Connect with us

বিশেষ নিবন্ধ

লক্ষাধিক হাজি দেশে এসে কী করবেন? ‘খোলা চিঠি’

Published

on

%e0%a6%b9%e0%a6%9c

সম্মানিত হাজী সাহেবগণ,
সালাম নিবেন।
আপনারা আপনাদের কষ্টার্জিত টাকা খরচ করে পবিত্র মক্কায় গিয়ে হজ্ব করলেন। যে পবিত্র ভূমিতে আল্লাহর শেষ রসুল (সা.) বিচরণ করেছেন সেই মক্কা ও মদীনার ধূলি আপনাদের অঙ্গে স্পর্শ করেছে। এ সৌভাগ্য ক’জনের হয়?
আশা করি আপনাদের এই হজ্ব কেবল পর্যটন ছিল না, হয়তো এ থেকে ভয়াবহ দুর্যোগের মধ্য দিয়ে দিনাতিপাতকারী মুসলিম দাবিদার জাতিও কোনো না কোনভাবে উপকৃত হবে। সেটা কীভাবে তা অবশ্য আমি জানি না, আপনারা জানেন কিনা তা আপনারাই বলতে পারবেন। জানি না আমার ধারণা সত্য কিনা, আপনারা হয়তো হজ্বের মাধ্যমে বিশ্বমুসলিমের ঐক্যের চেতনায় নিজেদের হৃদয়কে ভরে তুলেছেন। আজকে মুসলিম জাতি পঞ্চান্নটির মতো ভৌগোলিক রাষ্ট্রে বিভক্ত। তাদের মধ্যে ফেরকা মাজহাব তরিকা নিয়ে বিভক্তির কোনো অন্ত নেই। তারা একে অপরকে কাফের, মুরতাদ বলে ফতোয়া দিচ্ছে। শিয়া সুন্নীরা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে একে অপরের প্রাণ আর রক্ত ঝরিয়ে যাচ্ছে। আপনারা হয়তো হজ্বে গিয়ে আলোচনা করে এই বিভক্তি থেকে জাতিকে রক্ষার কোনো উপায় বের করেছেন।
সম্মানিত হাজী সাহেব। সেখানে আপনাদের সাথে দেখা হয়েছে অনেক আফ্রিকার মুসলমানদের। সেসব দেশের মানুষের কেমন ক্ষুধার জ্বালা তা হয়তো আপনি অনুভবের চেষ্টা করেছেন, তাদের পাশে থাকার অঙ্গিকার ব্যক্ত করেছেন। সেখানে গিয়ে হয়তো বা কোনো ফিলিস্তিনি পিতা আপনার কাছে বলেছে তার সেই শিশুটির কথা যে জানতো না ধর্ম কী, জানতো না দেশ কী, জানতো না যুদ্ধ কী তবু তাকে ঘাতক বোমার আঘাতে বীভৎসভাবে মরতে হয়েছে। সেখানে গিয়ে আপনারা নিশ্চয়ই ইরাক, সিরিয়া, আফগানিস্তান, লিবিয়া, কাশ্মির, ইয়ামেনের যুদ্ধপীড়িত মুসলিম ভাইদের প্রতি সমবেদনায় আপ্লুত হয়েছেন, জানতে পেরেছেন উদ্বাস্তুদের অসহায়ত্বের কথা।
আপনারা হয়তো মনোযোগ দিয়ে সেই খোতবা শুনেছেন যেখানে মুসলিম উম্মাহর যাবতীয় সমস্যার সমাধান তুলে ধরার কথা ছিল। আমাদের রাজনৈতিক নেতারা তো জাতীয় সমস্যা সমাধানের জন্য ইউরোপ আমেরিকায় দৌড়ান, কিন্তু আপনারা গিয়েছিলেন জাতির সেই ঐশ্বরিক কেন্দ্রস্থলে, সেই ক্বাবার আঙিনায় যাকে সামনে রেখে বিশ্বের সকল মুসলিম সেজদাহ করে। সুতরাং জাতির মুক্তির জন্য সেই খোতবায় কী বলা হলো সেটা নিশ্চয়ই আপনারা বুঝতে পেরেছেন।
আল্লাহ আপনাদের সামর্থ্য দিয়েছেন, আপনাদের কষ্টার্জিত সম্পদ তাঁর সন্তুষ্টির জন্য ব্যয় করেছেন, এর মাহাত্ম্য অপরিসীম। মোট কত টাকা ব্যয় হলো সেটাও নিশ্চয়ই জানেন। এই ভুখা-নাঙ্গাদের ছোট্ট গরীব দেশের মাত্র দশ বছরের হিসাব করে দেখুন। প্রতি বছর যদি এক লক্ষ মানুষ হজ্বে যান এবং মাথাপিছু যদি ৫ লক্ষ টাকাও যায় তাহলে দশ বছরে খরচ হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা (৫,০০,০০,০০,০০,০০০ টাকা)। প্রতি বছর শিক্ষাবিস্তার, দারিদ্র্য দূরীকরণসহ নানা প্রকল্প যেমন সেনিটারি টয়লেট নির্মাণ থেকে শুরু করে রাস্তাঘাট, ব্রিজ, স্কুল, কলেজ নির্মাণ ইত্যাদি প্রায় সব কাজের জন্য আমাদের নেতারা বিশ্বের দরবারে গিয়ে ভিক্ষুকের মতো দাঁড়িয়ে থাকেন। প্রতি বছর বাজেটে পশ্চিমা প্রভুদের থেকে উচ্চসুদে ঋণ এনে স্বাধীনতার ৪৫ বছরে সুদাসলে জাতির মাথায় কত লক্ষ কোটি ডলার ঋণের বোঝা চেপে বসেছে সেটা আপনাদের অজানা নয়। আপনারা হজ্ব করে নিস্পাপ হয়ে যখন এদেশেই ফিরে আসছেন, জান্নাতে যাওয়ার আগে পর্যন্ত যখন এদেশেই থাকবেন, তখন এদেশকে জঙ্গিবাদ ও পরাশক্তির শূন্যদৃষ্টির হাত থেকে নিরাপদ রাখার জন্য আপনাদেরও অবশ্যই কিছু ভূমিকা আমরা আশা করতে পারি।
আজকে আরবের রাজা-বাদশাহ-আমীররা কেবল নিজেদের সিংহাসন টিকিয়ে রাখার স্বার্থে পাশ্চাত্যের সাম্রাজ্যবাদীদের হাতে মুসলিম জাতির ইজ্জত, সম্পদ, আব্রু সব বন্ধক রেখেছেন। ভোগবিলাসে মগ্ন এই নরপশুরা মুসলিমদের বিরুদ্ধে মুসলিমদেরই ব্যবহার করছে, মুসলিম জাতির প্রাণের ঠিকানা মক্কা-মদীনাকে জাহেলিয়াতের যুগের ন্যায় ব্যবসাকেন্দ্রে পরিণত করেছে, লক্ষ লক্ষ মুসলিম যখন না খেয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ভিক্ষা করছে, দেহব্যবসা করছে তখন এই আরব বাদশাহরা তাদেরকে আশ্রয় দেয় নি, তাদের সমস্যার সমাধানে কোনো উল্লেখযোগ্য ভূমিকাও রাখে নি। উল্টো ঐ প্রভুদের কাছ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন পেট্রোডলার দিয়ে অস্ত্র কিনছে যার প্রত্যেকটি বুলেট, প্রতি তোলা বারুদ মুসলিমদের বিরুদ্ধেই ব্যবহৃত হচ্ছে এবং হবে। আমাদের গরীব দেশের টাকা কোনোভাবেই সেই অর্থপিশাচদের রিজার্ভকে সমৃদ্ধ করুক, আমাদের টাকায় তারা পশ্চিমাদের থেকে অস্ত্র কিনুক এটা নিশ্চয়ই আপনারাও চাইবেন না।
যাহোক, আপনারা হারামাইনের পবিত্রভূমি সফর করে এসেছেন, ইব্রাহীম ও ইসমাইলের (আ.) এর স্মৃতিবিজড়িত জমজম কুপের দর্শন পেয়েছেন, হাজরে আসওয়াদকে চুম্বন করেছেন, শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করেছেন। এখন আপনাদের ঈমানী চেতনা অন্য রকম হওয়ার কথা, অন্যরা মরা কাঠ হলেও আপনাদের এখন জীবিত থাকার কথা। আপনাদের প্রতি মক্কা-মদীনা শরীফের একটি দাবি রয়েছে, দীন ইসলামের একটি দাবি রয়েছে, সেটা হচ্ছে মুসলিম জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে, ইসলামের এই চরম দুর্দিনে, মাতৃভূমি বাংলাদেশের সংকটকালে আপনারা কার্যকর ভূমিকা রাখবেন।
আমরা অতি সাধারণ গরীব মানুষ, গোনাহগার পাপী বান্দারা এই সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, সাম্রাজ্যবাদী পরাশক্তির ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রাস্তায় রাস্তায় কতই না গলা ফাটাচ্ছি, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের এই চিৎকার কতজন মানুষকে নাড়া দিচ্ছে সেটা আমাদের জানা নেই, তবে আপনাদের মতো নিষ্পাপ কিছু হাজী সাহেব আমাদের সাথে এসে যদি জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে শ্লোগান তুলতেন আমরা উৎসাহ পেতাম। লক্ষ লক্ষ টাকা হজে ব্যয় করেছেন, যদি দেশ ও মানুষের কল্যাণে দশ বিশ হাজার টাকাও খরচ করার মানসিকতা গড়ে তুলতে পারেন তাহলে এ দেশটাকে সিরিয়া আফগানিস্তান হওয়ার হাত থেকে হয়তো বাঁচানো যাবে। আমাদের দেশ বাঁচবে, ধর্মও বাঁচবে, ঈমানও বাঁচবে। অন্যথায়, বেয়াদবি মাফ করবেন, সিরিয়া ইরাক আফগান ফিলিস্তিন লিবিয়া আফ্রিকার বহু দেশে হাজী সাহেব ও তাদের পরিবার বোমার আঘাতে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে। বহু দেশের মুসলমানরা যথেষ্ট ধার্মিক হয়েও হজ্বে যাওয়া দূরের কথা, উদ্বাস্তু শিবিরেও জায়গা পাচ্ছেন না। তাদেরকে দেখে আমরা যেন কিছু শিক্ষা নিতে পারি সে আশাবাদ ব্যক্ত করে শেষ করছি। আমাদের জন্য দোয়া করবেন। কোনো ভুলভ্রান্তি হলে ক্ষমা করে দিবেন।

আরজগুজার
রিয়াদুল হাসান

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *