Connect with us

বিশেষ নিবন্ধ

মানুষের চিন্তার জগতে কেয়ামত ঘটাতে হবে

Published

on

কেয়ামতরিয়াদুল হাসান || মানবজাতির জ্ঞানের জগতে, চিন্তার জগতে ও বিশ্বাসের জগতে একটা বড় আঘাত হানা অনিবার্য হয়ে পড়েছে। আঘাত হানতে হবে মানুষেরই অস্তিত্বের স্বার্থে। চিন্তাশীল মানুষমাত্রই অনুধাবন করতে পারছেন মানবসভ্যতার গতিমুখ এখন চূড়ান্ত ধ্বংসের দিকে। কেবল নিজেদের ধ্বংসই নয়, তারা ধ্বংস করতে চায় পৃথিবীকেও। নিশ্চিহ্ন করতে চায় প্রাণের অস্তিত্ব। দুইটি বিশ্বযুদ্ধ তারা ইতোমধ্যেই ঘটিয়েছে। আর এবার যেটা ঘটাতে যাচ্ছে, বা অনিবার্য হয়ে উঠেছে তাকে বিশ্বযুদ্ধ না বলে ‘প্রলয়ংকারী ধ্বংসযজ্ঞ’ বলাটাই কার্যকরী হবে।

স্রষ্টাহীন বস্তুবাদী যান্ত্রিক সভ্যতার সূচনা থেকেই একদিকে যেমন প্রযুক্তির উৎকর্ষতা দ্রুত চূড়ায় উঠেছে, অন্যদিকে মানবতাকে বারবার হোচট খেতে হয়েছে বড় বড় যুদ্ধ, সংঘাত ও রক্তপাতের কারণে। শুধু বিগত শতাব্দীতেই রাজনৈতিক ও সামরিক উত্থান-পতনের ডামাডোলে মানবজাতির যে পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, ইতিহাসে তার দ্বিতীয় কোনো দৃষ্টান্ত নেই।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ধ্বংস হলো রুশ ও তুর্কি সাম্রাজ্য। কোটি কোটি আদম সন্তানের রক্তে শীতল হলো তৃষ্ণার্ত ভূমি। এদিকে পুঁজিবাদী গণতন্ত্রের অত্যাচার থেকে মুক্তি পেতে পৃথিবীর একটি বিরাট অঞ্চল জুড়ে প্রতিষ্ঠিত হলো স্বপ্নের কমিউনিজম। কমিউনিজমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে এমন সময় মাথাচাড়া দিয়ে উঠল ফ্যাসিবাদ। আরম্ভ হলো বনি আদমের দ্বিতীয় নিধনযজ্ঞ। ১৯৪৫ সালে পৃথিবীর ইতিহাসে ভয়াবহতম নৃশংস হত্যাযজ্ঞের মধ্য দিয়ে থামল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ। ফ্যাসিবাদ ধ্বংস হলো।
বিশ্বযুদ্ধ থামল কিন্তু যুদ্ধ চলতে থাকলো। এখানে ওখানে বিচ্ছিন্নভাবে নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চলতে থাকলো শতাব্দীব্যাপী। তবে যেটা সমস্ত পৃথিবীর জন্য আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়ায় তা হচ্ছে পুঁজিবাদ ও সমাজতন্ত্রের আদর্শিক লড়াই। লড়াই যুদ্ধক্ষেত্রে রূপ নিল না কারণ উভয় পরাশক্তির হাতে ছিল পৃথিবী ধ্বংসকারী পারমাণবিক বোমা, যার ব্যবহারমাত্রই শত্র“র সাথে সাথে নিজেকেও ধ্বংস হতে হবে। শীতল যুদ্ধ চলতে থাকলো। এক সময় সমাজতন্ত্র পরাজিত হলো। কার্যত পৃথিবী চলে গেল পুঁজিবাদী ব্লকের নিয়ন্ত্রণে।
আজ সমাজতন্ত্র নেই, কিন্তু তার ঐতিহ্যের ধারক রাশিয়া বিগত শতকের প্রতিশোধ নিতে মরিয়া হয়ে আছে। চলতি শতাব্দীতে ভিন্ন ভিন্ন প্রেক্ষাপটে একাধিকবার যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। আবারো পৃথিবী দুইভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ক্ষমতা প্রদর্শন ও প্রাধান্য বিস্তারের প্রতিযোগিতা যে কোনো সময় মানবজাতিকে পরমাণু যুদ্ধের মতো পৃথিবী ধ্বংসকারী বাস্তবতার মুখোমুখী করতে পারে।

পাঠক আরও পছন্দ করেছেন:

পাশ্চাত্যের অনুকরণ নয় ধর্মের প্রকৃত শিক্ষাই মুক্তির পথ

এদিকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির যান্ত্রিক উৎকর্ষতার পথ ধরে মানবজাতি এতদিন প্রকৃতির বিরুদ্ধে যে স্বেচ্ছাচারিতা করে এসেছে, প্রকৃতি তার শোধ নিতে উদগ্রীব। জলবায়ু সঙ্কট এমন এক বৈশ্বিক সঙ্কটে রূপ নিয়েছে যার কোনো সমাধান বের করতে অপারগ বড় বড় পরাশক্তিধর রাষ্ট্রগুলো।
প্রকৃতি নিয়মের বন্ধনে আবদ্ধ। সেই নিয়মকে উপেক্ষা করার ফল ভোগ করবে এবার মানবজাতি। যদি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ না-ও হয়, যদি আজ থেকে সমস্ত যুদ্ধ-সংঘাত বন্ধ হয়ে যায়, তবু এ কথা বলার উপায় নেই যে, মানুষ নিরাপদ হয়ে গেল। একপেশে ও অপরিণামদর্শী যান্ত্রিকতায় ভর করে দাঁড়িয়ে থাকা সভ্যতাটিকে প্রকৃতিই ধ্বংস করে ফেলবে। মানুষ যদি বাঁচতে চায় এ সভ্যতার বাইরে বেরিয়ে বাঁচতে হবে। বাইরে বের হবার উপায় একটাই- তাদের এই আÍঘাতী চলার পথে বড় ধরনের আঘাত হানতে হবে, তাদের চিন্তা-চেতনার মোড় ঘুরিয়ে দিতে হবে, তাদের মিথ্যা জ্ঞানের অহংকারকে চূর্ণ করে দিতে হবে। এক কথায়, মানবজাতির জ্ঞানের রাজ্যে একটা শক্ত আঘাত করতে হবে, কেয়ামত ঘটাতে হবে।
প্রায় সকল ধর্মেই কেয়ামত সম্পর্কে কিছু না কিছু বলা আছে। কেয়ামতের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলা হয়েছে, প্রচণ্ড আঘাতে জমিন ফেটে যাবে। পাহাড়-পর্বত তুলার মতো উড়তে থাকবে। গ্রহ-নক্ষত্র টুকরো টুকরো হবে। আকাশ ভেঙ্গে পড়বে। সমুদ্র উত্তাল হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, আনবিক শক্তি ও মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নষ্ট হবার ফলে এমনটা ঘটবে। ফলে প্রতিটি বস্তু তার জায়গা থেকে সরে যাবে, নিজ নিজ সত্ত্বা হারাবে। তারপর আল্লাহ আবার সেগুলোকে নতুনভাবে গড়বেন। তখন জান্নাত হবে, জাহান্নাম হবে।
মানবজাতিকে বাঁচাতে হলে এখন তেমনই একটা কেয়ামত ঘটাতে হবে। কেয়ামত ঘটাতে হবে চিন্তার জগতে, বিশ্বাসের জগতে। মানুষের জ্ঞানের অহংকার চূর্ণ করে ফেলতে হবে। তার বিশ্বাসের অবস্থান থেকে তাকে সরিয়ে ফেলতে হবে। হোক তা ধর্মের বিশ্বাস, হোক তা কর্মের বিশ্বাস। সব বিশ্বাস বিষাক্ত হয়ে গেছে। মিথ্যার উপর দাঁড়িয়ে আছে আজকের পৃথিবী। বস্তুবাদের উপর দাঁড়ানো সমস্ত ভোগবাদী সিস্টেমকে লন্ডভণ্ড করতে হবে। তারপর আসবে নতুন সিস্টেম, নতুন সৃষ্টি। মনে রাখতে হবে- গম থেকে সরাসরি রুটি বানানো যায় না, আগে তাকে চূর্ণ করে আটায় রূপ দিতে হয়। লেখক: সাহিত্য সম্পাদক, দৈনিক বজ্রশক্তি ও নিবার্হী সম্পাদক, বাংলাদেশেরপত্র ডটকম।

লেখকের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠান দেখতে চোখ রাখুন : জেটিভি অনলাইন 

Continue Reading
Click to comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *