Connect with us

দেশজুড়ে

মেঘনার ভাঙনে হারানোর পথে শত বছরের ঐতিহ্য

Published

on

Meghna Lokshmi pur  (1)রুবেল হোসেন, লক্ষ্মীপুর: প্রমত্তা মেঘনার তীব্র ভাঙনের হারিয়ে যাচ্ছে কমলনগর উপজেলা। ভাঙন রোধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে অচিরেই মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে এ উপজেলাটি। ইতিমধ্যে ৯টি ওয়ার্ড সম্পূর্ণ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। বিলীন হয়েছে সাহেবের হাট ইউনিয়নের সাহেবের হাট, তালতলি বাজার ও হাজিগঞ্জ বাজার, পাটারীহাট ইউনিয়নের মক্কলা বাজার, ফলকন ইউনিয়নের লুধুয়া বাজারের বেশীর ভাগ অংশসহ শত বছরের ঐতিহ্য স্থাপনা সমূহ। এছাড়া মেঘনার অতলে তলিয়ে গেছে ১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৩টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ২টি মাদ্রাসা এবং ছোট বড় অনেক স্থাপনা।
পদ্মা মেঘনা যমুনাসহ উজান থেকে আসা প্রায় ৫৪টি নদী বিভিন্ন নামে সারাদেশ ঘুরে অবশেষে মেঘনা নাম ধারণ করে চাঁদপুর জেলা হয়ে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর, লক্ষ্মীপুর সদর, কমলনগর ও রামগতি উপজলা হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। দীর্ঘ পথচলায় মেঘনা উজান থেকে বয়ে আনা লাখ লাখ টন পলি ও বালি এ মোহনায় এনে জমা করেছে ফলে পানি চলাচলের মূল চ্যানেল ভরাট হয়ে সেখানে অসংখ্য ডুবোচর ও ডেগাচর জন্ম নিয়েছে। তাই তীব্র বেগে জনপদের দিকে ধেয়ে আসছে নদী। কমলনগর অংশে মেঘনার ভাঙন প্রায় ১১ কি.মি. জুড়ে। তার মধ্যে অন্যতম ফলকন ইউনিয়নের লুধুযা বাজার এলাকা ও সাহেবেরহাট ইউনিয়নের মাত্ব্বারহাট এলাকা।
স্থানীয়রা জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মেঘনার পাড় বাঁধার নিমিত্তে ২ উপজেলার জন্য ১৯৮ কোটি টাকা বর্দ্দা দিয়েছেন। কিন্তু রামগতি অংশে সেনাবাহিনী দ্বারা ৪ কি.মি. কাজ সম্পন্ন হলেও অদৃশ্য কারনে কমলণগরের কাজ এখনো শুরু হয়নি এ জন্য কমলনগর-রামগতি আসনের সংসদ্ সদস্য আবদুল্লা আল মামুনকে হস্তক্ষেপ কামানা করছেন।
লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে মেঘনার অব্যাহত ভাঙ্গনে হুমকির মুখে উপজেলা সদর। এছাড়া গত একমাসে নদী ভাঙ্গনের স্বীকার হয়ে ৪শ পরিবার বাড়ি-ঘর হারিয়ে বেড়িবাঁধসহ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। বৃষ্টি ও জোয়ারের কারণে গত এক সপ্তাহে মেঘনার ভাঙ্গন ভয়াবহ রুপ নিয়েছে। কমলনগর উপজেলা সদর নদী থেকে দুই কিলোমটার দুরে রয়েছে। চরম হুমকির মুখে রয়েছে এ উপজেলা সদর। এ ছাড়া গত সাত বছরে নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধে সরকার কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় এলাকাবাসী মধ্যে চরম ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে।
কমলনগর উপজেলা ভূমি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্রে জানা গেছে, পাটোয়ারীর হাট থেকে শুরু করে চরকালকিনি পর্যন্ত ১৫ কিলোমিটার জুড়ে মেঘনার ভাঙ্গন ভয়াবহরূপ ধারণ করেছে। গত এক মাসে চরজগবন্ধু গ্রাম, পশ্চিম চরফলকন গ্রাম, দক্ষিন চরকালকিনি সাড়ে ৪শ পরিবার নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে বেড়ি বাঁধসহ পাশ্ববর্তী গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গত ৭ বছর ধরে মেঘনার অব্যাহত ভাঙ্গনে কাদির পন্ডিতেরহাট উচ্চ বিদ্যালয়, তালতলী উচ্চ বিদ্যালয়, মাতাব্বরহাট দারুস্সুন্নাহ আলিম মাদ্রাসা, মতিরহাট সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, দক্ষিন পশ্চিম জর জগবন্ধু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্যচর জগবন্ধু সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, উ: প: চর জগবন্ধু স: প্রা: বি:, কালকিনি স: প্রা: বি: দক্ষিন কালকিনি বে: স: প্রাথমিক বিদ্যালয় নদী গর্বে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া ৬০ হাজার একর ফসলি জমি, ৭ টি ঘূর্ণি ঝড় আশ্রয়ান ৪০ কিলোমিটার কাচা পাকা রাস্তা নদীতে বিলীন হয়ে যায়। ভাঙ্গনের পথে রয়েছে চর ফলকন উচ্চ বিদ্যালয়, চর ফলকন ছিদ্দিকীয়া দাখিল মাদ্রাসা, লুধুয়া বাজার জামে মসজিদ, লুধুয়া বাজার, সাহেবেরহাট প্রাথমিক বিদ্যালয়, ফোরকানিয়া মাদ্রাসা, পাজাল বাড়ী জামে মসজিদসহ শত বছরের অসংখ্য ঐতিহ্য স্থাপনা।
সরেজমিনে এলাকায় গেলে নদী ভাঙ্গনের শিকার রহিম উল্যাহ (৫৫) কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, ৫গন্ডা জমি ছিল, চার ছেলে ও ১ মেয়ে, স্ত্রী নিয়ে সুখে ছিলাম। নদীতে মাছ ধরতাম তা দিয়ে সংসার চলতো। গত ২০দিন আগে মেঘনা তার শেষ সম্ভলটুকু কেড়ে নিয়ে গেছে। এখন চরফলকনে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি।
এভাবে দেখা গেছে, এক মাসে ঘরবড়ি হারিয়েছে সিরাজ, মহিজল, হানিফ , বশির, বাশার, , নুর নবী, আব্দুল লতিফ, মোস্তফা, ছিদ্দিক, আবু তাহেরসহ অসংখ মানুষ তাদের ঘর-বাড়ি ফসলি জমি হারিয়ে এখন নিঃস্ব। একই চিত্র দেখা গেছে , মেঘনা পাড়ের চরকালকিনি, দক্ষিন চর লরেন্স, চর জগবন্ধু পশ্চিম চর ফলকন গ্রামে।
সাহেবেরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল খায়ের জানান, চলতি বর্ষা কালে প্রচন্ড জোয়ারে তার ইউনিয়নের চরজগবন্ধু ও মাতব্বর নগর এলাকার ৩শ টি পরিবার নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর -৪ (রামগতি- কমলনগর) আসনের এমপি আবদুল্যাহ আল মামুন জানান, মেঘনার ভাঙ্গনে শত শত মানুষ ভিটে বাড়ি হারা হয়েছে। ভাঙ্গন রোধে ২শ কোটি টাকার একটি প্রকল্প রামগতিতে প্রায় ৪ কি: মি: কাজ ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে কমলনগরে নদী ভাঙ্গন রোধ কাজ শ্রীঘ্রই শুরু হবে।

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *