ ‘ফনী’ ফেনীতে পরিণত হয়েছে।

৮. খাগড়াছড়ি জেলা:
খাগড়াছড়ি একটি নদীর নাম। নদীর পাড়ে খাগড়া বন থাকায় খাগড়াছড়ি নামে পরিচিতি লাভ করে।

৯. লক্ষীপুর জেলা:

১৯৮৪ সালে লক্ষ্মীপুর একটি পূর্নাঙ্গ জেলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। এ জেলার অধীনে ৫ টি উপজেলা, ৩ টিপৌরসভা, ৫৫টি মহল্লা, ৪৭ টি ইউনিয়ন পরিষদ, ৪৪৫টি মৌযা এবং ৫৩৬ টি গ্রাম আছে। তবে লক্ষীপুরজেলার নামকরণের সঠিক ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায়নি।

১০. নোয়াখালী জেলা:
নোয়াখালী জেলা প্রচীন নাম ছিল ভুলুয়া। নোয়াখালী সদর থানার আদি নাম ছিল সুধারাম।ইতিহাসবিদদের মতে, একবার ত্রিপুরার পাহাড় থেকে প্রবাহিত ডাকাতিয়া নদীর পানিতে ভুলুয়ার উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভয়াবহভঅবে প্লাবিত হয়ে ফসলি জমির ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি করে।এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায়হিসেবে ১৬৬০ সালে একটি বিশাল খাল খনন করা হয়, যা পানি প্রবাহকে ডাকাতিয়া নদী হতে রামগঞ্ঝ,সোইমুড়ী ও চৌমুহনী হয়ে মেঘনা এবং ফেনী নদীর দিকে প্রবাহিত করে। এই বিশাল খালকে নোয়াখালীরভাষায় ‘নোয়া (নুতুন) খাল’ বলা হত এর ফলে ‘ভুলুয়া’ নামটি পরিবর্তিত হয়ে ১৬৬৮ সালে নোয়াখালীনামে পরিচিতি লাভ করে।

১১. রাঙ্গামাটি জেলা:
রাঙামাটি জেলা নামকরণ সম্পর্কে বিলু কবীরের লেখা ‘বাংলাদেশ জেলা : নামকরণের ইতিহাস’ বই থেকেজানা যায় তা হলো- এই এলাকায় পর্বতরাজি গঠিত হয়েছিল টারশিয়রি যুগে। এই যুগের মাটির প্রধানব্যতিক্রম এবং বৈশিষ্ট্য হচ্ছে এর রঙ লালচে বা রাঙা। এই এলাকার গিরিমৃত্তিকা লাল এবং মাটিও রাঙাবলেই এই জনপদের নাম হয়েছে রাঙামাটি। প্রকৃতি সূচক এই নামকরণটির বিষয়ে অন্য প্রচলিতকথাপরম্পরা হলো- বর্তমান রাঙামাটি জেলা সদরের পূর্বদিকে একটি ছড়া ছিল, যা এখন হ্রদের মধ্যেনিমজ্জিত। এই হ্রদের স্বচ্ছ পানি যখন লাল বা রাঙামাটির উপর দিয়ে ঢাল বেয়ে প্রপাত ঘটাতো, তখনতাকে লাল দেখাতো। তাই এই ছড়ার নাম হয়েছিল ‘রাঙামাটি’। এই জেলা সদরের পশ্চিমে আরও একটিছাড়া ছিল। অনুরূপ কারণে তার নাম দেয়া হয়েছিল ‘রাঙাপানি’। এই দুই রাঙা ছড়ার মোহনার বাঁকেইগড়ে উঠেছে বর্তমান জেলা শহর। যা মূলত ছিল অনাবাদী টিলার সমষ্টি এবং বহু উপত্যকার একনয়নাভিরাম বিস্ময়ভূমি। এই দুটি ছড়া রাঙামাটি ও রাঙাপানি হতে ‘রাঙামাটি’ জেলার নামকরণ হয়েছেবলে ধারণা করা হয়। ১৯৮৩ সালে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা গঠন করা হয়।

(গ) খুলনা বিভাগ:

১. বাগেরহাট জেলা:
সুন্দরবনে বাঘের বাস
দাড়টানা ভৈরব পাশ
সবুজ শ্যামলে ভরা
নদী বাঁকে বসতো যে হাট
তার নাম বাগের হাট।

এক সময় বাগেরহাটের নাম ছিল খলিফাতাবাদ বা প্রতিনিধির শহর। খানজাহান আলী (রঃ) গৌড়েরসুলতানদের প্রতিনিধি হিসেবে এ অঞ্চল শাসন করতেন। কেউ কেউ মনে করেন, বরিশালের শাসক আঘাবাকের এর নামানুসারে বাগেরহাট হয়েছে। কেউবা বলেন, পাঠান জায়গীদার বাকির খাঁ এর নামানুসারেবাগেরহাট হয়েছে। আবার কারো মতে, বাঘ শব্দ হতে বাগেরহাট নাম হয়েছে। জনশ্রুতি আছে খানজাহানআলী (রঃ) এর একটি বাগ(বাগান, ফার্সী শব্দ) বা বাগিচা ছিল। এ বাগ শব্দ হতে বাগেরহাট। কাো মতে,নদীর বাঁকে হাট বসতো বিধায় বাঁকেরহাট। বাঁকেরহাট হহতে বাগেরহাট।

২. চুয়াডাঙ্গা জেলা:
চুয়াডাঙ্গার নামকরণ সম্পর্কে কথিত আছে যে, এখানকার মল্লিক বংশের আদিপুরুষ চুঙ্গো মল্লিকের নামেএ জায়গার নাম চুয়াডাঙ্গা হয়েছে। ১৭৪০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে চুঙ্গো মল্লিক তাঁর স্ত্রী, তিন ছেলে ও এক মেয়েকেনিয়ে ভারতের নদীয়া ও মুর্শিদাবাদ জেলার সীমানার ইটেবাড়ি- মহারাজপুর গ্রাম থেকে মাথাভাঙ্গানদীপথে এখানে এস প্রথম বসতি গড়েন। ১৭৯৭ সালের এক রেকর্ডে এ জায়গার নাম চুঙ্গোডাঙ্গা উল্লেখরয়েছে। ফারসি থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করার সময় উচ্চারণের বিকৃতির কারণে বর্তমান চুয়াডাঙ্গানামটা এসেছে। চুয়াডাঙ্গা নামকরণের আরো দুটি সম্ভাব্য কারণ প্রচলিত আছে। চুয়া < চয়া চুয়াডাঙ্গাহয়েছে।

৩. যশোর জেলা:
১৭৮১ সালে যশোর একটি পৃথক জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং এটিই হচ্ছে বাংলাদেশের প্রথম জেলা।বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রথম স্বাধীন হওয়া জেলাটি যশোর। যশোর, সমতটের একটা প্রাচীন জনপদ।নামটি অতি পুরানো। যশোর নামের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়। যশোর (জেসিনরে)আরবি শব্দ যার অর্থ সাকো। অনুমান করা হয় কসবা নামটি পীর খানজাহান আলীর দেওয়া (১৩৯৮খৃঃ)। এককালে যশোরের সর্বত্র নদী নালায় পরিপূর্ণ ছিল। পূর্বে নদী বা খালের উপর সাকো নির্মিত হতো।খানজাহান আলী বাঁশের সাকো নির্মাণ করে ভৈরব নদী পার হয়ে মুড়লীতে আগমন করেন বলে জানা যায়।এই বাঁশের সাকো থেকে যশোর নামের উৎপত্তি। তবে এই মতে সমর্থকদের সংখ্যা খুবই কম। ইরান ওআরব সীমান্তে একটি স্থানের নাম যশোর যার সাথে এই যশোরের কোন সম্পর্ক স্থাপন করা যায় না।খানজাহান আলীর পূর্ব থেকেই এই যশোর নাম ছিল। অনেকে অভিমত ব্যক্ত করেন যে, প্রতাপদিত্যেরপতনের পর চাঁচড়ার রাজাদের যশোরের রাজা বলা হত। কেননা তারা যশোর রাজ প্রতাপাদিত্যেরসম্পত্তির একাংশ পুরস্কার স্বরূপ অর্জন করেছিলেন। এই মতও সঠিক বলে মনে হয়। জে, ওয়েস্টল্যাণ্ড তাঁরযশোর প্রতিবেদনের ১৯৩ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেছেন, রাজা প্রতাপাদিত্য রায়ের আগে জেলা সদর কসবামৌজার অর্ন্তভুক্ত ছিল। বনগাঁ-যশোর পিচের রাস্তা ১৮৬৬-১৮৬৮ কালপর্বে তৈরী হয়। যশোর-খুলনাইতিহাসের ৭৬ পাতায় লেখা আছে “প্রতাপাদিত্যের আগে লিখিত কোন পুস্তকে যশোর লেখা নাই”। সময়েরবিবর্তনে নামের পরিবর্তন স্বাভাবিক।

৪. ঝিনাইদহ জেলা:
প্রাচীনকালে বর্তমান ঝিনাইদহের উত্তর-পশ্চিম দিকে নবগঙ্গা নদীর ধারে ঝিনুক কুড়ানো শ্রমিকের বসতিগড়ে ওঠে বলে জানা যায। কলকাতা থেকে ব্যবসায়ীরা ঝিনুকের মুক্তা সঙগ্রহরের জন্য এখানে ঝিনুককিনতে আসতো। সে সময় ঝিনুক প্রাপ্তির স্থানটিকে ঝিনুকদহ বলা হত। অনেকের মতে ঝিনুককে আঞ্চলিকভাষায় ঝিনেই বা ঝিনাই বলে। দহ অর্থ বড় জলাশয়, দহ ফার্সী শব্দ যার অর্ত গ্রাম। সেই অর্থে ঝিনুক দহবলতে ঝিনুকের জলাশয় অথবা ঝিনুকের গ্রাম। ঝিনুক এবং দহ থেকেই ঝিনুকদহ বা ঝিনেইদহ যারূপান্তরিত হয়ে আজকের এই ঝিনাইদহ।

৫. খুলনা জেলা:
হযরত পীর খানজাহান আলীর (র.) স্মৃতি বিজড়িত ও ভৈরব-রূপসা বিধৌত পৌর শহর খুলনার ইতিহাসনানাভাবে ঐতিহ্য মন্ডিত। খুলনা নামকরণের উৎপত্তি সম্বন্ধে নানান মত রয়েছে। সবচেয়ে বেশিআলোচিত মতগুলো হলো : মৌজা ‘কিসমত খুলনা’ খুলনা খুলনা; ধনপতি সাওদাগরের দ্বিতীয় স্ত্রী খুল্লনারনামে নির্মিত ‘খুল্লনেশ্বরী কালী মন্দির’ থেকে খুলনা; ১৭৬৬ সালে ‘ফলমাউথ’ জাহাজের নাবিকদেরউদ্ধারকৃত রেকর্ডে লিখিত ঈঁষহবধ শব্দ থেকে খুলনা। ইংরেজ আমলের মানচিত্রে লিখিত ঔবংংড়ৎব-ঈঁষহধ শব্দ থেকে খুলনা,- কোনটি সত্য তা গবেষকরা নির্ধারণ করবেন।

৬. কুষ্টিয়া জেলা:
কুষ্টিয়া জেলার নামকরণ নিয়ে নানা কাহিনী প্রচলিত আছে, কুষ্টিয়ায় এক সময় কোস্টার (পাট) চাষ হতোবলে কোস্ট শব্দ থেকে কুষ্টিয়ার উৎপত্তি। হেমিলটনের গেজেটিয়ারে উল্লেখ্য করেন যে, স্থানীয় জনগণ একেকুষ্টি বলে ডাকত। কুষ্টি থেকে কুষ্টিয়া নামকরণ হয়েছে। ১৯৮৪ সালে ৬ টি থানা নিয়ে কুষ্টিয়া জেলাগঠিত হয়।

৭. মাগুরা জেলা:
আজকের যেখানে মাগুরা জেলা শহর গড়ে ওঠেছে প্রাচীনকাল থেকেই এর গুরুত্ব অত্যধিক ছিল। কখনথেকে মাগুরা নাম হয়েছে তার সঠিক হিসেব মিলানো কষ্টকর। মাগুরা প্রাচীন আমলের একটি গ্রাম। মাগুরাদু’টি অংশে বিভক্ত ছিল। মহকুমা সদরের পূর্বে মাগুরা ও পশ্চিমে ছিল দরি মাগুরা। দরি শব্দের অর্থ মাদুরবা সতরঞ্জি। দরি মাগুরায় মাদুর তৈরি সম্প্রদায়ের লোক বাস করতো বলে নাম হয়েছিল দরি মাগুরা।ধর্মদাস নামে জনৈক মগ আরাকান খেকে এসে আগুরা শহরের পূর্ভ কোণের সোজাসুজি গড়াই নদীর তীরেখুলুমবাড়ি মৌজা প্রভুতি দখল করে। লোকে তাকে মগ জায়গীর বলে আখ্যায়িত করেছিল। অনেকের মতেমগরা থেকে মাগুরা নামের উৎপত্তি। লোক মুখে শোনা যায় এককালে মাগুরা এলাকায় বড় বিল ছিল সেইবিলে পাওয়া যেতো প্রচুর মাগুর মাছ। এই মাগুর মাছের নাম থেকেও মাগুরা নামের উৎপত্তি হতে পারে।মাগুরা নামের উৎপত্তি নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ মাগুরামহকুমাকে জেলায় উন্নীত করা হয়।

৮. মেহেরপুর জেলা:
মেহেরপুর নামকরণ সম্পর্কে এ পর্যন্ত দুটি অনুমান ভিত্তিক তথ্য পাওয়া গেছে। প্রথমটি ইসলাম প্রচারকমরবেশ মেহের আলী নামীয় জনৈক ব্যক্তির নামের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মেহেরপুর রাখা হয়। দ্বিতীয়টিবচনকার মিহির ও তাঁর পুত্রবধু খনা এই শহরে বাস করতেন বলে প্রচলিত আছে। মিহিরের নাম থেকেমিহিরপুর এবং পরবর্তীতে তা মেহেরপুর হয়। ১৯৮৪ সালের ২৪ শে ফেব্রুয়ারী মেহেরপুর জেলার মর্যাদালাভ করে।

৯. নড়াইল জেলা:
নড়াইল নামকরণ নিয়ে ঐতিহাসিকবিদরা ভিন্ন ভিন্ন মত প্রকাশ করেন। কিংবদন্তী আছে, নড়িয়ালফকিরের আশীর্বাদপুষ্ট নড়ি থেকে নড়িয়াল নামের উৎপত্তি। নড়িয়াল ফকিরের আশীর্বাদপুষ্ট তাই নাম হয়নড়িয়াল। পরবর্তীতে লোকমুখে বিকৃত হয়ে নড়িয়াল থেকে নড়াইল।

১০. সাতক্ষীরা জেলা:
সাতক্ষীরা জেলার আদি নাম ছিল সাতঘরিয়া। চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের সময় বিষ্ণুরাম চক্রবর্তী নদীয়াররাজা কৃষ্ণচন্দ্রের কর্মচারী হিসেবে ১৭৭২ সালে নিলামে এই পরগনা কিনে গ্রাম স্থাপন করেন। তাঁর পুত্রপ্রাণনাথ চক্রবর্তী সাতঘর কুলীন ব্রাক্ষ্মণ এনে এই পরগনায় প্রতিষ্ঠিত করেন তা থেকে সাতঘরিয়া নামহয়।

(ঘ) রাজশাহী বিভাগ:

১. বগুড়া জেলা:
১২৮১-১২৯০ খ্রিস্টাব্দে দিল্লরি সুলতান গিয়াসউদ্দীন বলবনের ২য় পুত্র সুলতান নাসিরউদ্দীন বগরা খানবাংলার শাসনকর্তা নিযুক্ত হন। তাঁর নামানুসারে বগুড়া জেলার নামকরণ করা হয়েছে।

২. জয়পুরহাট জেলা:
বৃটিশ শাসনামলে ১৮২১ সালে বৃহত্তর রাজশাহী জেলার চারটি , রংপুর জেলার ২টি ও দিনাজপুর জেলার৩টি থানা নিয়ে যে বগুড়া জেলা গঠিত হয়েছিল তারই অংশ নিয়ে ১৯৭১ সালে প্রথমে জয়পুরহাট মহকুমাএবং পরবর্তীকালে ১৯৮৪ সালে জয়পুরহাট জেলা গঠিত হয়।

ষোড়শ এবং সপ্তদশ শতাব্দী পর্যন্ত জয়পুরহাটের ইতিহাস বড়ই অস্পষ্ট। কারণ এই সময়ে ভারতবর্ষেরইতিহাসে জয়পুরহাটের কোন স্বতন্ত্র ভৌগোলিক অবস্থান ছিল না। জয়পুরহাট দীর্ঘকাল গৌড়ের পাল এবংসেন রাজাদের রাজ্য ভূক্ত ছিল। সে সময় জয়পুরহাট নামে কোন স্থান পাওয়া যায় না । এমনকিজয়পুরহাটের পূর্ব অবস্থান বগুড়ারও কোন ভৌগলিক অস্তিত্ব ছিল না। পূর্বে চাকলা ঘোড়াঘাট এবংপরবর্তীতে দিনাজপুর জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল জয়পুরহাট।

১৮৫৭ সাল থেকে ১৮৭৭ সাল পর্যন্ত দেশে ভীষণ দূর্ভিক্ষ দেখা দেয়। এসময় দেশে রেল লাইন বসানোরকাজ শুরু হয়। ১৮৮৪ সালে কলকাতা হতে জলপাইগুডী পর্যন্ত ২৯৬ মেইল রেলপথ বসানো কাজ শেষহলে লোকজনের উঠানামা ও মালামাল আমদানী রপ্তানির সুবিধার জন্য ৪-৭ মাইল পর পর রেলস্টেশনস্থাপন করা হয়। সান্তাহারের পরে তিলেকপুর, আক্কেলপুর, জামালগঞ্জ এবং বাঘবাড়ীতে স্টেশন স্থাপিত হয়।সেসময় বাঘবাড়ী রেলস্টেশন কে জয়পুর গভর্ণমেন্ট ক্রাউনের নাম অনুসারে রাখা হয় জয়পুরহাটরেলস্টেশন। পরবর্তীতে রেলস্টেশনের সাথে পোস্ট অফিসের নাম জয়পুরহাট রাখার ফলে নামটি প্রসিদ্ধিপেতে থাকে। কিন্তু সরকারী কাগজপত্রে এর আসল নাম গোপেন্দ্রগঞ্জ বহাল থাকে।

অন্যদিকে, প্রাকৃতিক দূর্যোগেরও বিপর্যয়ের ফলে যমুনার নব্যতা কমে যায় এবং ভাঙ্গনের ফলে লাল বাজারথানা হুমকির মুখে পরে। ফলে ভারত সরকারের নির্দেশে ১৮৬৮ সালে ১৬ মার্চ তারিখে লালবাজার পুলিশথানা যমুনার অন্য তীরে খাসবাগুড়ী নামক গ্রামে স্থানান্তরিত করা হয়। সেই সময় স্থানটির নাম ছিলপাঁচবিবি। পরবর্তী কালে দমদমায় রেলস্টেশন স্থাপিত হলে পুলিশ থানা দমদমায় স্থানান্তরিত হয়। তৎকালেপাঁচবিবি নাম প্রসিদ্ধী লাভ করেছিল। তাই দমদমা রেলস্টেশন ও থানার নাম পূর্বের নাম অনুসারেপাঁচবিবি রেলস্টেশন রাখা হয়। দেশে রেল লাইন বসানোর পূর্বে জলপথে নৌকা এবং স্থলপথে ঘোড়া বাঘোড়ার গাড়ী ছিল যাতায়াতে একমাত্র অবলম্বন । শ্বাপদ সংকুল জলপথে নৌকায় চরে যাতায়াত নিরাপদছিল না।আর এতে অধিক সময় ও অর্থ ব্যয় হয়। তাই রেল লাইন বসানোর পরে নদীপথে যাতায়াতবহুলাংশে কমে যায়। জয়পুরহাট রেলস্টেশন হওয়াতে ব্যবসার ও যাতায়াতের সুবিধার কথা চিন্তা করেবিত্তশালী ব্যাক্তিরা রেলস্টেশনের আশে বাসে বসতি গড়ে তোলেন। এতে খনজনপুর ও লাল বাজার হাটবিলুপ্ত হয়ে যায় । এবং বাঘাবাড়ী অর্থাৎ জয়পুরহাট প্রসিদ্ধ হতে থাকে। পরবর্তীতে বাঘাবাড়ী কে লিখিতহিসেবে গোপেন্দ্রগঞ্জ লিখা হতে থাকে। ১৯০৭ সালে বাঘাবাড়ী তে একটি পৃথক থানা ঘঠিত হয়, এবংজয়পুরহাট নামটি ব্যাপক ভাবে প্রচলিত হওয়ায় তা জয়পুরহাট থানা নামে পরিচিতি পায়। ১৯১৮ সালেজয়পুরহাট থানা ভবন নির্মিত হলে পাঁচবিবি থানাকে জয়পুরহাট থানার উত্তর সীমা রুপে নির্দিষ্ট করা হয়।১৯২০ সালে ভূমি জরিপে জয়পুরহাট থানার একটি পৃথক নকশা অংকিত হয়। জয়পুরের প্রাচীন রাজধানীঅমবর/জয়পুর হতে পাচ মাইল দূরে অমবরের অধিষ্ঠাদেবী শীতলাদেবী । এই দেবী যশোহরের বারোভুঁইয়ার অন্যতম। চাদারায় ও কেদারা রায়ের রাজধানী শ্রীপুর নগরীতে প্রতিষ্ঠিত হয়। মানসিংহ কর্তৃকচাদারায় পরাজিত হলে তিনি এই অষ্টভুজাদ দেবীমুর্তি আনয়ন করে স্থাপন করেন। এই সব কারনে জয়পুরবংগবাসীর নিকট প্রিয় হতে থাকে। বিশেষ করে জয়পুর ও মাড়োয়া রাজ্যের বহু লোক জয়পুরহাটএলাকাত স্থায়ী ভাবে বসবাস করায় জয়পুরের সাথে জয়পুরহাট এর গভীর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এবং তাদেরপূর্বের বাসস্থানের সংগে সংগতি রেখে খঞ্জনপুর নীল কুঠির এলাকা জয়পুর অভিহিত হতে থাকে।

পরবর্তীতে রাজস্থানের জয়পুরের সঙ্গে পার্থক্য বোঝাবার জন্য পোস্ট অফিস ও রেলস্টেশনের নাম রাখাহয়েছিল জয়পুরহাট রেলস্টেশন ও জয়পুরহাট পোস্ট অফিস। ১৯৭১ সালে ১লা জানুয়ারী তারিখেজয়পুরহাট মহকুমার ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে জয়পুরহাট কে জেলা ঘোষনাকরা হয়।

৩. নওগাঁ জেলা:
নওগাঁ শব্দের উৎপত্তি হয়েছে ‘নও’(নুতুন) ও ‘গাঁ (গ্রাম) শব্দ থেকে শব্দ দুটি ফরাসী। নওগাঁ শব্দের অর্থ হলোনুতুন গ্রাম। ১৯৮৪ সালে ১ মার্চ নওগাঁ ১১ টি উপজেলা নিয়ে জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

৪. নাটোর জেলা:
নাটোর জেলার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে নারদ নদী কথিত আছে এই নদীর নাম থেকেই ‘নাটোর’ শব্দটিরউৎপত্তি। ভাষা গবেষকদের মতে নাতোর হচ্ছে মুল শব্দ। উচ্চারণগত কারণে নাটোর হয়েছে। নাটোরঅঞ্চল নিম্নমুখী হওয়ায় চলাচল করা ছিল প্রায় অসম্ভব। জনপদটির দুর্গমতা বোঝাতে বলা হত নাতোর।নাতোর অর্থ দুর্গম। আরেকটি জনশ্রুতি আছে জমিদারদের পৃষ্ঠপোষকতার আমোদ-প্রমোদের জন্য গড়েউঠেছিল বাইজিবাড়ি, নটিপাড়া জাতীয় সংস্কৃতি। এই নটি পাড়া থেকে নাটোর শব্দটির উৎপদ্দি হতে পারেবলে ধারণা করা হয়। ১৯৮৪ সালে নাটোর পূর্ণাঙ্গ জেলা লাভ করে।

৫. নবাবগঞ্জ জেলা:
‘চাপাইনবাবগঞ্জ’ নামটি সাম্প্রতিকালের।এই এলাকা ‘নবাবগঞ্জ নামে পরিচিত ছিল। চাঁপাইগঞ্জ নামকরণসম্পর্কে জানা যায়, প্রাক-ব্রিটিশ আমলে এ অঞ্চল ছিল মুর্শিদাবাদের নবাবদের বিহারভূমি এবং এরঅবস্থান ছিল বর্তমান সদর উপজেলার দাউদপুর মৌজায়। নবাবরা তাঁদের পাত্র-মিত্র ও পরিষদ নিয়েএখানে শিকার করতে আসতেন বলে এ স্থানের নাম হয় নবাবগঞ্জ। চাঁপাইনবাবগঞ্জ নামের ইতিবৃত্ত নবাবআমলে মহেশপুর গ্রামে চম্পাবতী মতান্তরে ‘চম্পারানী বা চম্পাবাঈ’ নামে এক সুন্দরী বাঈজী বাসকরতেন। তাঁর নৃত্যের খ্যাতি আশেপাশে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে এবং তিনি নবাবের প্রিয়পাত্রী হয়েওঠেন। তাঁর নামানুসারে এই জায়গার নাম ‘চাঁপাই”। এ অঞ্চলে রাজা লখিন্দরের বাসভূমি ছিল। লখিন্দরেররাজধানীর নাম ছিল চম্পক। চম্পক নাম থেকেই চাঁপাই। ভাষাবিদ ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর(১৮৮৫-১৯৬৯ খ্রি) ‘বাঙলা সাহিত্যের কথা’ গ্রন্থের প্রথম খন্ডে বর্ণিত লাউসেনের শত্রুরা জামুতিনগরদিয়ে গৌড়ে প্রবেশ করে। বর্তমান ভোলাহাট উপজেলার জামবাড়িয়া পূর্বে জামুতিনগর নামে পরিচিতছিল। এসবের ওপর ভিত্তি করে কোনো কোনো গবেষক চাঁপাইকে বেহুলার শ্বশুরবাড়ি চম্পকনগর বলেস্থির করেছেন এবং মত দিয়েছেন যে, চম্পক নাম থেকেই চাঁপাই নামের উৎপত্তি।

৬. পাবনা জেলা:
‘পাবনা’ নামকরণ নিয়ে কিংবদন্তির অন্ত নেই। এক কিংবদন্তি মতে গঙ্গার ‘পাবনী’ নামক পূর্বগামিনী ধারাহতে পাবনা নামের উৎপত্তি হয়েছে। অপর একটি সূত্রে জানা যায় ‘পাবন’ বা ‘পাবনা’ নামের একজন দস্যুরআড্ডাস্থলই এক সময় পাবনা নামে পরিচিতি লাভ করে। অপরদিকে কিছু ঐতিহাসিক মনে করেন, ‘পাবনা’নাম এসেছে ‘পদুম্বা’ থেকে। কালক্রমে পদুম্বাই স্বরসঙ্গতি রক্ষা করতে গিয়ে বা শব্দগত অন্য ব্যুৎপত্তি হয়েপাবনা হয়েছে। ‘পদুম্বা’ জনপদের প্রথম সাক্ষাৎ মিলে খ্রিষ্টীয় একাদশ শতকে পাল নৃপতি রামপালেরশাসনকালে।

৭. রাজশাহী জেলা:
এই জেলার নামকরণ নিয়ে প্রচুর মতপার্থক্য রয়েছে। তবে ঐতিহাসিক অক্ষয় কুমার মৈত্রেয়র মতেরাজশাহী রাণী ভবানীর দেয়া নাম। অবশ্য মিঃ গ্রান্ট লিখেছেন যে, রাণী ভবানীর জমিদারীকেই রাজশাহীবলা হতো এবং এই চাকলার বন্দোবস্তের কালে রাজশাহী নামের উল্লেখ পাওয়া যায়। পদ্মার উত্তরাঞ্চলবিস্তীর্ন এলাকা নিয়ে পাবনা পেরিয়ে ঢাকা পর্যন্ত এমনকি নদীয়া, যশোর, বর্ধমান, বীরভূম নিয়ে এই এলাকারাজশাহী চাকলা নামে অভিহিত হয়। অনুমান করা হয় ‘রামপুর’ এবং ‘বোয়ালিয়া’ নামক দু’টি গ্রামেরসমন্বয়ে রাজশাহী শহর গ’ড়ে উঠেছিল। প্রাথমিক পর্যায়ে ‘রামপুর-বোয়ালিয়া’ নামে অভিহিত হলেওপরবর্তীতে রাজশাহী নামটিই সর্ব সাধারণের নিকট সমধিক পরিচিতি লাভ করে। বর্তমানে আমরা যেরাজশাহী শহরের সঙ্গে পরিচিত, তার আরম্ভ ১৮২৫ সাল থেকে। রামপুর-বোয়ালিয়া শহরের নামকরণরাজশাহী কী করে হলো তা নিয়ে বহু মতামত রয়েছে। রাজাশাহী শব্দটি বিশ্লেষণ করলে দুটি ভিন্ন ভাষারএকই অর্থবোধক দুটি শব্দের সংযোজন পরিলতি হয়। সংস্কৃত ‘রাজ’ ও ফারসি ‘শাহ’ এর বিশেষণ ‘শাহী’শব্দযোগে ‘রাজশাহী’ শব্দের উদ্ভব, যার অর্থ একই অর্থাৎ রাজা বা রাজা-রাজকীয় বা বা বাদশাহ বাবাদশাহী। তবে বাংলা ভাষায় আমরা একই অর্থের অনেক শব্দ দু-বার উচ্চারণ করে থাকি। যেমন শাক-সবজি, চালাক-চতুর, ভুল-ভ্রান্তি, ভুল-ত্র“টি, চাষ-আবাদ, জমি-জিরাত, ধার-দেনা, শিক্ষা-দীক্ষা, দীন-দুঃখী,ঘষা-মাজা, মান-সম্মান, দান-খয়রাত, পাহাড়-পর্বত, পাকা-পোক্ত, বিপদ-আপদ ইত্যাদি। ঠিক তেমনিকরে অদ্ভূত ধরনের এই রাজশাহী শব্দের উদ্ভবও যে এভাবে ঘটে থাকতে পারে তা মোটেই উড়িয়ে দেয়াযায় না। এই নামকরণ নিয়ে অনেক কল্পকাহিনীও রয়েছে। সাধারণভাবে বলা হয় এই জেলায় বহু রাজা-জমিদারের বসবাস, এজন্য এ জেলার নাম হয়েছে রাজশাহী। কেউ বলেন রাজা গণেশের সময়(১৪১৪-১৪১৮) রাজশাহী নামের উদ্ভব। ১৯৮৪ সালে রাজশাহীর ৪টি মহকুমাকে নিয়ে রাজশাহী, নওগাঁ,নাটোর এবং নবাবগঞ্জ- এই চারটি স্বতন্ত্র জেলায় উন্নীত করা হয়।

৮. সিরাজগঞ্জ জেলা:
বেলকুচি থানায় সিরাজউদ্দিন চৌধুরী নামক এক ভূস্বামী (জমিদার) ছিলেন। তিনি তাঁর নিজ মহালে একটি‘গঞ্জ’ স্থাপন করেন। তাঁর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় সিরাজগঞ্জ। কিন্তু এটা ততটা প্রসিদ্ধি লাভকরেনি। যমুনা নদীর ভাঙ্গনের ফলে ক্রমে তা নদীগর্ভে বিলীন হয় এবং ক্রমশঃ উত্তর দিকে সরে আসে। সেসময় সিরাজউদ্দীন চৌধুরী ১৮০৯ সালের দিকে খয়রাতি মহল রূপে জমিদারী সেরেস্তায় লিখিত ভুতেরদিয়ার মৌজা নিলামে খরিদ করেন। তিনি এই স্থানটিকে ব্যবসা বাণিজ্যের প্রধান স্থানরূপে বিশেষ সহায়কমনে করেন। এমন সময় তাঁর নামে নামকরণকৃত সিরাজগঞ্জ স্থানটি পুনঃ নদীভাঙ্গণে বিলীণ হয়। তিনিভুতের দিয়ার মৌজাকেই নতুনভাবে ‘সিরাজগঞ্জ’ নামে নামকরণ করেন। ফলে ভুতের দিয়ার মৌজাই‘সিরাজগঞ্জ’ নামে স্থায়ী রূপ লাভ করে।

(ঙ) বরিশাল বিভাগ:

বরিশাল বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৯৩ সালে। বরিশাল, বরগুনা, ঝালকাঠী, পটুয়াখালি, পিরোজপুর ওভোলা এই ৬ জেলা নিয়ে বরিশাল বিভাগ গঠিত হয়। অবশেষে ২০০০ সালে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনপ্রতিষ্ঠিত হয়।

১. বরগুনা জেলা:
বরগুনা নামের সুনির্দিষ্ট কোন তথ্য পাওয়া না গেলেও জানা যায় যে, উত্তরাঞ্চলের কাঠ ব্যবসায়ীরা এঅঞ্চলে কাঠ নিতে এস খরস্রোতা খাকদোন নদী অতিক্রম করতে গিয়ে অনুকুল প্রবাহ বা বড় গোনের জন্যএখানে অপেক্ষা করত বলে এ স্থানের নাম হয় বড় গোনা।কারো মতে আবার স্রোতের বিপরীতে গুন (দড়ি)টেনে নৌকা অতিক্রম করতে হতো বলে এ স্থানের নাম বরগুনা। কেউ কেউ বলেন, বরগুনা নামক কোনপ্রভাবশালী রাখাইন অধিবাসীর নামানুসারে বরগুনা। আবার কারো মতে বরগুনা নামক কোন একবাওয়ালীর নামানুসারে এ স্থানের নাম করণ করা হয় বরগুনা।

২. বরিশাল জেলা:
বরিশাল নামকরণ সম্পর্কে বিভিন্ন মতভেদ রয়েছে। এক কিংবদন্তি থেকে জানা যায় যে, পূর্বে এখানে খুববড় বড় শাল গাছ জন্মাতো, আর এই বড় শাল গাছের কারণে (বড়+শাল) বরিশাল নামের উৎপত্তি। কেউকেউ দাবি করেন, পর্তুগীজ বেরি ও শেলির প্রেমকাহিনীর জন্য বরিশাল নামকরণ করা হয়েছে। অন্য এককিংবদন্তি থেকে জানা যায় যে, গিরদে বন্দরে (গ্রেট বন্দর) ঢাকা নবাবদের বড় বড় লবণের গোলা ওচৌকি ছিল। ইংরেজ ও পর্তুগীজ বণিকরা বড় বড় লবণের চৌকিকে ‘বরিসল্ট’ বলতো। অথাৎ বরি (বড়)+সল্ট(লবণ)= বরিসল্ট। আবার অনেকের ধারণা এখানকার লবণের দানাগুলো বড় বড় ছিল বলে ‘বরিসল্ট’বলা হতো । পরবর্তিতে বরিসল্ট শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে বরিশাল নামে পরিচিতি লাভ করে।

৩. ভোলা জেলা:
ভোলা জেলার নামকরণের পিছনে স্থায়ীভাবে একটি লোককাহিনী প্রচলিত আছে যে, ভোলা শহরের মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া বেতুয়া নামক খালটি এখনকার মত অপ্রশস্ত ছিলনা। একসময় এটি পরিচিত ছিল বেতুয়ানদী নামে। খেয়া নৌকার সাহায্যে নদীতে পারাপার করা হত। বুড়ো এক মাঝি এখানে খেয়া নৌকারসাহায্যে লোকজন পারাপার করতো। তাঁর নাম ছিল ভোলা গাজী পাটনী। বর্তমানে যোগীরঘোলের কাছেইতাঁর আস্তানা ছিল। এই ভোলা গাজীর নামানুসারেই এক সময় স্থানটির নাম দেয়া হয় ভোলা। সেই থেকেআজ অব্দী ভোলা নামে পরিচিত।

৪. ঝালকাঠি জেলা:
জেলার নামকরণের সঙ্গে জড়িয়ে আছে এ জেলার জেলে সম্প্রদায়ের ইতিহাস। মধ্যযুগ-পরবর্তী সময়েসন্ধ্যা, সুগন্ধা, ধানসিঁড়ি আর বিষখালী নদীর তীরবর্তী এলাকায় জেলেরা বসতি স্থাপন করে। এর প্রাচীননাম ছিল ‘মহারাজগঞ্জ’। মহারাজগঞ্জের ভূ-স্বামী শ্রী কৈলাশ চন্দ্র জমিদারি বৈঠক সম্পাদন করতেন এবংপরবর্তীতে তিনি এ স্থানটিতে এক গঞ্জ বা বাজার নির্মাণ করেন। এ গঞ্জে জেলেরা জালের কাঠি বিক্রিকরত। এ জালের কাঠি থেকে পর্যায়ক্রমে ঝালকাঠি নামকরণ করা হয় বলে ধারণা করা হয়। জানা যায়,বিভিন্ন স্থান থেকে জেলেরা এখানে মাছ শিকারের জন্য আসত এবং যাযাবরের মতো সুগন্ধা নদীর তীরেবাস করত। এ অঞ্চলের জেলেদের পেশাগত পরিচিতিকে বলা হতো ‘ঝালো’। এরপর জেলেরা বন-জঙ্গলপরিষ্কার করে এখানে স্থায়ীভাবে বসতি গড়ে তোলে। এভাবেই জেলে থেকে ঝালো এবং জঙ্গল কেটে বসতিগড়ে তোলার কারণে কাটি শব্দের প্রচলন হয়ে ঝালকাটি শব্দের উৎপত্তি হয়। পরবর্তীকালে ঝালকাটিরূপান্তরিত হয় ঝালকাঠিতে।১৯৮৪ সালের ১লা ফেব্রুয়ারী ঝালকাঠি পূর্ণাঙ্গ জেলার মর্যাদা লাভ করে।

৫. পটুয়াখালী জেলা:
ঐতিহাসিক ঘটনাবলি থেকে জানা যায যে, পটুয়াখালী চন্দ্রদ্বীপ রাজ্যের অন্তর্ভক্ত ছিল। পটুয়াখালীনামকরণের পিছনে প্রায় সাড়ে তিনশত বছরের লুন।টন অত্যাচারের ইতিহাস জড়িত আছে বলে জানাযায়। পটুয়াখালী শহরের উত্তর দিক দিয়ে প্রবাহিত নদীটি পূর্বে ভরনী খাল নামে পরিচিত ছিল। ষোড়শশতাব্দীর শুরু থেকে পর্তুগীজ জলদস্যুরা এই খালের পথ দিয়ে এস সন্নিহিত এলাকায় নির্বিচারে অত্যাচারহত্যা লুন্ঠন চালাত। স্থানীয় লোকেরা এই হানাদারদের ‘নটুয়া’ বলত এবং তখন থেকে খালটি নটুয়ার খালনামে ডাকা হয়। কথিত আছে, এই “নটুয়ার খাল” খাল থেকে পরবর্তীতে এ এলাকার নামকরণ হয়পটুয়াখালী।

৬. পিরোজপুর জেলা:
“ফিরোজ শাহের আমল থেকে ভাটির দেশের ফিরোজপুর, বেনিয়া চক্রের ছোয়া লেগে পাল্টে হলোপিরোজপুর”

এ কথা থেকে পিরোজপুর নামকরণের একটা সূত্র পাওয়া যায়। নাজিরপুর উপজেলার শাখারী কাঠিরজনৈক হেলাল উদ্দীন মোঘল নিজেকে মোঘল বংশের শেয় বংশধর হিসেবে দাবি করেছিলেন বলে জানাযায়। বাংলার সুবেদার শাহ।। সুজা আওরঙ্গজেবের সেনাপতি মীর জুমলার নিকট পরাজিত হয়ে বাংলারদক্ষিণ অঞ্চলে এসে আত্মগোপন করেন। এক পর্যায়ে নলছিটি উপজেলার সুগন্ধা নদীর পাড়ে একটি কেল্লাতৈরি করে কিছুকাল অবস্থান করেন। মীর জুমলার বাহিনী এখানেও হানা দেয়, শাহ সুজা তাঁর দুই কন্যাসহআরাকান রাজ্যে পালিয়ে যান। সেখানে তিনি অপর এক রাজার চক্রান্তে নিহত হন। পালিয়ে যাওয়ার সময়তাঁর স্ত্রী ও এক শিশুপ্রত্র রেখে যান। পরবর্তীতে তারা অবস্থান পরিবর্তন করে ধীরে ধীরে পশ্চিমে চলেআসে এবং বর্তমান পিরোজপুরের পাশ্ববর্তী দামোদর নদীর মুখে আস্তানা তৈরি করেন। এ শিশুর নাম ছিলফিরোজ এবং তাঁর নামানুসারে হয় ফিরোজপুর। কালের বিবর্তনে ফিরোজপুরের নাম হয় ‘পিরোজপুর’।পিরোজপুর ১৯৫৯ সালের ২৮ অক্টোবর পিরোজপুর মহকুমা এবং পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে জেলাররূপান্তরিত হয়।

(চ) রংপুর বিভাগ:

বাংলাদেশ সরকারের প্রশাসনিক পূণর্বিন্যাসসংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি (ঘধঃরড়হধষ ওসঢ়ষবসবহঃধঃরড়হ ঈড়সসরঃঃবব ভড়ৎ অফসরহরংঃৎধঃরাব জবভড়ৎস:ঘওঈঅজ) ২০১০ খ্রিষ্টাব্দের ২৫জানুয়ারি তারিখে রংপুরকে দেশের সপ্তম বিভাগ হিসেবে অনুমোদন দেয়। এর আগে ২০০৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৩জুলাই তারিখে মন্ত্রীসভার বৈঠকে রংপুরকে বিভাগ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এতে একটি কমিটি তৈরিকরা হয় এবং কমিটি ২১ জুলাই তারিখে প্রতিবেদন জমা দেয়।

১. দিনাজপুর জেলা:
জনশ্রুতি আছে জনৈক দিনাজ অথবা দিনারাজ দিনাজপুর রাজপরিবারের প্রতিষ্ঠাতা। তাঁর নামানুসারেইরাজবাড়ীতে অবস্থিত মৌজার নাম হয় দিনাজপুর। পরবর্তীতে ব্রিটিশ শাসকরা ঘোড়াঘাট সরকার বাতিলকরে নতুন জেলা গঠন করে এবং রাজার সম্মানে জেলার নামকরণ করে দিনাজপুর।

২. গাইবান্ধা জেলা:
গাইবান্ধা নামকরণ সম্পর্কে কিংবদন্তী প্রচলিত আছ, প্রায় পাচ হাজার বছর আগে মৎস্য দেশের রাজাবিরাটের রাজধানী ছিল গাইবান্ধার গোবিন্দগজ থানা এলাকায়। বিরাট রাজার গো-ধনের কোন তুলনাছিল না। তার গাভীর সংখ্যা ছিল ষাট হাজার। মাঝে মাঝে ডাকাতরা এসে বিরাট রাজার গাভী লুণ্ঠন করেনিয়ে যেতো। সে জন্য বিরাট রাজা একটি বিশাল পতিত প্রান্তরে গো-শালা স্থাপন করেন। গো-শালাটিসুরক্ষিত এবং গাভীর খাদ্য ও পানির সংস্থান নিশ্চিত করতে। নদী তীরবর্তী ঘেসো জমিতে স্থাপন করাহয়। সেই নির্দিষ্ট স্থানে গাভীগুলোকে বেঁধে রাখা হতো। প্রচলিত কিংবদন্তী অনুসারে এই গাভী বেঁধে রাখারস্থান থেকে এতদঞ্চলের কথ্য ভাষা অনুসারে এলাকার নাম হয়েছে গাইবাঁধা এবং কালক্রমে তা গাইবান্ধানামে পরিচিতি লাভ করে।

৩. কুড়িগ্রাম জেলা:
কুড়িগ্রাম জনপদ বেশ প্রাচীন। কুড়িগ্রাম-এর নাম করণের সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি। অনেকে মনেকরেন গণনা সংখ্যা কুড়ি থেকে কুড়িগ্রাম হয়েছে। কারো মতে কুড়িটি কলু পরিবার এর আদি বাসিন্দাছিল। তাই এর নাম কুড়িগ্রাম। কেউ বা মনে করেন, রংগপুর রাজার অবকাশ যাপনের স্থান ছিলকুড়িগ্রাম। প্রচুর বন-জঙ্গল ও ফল মূলে পরিপূর্ণ ছিল এই এলাকা, তাই ফুলের কুড়ি থেকে এর নাম হয়েছেকুড়িগ্রাম।

১৮০৯ সালে ডাঃ বুকালন হ্যামিলটন তাঁর বিবরণীতে বলেছেন- কঁৎরমধহল ড়ভ যিরপয ঃযব সধৎশবঃ ঢ়ষধপব রং পধষষবফ ইধষধনধৎর রহ ধ ঢ়ষধপব ড়ভ পড়হংরফবৎধনষব ঃৎধফব (সধৎঃরহং ঊধংঃবৎহ ওহফরধ)। মিঃভাস তাঁর রংপুরের বিবরণীতেও এ অঞ্চলকে কুড়িগঞ্জ বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কুড়িগঞ্জ নামের উৎপত্তিসম্বন্ধে কেউ কিছুই বলেননি। ১৯৮৪ সালের ২৩ শে জানুয়ারী ‘‘কুড়িগ্রাম’’ মহকুমা থেকে জেলায় উন্নীতহয়।

৪. লালমনিরহাট জেলা:
লালমনিরহাট নামকরণ নিয়ে জনশ্রুতি আছে যে, বৃটিশ সরকারের আমলে বর্তমান লালমনিরহাট শহরেরমধ্যে দিয়ে রেলপথ বসানোর সময় উল্লিখিত অঞ্চলের রেল শ্রমিকরা বন-জঙ্গল কাটতে গিয়ে জনৈক ব্যক্তি’লালমনি’ পেয়েছিলেন। সেই লালমনি থেকেই পর্যায়ক্রমে লালমনিরহাট নামের উৎপত্তি হয়েছে। অন্য একসূত্র থেকে জানা যায়, বিপ্লবী কৃষক নেতা নুরুলদীনের ঘনিষ্ঠ সাথী লালমনি নামে এক ধনাঢ্য মহিলাছিলেন। যার নামানুসারে লালমনিরহাট নামকরণ করা হয়েছে।

৫. নীলফামারী জেলা:
প্রায় দুই শতাধিক বছর পূর্বে এ অঞ্চলে নীল চাষের খামার স্থাপন করে ইংরেজ নীলকরেরা। এ অঞ্চলেরউর্বর ভূমি নীল চাষের অনুকূল হওয়ায় দেশের অন্যান্য এলাকার তুলনায় নীলফামারীতে বেশি সংখ্যায়নীলকুঠি ও নীল খামার গড়ে ওঠে। ঊণবিংশ শতাব্দীর শুরুতেই দুরাকুটি, ডিমলা, কিশোরগঞ্জ, টেঙ্গনমারীপ্রভৃতি স্থানে নীলকুঠি স্থাপিত হয়। সে সময় বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের মধ্যে নীলফামারীতেই বেশি পরিমাণেশস্য উৎপাদিত মাটির ঊর্বরতার কারণে। সে কারণেই নীলকরদের ব্যাপক আগমন ঘটে এতদঅঞ্চলে।গড়ে ওঠে অসংখ্য নীল খামার। বর্তমান নীলফামারী শহরের তিন কিলোমিটার উত্তরে পুরাতন রেলস্টেশনের কাছেই ছিল একটি বড় নীলকুঠি। তাছাড়া বর্তমানে অফিসার্স ক্লাব হিসেবে ব্যবহৃত পুরাতনবাড়িটি ছিল একটি নীলকুঠি। ধারণা করা হয়, স্থানীয় কৃষকদের মুখে ‘নীল খামার’ রূপান্তরিত হয় ‘নীলখামারী’তে। আর এই নীলখামারীর অপভ্রংশ হিসেবে উদ্ভব হয় নীলফামারী নামের।

৬. পঞ্চগড় জেলা:
“পঞ্চ” (পাঁচ) গড়ের সমাহার “পঞ্চগড়” নামটির অপভ্রমংশ “পঁচাগড়” দীর্ঘকাল এই জনপদে প্রচলিত ছিল।কিন্তু গোড়াতে এই অঞ্চলের নাম যে, ‘পঞ্চগড়ই’ ছিলো সে ব্যাপারে সন্দেহর কোন অবকাশ নেই। বস্তুতভারতীয় উপমহাদেশে “পঞ্চ” শব্দটি বিভিন্ন স্থান নামের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। যেমন- পঞ্চনদ, পঞ্চবটী,পঞ্চনগরী, পঞ্চগৌড় ইত্যাদি। “পঞ্চনগরীর” দূরত্ব পঞ্চগড় অঞ্চল থেকে বেশি দূরে নয়। পঞ্চগড় জেলায় বেশকিছু গড় রয়েছে তাদের মাঝে উল্লেখ করার মত গড় হল ভিতরগড়, মিরগড়, রাজনগড়, হোসেনগড়,দেবনগড়। ‘পঞ্চ’ অর্থ পাঁচ, আর ‘গড়’ অর্থ বন বা জঙ্গল। ‘পঞ্চগড়’ নামটি এভাবেই এসেছে।

৭. রংপুর জেলা:
রংপুর নামকরণের ক্ষেত্রে লোকমুখে প্রচলিত আছে যে পূর্বের ‘রঙ্গপুর’ থেকেই কালক্রমে এই নামটি এসেছে।ইতিহাস থেকে জানা যায় যে উপমহাদেশে ইংরেজরা নীলের চাষ শুরু করে। এই অঞ্চলে মাটি উর্বর হবারকারণে এখানে প্রচুর নীলের চাষ হত। সেই নীলকে স্থানীয় লোকজন রঙ্গ নামেই জানত। কালের বিবর্তনেসেই রঙ্গ থেকে রঙ্গপুর এবং তা থেকেই আজকের রংপুর। অপর একটি প্রচলিত ধারনা থেকে জানা যায় যেরংপুর জেলার পূর্বনাম রঙ্গপুর। প্রাগ জ্যোতিস্বর নরের পুত্র ভগদত্তের রঙ্গমহল এর নামকরন থেকে এইরঙ্গপুর নামটি আসে। রংপুর জেলার অপর নাম জঙ্গপুর । ম্যালেরিয়া রোগের প্রাদুর্ভাব থাকায় কেউ কেউএই জেলাকে যমপুর বলেও ডাকত। তবে রংপুর জেলা সুদুর অতীত থেকে আন্দোলন প্রতিরোধের মূল ঘাঁটিছিল। তাই জঙ্গপুর নামকেই রংপুরের আদি নাম হিসেবে ধরা হয়। জঙ্গ অর্থ যুদ্ধ, পুর অর্থ নগর বা শহর।গ্রাম থেকে আগত মানুষ প্রায়ই ইংরেজদের অত্যাচারে নিহত হত বা ম্যালেরিয়ায় মারা যেত। তাই সাধারণমানুষ শহরে আসতে ভয় পেত। সুদুর অতীতে রংপুর জেলা যে রণভূমি ছিল তা সন্দেহাতীত ভাবেই বলাযায়। ত্রিশের দশকের শেষ ভাগে এ জেলায় কৃষক আন্দোলন যে ভাবে বিকাশ লাভ করে ছিল তার কারণেরংপুরকে লাল রংপুর হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছিল।

৮. ঠাকুরগাঁও জেলা:
ঠাকুরগাঁও এর আদি নাম ছিল নিশ্চিন্তপুর। ঠাকুরগাঁওয়ের নামকরণের ইতিহাস সম্পর্কে আর যা পাওয়াগেছে তাহলো, বর্তমানে যেটি জেলা সদর অর্থাৎ যেখানে জেলার অফিস-আদালত অবস্থিত সেখান থেকে৮ কিলোমিটার উত্তরে আকচা ইউনিয়নের একটি মৌজায় নারায়ণ চক্রবর্তী ও সতীশ চক্রবর্তী নামে দুইভাই বসবাস করতেন। সম্পদ ও প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে তারা সেই এলাকায় খুব পরিচিত ছিলেন।সেখানকার লোকজন সেই চক্রবর্তী বাড়িকে ঠাকুরবাড়ি বলতেন। পরে স্থানীয় লোকজন এই জায়গাকেঠাকুরবাড়ি থেকে ঠাকুরগাঁও বলতে শুরু করে। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১ ফেব্রুয়ারী ৫টি থানা নিয়ে ঠাকুরগাঁওজেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।

(ছ)  সিলেট বিভাগ:

১৯৯৫ খ্রিস্টাব্দের ১ আগষ্ট সিলেট দেশের ষষ্ঠ বিভাগ হিসাবে মর্যাদা পায়।

১. হবিগঞ্জ জেলা:
সুফি-সাধক হযরত শাহজালাল (রঃ) এর অনুসারী হযরত সৈয়দ নাসির উদ্দীন (রঃ) এর পূর্ণস্মৃতি বিজড়িখোয়াই, কারাঙ্গী, বিজনা, রতœা প্রভৃতি নদী বিধৌত হবিগঞ্জ একটি ঐতিহাসিক প্রাচীন জনপদ।ঐতিহাসিক সুলতানসী হাবেলীর প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ সুলতানের অধঃস্তন পুরুষ সৈয়দ হেদায়েত উল্লাহর পুত্রসৈয়দ হাবীব উল্লাহ খোয়াই নদীর তীরে একটি গঞ্জ প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁর নামানুসরে হবিগঞ্জ নামকরণকরা হয়। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ১ মার্চ হবিগঞ্জ জেলায় উন্নীত হয়।

২. মেীলভীবাজার জেলা:
হয়রত শাহ মোস্তফা (র 🙂 এর বংশধর মৌলভী সৈয়দ কুদরতউল্লাহ অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি মনুনদীর উত্তর তীরে কয়েকটি দোকানঘর স্থাপন করে ভোজ্যসামগ্রী ক্রয় বিক্রয়ের সুযোগ সৃষ্টি করেন।মৌলভী সৈয়দ কুদরতউল্লাহ প্রতিষ্ঠিত এ বাজারে নৌ ও স্থলপথে প্রতিদিন লোকসমাগম বৃদ্ধি পেতে থাকে।ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগমের মাধ্যমে মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়ে মৌলভীবাজারের খ্যাতি। মৌলভী সাহেবেরপ্রতি কৃতজ্ঞতা স্বরুপ এই অঞ্চলের নাম হয় মৌলভীবাজার। ১৯৮৪ খ্রিস্টাব্দের ২২শে ফেব্রুয়ারীমৌলভীবাজার মহকুমাটি জেলায় উন্নীত হয়।

৩. সুনামগঞ্জ জেলা:
‘সুনামদি’ নামক জনৈক মোগল সিপাহীর নামানুসারে সুনামগঞ্জের নামকরণ করা হয়েছিল বলে জানাযায়। ‘সুনামদি’ (সুনাম উদ্দিনের আঞ্চলিক রূপ) নামক উক্ত মোগল সৈন্যের কোন এক যুদ্ধে বীরোচিতকৃতিত্বের জন্য সম্রাট কর্তৃক সুনামদিকে এখানে কিছু ভূমি পুরস্কার হিসাবে দান করা হয়। তাঁর দানস্বরূপপ্রাপ্ত ভূমিতে তাঁরই নামে সুনামগঞ্জ বাজারটি স্থাপিত হয়েছিল। এভাবে সুনামগঞ্জ নামের ও স্থানের উৎপত্তিহয়েছিল বলে মনে করা হয়ে থাকে।

৪. সিলেট জেলা:
প্রাচীন গ্রন্থাদিতে এ অঞ্চলকে বিভিন্ন নামের উল্লেখ্য আছে। হিন্দুশাস্ত্র অনুসারে শিবের স্ত্রী সতি দেবীর কাটাহস্ত (হাত) এই অঞ্চলে পড়েছিল, যার ফলে ‘শ্রী হস্ত’ হতে শ্রীহট্ট নামের উৎপত্তি বলে হিন্দু সম্প্রদায় বিশ্বাসকরেন। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতকের ঐতিহাসিক এরিয়ান লিখিত বিবরণীতে এই অঞ্চলের নাম “সিরিওট” বলেউল্লেখ আছে। এছাড়া, খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকে এলিয়েনের (অরষরবহ) বিবরণে “সিরটে”, এবং পেরিপ্লাস অবদ্যা এরিথ্রিয়ান সী নামক গ্রন্থে এ অঞ্চলের নাম “সিরটে” এবং “সিসটে” এই দুইভাবে লিখিত হয়েছে।অতঃপর ৬৪০ খ্রিস্টাব্দে যখন চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং এই অঞ্চল ভ্রমণ করেন। তিনি তাঁর ভ্রমণকাহিনীতে এ অঞ্চলের নাম “শিলিচতল” উল্লেখ করেছেন তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দীন মুহম্মদবখতিয়ার খলজী দ্বারা বঙ্গবিজয়ের মধ্য দিয়ে এদেশে মুসলিম সমাজব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটলে মুসলিমশাসকগণ তাঁদের দলিলপত্রে “শ্রীহট্ট” নামের পরিবর্তে “সিলাহেট”, “সিলহেট” ইত্যাদি নাম লিখেছেন বলেইতিহাসে প্রমাণ মিলে। আর এভাবেই শ্রীহট্ট থেকে রূপান্তর হতে হতে একসময় সিলেট নামটি প্রসিদ্ধ হয়েউঠেছে বলে ঐতিহাসিকরা ধারণা করেন। এছাড়াও বলা হয়, এক সময় সিলেট জেলায় এক ধনী ব্যক্তিরএকটি কন্যা ছিল। তার নাম ছিল শিলা। ব্যক্তিটি তার কন্যার স্মৃতি রক্ষার্থে একটি হাট নির্মাণ করেন এবংএর নামকরণ করেন শিলার হাট। এই শিলার হাট নামটি নানাভাবে বিকৃত হয়ে সিলেট নামের উৎপত্তিহয়।

তথ্য সূত্র: জেলা তথ্য বাতায়ন, বাংলা পিডিয়া, উইকিপিডিয়া এবং বিভিন্ন সূত্র হতে প্রাপ্ত।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

ফিচার

বাংলাদেশ ছাড়াও যে দেশে সরকারি ভাষা বাংলা

Avatar photo

Published

on

বাংলা আমাদের প্রাণের ভাষা। বাংলা ভাষার জন্য আমাদের রক্ত দিতে হয়েছে। বিশ্বের আর কোন জাতিকে তাদের মুখের বুলির জন্য প্রাণ বলি দিতে হয় নি। তাই এই ভাষা নিয়ে আমাদের অনেক গর্ব। মাতৃভাষার প্রতি বাঙালি জাতির এই আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে ২১ ফেব্রুয়ারি সারা বিশ্বজুড়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালিত হয়। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতের বিপুল সংখ্যক মানুষ বাংলায় কথা বলে। এছাড়াও বাংলাদেশ ছাড়াও যে দেশে সরকারি ভাষা তা নিয়েই আমাদের আজকের আলোচনা।

তবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, ত্রিপুরা, আন্দামান-নিকোবর, মেঘালয় সহ বেশ কিছু অঙ্গরাজ্যের প্রধান ভাষা বাংলা। জনসংখ্যা বিচারে হিন্দির পর ভারতের সবচেয়ে বড় ভাষা হওয়া সত্ত্বেও দেশটিতে সরকারিভাবে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষার মর্যাদা দেয়া হয় নি। কিন্তু আপনি জেনে অবাক হবেন যে, বিশ্বে এমন একটি দেশ রয়েছে যেখানে বাংলায় কথা বলার মতো লোক খুব একটা নেই, অথচ দেশটিতে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৫ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই দেশটির নাম সিয়েরা লিওন। পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলবর্তী একটি দেশ এই সিয়েরা লিওন। ৭১,৭৪০ বার্গকিলোমিটার আয়তনের এই দেশটিতে বাস করে প্রায় ৭৬ লাখ মানুষ। ১৬টি ভিন্ন ভিন্ন জাতিসত্ত্বার এই দেশটির ২য় সরকারি ভাষা বাংলা।

২০০২ সালে ভাষা আন্দোলনের সুবর্ণজয়ন্তী পালিত হয় বাংলাদেশে। আর ওই বছরই সিয়েরা লিওনের সরকার বাংলাকে তাদের সরকারি ভাষার মর্যাদা দেয়। সিয়েরা লিওন ভৌগলিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশের সাথে কোন মিল না থাকলেও তারা বাংলা ভাষাকে আপন করে নিয়েছে। তবে বাংলা ভাষার এই অর্জনের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবহিনীর।

সিয়েরা লিওনে সোনা ও হীরার মতো মূল্যবান খনি থাকলেও এখানকার মানুষজন অত্যন্ত দরিদ্র। ১৯৬১ সালে ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে সিয়েরা লিওন স্বাধীনতা লাভ করলেও দেশটির মানুষ শান্তি পায়নি। অভ্যন্তরীণ কলহ, দুর্নীতি, রাজনৈতিক অস্তিরতা লেগেই থাকতো। এতে করে সাধারণ মানুষের মাঝে বাড়তে থাকে ক্ষোভ ও অসন্তোষ। যার ফলে দেশটির স্বাধীনতার ত্রিশ বছরের মাথায় ১৯৯১ সালে শুরু হয় গৃহযুদ্ধ। এই যুদ্ধ আফ্রিকার সবচেয়ে ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধগুলোর মধ্যে অন্যতম। যুদ্ধের ফলে দেশিটির ৫০ হাজার মানুষ মারা যায় এবং ৫ লাখের বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
ওই সময় সিয়েরা লিওনে শান্তি ফেরাতে বিপুল সংখ্যক শান্তি বাহিনী নিয়োগ করে জাতিসংঘ। এই মিশনের বড় একটি অংশজুড়ে ছিল বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সদস্যরা। যুদ্ধ শেষ হওয়া অবধি বাংলাদেশের সর্বমোট ১২ হাজার সেনা সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠার কাজ করেন এবং তাদের এই ভূমিকা ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়।

তবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সেখানে কেবল যুদ্ধ বা সামরিক ক্ষেত্রেই নয় বরং সামাজিক ও রাজনৈতিক শান্তি শৃঙ্খলা ফেরাতেও অবদান রাখে। এসকল কাজ করতে গিয়ে সাধারণ জনগণের সাথে তাদের গড়ে ওঠে বন্ধুসুলভ সম্পর্ক। সিয়েরা লিওনে শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ৩১টি দেশের সেনাদল কর্মরত ছিল। তবে দায়িত্ব পালন করার পাশাপাশি মন জয় করার চেষ্টায় সবসময়ই এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। তাই বাংলাদেশ সেনাদলের মাধ্যমে সেখানকার মানুষজন বাংলা ভাষা শিখতে শুরু করে এবং এর পাশাপাশি বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যেরও প্রসার ঘটে। এভাবে ইংরেজি ও আঞ্চলিক ভাষার দেশটিতে বাংলা ভাষা হয়ে ওঠে যোগাযোগের অন্যতম বড় মাধ্যম।

শান্তি কমিশনের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০০২ সালে অর্থাৎ প্রায় ১০ বছর পর সিয়েরা লিওনে গৃহযুদ্ধের অবসান ঘটে। দেশটিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি বন্ধুসুলভ আচরণ ও সম্প্রীতির জন্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে ভোলেনি সিয়েরা লিওন। সে বছর ১২ ডিসেম্বর সিয়েরা লিওনের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ তেজান কাব্বা বাংলা ভাষাকে দেশটির অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেন।

আমাদের দেশের সেনারা শান্তি কমিশনের সদস্য হয়ে সিয়েরা লিওনে বাঙালি সংস্কৃতি ও ভাষার যে প্রসার ঘটিয়োছিলেন, তা অবশ্য পরবর্তীতে ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে। কেননা, দেশটির সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার পথ এখনও ঝাপসা। তাদের হৃদয়ে বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার প্রতি যে আবেগ ও অনন্য সম্পর্ক তৈরি হয়েছিল, তা যেন কমে না আসে সে ব্যাপারে সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি।

Continue Reading

ফিচার

আটকে থাকা ড্রাইভিং লাইসেন্স যেভাবে পাবেন

Avatar photo

Published

on

দুই বছরের বেশি সময় বন্ধ থাকার পর সোমবার ১১ই অক্টোবর থেকে নতুন করে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেয়ার কাজ শুরু করছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ বিআরটিএ। তবে কর্মকর্তারা বলছেন, সোমবার থেকে এ কাজ শুরু হলেও একজন চালকের লাইসেন্স পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরো কয়েকদিন।

বিআরটিএ’র পরিচালক এবং মুখপাত্র শেখ মোহাম্মদ মাহবুব-ই-রব্বানী বিবিসিকে বলেছেন, ইতিমধ্যে লাইসেন্স ছাপানোর কাজ শুরু হয়ে গেছে। বিআরটিএ থেকে লাইসেন্স পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন প্রায় সাড়ে ১২ লাখ চালক।

সংস্থাটি বলছে, কারিগরি জটিলতায় তাদের লাইসেন্স ইস্যু করা যায়নি। এই চালকদের অস্থায়ী লাইসেন্স ইস্যু করে আসছিল বিআরটিএ। কিন্তু অস্থায়ী লাইসেন্স নিয়ে বিভিন্ন সময় সড়কে নাজেহাল হবার অভিযোগ করেন অনেক চালক।

যেভাবে লাইসেন্স হাতে পাবেন চালক:
বিআরটিএ’র পরিচালক মি. মাহবুব-ই-রব্বানী বলেছেন, লাইসেন্স ছাপা হলে আবেদনকারী চালককে এসএমএস বা মোবাইল বার্তার মাধ্যমে সংগ্রহের তারিখ জানিয়ে দেয়া হবে। একই সঙ্গে প্রিন্ট হওয়া লাইসেন্স কার্ড প্যাকেজিং করে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জেলা সার্কেল অফিসে পাঠিয়ে দেয়া হবে।

যিনি যে অফিসে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন তিনি সেই অফিস থেকে লাইসেন্স পাবেন। কিন্তু সোমবার থেকেই লাইসেন্স হাতে পাচ্ছেন না কোন আবেদনকারী। মি. মাহবুব-ই-রব্বানী বলেছেন, “এগুলো প্রস্তুত হয়ে বিভিন্ন জেলায় সার্ভিস ডেলিভারি আউটলেটে পৌঁছাতে এবং আবেদনকারীদের হাতে দিতে তিন-চারদিন সময় তো লাগবে।

তবে তিনি বলেন, “আগামী ছয় মাসের মধ্যে পেন্ডিং সব লাইসেন্স দেয়া শেষ করা যাবে।” বাংলাদেশে বিআরটিএ’র ৫৪টি মাঠ পর্যায়ের অফিস রয়েছে, যার অধীনে মোট ৭০টি সার্ভিস ডেলিভারি আউটলেট রয়েছে। এসব সার্ভিস ডেলিভারি আউটলেট থেকেই ড্রাইভিং লাইসেন্স সরবরাহ করা হবে।

কেন আটকে ছিল লাইসেন্স দেয়া?
কারিগরি জটিলতার কারণে গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে চালকদের লাইসেন্স – যা কার্যত এক ধরণের ডিজিটাইজড স্মার্ট কার্ড – দেয়া বন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে ১২ লাখ ৪৫ হাজার চালক লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছেন, যারা লিখিত, মৌখিক এবং ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।

বিআরটিএ বলছে, এই আবেদনের সবই পুরনো আবেদন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক অর্থাৎ পাঁচ লাখের মত আবেদন করা হয়েছে ছয় মাস আগে। এরআগে দুই দফায় স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাপার জন্য অন্য দুটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সরকার চুক্তি করলেও নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা কাজ সম্পাদনে ব্যর্থ হয়।

সর্বশেষ ২০২১ সালের অগাস্টের শেষে সেনাবাহিনীর অধীনস্থ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি বিএমটিএফের সঙ্গে বিআরটিএ নতুন করে চুক্তি স্বাক্ষর করে। এরপর স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স কার্ড ছাপার কাজ শুরু হয়। বিএমটিএফের কারখানায় দিনে নয় হাজারের বেশি লাইসেন্স ছাপানো হচ্ছে।

তবে নতুন করে যারা ড্রাইভিং লাইসেন্সের আবেদন করছেন, তাদের ক্ষেত্রে বাড়তি সময় লাগছে না বলে জানিয়েছে বিআরটিএ। তাদের নির্ধারিত তারিখেই বায়োমেট্রিক দিয়ে যথাসময়ে স্মার্ট কার্ড সরবরাহ করা হচ্ছে।কর্মকর্তারা বলেছেন, নতুন লাইসেন্স ছাপানোর কাজ বিএমটিএফ করছে না।

বিএমটিএফ কেবল পেন্ডিং বা আটকে থাকা লাইসেন্স ছাপিয়ে দ্রুত সরবারহের কাজ করছে। ২০১১ সালের নভেম্বর থেকে স্মার্ট লাইসেন্স দেয়া শুরু করে বিআরটিএ।

-BBC Bangla

Continue Reading

পটুয়াখালী

দুমকির ভারানি খালের সেতু নয়, যেন মরণ ফাঁদ

Avatar photo

Published

on

দুমকি সংবাদদাতা:
পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার ভারানি খালের উপর নির্মিত সেতুটি অতি পুরানো এবং জরাজীর্ণ হওয়ায় এর স্লিপার ভেঙ্গে মূল অবকাঠামো বেঁকে গিয়ে জনচলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে লেবুখালী হাবিবুল্লাহ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ১১শতাধিক শিক্ষার্থীসহ এলাকাবাসীর প্রতিনিয়ত যাতায়াত করতে হচ্ছে এই সেতুটি দিয়ে।

ভারানি খালের দু’পাশে রয়েছে ৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, লেবুখালী সরকারি হাবিবুল্লাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, দুটি নূরানী মাদ্রাসা, ইউনিয়ন ভূমি অফিস, রশি শিল্প এবং খালের পশ্চিম পাড়ে সেতু সংলগ্ন ঐতিহ্যবাহী একটি বাজার রয়েছে, যেটি সপ্তাহে দুই দিন সোম ও শুক্রবার হাট বসে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদিসহ কাঁচা বাজার বেচাকেনা করা হয়।

এ ব্যাপারে দুমকি উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদ বলেন, সেতুটি অতি পুরানো হওয়ায় ইতোপূর্বে পরিত্যক্ত ঘোষণা করে উভয় তীরে সাইনবোর্ড সাঁটানো হয়েছে এবং জনসাধারণ চলাচলে নিষেধ করা হয়েছে।

লেবুখালী সরকারি হাবিবুল্লাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আতিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলা প্রশাসনের নিষেধ সত্ত্বেও তার বিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সময় বাঁচানোর জন্য এই সেতু দিয়ে পারাপার হচ্ছে। অতিদ্রুত তম সময়ের মধ্যে সেতুটি সংস্কার করে চলাচলের উপযোগী করার পাশাপাশি নতুন আরেকটি সেতু নির্মাণের জন্য এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবি করেন।

এ ব্যাপারে দুমকি উপজেলা প্রকৌশলী আজিজুর রহমান বলেন, ইতোমধ্যে আমরা সেতুটির ব্যাপারে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আওতায় স্কীম পাঠানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।

Continue Reading